খানাকুলের হেলান রামকৃষ্ণ শিশু বিতানের রজত জয়ন্তী বর্ষপূর্তি উৎসব পালিত হল মহাসমারোহে। গত ২৭ ডিসেম্বর এক বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রজত জয়ন্তী উৎসব শুরু হয়। জমজমাট তিন দিনের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্টজনেরা।
প্রসঙ্গত, বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সকলকে নজর কেড়েছে। বৈদিক শান্তি মন্ত্র পাঠ ও প্রার্থনা সহকারে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর শোভাযাত্রা ও পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্মারক পত্রিকা প্রকাশ, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের আলাদা মাত্রা এনে দেয়। উল্লেখ্য, এদিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডি আই জি, আই পি এস ) ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক সুখেন্দু হীরা। তিনি শিশু বিকাশে মায়েদের ও স্কুলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন। শিশুদের সঠিক পথে চালিত করার আটটি পথ দেখান। স্কুলের সার্বিক সাফল্য কামনা করে ঠাকুর ও মায়ের আর্শীবাদ প্রার্থনা করেন।
দ্বিতীয় দিনের মনোজ্ঞ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃত বিবেকানন্দ মিশন মহাবিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ড. সুনীতা বর্মন। তিনি উপনিষদ ও কথামৃত থেকে উল্লেখযোগ্য বাণী তুলে ধরে ছাত্রছাত্রীদের বড়ো হবার মন্ত্র শেখান। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক দেবাশিস শেঠ এই শিশু বিতানের উত্থাপনের কাহিনী শোনান। ধীরে ধীরে এই শিশু বিতান ২৫ বছরে অনেকটাই স্বাবলম্বী। এজন্য তিনি ধন্যবাদ জানান, এখানকার শিক্ষক- শিক্ষিকা ও কর্মীদের। সেই সঙ্গে অকৃপণ সহায়তার জন্য হেলান শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের ভূয়সী প্রশংসা করেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আরামবাগ মহকুমা পুলিশ আধিকারিক সুপ্রভাত চ্যাটার্জি ও বিশিষ্টজনরা।
উল্লেখ করা যেতে পারে, তিন দিনের মনোরম পরিবেশে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সকলকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে নদীয়ার পুতুল নাচ, যোগব্যায়াম প্রদর্শন, ম্যাজিক শো, ছাত্রছাত্রীদের মস্তিষ্কপ্রসূত ভাবনার ফসলের প্রদর্শনী ও নাটক সকলের হৃদয়গ্ৰাহী হয়।
প্রসঙ্গত, রজত জয়ন্তী বর্ষপূর্তি উৎসব উপলক্ষে স্মরণিকায় বেলুড় মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ মহারাজ ভক্ত ও ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে এক মহতী বার্তা দেন। বার্তায় তিনি বলেন, কেবল পুঁথিগত শিক্ষাই মানুষ তৈরি করে না, মূল্যবোধের শিক্ষাই প্রকৃত মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটায়। আশা করি, শিশু বিতানে পাঠ্যপুস্তক পঠন পাঠনের সাথে সাথে নৈতিক মূল্যবোধেরও শিক্ষা দেওয়া হবে। যার দ্বারা ছাত্রছাত্রীদের জীবনে শিক্ষার পরিপূর্ণতা পরিলক্ষিত হবে। তখনই শিশু বিতান প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আক্ষরিক অর্থে হয়ে উঠবে শ্রীসারদা-সরস্বতীর মন্দির স্বরূপ। কামারপুকুর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী লোকোত্তরানন্দ মহারাজ লিখিত বার্তায় জানান, উদ্ভিদ আলোর পথে গমনশীল, আলো ছাড়া তার অস্তিত্ব ভাবা যায় না।এই আলোর স্বাদ যে একবার পেয়েছে সে তার বিপরীতে আর সহজে যাবে না। শিক্ষা হল আমাদের কাছে আলোস্বরূপ।
এদিকে হেলান শ্রী রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সভাপতি বলাই কুমার খাঁ ও সম্পাদক চন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য রজত জয়ন্তী বর্ষপূর্তি উৎসব সাফল্যের জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া রজত জয়ন্তী বর্ষপূর্তি উৎসব কমিটির সভাপতি শান্তনু পুরকাইত ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনন্ত কুমার পাল জানান, এলাকার মানুষ ও অভিভাবকদের সহযোগিতা এবং বর্তমান ও প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের ঐকান্তিক ভালোবাসা, সেই সঙ্গে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অশিক্ষক কর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টায় আজকের এই স্কুল রজত জয়ন্তী বর্ষে মন্দিরের রূপ ধারণ করেছে। এজন্য সকলকে কুর্নিশ জানাতেই হয়।
তিনদিনের এই অনুষ্ঠান সত্যি খুব সুন্দর হয়েছে। ছাত্র ছাত্রীরা এই অনুষ্ঠানে খুবই আনন্দিত হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষক শিক্ষিকারা এই অনুষ্ঠানের অংশগ্রহণ জন্য ছাত্রছাত্রীদের এত সুন্দর করে তৈরি করেছেন যা বলার ভাষা রাখে না। আশা রাখব ভবিষ্যতে এই রকম সুন্দর অনুষ্ঠান আমরা আবার দেখতে পাব।।