শনিবার | ১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:০৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা — আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকট : সুব্রত কুমার দাস সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (ষষ্ঠ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস ভারতের সংবিধান রচনার নেপথ্য কারিগর ও শিল্পীরা : দিলীপ মজুমদার চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (পঞ্চম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস আলোর পথযাত্রী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (চতুর্থ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (তৃতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস লোকভুবন থেকে রাজনীতিভুবন : পুরুষোত্তম সিংহ চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (দ্বিতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত রবীন্দ্রনাথের ইরান যাত্রা : অভিজিৎ ব্যানার্জি ঠাকুরকে ঠাকুর না বানিয়ে আসুন একটু চেনার চেষ্টা করি : দিলীপ মজুমদার যুদ্ধ দারিদ্র কিংবা বেকারত্বের বিরুদ্ধে নয় তাই অশ্লীল উন্মত্ত উল্লাস : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ, পঁচিশে বৈশাখ ও জয়ঢাক : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী ও শান্তিনিকেতন : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বাঙালী রবীন্দ্রনাথ : সৈয়দ মুজতবা আলী অনেক দূর পর্যন্ত ভেবেছিলেন আমাদের ঠাকুর : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথের প্রথম ইংরেজি জীবনী : সুব্রত কুমার দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (প্রথম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস শুক্লাম্বর দিঘী, বিশ্বাস করে দিঘীর কাছে কিছু চাইলে পাওয়া যায় : মুন দাশ মোহিনী একাদশীর ব্রতকথা ও মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত নিজের আংশিক বর্ণান্ধতা নিয়ে কবিগুরুর স্বীকারোক্তি : অসিত দাস ঝকঝকে ও মজবুত দাঁতের জন্য ভিটামিন : ডাঃ পিয়ালী চ্যাটার্জী (ব্যানার্জী) সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা : লুৎফর রহমান রিটন
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস

অসিত দাস / ৫৬ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

সুমেরীয় ভাষায় ‘মেলুহা’ শব্দটির অর্থ শস্যভাণ্ডার। প্রসঙ্গত, মেসোপোটেমিয়া ও সুমেরীয় সভ্যতার সঙ্গে সিন্ধুসভ্যতার বাণিজ্যের উল্লেখ আছে মেসোপটেমীয় ও সুমেরীয়  শিলালিপিতে ও ফলকে। সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের নাম মেলুহা হিসেবে উল্লিখিত হয়েছে সেখানে।

সিন্ধুসভ্যতার মূল ভূখণ্ডের নাম মেলুহা দ্রাবিড়ীয় ভাষা থেকে এসেছে বলে মনে করেন সিন্ধুলিপি বিশেষজ্ঞ আস্কো পারপোলা। তাঁর মতে দ্রাবিড়ীয় ভাষায় মেল মানে উচ্চ ও আকাম মানে অঞ্চল।  মেলাকাম মানে উচ্চভূমি। তা থেকেই অপভ্রংশে নাকি মেলুহা।

কেউ কেউ ভাবেন সংস্কৃত ম্লেচ্ছ থেকে মেলুহা। যদিও এই মত গ্রহণীয় নয়। সিন্ধুসভ্যতার পতনের এক হাজার বছর পর আর্যরা ভারতে আসে বলে পণ্ডিতদের বিশ্বাস।

ফিনিশীয় সিন্ধুসভ্যতা-বিশেষজ্ঞ আস্কো পারপোলার মতটিও ত্রুটিপূর্ণ।

আমার মতে কন্নড় শব্দ ‘মেল্ল’ থেকে মেলুহা শব্দটি এসেছে। মেল্ল শব্দটির অর্থ (শস্যের) প্রাচুর্য, বহুলতা বা উদ্বৃত্ততা। সিন্ধুসভ্যতায় দানাশস্যের উৎপাদন ছিল প্রাচুর্যে ভরা। উদ্বৃত্ত শস্যের চিহ্ন হল সিন্ধুসভ্যতার বৃহৎ শস্যভাণ্ডারগুলি। সুমেরীর ভাষায় মেলুহা মানে শস্যভাণ্ডার। মেলুহা শব্দটি সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডে চালু ভাষা থেকেই ধার করেছিল সুমেরীয়রা।

হরপ্পার নগর-সভ্যতার অর্থনৈতিক শ্রীবৃদ্ধির মূল ভিত্তি ছিল কৃষি। সিন্ধুসভ্যতার  গ্রামাঞ্চলে ব্যাপক হারে উৎপাদিত কৃষিজাত পণ্য নাগরিক জীবনযাত্রাকে সমৃদ্ধতর করেছিল। কৃষি অর্থনীতির আলোচনা প্রসঙ্গে দু-তিনটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা থেকেই যায়। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, হরপ্পা সভ্যতার মানুষ কোন কোন ফসল উৎপন্ন করত, কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় জল কীভাবে সরবরাহ হত, কৃষিকার্যে ব্যবহৃত উপকরণগুলি কী ছিল প্রভৃতি। হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারোতে বৃহৎ শস্যাগারগুলি নির্দ্বিধায় প্রমাণ করে যে, সেযুগে উৎপাদনের প্রাচুর্যতা ছিল। হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো ও কালিবঙ্গান থেকে গম ও যবের দানা প্রাপ্তির বিষয়টি নিঃসন্দেহে প্রমাণ করে যে ঐ শস্যগুলি সেযুগে উৎপাদিত হত। গুজরাটের রংপুর ও লোথালের প্রত্নকেন্দ্র থেকে ধানের তুষ পাওয়ার ফলে নিঃসংকোচে প্রমাণিত হয় যে হরপ্পীয়রা ধান চাষ করত। তবে অন্যান্য প্রত্নকেন্দ্র থেকে ধানচাষের তেমন প্রমাণ মেলে নি। ‘সমগ্র বিশ্বে আবাদী ধান ফলানোর প্রাচীনতম নজির পাওয়া গেছে উত্তরপ্রদেশে এলাহাবাদের দক্ষিণে রিঙ্ক্যায়ন নদীর উপত্যকায় অবস্থিত কোলদিহাওয়াতে’,-এমন সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা নিয়েছিলেন জি. আর. শর্মা ও তার সহকর্মীরা। কার্বন-১৪ পদ্ধতিতে কোলদিহাওয়ায় প্রাপ্ত চালের দানা পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করে তিনি এর সময় নির্দিষ্ট করেছিলেন ৬৭১৯ খ্রিঃ পূঃ থেকে ৫০১০ খ্রিঃপূঃ-এর মধ্যে। কিন্তু ইরফান হাবিব পরবর্তীকালে তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন যে ধানের ঐ প্রাচীনত্ব সঠিক নয়। কারণ, কোলদিহাওয়ায় ধানের যে বয়স নির্ধারণ করা হয়েছিল তা ছিল আসলে কার্বন-সমৃদ্ধ স্তরের একটি ভুল পাঠ। তাঁর মতে কোলদিহাওয়ায় প্রাপ্ত ধানের প্রাচীনত্ব খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দের আগে নয়। মহেঞ্জোদারোতে প্রত্নতাত্ত্বিকরা কার্পাস উৎপাদনের নজির খুঁজে পেয়েছেন। এছাড়া, বিভিন্ন প্রত্নকেন্দ্র থেকে প্রাপ্ত শস্যদানা প্রমাণ করে যে হরপ্পা সভ্যতায় ছোলা, নানা ধরনের কলাই ও সরষের চাষ হত। উন্নত ও ব্যাপক হারে ফসল উৎপাদনের পিছনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল সিন্ধুনদের সংলগ্ন উর্বর ভূখণ্ড। জমিতে চাষ-আবাদের কাজে ব্যবহৃত প্রয়োজনীয় জল কীভাবে সরবরাহ হত সে-বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে সেচখাল ব্যবস্থার প্রয়োগ হরপ্পা সভ্যতায় ছিল বলেই মনে হয়। কয়েকটি এলাকায়, বিশেষ করে বালুচিস্তান এবং আফগানিস্তানে বাঁধ বেঁধে সংলগ্ন জলাশয় থেকে জমিতে জল সরবরাহ করা হত। কৃষিকার্যে ব্যবহৃত উপকরণের মধ্যে নিড়ানির উল্লেখ করেছেন ডি. ডি. কোসাম্বী। তাঁর মতে, এই উপকরণকেই কাজে লাগিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে হরপ্পীয়রা জমিকে চাষোপযোগী করে তুলত। কিন্তু নিড়ানি জাতীয় উপকরণের দ্বারা প্রচুর পরিমাণে ফসল উৎপন্ন করা ছিল খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই এই সিদ্ধান্ত কতটা যুক্তিগ্রাহ্য, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। সাম্প্রতিককালে রাজস্থানের কালিবঙ্গান উৎখনন কেন্দ্রে একটি জমিচাষের পদ্ধতি (আড়াআড়ি ও লম্বালম্বিভাবে লাঙলের দাগ) থেকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, হরপ্পা যুগের মানুষ লাঙলের মাধ্যমে চাষ-আবাদ করত। কালিবঙ্গানের ঐ নিদর্শন ছাড়াও ভাওয়ালপুর ওবানওয়ালিতে পোড়ামাটির (টেরাকোটা) লাঙলের নিদর্শন থেকে সে যুগে লাঙলের ব্যবহারের বিষয়টি প্রমাণিত হয়। তবে এক্ষেত্রেও একটা অন্তরায় আছে। কারণ, লাঙল সাধারণত লৌহনির্মিত হয়। কিন্তু সিন্ধু সভ্যতায় অর্থাৎ লৌহযুগের আগে লাঙল নির্মাণে কোন্ ধাতু ব্যবহৃত হত তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে যেহেতু লৌহনির্মিত লাঙল আবিষ্কৃত হয় নি, তাই খুব সম্ভবত লাঙলের ফলায় শক্ত কাঠ ব্যবহৃত হত বলে কেউ কেউ মনে করেন। সাম্প্রতিককালে অবশ্য ইরফান হাবিব তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, লোহার আগে লাঙলের ফলা তৈরি হত পাথরের টুকরো দিয়ে।

উপরিউক্ত কৃষিজাত পণ্যগুলি যথা — গম, যব, বার্লি, নানা ধরনের কলাই, তৈলবীজ প্রভৃতি হরপ্পীয়দের খাদ্য তালিকার অন্তর্ভুক্ত ছিল। এছাড়া ধান যে উৎপন্ন হত, সেকথা আগেই আলোচনা করা হয়েছে। সুতরাং ভাতও তাদের খাদ্য তালিকায় পড়ে। তবে প্রধান খাদ্য ছিল যব ও গম। খেজুর, তরি-তরকারি, নানা ধরনের পশুর মাংস খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হত। সিন্ধুসভ্যতার পরিণত অবস্থায়  সিন্ধু-অঞ্চলসমূহে খেজুর, আঙুর ও আনারস উৎপাদিত হত এমন প্রমাণ মিলেছে খননকার্যের ফলে। হরপ্পার ধ্বংসাবশেষ থেকে বেশ কিছু জীবজন্তুর কঙ্কাল পাওয়া গেছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গরু, ছাগল, মহিষ, ষাঁড়, ভেড়া, শূকর, হরিণ ও উট। তাই একথা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে যে, সিন্ধুবাসীরা এই সমস্ত জীবজন্তু পালন করত। হরপ্পায় যে অসংখ্য সীলমোহর পাওয়া গেছে সেগুলিতে অঙ্কিত বৃষ-র মূর্তি প্রমাণ করে যে এই গো-জাতীয় জন্তুটির অস্তিত্ব ছিল হরপ্পা সভ্যতায়। গোরু, মহিষ ও বৃষ-র অস্তিত্ব দেখে সংগত কারণেই মনে হয় যে, আর্য সভ্যতার মতো এই সভ্যতায় গো-জাতীয় জীবজন্তুর ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছিল। গো- সম্পদের ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ থেকে মনে হয় যে দৈনন্দিন জীবনে গরু, মহিষ, বৃষ-র বিশেষ ভূমিকা ছিল। জমিকর্ষণে ও শস্যবহনে এদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য।

হরপ্পা সভ্যতার আমলে অর্থনীতির ভিত্তি ছিল কৃষি। সেকালে যথেষ্ট পরিমাণে চাল, গম, তিল উৎপাদিত হত। গ্রামের প্রয়োজন মিটিয়ে অতিরিক্ত উৎপাদন নগরের মানুষ এবং ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রয়োজনে শহরে পাঠানো হত। সেই শস্য হরপ্পা ও মহেঞ্জোদাড়োর দুটি বিশাল শস্যাগারে মজুত রাখা হত। ড. শর্মার মতে, শ্রমিকের মজুরি হিসেবে শস্য বণ্টনের রীতি প্রচলিত ছিল।

হরপ্পার শস্যাগারটি রাভী নদীর তীরে অবস্থিত ছিল। এর আয়তন ৯ হাজার বর্গফুট। এই শস্যাগারের মধ্যে রয়েছে দুই সারি মঞ্চ। প্রতি সারিতে ছিল ছয়টি মঞ্চ। দুটি সারির মধ্যে প্রায় ২৩ ফুট চওড়া চলাচলের রাস্তা ছিল। প্রতিটি গোলার আয়তন ছিল ১৫.২৩ x ৬.০৯ মিটার। মার্টিমার হুইলার উৎখননের মাধ্যমে পেটিকার অভ্যন্তর থেকে গম, যব, ইত্যাদি শস্যের দানা আবিষ্কার করেছেন। তাঁর অনুমান, এই শস্যাগারে গুরুত্বপূর্ণ শস্য ঝাড়াইবাছাই হত।

শস্য গোলার দক্ষিণে দুটি সারিতে ছোটো ছোটো বাসগৃহের ভগ্নাবশেষ পাওয়া গেছে। সম্ভবত সেগুলি শস্য বাছাইয়ের কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের জন্য নির্মিত হয়েছিল। মার্টিমার হুইলার, রেমন্ড ও ব্রিজেৎ অলচিন, স্টুয়ার্ট পিগট প্রমুখ বিশেষজ্ঞ  শস্যাগারগুলির বহুমুখী তাৎপর্যের উল্লেখ করেছেন। অলচিন দম্পতির মতে, এই শস্যাগারগুলি ছিল উদ্বৃত্ত উৎপাদন সংরক্ষণের ক্ষেত্র। সম্ভবত রাজকীয় কর হিসেবে এই উদ্বৃত্ত ফসল নদীপথে শস্যাগারে আনা হত।

মার্টিমার হুইলারের মতে, হরপ্পার শস্যাগারগুলি শুধুমাত্র সংরক্ষণশালা হিসেবে ব্যবহৃত হত না। এই কারণে তিনি শস্যাগারগুলিকে সামগ্রিকভাবে শস্যভাণ্ডার  হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কালিবঙ্গানের দক্ষিণে অনুরূপ শস্যাগার পাওয়া গেছে। অধিকাংশ পণ্ডিতের অনুমান, হরপ্পার যুগে কৃষি উৎপাদনের প্রাচুর্য ছিল এবং জনসাধারণের খাদ্যের চাহিদা মিটিয়েও ফসল ও শস্যদানা উদ্বৃত্ত হত। উদ্বৃত্ত ফসল সংরক্ষণের শস্যাগারগুলি তৎকালীন অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

দ্রাবিড়ভাষাগোষ্ঠীর অন্যতম প্রধান ভাষা হল কন্নড়। কন্নড় ভাষায় ‘মেল্ল’ মানে যে প্রাচুর্য, বাহুল্য ও উদ্বৃত্ততা, তা জানা যায় ড. সত্যনারায়ণ দাশ-প্রণীত ‘বাংলায় দ্রাবিড় শব্দ’ বইটি থেকে। কর্নাটকের বেঙ্গালুরুর কাছে মেল্লকোটে বলে একটি জায়গা আছে। সেখানে শস্যের ভাণ্ডারপূর্ণ দুর্গ ছিল। ড. সত্যনারায়ণ দাশের লেখা এই ব্যুৎপত্তিকোষ বাংলাসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। বস্তুত এই বইটি আমার সংগ্রহে না থাকলে আমার পক্ষে সিন্ধুসভ্যতার লিপি নিয়ে গবেষণা করা সম্ভব হত না। এই ‘মেল্ল’ শব্দটি থেকেই বাংলাভাষায় এসেছে মেলা বা মেলাই শব্দটি। মানে অসংখ্য, প্রচুর।

বাংলাভাষাও আদতে দ্রাবিড়-অস্ট্রিক জনগোষ্ঠীর ভাষা। পরে আর্যসংস্কৃতির প্রভাবে তা পরিণত বাংলাভাষায় রূপান্তরিত হয়।

মেসোপোটেমীয় ও সুমেরীয় লিপিতে মেলুহা মানে শস্যভাণ্ডার। শব্দটি যে সিন্ধুউপত্যকার প্রোটোদ্রাবিড়ীয় ভাষা থেকে সুমেরীয়রা ধার করে নিজের ভাষায় চালিয়েছিল, তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। এতে পরোক্ষভাবে এটাই প্রমাণিত হল, সিন্ধুসভ্যতার ভাষা ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়। বৈদিক বলে যাঁরা দাবি করছেন, তাঁদের ভেবে দেখতে হবে আরও।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন