মঙ্গলবার | ১০ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:২৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
ধরনীর ধুলি হোক চন্দন : শৌনক দত্ত সিন্ধুসভ্যতার ভাষা মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির নামে : অসিত দাস বিস্মৃতপ্রায় জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় ভাষায় সিন্ধুসভ্যতার মেলুহার ভাষার প্রভাব : অসিত দাস বঙ্গতনয়াদের সাইক্লিস্ট হওয়ার ইতিহাস : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘ঝড়ের পরে’ ভালো থাকার পাসওয়ার্ড (শেষ পর্ব) : বিদিশা বসু গাছে গাছে সিঁদুর ফলে : দিলীপ মজুমদার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড : বিদিশা বসু সলিমুল্লাহ খানের — ঠাকুরের মাৎস্যন্যায় : ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা : মিল্টন বিশ্বাস নেহরুর অনুপস্থিতিতে প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদও ৩৭০ অনুমোদন করেছিলেন : তপন মল্লিক চৌধুরী সিঁদুরের ইতিকথা আর কোন এক গাঁয়ের বধূর দারুণ মর্মব্যথা : দিলীপ মজুমদার সাহিত্যিকদের সংস্কার বা বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে শ্রীপাণ্ডবা বা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্র নাটকের দুই ট্র্যাজিক রাজা : শৌনক দত্ত কবির মৃত্যু : দিলীপ মজুমদার শ্রীশ্রী রামকৃষ্ণের সপ্তসঙ্গিনী : স্বামী তেজসানন্দ মহারাজ দীঘায় জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাস্টার স্ট্রোক : সন্দীপন বিশ্বাস সিঁদুরে মেঘের গর্জন : অসিত দাস শতবর্ষে অন্য বিনোদিনী — তৃপ্তি মিত্র : শৌনক দত্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সিন্ধুসভ্যতার ভাষা মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির নামে : অসিত দাস

অসিত দাস / ৪১ জন পড়েছেন
আপডেট সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫

হামুরাবি নামটির ব্যুৎপত্তি বিতর্কিত। কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ বলেন অ্যামোরাইট ভাষায় Ammu-র অর্থ ‘Father’s kinsmen’ আর Appi-র অর্থ Healer। হামুরাবির বা হাম্মুরাবির অর্থ তাই Kinsman, the healer।

আবার কেউ কেউ বলেন Akkadian ভাষায় Ammu বা আম্মুর-এর অর্থ পিতা আর Api-র অর্থ Great।  তাই হামুরাবি হলেন The great father।

আমার ধারণা হামুরাবির শস্যভাণ্ডারপ্রীতি লুকিয়ে আছ  তাঁর নামের মধ্যে। প্রোটোদ্রাবিড়ীয় ভাষায় ‘হোমরু’ মানে শস্যভাণ্ডার বা ধানের গোলা। রাজা হামুরাবি মন্দিরকেও শস্যভাণ্ডার বানিয়েছিলেন প্রজাদের মধ্যে শস্যদানা বিতরণের সুবিধার জন্যে। তাঁর বিখ্যাত Code of Hammurabi-র মধ্যে শস্য ও শস্যভাণ্ডার নিয়ে দীর্ঘ অনুশাসন আছে। তাই ‘হোমরু+আপি’ হয়ে হামুরাবি আসতেই পারে। হয়ত তাঁর পিতৃদত্ত নাম ছিল এটি। কিংবা পরে এই নামেই তিনি পরিচিতি পান। দ্রাবিড়ীয় ও আক্কাডীয় ভাষার মেলবন্ধনেই হয়তো হামুরাবি নামের সৃষ্টি।

ইতিহাসে এমন কিছু শাসক আছেন, যাঁরা কেবল রাজনৈতিক দিক থেকে নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তেমনই একজন হলেন বাবিলনের বিখ্যাত রাজা হামুরাবি (খ্রিস্টপূর্ব ১৭৯২-১৭৫০)। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সভ্যতার অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত এই শাসক তাঁর সুবিচার, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং কৃষিনির্ভর অর্থনীতিকে সুসংগঠিত করার জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন। হামুরাবির সময়ে গড়ে উঠা শস্যভাণ্ডার ও মন্দিরগুলো প্রাচীন সমাজে উৎপাদন, বিতরণ এবং ধর্মীয় আচারের কেন্দ্রস্থল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।

হামুরাবি ছিলেন প্রাচীন বাবিলনীয় সাম্রাজ্যের ষষ্ঠ রাজা। তিনি তাঁর ৪৩ বছরের শাসনামলে পুরো মেসোপটেমিয়া অঞ্চলকে একত্রিত করেন এবং একটি সুসংবদ্ধ শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর সর্ববিখ্যাত অবদান “হামুরাবির বিধানসংহিতা” (Code of Hammurabi), যা বিশ্বের প্রাচীনতম ও সুসংগঠিত আইনের অন্যতম। কিন্তু এই আইনের পাশাপাশি তাঁর কৃষি ব্যবস্থাপনা, শস্য সংরক্ষণ পদ্ধতি এবং মন্দিরকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক কাঠামোও উল্লেখযোগ্য।

ঐতিহাসিক উইল ডুরান্ট তাঁর ‘Story of civilsation’-এ মেসোপোটেমিয়ার রাজা হামুরাবির নিজস্ব বয়ান থেকে কিছু কথা উদ্ধৃত করেছেন। তিনি সেচব্যবস্থার জন্যে যে ক্যানাল বা নালা খনন করেছিলেন সে বিষয়ে হামুরাবি স্বয়ং খোদিত শিলালিপিতে  লিখেছেন (ইংরেজি তর্জমা)-

“Its banks on both sides I turned into cultivated ground, I heaped up piles of grain, I provided unfailing water for the lands…The scattered people I gathered with pasturage and water I provided them, I pastured them with abundance, and settled them in peaceful dwellings.”

শস্যভাণ্ডার বলতে বোঝায় এমন এক ধরণের কেন্দ্র যেখানে কৃষকরা উৎপাদিত শস্য জমা রাখত এবং সেখান থেকে রাষ্ট্র প্রয়োজনে তা ব্যবহার করত। হামুরাবির আমলে শস্যভাণ্ডার ছিল প্রশাসনের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এগুলো শুধু খাদ্য সংরক্ষণের জন্য নয়, বরং রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

হামুরাবির শাসনে কৃষকদের নির্দিষ্ট হারে কর দিতে হতো, যা সাধারণত শস্য আকারে দেওয়া হতো। এই শস্য সংগ্রহ করা হতো রাষ্ট্রীয় শস্যভাণ্ডারে। এরপর এই শস্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা কিংবা যুদ্ধের সময় বিতরণ করা হতো প্রজাদের মধ্যে। এর ফলে দুর্ভিক্ষ প্রতিরোধ সম্ভব হতো।

শস্যভাণ্ডার কেবল খাদ্য মজুতের জন্য নয়, বরং এটি একটি অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও ছিল। এই ব্যবস্থা রাজাকে শস্যের মূল্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে সহায়তা করত। উদাহরণস্বরূপ, যখন ফসল কম হতো, তখন শস্যভাণ্ডার থেকে খাদ্য বিতরণ করে বাজারের চাহিদা পূরণ করা হতো।

হামুরাবির সময়ে মন্দির ছিল কেবল ধর্মীয় আচারের স্থান নয়, বরং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। প্রতিটি শহরে প্রধান দেবতার জন্য নির্মিত হতো বড় বড় মন্দির। এই মন্দিরগুলোতে দেবতাদের পূজা-অর্চনা ছাড়াও নানা ধরনের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হতো। আবার মন্দিরেই থাকত শসের আড়ত বা ভাণ্ডার।

মন্দিরগুলো ছিল বিশাল ভূমির মালিক। এই জমিগুলোতে চাষ করতেন সাধারণ কৃষকরা। উৎপাদিত শস্যের একটি অংশ মন্দিরে দান স্বরূপ দেওয়া হতো। এর ফলে মন্দিরে শস্য মজুত বৃদ্ধি পেত এবং তা সমাজের গরিব ও দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ করা হতো। অনেক সময় এই শস্য রাজকোষে সরবরাহ করা হতো।

মন্দিরগুলোয় নানা ধরণের কর্মসংস্থান হতো — যেমন মৃৎশিল্পী, নির্মাণকর্মী, গায়ক-বাদ্যকার ইত্যাদি। শ্রমিকরা মজুরি পেতেন শস্যের মাধ্যমে। এভাবে মন্দির প্রাচীন সমাজে একটি উৎপাদন ও বিতরণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

হামুরাবি অত্যন্ত দক্ষ প্রশাসক ছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে সমাজের মূল ভিত্তি কৃষি। সেই কৃষি যদি সঠিকভাবে পরিচালিত হয়, তবে সমাজে স্থিতিশীলতা আসবে। তাই তিনি শস্যভাণ্ডার ও মন্দির ব্যবস্থাকে একত্রে ব্যবহার করেছিলেন।

মন্দিরের জমি থেকে উৎপন্ন শস্য মজুদ হতো রাজ্য নিয়ন্ত্রিত শস্যভাণ্ডারে। সেখানে নির্দিষ্ট রেকর্ড রাখা হতো — কে কত শস্য জমা দিয়েছে, কার জমিতে কত উৎপাদন হয়েছে, ইত্যাদি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে একপ্রকার কেন্দ্রীয় শস্য-অর্থনীতি গড়ে ওঠে।

শস্যভাণ্ডার ও মন্দিরের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠী খাদ্য পেত। দুর্ভিক্ষের সময় এই ভাণ্ডার সমাজকে বাঁচিয়ে তুলত। ফলে সামাজিক নিরাপত্তার একটি ছায়া তৈরি হয়।

শস্যভাণ্ডারে শস্য জমা দিয়ে কৃষকরা সুরক্ষা পেতেন। বিনিময়ে তাঁরা কাজ করার আগ্রহ পেতেন। মন্দিরের বিভিন্ন প্রকল্পে নিয়োজিত শ্রমিকরাও জীবিকা নির্বাহ করতে পারতেন। এর ফলে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়ে।

হামুরাবির আইন অনুযায়ী, যদি কেউ শস্য চুরি করত বা জমা না দিত, তাহলে তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া হতো। এমনকি রাজকর্মচারীদেরও শাস্তির বিধান ছিল। এর ফলে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা বজায় থাকত।

আধুনিক পৃথিবীতেও রাষ্ট্রের খাদ্যভাণ্ডার বা রিজার্ভ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য সহায়তা, কৃষকদের ভর্তুকি, গুদামজাত পণ্য ইত্যাদি হামুরাবির সময়ের ধারণার আধুনিক রূপ। একইভাবে, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান আজও সমাজসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে, যেমন—স্কুল, হাসপাতাল, আশ্রয়কেন্দ্র পরিচালনা।

হামুরাবির শস্যভাণ্ডার ও মন্দির প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার সমাজ-অর্থনীতির দুটি স্তম্ভ ছিল। এদের মাধ্যমে রাজা হামুরাবি এক দক্ষ, মানবিক ও সংগঠিত প্রশাসনের চিত্র উপস্থাপন করেন। খাদ্য সংরক্ষণ, বিতরণ এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জনসেবা — এই সমন্বয় বর্তমান যুগের সমাজ কাঠামোতেও গুরুত্ব রাখে। এই কারণেই হামুরাবির শাসনব্যবস্থা আজও গবেষকদের কাছে আগ্রহের বিষয়, আর তাঁর শস্যভাণ্ডার ও মন্দির প্রাচীন সভ্যতার এক অনন্য ঐতিহাসিক নিদর্শন।

দ্রাবিড়ভাষা যে মেসোপটোমিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল বাণিজ্য-ক্যারাভানের মাধ্যমে তা বলাই বাহুল্য। বেশকিছু প্রোটোদ্রাবিড়ীয় শব্দ মেসোপটেমিয়ার চালুভাষায় জায়গা করে নিয়েছিল। শস্য ও বাণিজ্যসংক্রান্ত বিষয়েই বেশি শব্দ আছে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন