বুধবার | ২১শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:০৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার ক্যের-সাংরী কথা : নন্দিনী অধিকারী সুপারি তথা গুবাক থেকেই এসেছে গোয়ার নাম : অসিত দাস রোনাল্ড রসের কাছে জব্দ ম্যালেরিয়া : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় উনিশের উত্তরাধিকার : শ্যামলী কর কেট উইন্সলেটের অভিনয় দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জিং ভূমিকার ৩টি চলচ্চিত্র : কল্পনা পান্ডে হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা — আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকট : সুব্রত কুমার দাস সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (ষষ্ঠ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস ভারতের সংবিধান রচনার নেপথ্য কারিগর ও শিল্পীরা : দিলীপ মজুমদার চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (পঞ্চম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস আলোর পথযাত্রী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (চতুর্থ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (তৃতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস লোকভুবন থেকে রাজনীতিভুবন : পুরুষোত্তম সিংহ চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (দ্বিতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত রবীন্দ্রনাথের ইরান যাত্রা : অভিজিৎ ব্যানার্জি ঠাকুরকে ঠাকুর না বানিয়ে আসুন একটু চেনার চেষ্টা করি : দিলীপ মজুমদার যুদ্ধ দারিদ্র কিংবা বেকারত্বের বিরুদ্ধে নয় তাই অশ্লীল উন্মত্ত উল্লাস : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ, পঁচিশে বৈশাখ ও জয়ঢাক : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী ও শান্তিনিকেতন : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বাঙালী রবীন্দ্রনাথ : সৈয়দ মুজতবা আলী অনেক দূর পর্যন্ত ভেবেছিলেন আমাদের ঠাকুর : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সমুদ্রোদ্ভবা মহালক্ষ্মী : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৮১৩ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ৮ অক্টোবর, ২০২২

মা দুর্গার এক ও অভিন্ন রূপ হলেন দেবীলক্ষ্মী। লক্ষ্মী অযোনিসম্ভবা। শ্রী শ্রী চণ্ডীতে মহিষাসুর প্রসঙ্গের আগেই ‘মহালক্ষ্মীর ধ্যান’-টি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মহিষাসুরকে হত্যা করার পিছনে অসুর দলনের সঙ্গে সঙ্গে প্রেম ও করুণাশক্তিও কাজ করেছে। সমস্ত রূপ, বল, তেজ ও ঐশ্বর্য্য সমন্বিত দুর্গাদেবী এখানে মহাশক্তির আধারস্বরূপ মহালক্ষ্মী নামে অভিনন্দিতা হয়েছেন। এই লক্ষ্মী সম্পদ লক্ষ্মী ও সৌভাগ্য লক্ষ্মী হয়ে বিরাজ করতেন স্বর্গলোকে। দেবরাজ ইন্দ্রের উপাসনা গৃহে তিনি পূজিতা হতেন। কিন্তু মহামুনি দুর্বাসার অভিশাপে স্বর্গে হয়ে পরে লক্ষ্মীহীন। পুরাণ বলে, — একবার অত্যন্ত তপস্বী ও ক্রোধী মুনি দূর্বাসা পর্যটনে বেরিয়ে পৌঁছালেন এক রাজ্যে। সেখানে এক মালা বিক্রেতা অতি সুন্দর, সুগন্ধি ফুলের তৈরি মালা নিয়ে ঘুরছিলো যার সুবাস বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। ফুলটি দেখে দূর্বাসা মুনির লোভ হলো এবং তিনি চেয়ে বসলেন। মুনির পরিচয় পেয়ে মালিনী সত্বর মালাটি দিয়ে দিলেন। মুনিবর আনন্দে মালাটি হাতে পেয়ে মাথার জটায় জড়িয়ে রাখলেন। তারপর নানা দেশ ঘুরতে ঘুরতে এসে পৌঁছলেন স্বর্গে। স্বর্গের নন্দন কাননের পাশ দিয়ে যাবার সময় দেখলেন দেবরাজ ইন্দ্র ঐরাবতের পিঠে বসে ভ্রমনে বেরিয়েছেন।

দেবরাজ বলে কথা! তাই শ্রদ্ধাভরে মুনি নিজের মস্তক থেকে মালাটি খুলে ইন্দ্রের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে প্রণাম জানালেন। ইন্দ্র প্রথমে হকচকিয়ে গেলেন। তারপর অবজ্ঞাভরে মালাটি খুলে ঐরাবতের গলায় পরিয়ে দিলেন। ফুলের গন্ধ ঐরাবতের পছন্দ হলো না। সে তৎক্ষনাৎ মালাটি শুঁড় দিয়ে টেনে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে মাড়িয়ে দিলো।

তাঁর যত্নের মালার এমন নিদারুন হাল দেখে দূর্বাসা মুনির সর্বাঙ্গ ক্রোধে জ্বলে উঠলো। তীব্র রোষ দৃষ্টিতে ইন্দ্রকে বললেন, — “দেবরাজ! তোমার এত অহঙ্কার! লক্ষ্মীবিরাজিত আমার মালা অবহেলা করে হাতিকে পরালে? এত উদ্ধতার জন্য তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছি তোমার সৌভাগ্য ও সম্পদ লক্ষ্মী তোমাকে পরিত্যাগ করে চলে যাবে আর তোমার সঙ্গে দেবতারাও লক্ষ্মীছাড়া হয়ে অশেষ দুর্ভোগে পড়বে।”

অভিশাপ শুনে চৈতন্য হলো দেবরাজের। এই ঘটনার ক’মাসের মধ্যে দেবতারা সত্যই হীনবল হয়ে পড়লো। এই সুযোগে ভয়ানক অসুরেরা দেবরাজ্য আক্রমণ করে বসলো। বিপর্যস্ত দেবতারা একত্রে প্রথমে ব্রহ্মা ও পরে বিষ্ণুর কাছে গেলেন। স্বর্গ থেকে লক্ষ্মীদেবীর বিদায় হওয়ায় দেবতারা আজ হীনবল। জগৎপতি বিষ্ণু, লক্ষ্মী দেবীকে পেতে দেবদানব মিলে সমুদ্র মন্থনের কথা বললেন।

পুরাণ মতে, লক্ষ্মী দেবী মহর্ষি দূর্বাসার অভিশাপের ফলে শ্রীভ্রষ্ট হয়ে স্বর্গে আর থাকতে পারছিলেন না আবার দুর্দশাগ্রস্থ মর্ত্যলোকেও তাঁর অবস্থান সম্ভব ছিলো না। এমতাবস্থায় তিনি বৈকুণ্ঠধামে নারায়ণের আলয়ে উপস্থিত হন এবং আপনার মহালক্ষ্মী স্বরূপে লীন হন। তার পিছনে স্বর্গের দেবতারা উপস্থিত হলে বিব্রত হয়ে নারায়ণের পরামর্শে লক্ষ্মীদেবী নিজের স্বরূপের অংশ দ্বারা সিন্ধুর আদরের কন্যা (সমুদ্রকন্যা) রূপে পরিবর্তিত হলেন এবং সাগরের তলদেশে লুকিয়ে রইলেন। লক্ষ্মীর এহেন অবস্থান লক্ষ্য করে স্বয়ং জগৎপতি বিচলিত হলেন এবং তিনি মর্ত্যলোকের কারণ সাগরের বক্ষে শুয়ে থাকতে মনস্থির করলেন।

লক্ষ্মী-নারায়ণ এর সম্পর্ক হলো অগ্নি ও দাহিকা শক্তির মতো। তাই একে অপরকে ছেড়ে থাকা বেশিক্ষণ সম্ভব হলো না। ফলে অচিরেই অনন্ত সমুদ্র বক্ষে শেষনাগের সহস্র ফনার নীচে জগৎপতি শয্যা নিলেন এবং দেবী লক্ষ্মী জল থেকে উত্থিত হয়ে নারায়ণের পদসেবা করে মনের সুখে তথায় বাস করতে লাগলেন ।

যাইহোক, ভগবানের কথামতো দেবাসুরেরা সমুদ্রমন্থন করতে লাগলেন। মন্থনের ফলে একে একে কামধেনু, সুরার দেবী বারুণী, পারিজাত ফুল, চন্দ্রদেবতা, উচ্চৈঃশ্রবা ঘোড়া, কৌস্তুভমণি, কালকুট বিষ, ধন্নন্তরির হাতে অমৃত এবং উঠে আসে এক সুন্দর সুরভি পদ্মফুল। সেই পদ্মফুল প্রস্ফুটিত হতেই দেখা গেলো তার ভিতরে বসে রয়েছেন হাতে পদ্ম নিয়ে অনিন্দ্যসুন্দরী দেবী। তাঁর সৌন্দর্যের দীপ্তিতে ত্রিভুবন সহসা দীপ্তিময় হয়ে উঠলো। দেবতাদের মধ্যে দেখা গেলো আনন্দের জোয়ার, বাহুতে শক্তি, মনে অদম্য বল। হতোদ্যম দেবতারা লক্ষ্মীদেবীকে পেয়ে হয়ে উঠলেন মহাশক্তিশালী। ক্ষীরসমুদ্র নমস্কার করে তাঁকে পরিয়ে দিলেন একটি সুন্দর অবিনশ্বর পদ্ম ফুলের মালা। বিশ্বকর্মা দিলেন নানারকমের অলংকার। লক্ষ্মীদেবী বিষ্ণুর কাছে চলে গেলেন। লক্ষ্মী-নারায়ণ কে একসাথে পেয়ে দেবরাজ ইন্দ্রও হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন।

অনেক পুরাণে বর্ণিত আছে মন্থনের আগে লক্ষ্মীর কোন নিজস্ব অবয়ব ছিলো না। তিনি দুর্গারই এক অভিন্ন রূপ ধরে দেবলোকে পূজিত হতেন। তাঁর আবির্ভাব নাকি সমুদ্রগর্ভ থেকেই। মন্থনের পর সমুদ্রগর্ভ থেকে উঠে এসে বিষ্ণুর পাশে বসেন। ভগবান বিষ্ণু লক্ষ্মী দেবীর প্রণয়ে মগ্ন হলেন এবং তাঁকেই স্ত্রী রূপে গ্রহণ করলেন।

শাস্ত্রে সমুদ্র মন্থন কথাটি রূপক। আমাদের হৃদয়রূপ সমুদ্রে সৎ ও অসৎ চিন্তার মধ্যে সর্বদাই মন্থন চলছে। ব্যাপক অর্থে ব্যক্তির মনে, সমাজে, রাষ্ট্রে সর্বদাই সৎ ও অসৎ শক্তির মধ্যে ক্রমাগত লড়াই চলছে। অসৎ শক্তির কাছে লক্ষ্মী কখনই বসে না ও তাকে মর্যাদাও দেয় না। অপরদিকে সৎ ভাবনা যাদের রয়েছে তাদের কাছেই ক্রমশ লক্ষ্মীর মহাসম্পদ, চরিত্রবল, সৌন্দর্য, শান্তি, প্রেম ও যশরাশি এসে উপস্থিত হয়। দেবরাজ ইন্দ্রের মধ্যে এই ভাবনা অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়েই উপলব্ধি হয়েছিলো। ভক্তিভরে পবিত্র চিত্তে লক্ষ্মী দেবীর স্তবস্তুতি করলে মানব জীবনের মনোবৃত্তিগুলি শান্ত ও স্নিগ্ধ হয়ে যায়। ক্রমশ তার শ্রীবৃদ্ধি ঘটে।

মানবজাতি এই মহালক্ষ্মীকেই বিভিন্ন রূপে পুজো করে আসছেন। কখনো তিনি ধনলক্ষ্মী, কখনো ভাগ্যলক্ষ্মী আবার কখনো তিনি ঘরের গৃহলক্ষ্মী। পুরাণের যুগে এসে অন্যান্য দেব-দেবীর মতো চিন্ময়ী দেবী মৃন্ময়ী রূপ পেলেন। পেলেন তাঁর বাবা-মায়ের আদর আর অগণিত ভক্তদের ভক্তিপূর্ন ভালোবাসা। তাইতো আজো চলমান সংসারে সুখ সম্পদ সৌভাগ্য মঙ্গলের আরাধনায় ভক্ত বলে ওঠে, —

‘লক্ষ্মী আমায় বল দেখি মা

লুকিয়ে ছিলি কোন সাগরে

সহসা আজ কাহার পুণ্যে

উদয় হলি মোদের ঘরে’।।

কৃতজ্ঞতা স্বীকার : স্বামী বেদানন্দ এর লেখা লক্ষ্মী মাহাত্ম্য।


আপনার মতামত লিখুন :

8 responses to “সমুদ্রোদ্ভবা মহালক্ষ্মী : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Amar Nath Banerjee says:

    খুব সুন্দর লেখা।

  2. Pallab dey says:

    খুব সুন্দর লেখা,,, অনেককিছু জানলাম🙏🏻🙏🏻🙏🏻

  3. siba prosad Chowdhury says:

    খুব সুন্দর

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন