দিনের দিন বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। ৫০ থেকে ৮০ টাকায় কেজি দরে খুচরো বিক্রি হচ্ছে বাজারে। প্রশাসনের কোনো হেলদোল নেই। রাজ্য সরকার বাজারে সবজির দাম নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স গঠন করলেও কোনো সক্রিয়তা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। সমস্যায় পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বাজারে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে দামের ঝাঁজে গৃহস্থের চোখে জল। যে হারে পেঁয়াজের দাম বাড়চ্ছে তাতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ১০০ টাকা কেজি প্রতি বিক্রি হবে।তাতে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না ।
এদিকে দিনের দিন পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় রাজ্য সরকার চিন্তিত। ইতিমধ্যেই দাম নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স গঠন করেছে সরকার। প্রতিটি বাজারে নজরদারি শুরু হয়েছে। এর পাশাপাশি পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাজ্যে শীঘ্রই পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে বলে রাজ্য সরকার ঠিক করেছে। লক্ষ্য পেঁয়াজের দাম বেঁধে রাখা। তার জন্য রাজ্যে ৯১৭টি পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্র করবে এগ্রিকালচার মার্কেটিং বিভাগ। এরফলে বিভিন্ন এলাকায় স্বল্পমূল্যে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারবেন চাষিরা। রাজ্যের মোট ১০টি জেলায় পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্র তৈরি হবে। পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে ভর্তুকি দেওয়া হবে। প্রশাসনের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্রের জন্য প্রায় ছ’কোটি টাকা ভর্তুকি বরাদ্দ করা হয়েছে। অ্যাডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট মিশন ডিরেক্টর ও দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক (কৃষি) গোবিন্দ হালদার বলেন, জেলায় জেলায় শীতকালীন পেঁয়াজ উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছে। তাই রাজ্যজুড়ে পেঁয়াজ উৎপাদন কেন্দ্র তৈরি হবে। সেখানে চাষিরা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে রাখতে পারবেন। এর ফলে বহু চাষি উপকৃত হবেন।
প্রসঙ্গত, রাজ্য সরকারের তরফে শিল্পের পাশাপাশি কৃষি ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। পুরাতন পদ্ধতিকে সরিয়ে নিত্য নতুন পদ্ধতির ব্যবহারে মিলছে সাফল্য। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশাসনিক বৈঠক থেকে ঝাড়গ্রাম জেলায় চাষের পরিমাণ বাড়ানোর কথা বলেছেন। পাশাপাশি ফসলবিমা, কৃষক বন্ধু প্রকল্পের মাধ্যমে চাষিদের আর্থিক সহায়তা করা হচ্ছে। এরফলে চাষিদের আর্থিক সমস্যার অনেকটাই সমাধান হচ্ছে বলে মত কৃষি আধিকারিকদের। একইসঙ্গে পেঁয়াজের মতো অর্থকরী ফসলের চাষের পরিমাণও বাড়ছে। রাজ্যে কয়েক লক্ষ টন পেঁয়াজ উৎপাদ হয়। কিন্তু, প্রচুর পেঁয়াজ বাইরে চলে যায়। তাই মূলত রাজ্যকে স্বনির্ভর করতেই সংরক্ষণ ইউনিট তৈরি করা পরিকল্পনা করা হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলি উন্নতমানের তৈরি করা হচ্ছে। প্রশাসনের তরফে কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হবে। মালদহ জেলায় ৫৭টি, মুর্শিদাবাদ জেলায় ১১৩টি, নদীয়া জেলায় ১২৪টি, উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ১২৪টি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ৩৭টি, হুগলি জেলার ১১৪টি, পূর্ব বর্ধমান জেলায় ১১৩টি, বীরভূম জেলায় ৭৯টি, বাঁকুড়া জেলায় ৭৯টি ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ৭৭টি পেঁয়াজ শিল্প সংরক্ষণ ইউনিট তৈরি হবে। এরফলে লক্ষাধিক মেট্রিকটন পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। কৃষিদপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, আমাদের রাজ্যে উৎপাদিত পেঁয়াজ বেশিরভাগ বাইরে চলে যায়। ফলে পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকে। এছাড়া পেঁয়াজের কালোবাজারির পরিমাণও বাড়ে। এগ্রিকালচার মার্কেটিং বিভাগ চাইছে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে। যে হারে বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে নাভিশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্তের। বিশেষ করে আলু ও পেঁয়াজের মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের।হিমঘরগুলোতে প্রয়োজন মতো খাবার আলু মজুত থাকলেও এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী জন্য এটা হচ্ছে বলে অনেকের অভিমত। একইভাবে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে চলেছে।যা এখন পেঁয়াজের দামের ঝাঁজে গৃহস্থের চোখে জল।