হুগলি জেলায় একের পর এক কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প (সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প ) মুখ থুবড়ে পড়ছে। হুঁশ নেই প্রশাসনের। কেবল অর্থের অভাব। কর্মচারীদের সময়ে পারিশ্রমিক না দিতে পারার মুখ্য কারণ বলেই জানা গেছে। উল্লেখ্য, এই জেলায় পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ১৭টি ও জেলা পরিষদের উদ্যোগে ১২টি এই ধরনের প্রকল্প চালু হয়েছিল। দেখা যাচ্ছে মোট ২৯টি প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশই বন্ধ হয়ে পড়েছে। ২০ থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এই সমস্ত প্রকল্পের কাজগুলো। অথচ দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ জায়গায় আগাছায় ঢেকেছে প্রকল্পের কেন্দ্রগুলো। একটাই কারণ বলে জানা যাচ্ছে তাহল অর্থের অভাব।
প্রসঙ্গত, হুগলি জেলায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট) প্রকল্পগুলি গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং পরিবেশ সুরক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছিল। বিভিন্ন পৌরসভা ও পঞ্চায়েত এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজে জোর দিয়ে ছিল। ইতিমধ্যে সম্প্রতি গোঘাটে ও খানাকুলের রামমোহন-২ পঞ্চায়েতের এই ধরনের প্রকল্প অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। একইভাবে জেলার অন্যান্য ব্লকেও বেশিরভাগ একই অবস্থা।
প্রসঙ্গত, এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, গ্রামীণ অঞ্চলে পচনশীল এবং অপচনশীল আবর্জনা পৃথকভাবে সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনা করা। এই উদ্দেশ্যে ইকার (ইকো-ফ্রেন্ডলি) র্যালির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়ানোর কাজ হাতে নেয় প্রশাসন।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পচনশীল আবর্জনা দিয়ে জৈব সার এবং অপচনশীল প্লাস্টিক থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক দানা তৈরি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই হুগলির আরবান এলাকাগুলিতে যেমন উত্তরপাড়া, কোন্নগর, বৈদ্যবাটিতে এই প্রকল্প সফল হয়েছে, এবার সেই সাফল্যের ধারা গ্রামীণ এলাকাতেও বজায় রাখার প্রয়াস চলছে। সভাধিপতি রঞ্জন ধারা বলেন, “আমরা চাই একটি নির্মল ও প্লাস্টিকমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে। প্লাস্টি জমে বৃষ্টির জল আটকে গিয়ে বিভিন্ন রোগ ছড়ায়, সেই বিপদ থেকে মানুষকে রক্ষা করতে সচেতনতা গড়ে তোলাটা জরুরি।” তিনি আরও জানান, হুগলি জেলা পরিষদ ‘নির্মল বাংলা’ গড়ার লক্ষ্যে ১০০ শতাংশ উদ্যমে কাজ করছে এবং এই র্যালি তারই অঙ্গ। সাধারণ মানুষকেও তিনি এই উদ্যোগে শামিল হয়ে সমাজকে দূষণমুক্ত ও পরিষ্কার রাখার আহ্বান জানান।
এদিকে খানাকুলের রামমোহন-২ পঞ্চায়েতের কায়বা গ্ৰামে এই ধরনের একটি প্রকল্প গড়ে উঠলেও গত সাতমাস ধরে তা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ২০ লক্ষ টাকার বেশি ব্যয়ে প্রকল্প গড়ে উঠলেও এলাকার বর্জ্য সংগ্ৰহের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। রামমোহন-২ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুজিত ঘোষ জানান, কর্মীদের টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। ফলে বর্জ্য সংগ্ৰহের কাজ বন্ধ আছে। আশা করছি খুব শীঘ্রই চালু হয়ে যাবে।
এদিকে গোঘাটে হুগলি জেলা শাসকের উদ্বোধন করা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাই সার। দুর্গন্ধে এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যর্থতা সামনে এসেছে। আরামবাগ মহকুমা জুড়ে প্রায় প্রতিটি পঞ্চায়েতে গড়ে তোলা হয়েছে সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প। জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের কর্তারাও উৎসাহ-উদ্দীপনার সঙ্গে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন ঢাক ঢোল পিটিয়ে। কিন্তু বাস্তবে এই প্রকল্প কোনও কাজে আসছে না বলেই অভিযোগ। জানা গেছে, প্রতিটি পঞ্চায়েতে এই প্রকল্প নির্মাণে ২০থেকে ২৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে। তবে উদ্বোধনের পর থেকেই অধিকাংশ কেন্দ্রে এই প্রকল্প তালা বন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। কোথাও বা বনজঙ্গলে ঢেকে গিয়েছে। ময়লা বহনের জন্য প্রতিটি পঞ্চায়েতকে টোটো গাড়ি সরবরাহ করা হলেও, সেই টোটো রাস্তায় চোখে পড়ে না। কারণ, সেগুলি চালানোর জন্য কোনও কর্মী নিয়োগ যেমন হয়নি, আবার নিয়োগ হলেও বর্তমানে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না বলেই খবর। এর ফলে এলাকাগুলির রাস্তাঘাটে ময়লা পড়ে থাকছে, সৃষ্টি হচ্ছে দুর্গন্ধের। বাসিন্দারা চরম সমস্যায় পড়ছেন। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে।
মানুষের অভিযোগ, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। গোঘাট এক নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিজয় রায় বলেন, “আরও প্রচার করতে হবে। জরিমানার ব্যবস্থা চালু করতে হবে। তাহলেই মানুষ সচেতন হবে এবং ময়লা যথাস্থানে ফেলবে।” তবে এখানেই প্রশ্ন উঠছে-যেখানে ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা রাখা হয়েছে, সেগুলিও নিয়মিত পরিষ্কার করা হচ্ছে না। কোথাও সেই জায়গা রাস্তার ধারে বনজঙ্গলে ঢেকে যাচ্ছে, আবার কোথাও আবর্জনার স্তুপে চাপা পড়ছে। হুঁশ নেই প্রশাসনের।