বুধবার | ২৩শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ১:৫৫
Logo
এই মুহূর্তে ::
ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৪০ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৫

রাস্তায় বেরোলেই দশ জনের মধ্যে এখন চার জনেরই শরীরের এ দিকে-ও দিকে ট্যাটু বা উল্কি দেখতে পাওয়া যায়। আগে কেবল সিনেমার নায়ক-নায়িকারা, দেশ-বিদেশের খেলোয়াড়রা নিজেদের গ্ল্যামার বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের মোটিভ বা ক্যাচলাইন শরীরের নানা জায়গায় আঁকিয়ে নিতো। কিন্তু বিশ্বায়নের দৌলতে দুনিয়া পাল্টাচ্ছে, বদলাচ্ছে মানুষের রুচি, আশা-আকাঙ্ক্ষা। তরুণ প্রজন্মের কাছে ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’।

ট্যাটু বিশ্বের প্রাচীনতম শিল্প মাধ্যমগুলির একটি। আদিকালে সনাক্তকরণ বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে নিয়ে যে গোষ্ঠী মানুষের মধ্যে টোটেম এঁকে দেওয়া হত। খ্রিস্টপূর্ব চার থেকে দু-হাজার বছরের মাঝামাঝি কোন সময়ে প্রাচীন মিশরে ট্যাটুকে প্রসাধনের অঙ্গ হিসেবে দেখা হতো। তারপরে ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে এর জনপ্রিয়তা। ৩৩৭০ থেকে ৩১০০ বিসির এক মমিতে উল্কির ব্যবহার দেখা যায়। ইতিহাস বলে — আলাস্কা, গ্রিনল্যান্ড, ইজিপ্ট, মঙ্গোলিয়া, সাইবেরিয়া, সুদানেও ট্যাটুর প্রচলন ছিল। একসময় নিউজিল্যান্ডের মাওরিদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিলো এই উল্কি। ক্যাপ্টেন জেমস কুক ভূ প্রদক্ষিণে বেরিয়ে নানা স্থানে মানুষের শরীরে উল্কির প্রচলন দেখেন। তিনি তাহিতি দ্বীপ থেকে ট্যাটু কথাটি আমদানি করেন। তাহিতিয়ান ভাষায় “টাতাউ” (tatau) শব্দটির অর্থ “হালকাভাবে টোকা দেওয়া” বা “চিহ্নিত করা”।

উল্কির আকার রীতি এক এক দেশে এক এক রকম। প্রথমের দিকে মানুষ কৌতূহলবশত ধারালো কোন অস্ত্র দিয়ে হাতের উপর নিজের নাম লিখত। তারপর সেই নামের ওপর বুলিয়ে দিত ভেষজ কোন রং। অনেকে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঁকত উড়ন্ত পাখি বা ধাবমান কোন বন্য প্রাণী। কেউবা প্রথমে রং দিয়ে লিখে তার ওপর ক্রমাগত ছুঁচ ফোটাত আঁকাটি স্থায়ী করবার জন্য।

নিউ গায়না দ্বীপের আদিবাসী রমণীরা সারা শরীরে নানান ধরনের উলকি আঁকে। ওখানকার যুবতী মেয়েরা বুকের মাঝখানে ইংরেজি ভি অক্ষরের মতো একটি উল্কি এঁকে নিতো। তারা যে বিবাহযোগ্যা এই উলকি তারই প্রমাণপত্র।

অ্যাসেরিয়রা বিশ্বাস করতো, উল্কি দিয়ে শুধু এই জীবনে নয় মৃত্যুর পরও মানুষ তাকে ঠিক চিনে নেবে।

সৌন্দর্যপ্রিয়তা ছাড়াও বিভিন্ন দেশে উল্কির বিভিন্ন তাৎপর্য পাওয়া যায়। মালায়ের অধিবাসীরা কলেরার প্রতিষেধক হিসেবে শরীরের সাদা কালো লাল রঙের উল্কি আঁকায়। আফ্রিকার কোন কোন আদিবাসী রমণী নিজেদের বিধবা বোঝাতে শরীরের উলকি চিহ্ন দিত। ইংল্যান্ডে তাদেরই উল্কি চিহ্ন দেওয়া হতো যারা ডাইনি বলে সনাক্ত হত।

আদিম মানুষেরা ভয় করত অপঘাতে মৃত্যুকে, রোগকে। তাই রোগের ভূত তারাতে পুরোহিত ডাক্তার নিজেদের শরীরে রং মেখে ভূত সাজতো। শিকার করতে বেরিয়ে যাদের মৃত্যু হতো তাদের মৃতদেহের উপর ছড়িয়ে দেয়া হতো লাল রং। একদিন অজ্ঞাত বিপদকে জাদু বলে দূরে রাখতে যে উলকি বা বডি পেন্টিং এর সূচনা হয়েছিল। এখন সেটাই ফ্যাশন দুনিয়াকে গ্রাস করে নিয়েছে।

ভারতে উল্কি আঁকার একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, যা বিভিন্ন উপজাতি এবং সম্প্রদায়ের দ্বারা চর্চা করা হয়। উল্কি আঁকার শিল্প ঐতিহ্যগতভাবে সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং আধ্যাত্মিক বিশ্বাসের সাথে যুক্ত ছিল। কবি ঈশ্বর গুপ্ত বলেছিলেন, হিন্দু রমণীর কপালে যে সিঁদুরের ফোঁটা সেটাও এক ধরনের উল্কি। দক্ষিণ ভারতে বিশেষ করে তামিলনাড়ুতে ট্যাটুর প্রচলন সবচেয়ে বেশি। শরীরের নানা অংশে সুঁই ফুঁড়ে নকশা উল্কি করা হয়, অঞ্চল এবং জনজাতিভেদে বদলে বদলে যায় নকশার প্রতীক এবং অর্থ। স্থায়ী এই উল্কিকে বলা হয় গোদনা। ঝাড়খণ্ডে মূলত মহিলাদের মধ্যে প্রচলিত গোদনা বা উল্কি শিল্প, আদিবাসী গোষ্ঠী তথা বর্ণভেদে ভিন্ন ভিন্ন রূপ হয় তার। প্রাচীন এই কলার রোগ নিরাময়ের শক্তি আছে বলে মনে করা হয়, কিন্তু তা বাদেও জাতি, লিঙ্গ এবং অন্যান্য সামাজিক পরিচিতির চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয় এই উল্কি।

আসাম এবং নাগাল্যান্ডের মতো উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে, উপজাতীয় উল্কি ছিল সুরক্ষা, উত্তরণের রীতিনীতি এবং আধ্যাত্মিক পরিচয়ের প্রতীক। মধ্য ভারতের গোন্ড জনগণ এবং মহারাষ্ট্রের ওয়ারলি উপজাতিও উল্কি আঁকার অনুশীলন করত, যা তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং প্রকৃতির সাথে সংযোগের প্রতিনিধিত্ব করে।

রাজস্থানে, ট্যাটু প্রায়শই পরিধানকারীকে মন্দ আত্মার হাত থেকে রক্ষা করে এবং সৌভাগ্য বয়ে আনে বলে মনে করা হত। আসামের মিশিং জনগণের মধ্যে, ট্যাটুগুলিকে পরিপক্কতা এবং সামাজিক অবস্থানের সূচক হিসাবে দেখা হত। সময়ের সাথে সাথে ট্যাটু করার ঐতিহ্য একটি ধর্মীয় এবং প্রতিরক্ষামূলক শিল্প থেকে ব্যক্তিগত পরিচয় এবং ব্যক্তিত্বের প্রকাশে বিকশিত হয়েছে।

সমসাময়িক ভারতে, ট্যাটু আঁকা মূলধারায় পরিণত হয়েছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, অনেক ট্যাটু শিল্পী আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। ট্যাটু এখন ব্যক্তিগত গল্প, বিশ্বাস এবং শৈল্পিক শৈলী প্রকাশের একটি জনপ্রিয় মাধ্যম।

বিশ্বায়নের দৌলতে কলকাতার ট্যাটু কালচার খুব পুরনো নয়। বিংশ শতকের শুরুর দিকে বহু হাটে-বাজারে হাতে গোনা কিছু শিল্পীকে বসে থাকতে দেখা যেত, যাঁরা মাত্র কিছু টাকার বিনিময়ে উল্কি এঁকে দিতেন। এখন তো শহরের অলিগলিতেও ট্যাটু পার্লার দেখতে পাওয়া যায়। নিউ জেনারেশনের মধ্যে ট্যাটু নিয়ে যেন একটা আলাদা আবেগ, আকর্ষণ রয়েছে।

খ্যাতনামীরা ছাড়াও নতুন প্রজন্ম ট্যাটু নিয়ে ভীষণ সংবেদনশীল। খোলা পিঠ, পা, হাতের ত্বকে লাল-নীল-কালো-সবুজের টান বা গোড়ালির কাছে আছে ছোট্ট ডিজাইন, কিংবা কব্জিতে পছন্দের কোনও লাইন। প্রিয় নামের আদ্যক্ষর, মন মজানো উক্তি কিংবা আধ্যাত্মিক ছবি। কেউ আবার গোটা শরীরটাকেই ক্যানভাসে পরিণত করছেন।

দেশ-বিদেশের খেলোয়াড় থেকে শুরু করে আমজনতা, শরীরের নানা কোণে সাজগোজের অঙ্গ হিসেবে ট্যাটু খোদাইয়ে পিছিয়ে নেই কেউই। নিজেকে বাকিদের থেকে আলাদা করে নিতে শরীরের খাঁজে খাঁজে ফুটে উঠছে সাদা কালো, রং-বেরঙের নকশা।

ট্যাটুতে আঁকা হয় প্রিয়জনের নামে অদ্যাক্ষর কিন্তু পরে বোঝা গেছে সম্পর্ক ভেঙে গেল ট্যাটু কিন্তু থেকেই যায়। আগে শুধু ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসেবে ট্যাটুকে দেখা হবে কিন্তু এখন নিজের জীবনের সঙ্গে থেকে যায় এমন কিছু সে ভাবনা থেকে ট্যাটু আঁকা হয়। কপি-পেস্ট এর কনসেপ্ট চেঞ্জ হয়ে, সৃষ্টিশীলতা এসেছে এই উল্কির জগতে। কোভিদের পর থেকেই ট্যাটু পার্লারে হাইজিনকে সর্বাধিকার দেওয়া হয়। ট্যাটুর ক্ষেত্রে যে নিডিল, ইঙ্ক এবং গিয়ারস ব্যবহার হয়, তা একবার ব্যবহৃত হলেই ফেলে দিতে হয়।

ইংল্যান্ডের নাবিকরা পৃথিবীর নানা জায়গায় মানুষের শরীরে উল্কি বা বডি পেইন্টিং দেখে আশ্চর্য হয়ে দু একজন উল্কি পরা লোককে জাহাজে চাপিয়ে নিয়ে দেশে ধরে নিয়ে যেতেন। কুসংস্কারছন্ন ব্রিটিশ নাবিকদের মধ্যে উল্কি প্রথা ছিলো দারুন জনপ্রিয়। প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্রে শুধু জন্তু-জানোয়ার নয় রঙ রেখার ধরা পড়েছে উল্কি পরা নরনারীর ভয়ার্ত মূর্তি।

আদিম মানুষ ভয় পেয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগকে। ঈশ্বরের ভাবনা যখন তাদের মাথায় আসেনি তখন ভয়ই ছিল তাদের ঈশ্বর।ঈশ্বরকে জয় করবার জন্য তারা বেছে নিয়েছিল বডি পেইন্টিংকে। রঙের জাদু তাদের কাছে ছিল সর্বরোগহর। ঈশ্বরকে তুষ্ট করার জন্য রঙের প্রসাধনী হয়ে উঠল প্রধান ধর্মীয় আচার। আজ যা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে ট্যাটুর আকারে।

আমার মেয়েবেলায় উলকি দেখতাম পাড়ার হিন্দুস্তানি মহিলাদের কিম্বা মেথর পট্টির মহিলাদের হাতে। সময় বদলেছে।উল্কা সংস্কৃতিই বাঙালির হালফিলের ফ্যাশন। তাই বাঙালি পুরুষটির বলিষ্ঠ ট্রাইসেপ মাস্‌লের পিছন দিকে ফুটে ওঠে একটি জিভ বের করা থ্রি-ডি ড্রাগন বা বাঙালি তনয়ার ঘাড়ের পাশে উঁকি দেয় একজোড়া লাল-নীল কিংবা রঙিন প্রজাপতি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন