“প্রেমতোষ বাবুর দাদা মহীতোষবাবু চিরকাল অপ্রকৃতিস্থ ছিলেন না। তিনি একটি পাঁচতারা হোটেলের হেলথ ক্লাবের ব্যায়াম নির্দেশক। সেখানে বিভিন্ন বয়সি স্থূলদেহী পুরুষ এবং মহিলার পরিচর্যা করে করে এখন সব কিছুই বড় বড় মোটা মোটা দেখেন। দানাদার দেখলে ভাবেন রাজভোগ, পাতে ছোট এক টুকরো মাছ দিলে বলেন এত বড় মাছ। অবশ্য প্রেমতোষ বাবুর ধারণা অতিরিক্ত শীর্ষাসন করে তাঁর দাদার এই অবস্থা। উলটো দিক থেকে দেখে দেখে দৃষ্টিভঙ্গিটাই পালটিয়ে গেছে।”
এটা নিছকই মজার। তারাপদ রায়ের একটি গল্পের অংশ। শীর্ষাসন স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই উপকারী এবং শীর্ষাসনকে যোগাসনের রাজা বলা হয়।
করোনার তৃতীয় ঢেউ শান্ত হলেও অভিঘাত রেখে দিয়ে গেছে আমাদের জীবনে। দেখা দিচ্ছে নানান শারীরিক জটিলতা, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মনের অসুখ। মন ভালো থাকলে তবেই শরীরও ভালো থাকে। শরীর সুস্থ রাখতে দরকার সুষম আহার।
শারীরিক, মানসিক ও পৌষ্টিক এই তিনটিকে একত্রে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য-এই ষড়রিপুর সংযম প্রয়োজনীয়। কাজটি খুব সহজও নয়, এটি একটি সাধনা। ধৈর্য্য রাখতে পারলে সুফল নিশ্চিত।
সালম্বা শীর্ষাসন নামটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ সালম্ব যার অর্থ “সমর্থিত”এবং শীর্ষ, Śīrṣa অর্থ “মাথা”, এবং আসন, আসন অর্থ “ভঙ্গিমা” বা “আসন”।
শীর্ষাসন নামটি তুলনামূলকভাবে সাম্প্রতিক, কিন্তু ভঙ্গিটি নিজেই অনেক পুরানো ও অন্যান্য নামে পরিচিত ছিল। এটি হঠ যোগ প্রদীপিকা এবং হঠ যোগের অন্যান্য শাস্ত্রীয় গ্রন্থে একটি মুদ্রা হিসাবে বর্ণিত ও বিপরিতা করণী হিসাবে অনুশীলন করা হয়েছিল। একাদশ শতকে হেমচন্দ্রের যোগশাস্ত্রে এর নাম ছিলো দুর্যোধনাসন (“দুর্যোধনের ভঙ্গি”) বা কপালীকরণ (“মাথার কৌশল”),; ত্রয়োদশ শতকে ‘মল্ল পুরাণ’ এ কুস্তিগীরদের জন্য এই আসনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে ।
শিরশাসন অজস্র উপকারে ভরপুর। শীর্ষাসন করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়, রক্ত প্রবাহকে উন্নত করে, চুলের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, মানসিক চাপ ও উদ্বেগ থেকে মুক্তি মেলে। কৌষ্ঠ্য কাঠিন্য, বহুমূত্র, পেটফাঁপা, থাইরয়েডের সমস্যা প্রভৃতি রোগ থেকে সমাধান মেলে।
কাঁধ, ঘাড়, এবং মেরুদণ্ডের হাড় শক্ত করতে করুন এই আসন। স্মৃতিশক্তি, আত্মবিশ্বাস, ধৈর্য্য বাড়াতে সাহায্য করে।
ত্বক উজ্জ্বল হতে শুরু করে এবং রিঙ্কেলস কমে যায়। বয়সকে ধরে রাখার একটি মোক্ষম উপায় শীর্ষাসন।
তবে অতি অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ পেশাদারের নির্দেশনায় শুধুমাত্র আপনার ভাল শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য অনুশীলন করুন।
শীর্ষাসন করুন ধীরে ধীরে এবং একটি সময়ে একটি ধাপ নিন। হেডস্ট্যান্ড করার সময় কখনই তাড়াহুড়ো করবেন না কারণ এটি দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে।
এই আসনটি করার জন্য একটি শান্ত ও নিরিবিলি জায়গা বেছে নিন।
প্রথমে হাঁটু গেড়ে বসে থাকুন। কনুই থেকে হাত ভূমি ছুঁয়ে আঙুলগুলো পরস্পরের মধ্যে শক্তভাবে ধরুন। যোগ মাদুর উপর আপনার মাথা নামিয়ে আনুন.
আপনার শরীরের ওজন আপনার নীচের শরীরে স্থানান্তর করুন এবং আলতো করে আপনার এক পা তুলুন। প্রথম পা উপরে যাওয়ার সময়, এটি ধীরে ধীরে অন্য পা দ্বারা অনুসরণ করা হয়।
মাথার কাছে হাতের তালু ভাঁজ করে বিশ্রাম দিন। এটি মাথার সমর্থন হিসাবে কাজ করে।দেহের ওজন মাথার উপর পড়বে ও আপনার শরীর সোজা আছে তা নিশ্চিত করুন।
হেডস্ট্যান্ড অনুশীলন করার আগে ২/৩ ঘন্টা না খাওয়ার চেষ্টা করুন। ভঙ্গিতে প্রবেশ করার আগে বডি ওয়ার্ম আপ করার জন্য হাল্কা এক্সারসাইজ করে নিন।
পেট ভর্তি করে ব্যায়াম করা যাবে না।। শীর্ষাসন করার অভ্যাস পাঁচ বছর বয়স থেকে শুরু করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
জেট যুগের ইঁদুর দৌড়ে বাড়ছে কাজের চাপ, হারিয়ে যাচ্ছে মানসিক শান্তি, অবহেলিত হচ্ছে শরীর ফলে বাসা বাঁধছে শরীরে নানা রোগ। জীবন তো একটাই। বাঁচুন না আনন্দে। যত্ন নিন নিজের। একটু শরীর চর্চা করুন। অতি অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মেনে চলুন। দেখবেন আপনার সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি আপনার হাতেই রয়েছে। জীবনটাই যোগ, যোগই জীবন।
Source : Various sources have been referred to for information.
ভালো
Yoga ….
খাঁটি কথা বটে।তবে ভেবেই তো ভয় পাচ্ছি। 🤪