“জয় অম্বে মাইয়া, জয় গৌরী মাইয়া” গাইতে গাইতে দুই সাধু দশাশ্বমেধ ঘাটে স্নানে নামছেন। সুখময় দৌড়ে দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে নামছে, স্নানের আগেই ওই দুজন সন্তের পা ছুঁতে হবে। স্নানের পর আর পা ছুঁয়ে প্রণাম ওনারা নেবেন না। আশীর্বাদও করবেন না। তখন শুধু মাইয়ার ভজন করতে করতে ওনারা প্রথমে অন্নপূর্ণা মন্দিরে যাবেন। সেখানে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক জপ ধ্যান সেরে আসবেন বাবা বিশ্বনাথের চরণে প্রণাম জানাতে। সব সাধু আগে বাবা বিশ্বনাথের কাছে যান, তারপর মা অন্নপূর্ণার কাছে যান। কিন্তু এঁদের সব আলাদা। এনারা মায়ির ভক্ত। মুখে বলেনও সেকথা। বলেন, “মা বিরূপ হলে বাপের সাধ্য কি জগৎ চালান… জগৎ চালানো কি বাপের কম্মো! মায়ি একমুঠ ভিখ্ না দিলে কারোর অন্ন জুটবে না। আর অন্ন ছাড়া সাধনও সম্ভব নয়, তাই আগে মায়ির ভজনা করো।”
রোজ এঁদের প্রণাম সেরে সুখময় নিজের কাজে হাত দেয়। দিন ভাল যায়। মা অন্নপূর্ণার সন্তানদের আশীর্বাদ পেলে সুখময়েরও অন্নচিন্তা করতে হবে না কোনদিন। স্নানের জন্য সিঁড়ির শেষ ধাপে পৌঁছনোর আগেই সুখময় হনুমানের মতো লাফ দিয়ে সাধুদের পথ আগলে দাঁড়ায়। ওকে দেখে দুজনের মুখেই হাসি প্রশস্ত হয়। সুখময় সিঁড়ির ওপর সাষ্টাঙ্গে শুয়ে পড়ে প্রণাম করে। দুজন আশীর্বাদ করেন, “জিতা রহো বেটা। আচ্ছা কাম করো। সুখী রহো।” সুখময় সঙ্গে আনা ফলমূল ওনাদের দিয়ে কাজে চলে যায়। ওর কর্মক্ষেত্র এই ঘাটে নয়, একটু দূরে। মণিকর্ণিকায়।
“নৈনং সেতুমহোরাত্রে তরতঃ ন জরা ন মৃত্যুশোকো ন সুকৃতং ন দুষ্কৃতং”
সেতুর এপারে নিয়ম মাফিক দিনরাত্রি হয়ে চলেছে, কিন্তু সেতুর ওপারে দিন, রাত, সুকৃতি, দুষ্কৃতি কিছুই নেই। তা হয়তো নেই, কিন্তু এই মণিকর্ণিকায় বহু পরিবার মানুষের শেষ কাজে কাঠের বরাত নিয়ে জীবিকা অর্জন করে। শ্মশানযাত্রীদের বাসা ভাড়া দেওয়া থেকে, চিতার কাঠ বরাত নেওয়া, গঙ্গায় অস্থি ভাসিয়ে মিষ্টি মুখ করানো পর্যন্ত সবেতেই এখানে ছোট বড় ব্যবসাদাররা রয়েছেন। সুখময় এখানে আছেন নিজের ষোলো বছর বয়েস থেকে। যেদিন বাপু প্রথম তাকে বললেন যে এবার কাজকামে লাগতে হবে একটু একটু করে… সুখময় ব্যাপারটা খুব ভালভাবে গ্রহণ করতে পারে নি। রসুইঘরে গিয়ে মাইয়ার আঁচল ধরে খানিকক্ষণ ঘুরঘুর করেছিল, মাইয়া বুঝেও না বোঝার ভান করে রান্নার কাজ করে যাচ্ছিলেন। আসলি ঘিয়ের পরোটা আর ভাজির গন্ধে পেটে খিদে জোর ধাক্কা মারছে, কিন্তু সুখময় রাগ করে সেদিন কিচ্ছু মুখে তোলে নি। পড়াশোনার দোহাই দিয়েও অনেক কথা মিনমিন করে বলার চেষ্টা করেছিল… কাজে আসেনি।
প্রথম দিন কিছু না খেয়ে মণিকর্ণিকায় কয়েক ঘন্টা কাটিয়ে গঙ্গার ঘাটের পাশে হড়হড় করে খানিকটা বমি করে ফেলেছিল সুখময়। শরীর আনচান। পেছনে বাপুর কোমল স্নেহের হাতের স্পর্শ শরীরের সঙ্গে চোখকেও ভিজিয়ে দিয়েছিল। বাপু সেদিন ওকে ধ’রে ধ’রে ওদের কাঠের ঘরে এনে বসিয়ে মুখে ঘাড়ে জল দিয়ে বাঁকেকে দিয়ে মোতিচুর রাবড়ি এনে খাইয়েছিলেন। বাঁকে ওদের মণিকর্ণিকার গুদামের নোকর। বাঁকেও প্রায় ওর বয়সী। সে কি করে সারাদিন এই মড়া পোড়ানো দেখে এটা এতদিন মনে আসেনি সুখময়ের। বাঁকেকে মিঠাই আনতে পাঠিয়ে ওর পিঠ ডলে দিতে দিতে বাপুই কথাটা তুলেছিলেন… সুখময়ের এখনও স্পষ্ট মনে আছে। বাপু বলেছিলেন, “বাপ পিতিমোর বেওসা এটা, একে ভয় বা ঘৃণা করলে মা অন্নপূর্ণা আর অন্ন যোগাবেন না। আর কাশীতে বাস করে মা অন্নপূর্ণাকে চটানো একদম উচিত নয়।”
সেই থেকে বাঁকের সঙ্গে একটু একটু করে সুখময়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রতিদিন আসতে হত না পড়ার চাপ থাকলে, তবু দিনের বা রাতের কিছু সময় তাকে নিয়ম করে আসতে হতো ব্যবসা দেখতে। তারপর গ্র্যাজুয়েসান হয়ে গেলে পাকাপাকি গদিতে বসতে অসুবিধে হয়নি আর। ততদিনে মণিকর্ণিকার গন্ধ, বর্ণ, রূপ, রস সুখময়ের আত্মস্থ হয়েছে। এখন তার বয়েস প্রায় বত্রিশ হতে চলল। তাদের পরিবারে এত বয়েস পর্যন্ত কেউ বিয়ে শাদী না করে থাকে না। সুখময়ের দুই ভাইয়েরও শাদী হয়ে গেছে, বালবাচ্চাও হয়ে গেছে। কিন্তু সুখময় এখনও করে উঠতে পারেনি। ওদের পরিবারের নিয়ম তাড়াতাড়ি বিয়ে করার। সেই অনুযায়ী সুখময় বুড্ঢা হতে চলল প্রায়। আসলে এই মণিকর্ণিকায় জীবনের রঙ্গ দেখতে দেখতে কখন যেন একটা বিতৃষ্ণা জন্ম নিয়েছে। কিছুদিন আগেই অন্তর্জলীযাত্রায় এসে সদ্যমৃতর স্ত্রী পালিয়ে গেল তার নতুন প্রেমিকের সাথে, সঙ্গে শ্রাদ্ধের দেড়শ লাড্ডু চুরি করে। বউটি পালাল, কিন্তু কেন যে লাড্ডু চুরি করে নিয়ে গেল সেই শোকে মৃতের বাবা মায়ের বুকফাটা আর্তনাদ দেখে সুখময়ের মনে হয়েছিল ছেলের মৃত্যুর চেয়ে লাড্ডুর শোক বাপ মায়ের বেশি হয়েছে।
বাইক নিয়ে মদনপুরা দিয়ে যেতে যেতে কালীবাবুর বেনারসীর কারখানার সামনে তাকে দেখল সুখময়। কালীবাবু বাঙ্গালী, সুখময়ের বাপুজির সঙ্গে খুবই সদ্ভাব কালীবাবুর। মেয়েটির দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিটি দেখে একমাত্র সতেজ রজনীগন্ধার একটি ডাঁটির কথা মনে হলো তার। সুখময় কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করেছে… কাব্যের ধার দিয়ে যাবার সময় তার হয় নি। মণিকর্ণিকার অগ্নির দাউদাউ রূপের মধ্যে ধূপ, ধুনো, অগরু, চন্দনের গন্ধের সঙ্গে মিশে থাকে মানব দেহের দগ্ধ হওয়ার বাস। আর ঘাটের এখানে ওখানে পড়ে থাকে অজস্র সতেজ রজনীগন্ধার স্টিক। তাই মেয়েটির দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখে ওটাই মনে এসেছে সুখময়ের। এর বেশি মনে করার সাধ্য সুখময়ের নেই। কিন্তু মেয়েটি কে? বেনারসের অবাঙালীরা বেশির ভাগই ঝরঝরে বাংলা বলতে পারেন, আবার বাঙালিরাও হিন্দী ঝরঝরে বলতে পারেন। শুধু কথা বলার সময় এক আধটা টান থেকে বোঝা যায় কে বাঙালি আর কে অবাঙালি।
সুখময়কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মেয়েটি বলল, “কাকে চাই? বাবা ভেতরে আছেন, ডেকে দেব?”
ও হরি! এ তো রাগিনী! কালীবাবুর ছোটো লাডলি! ছোট বেলায় হোলির সময় এর গায়ে রঙ দিলেই কেঁদে ভাসাত। আর একটা খুব বাজে রোগ ছিল এই মেয়ের… রেগে গেলেই চিমটি কাটত। কলকাতার মাসি না পিসি কার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে…. এখনো কি পড়ে? কে জানে? সুখময় এসব ভাবতে ভাবতেই কালীবাবু বেরিয়ে আসেন ওনার বেনারসীর কারখানা থেকে।
“আরে! সুখময়, এসো, ভেতরে এসো। রাগিনী মা এসে আমাকে তোমার কথা বলতে চলে এলাম…. ও কিন্তু এতদিন পরেও তোমাকে ঠিক চিনতে পেরেছে।”
চিনেছে তো সুখময়ও, সেই ছিঁচকাঁদুনে মেয়েটা এত বড় হয়ে গেছে!
“ও এখন আমার শাড়ির ডিজাইন দেয়… আমার ব্যবসা মনে হয় ওই সামলাতে পারবে… মল্লিকা তো এসবের ধার ধারে না। বড় জামাই অবশ্য মিঠাইয়ের দোকানটা দেখভাল করে। আর আমার বয়েস তো বাড়ছে। আর কতোদিন এত কামকাজ সামলাতে পারবো জানি না।”
সুখময় বাইক থেকে নেমে কালীবাবুর পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। তারপর কারখানার মধ্যে ঢোকে। দ্যাখে, রাগিনী মন দিয়ে কাজ করছে… কারিগরদের সঙ্গে কথা বলছে। কালীবাবুর নির্দেশে কেউ একজন এসে লস্যি দিয়ে গেল। ভালই হল, বড় পিয়াস লেগেছিল তার। খানিকক্ষণ বসে, এটা ওটা কথা বলে, লস্যি পান করে উঠে এল সুখময়। মনের মধ্যে এক ফাগুন দামাল হাওয়ার লুটোপুটি।
রাতে খাবার সময় কাঠের পিঁড়িতে বসে সামনের ছোট কাঠের একটু উঁচু জলচৌকি টেনে সুখময় খেতে শুরু করার পর ব্যবসার এটা ওটা কথা বলতে বলতে কালীবাবুর মেয়ের কথাটা তোলে ইচ্ছে করেই। ওদের খেতে, আলোচনা শেষ করতে যতো দেরীই হোক, বাড়ির মেয়ে বউরা ঘোমটা টেনে বসে থাকে। ওরা উঠে গেলে মেয়েরা খেতে বসে। কালীবাবুর ছোট মেয়ের কথা উঠতেই মেজ ভাই বলে ওঠে, “ওরে বাবা! সে তো মেয়ে নয়, সেই তো এখন আঙ্কেলকে গাইড করে। বেনারসীর ডিজাইন দেয়। আর কি ঠাট ঠমক! ছেলেদের সাথে একসঙ্গে বসে মিটিং সিটিং করে।… একটা মেয়ে হয়ে এরকম ছেলেদের মত হাবভাব…. ”
সুখময় দেখল, মেজ ভাইয়ের কথা ওর অন্য ভাই, বাপুজি, এমন কি মায়িভি মেনে নিল।
সুখময় বুঝতে পারল ওরকম মেয়ে এ পরিবারে আসতে পারে না। অথচ অনেকদিন পর সে আলাদা করে ফাগুন হাওয়ার অনুভূতি টের পেয়েছিল। রজনীগন্ধার গন্ধ, ধূপ ধুনোর গন্ধ থেকে আলাদা করে নাকে এসে ঝাপটা মেরেছিল। কিন্তু এ পরিবারে আধুনিক ভাবধারা নিয়ে আসবে কোন পুত্রবধূ, এত মানিয়ে নেবার ক্ষমতা এ বাড়ির পুরুষদের হবে না। সে রাতে অনেকক্ষণ ঘুম এল না সুখময়ের। রাতে শুয়ে রাগিনীর পাশাপাশি আর একটা মুখ বিনা কারণে ভেসে উঠল বারবার, সে মুখের মালিকানা মল্লিকার। খুব ভীতু ভীতু ধরণের মেয়ে, দেখতেও সাধারণ। বেনারস থেকেই পড়াশোনা করতে করতে বিয়ে হয়ে গেল ওর। কিশোর বয়সে যতবার ওদের বাড়ি গেছে সুখময়, বা মল্লিকা এসেছে এ বাড়িতে, কেন যেন মনে হয়েছে ও কিছু বলবে… বড় বড় চোখ দুটি তুলে তাকিয়ে থাকত সুখময়ের মুখের দিকে। কেন কে জানে? জানা হয়নি আর… তারপর তো বিয়েই হয়ে গেল।
কারণে অকারণে আজকাল প্রায়ই দেখা হয়ে যাচ্ছে সুখময়ের সঙ্গে রাগিনীর। সুখময়ের মাঝে মধ্যেই মদনপুরায় কাজ পড়ে । সেদিন সে রাগিনীদের কারখানার পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, হঠাৎ পিছন থেকে রাগিনী ডাকল… “একটু দাঁড়ান না! আমার একটু গোধূলিয়ায় যেতে হবে, স্কুটিটা গড়বড় করছিল কদিন ধরেই, সারাতে দিয়েছি। একটু পৌঁছে দেবেন প্লিজ!” এ যে মেঘ না চাইতেই জল! “হ্যাঁ। হ্যাঁ। কেন দেব না!” বলতে বলতেই পেছনে রাগিনীকে নিয়ে বাইক স্টার্ট দিল সুখময়। আজ মনের মধ্যে সত্যিই সুখের লাড্ডু ফুটছে। এতদিন ধরে কোন মেয়েকেই মনে ধরেনি ওর। সংসার সম্বন্ধে একটা চাপা ভয়ও ছিল। কিন্তু রাগিনীকে দেখে অবধি সুখময় স্থির থাকতে পারছে না। এখন ওর পিঠে রাগিনীর কোমল স্পর্শ মাঝেমাঝেই টের পাচ্ছে ও, সারা দেহে শিহরণ তুলছে সে স্পর্শ। বড় তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে গেল পথ। নেমে যাবার আগে ধন্যবাদ জানিয়ে রাগিনী যেন কিছু মনে পড়ে গেছে এইভাবে বলল, “ও হো! হোলির পরের দিন আমাদের বাঙালি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন একটা অনুষ্ঠান করে জানেন তো? বিকেলে অনুষ্ঠান ভবনে চলে আসবেন কিন্তু, যে যেটুকু পারে পারফরম্ করবে। আপনিও চাইলে করতে পারেন।”
“আমি! আমি তো কিছুই জানি না।”
“কেন? ছেলে বেলায় তো বেশ ভাল কিশোর কুমারের গান গাইতেন, টেবিল বাজিয়ে। মনে নেই আমার!”
একটা ঘোরের মধ্যে বাইক নিয়ে ফিরল মণিকর্ণিকায়। সারাক্ষণ রাগিনীর কথাগুলো মাথার মধ্যে তরঙ্গ তুলছে… মনে নেই আমার!… আজ হোলি! সকালে ঘুম থেকে উঠে দশাশ্বমেধ ঘাটে গিয়ে দুই সন্ন্যাসীকে প্রণাম জানাতে ওনারা অদ্ভুত একটা কথা বললেন সুখময়কে। ওনারা বললেন, “বেটা, যেটা দেখার ছিল সেটা তোর না দেখা রয়ে গেছে… মা অন্নপূর্ণা তোর সহায় হোন… যো হোগা আচ্ছাই হোগা।” ওনারা আর কিছু বলেন নি, স্নানে নেমে গেলেন। সুখময়ের মাথায় এল না, কি সে দেখেনি… যা দেখার ছিল!
ছোট্ট অডিটোরিয়াম। বাঙালি অবাঙালি অনেকেই এসেছেন অনুষ্ঠান দেখতে। প্রতিবারই হয়, সুখময় আসেনি কোনদিন। আজও রাগিনী না বললে আসা হতো না। ওর এসব খুব একটা ভাল লাগে না। রাগিনীকে খুব সুন্দর লাগছে, বোধহয় নাচ করবে, তাই অত সেজেছে। সুখময় সেকেন্ড রোয়ে বসে আছে। হঠাৎ খুব জমকালো শাড়ি পরে মল্লিকা সামনে এসে দাঁড়াল। “কেমন আছো?” জিজ্ঞাসা করল। সুখময় হেসে উত্তর দিল দু-একটা। তারপর মল্লিকাকে জিজ্ঞেস করল, সে কেমন আছে। মল্লিকা সোজা উত্তর না দিয়ে সুখময়কেই প্রশ্ন করল, “কেমন দেখছো?” সুখময় হেসে বলল, “ভালই তো!” মল্লিকা একটু হেসে বলল, “তাহলে ভালই আছি! তুমি বসো। এক্ষুনি মিষ্টি দিয়ে যাবে, খেয়ো।” সুখময় ঘাড় নাড়ে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাগিনী গোটা অনুষ্ঠান পরিচালনা করছে প্রথম থেকেই। সুখময়ের খুব একটা যে ভাল লাগছে এমন নয়, তবু খারাপও লাগছে না। রাগিনীদের নৃত্যনাট্য একদম শেষে, ততক্ষণ তো ধৈর্য্য ধরে রাখতেই হবে। কয়েকটি গান, আবৃত্তির পর নাম ঘোষণা করা হল মল্লিকার। ও আবৃত্তি করবে। ও আবার এসব পারে নাকি! একবার মনে এল কথাটা সুখময়ের। তারপর মনে হলো… বাঙালি লোগ, কালচারটা তো ধরে রাখবেই…।
মল্লিকাকে যে শাড়িতে আজ দেখল সুখময় একটু আগেই, এখন সেই শাড়ি পরা নেই ওর, একদম সাদা খোলের বর্ণহীন একটা শাড়ি পরেছে, কালো পাড় আর আঁচল। কপালে একটা খুব বড় কালো টিপ… কেমন অন্যরকম লাগছে ওকে… গোটা স্টেজ অন্ধকার, শুধু ওর মুখে আলো ফেলা হয়েছে। মল্লিকা বলছে…
শূন্যের ভিতরে ঢেউ : শঙ্খ ঘোষ
বলিনি কখনো?
আমি তো ভেবেছি বলা হয়ে গেছে কবে।
এভাবে নিথর এসে দাঁড়ানো তোমার সামনে
সেই এক বলা
কেননা নীরব এই শরীরের চেয়ে আরো বড়
কোনো ভাষা নেই
কেননা শরীর তার দেহহীন উত্থানে জেগে
যতদূর মুছে নিতে জানে
দীর্ঘ চরাচর,
তার চেয়ে আর কোনো দীর্ঘতর যবনিকা নেই
কেননা পড়ন্ত ফুল, চিতার রুপালি ছাই, ধাবমান শেষ ট্রাম
সকলেই চেয়েছে আশ্রয়
সেকথা বলিনি? তবে কিভাবে তাকাল এতদিন
জলের কিনারে নিচু জবা?
শূন্যতাই জানো শুধু? শূন্যের ভিতরে এত ঢেউ আছে
সেকথা জানো না?
আজও সুখময় একলা। রাগিনীকে কিছু বলা হয়ে ওঠেনি আর। তবে মণিকর্ণিকায় কেউ তো একলা হয় না… শূন্যের ভিতরে যে এত ঢেউ আছে… সেটা একটু একটু করে সুখময় আত্মস্থ করছে। মল্লিকার ওই কবিতা সুখময়কে একটা বিরাট প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছে। উত্তর খোঁজার পালা সুখময়ের একার।
কৃতজ্ঞতা স্বীকার কবি শঙ্খ ঘোষ
লেখাটা খুব ভালো হয়েছে। বেশ ভালো লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ 🙏