শুক্রবার | ১৮ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:৪৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (শেষ পর্ব) : জমিল সৈয়দ চড়কপূজা কি আসলে ছিল চণ্ডকপূজা : অসিত দাস অরুণাচলের আপাতিনি : নন্দিনী অধিকারী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (সপ্তম পর্ব) : জমিল সৈয়দ শাহরিয়ার কবিরকে মুক্তি দিন : লুৎফর রহমান রিটন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (ষষ্ঠ পর্ব) : জমিল সৈয়দ ওয়াকফ সংশোধনী আইন এই সরকারের চরম মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ : তপন মল্লিক চৌধুরী ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (পঞ্চম পর্ব) : জমিল সৈয়দ যশোধরা — এক উপেক্ষিতা নারীর বিবর্তন আখ্যান : সসীমকুমার বাড়ৈ কলকাতার কাঁচাভেড়া-খেকো ফকির ও গড়ের মাঠ : অসিত দাস ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (চতুর্থ পর্ব) : জমিল সৈয়দ রামনবমী পালন এবং হুগলী চুঁচুড়ার শ্রীরামমন্দির : রিঙ্কি সামন্ত ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (তৃতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ মিয়ানমারে ভূমিকম্প — প্রতিবেশী দেশের জনগণের পাশে বাংলাদেশ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ওড়িশার হীরক ত্রিভুজ : ললিতগিরি, উদয়গিরি ও রত্নগিরি (দ্বিতীয় পর্ব) : জমিল সৈয়দ
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সাসারামের রোহতাসগড়, বৃহতের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ : নন্দিনী অধিকারী

নন্দিনী অধিকারী / ৬৯৯ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

সাসারাম মানে বাবু জগজীবন রাম। পেছন ফিরে তাকালে ইতিহাস বইয়ের জ্ঞান, শের শাহ সুরির সমাধিস্থল। এছাড়া সাসারামের অন্য কোনো পরিচয় জানা ছিল না।

প্রথম দর্শনে শহরটার প্রতি মোটেই প্রেম জাগে না। যত্র তত্র পানের পিক, অপরিচ্ছন্নতা, গুটকাডলা হাতের তালু, চটকদার শাড়ি, গোয়াল — খাটালের দুর্গন্ধ মেজাজ বিগড়ে দেবার জন্যে আদর্শ। কিন্তু এক মনের ঘরে যেমন অনেকজনার বসতি, তেমনি এক জায়গার মধ্যেই থাকে অন্য অনেক চোরাগোপ্তা স্থান। তাকে শুধু চিনে নেবার অপেক্ষা।

শহর ছাড়তেই ধানের ক্ষেতে সবুজায়ন। ধানের বুকে সবে দুধ জমতে শুরু করেছে। তাই বোধহয় ধানগাছেরা “স্তনভারে ঈষৎ নম্র”। দূরে সবুজ পাহাড়ের গা বেয়ে ঝর্ণাদের মুক্তির আনন্দ। পথের ধারে ধারে প্রথম বাদলের নয়, শেষ বরষার কদম ফুল ফুটে আছে। যে দিকে চোখ যায়, আদিগন্ত সবুজের হাতছানি।

রোহতাস জেলার কৈমুর পাহাড়ের কোলে বসে আছেন দেবী তুতলা ভবানী। তুতলার সঙ্গে তোতলানোর কোনো সম্পর্ক নেই, স্থান-মাহাত্মে দেবীর এমন নামকরণ। দেবীর আরেকটি সুন্দর নাম সোনাক্ষী। দেবীদের অধিষ্ঠান বেশির ভাগ পাহাড়-পর্বতে। ইনিও বিরাজ করেন জঙ্গল-পর্বতের মাঝে। বর্ষায় দুটি পাহাড়ের মাঝখান থেকে নেমে আসা একটি ঝর্ণা পা ধুইয়ে দেয় দেবী সোনাক্ষীর। ছেলেপুলে কোলে কাঁখে নিয়ে অনেকটা চড়াই ভেঙে ভক্তের দল যাচ্ছে পুণ্যলোভে, ঝর্ণার আকর্ষণে। সদ্য জ্বর থেকে উঠে আমার আর গৌরীদির ভাদুরে রোদে পাহাড়ী পথে আর চড়ার ক্ষমতা ছিল না। আমরা গাছের ছায়ায় বসে বসে জঙ্গল নদী পাহাড় আর মানুষ দেখলাম।

কৈমুর পাহাড়ের বুক থেকে নেমে আসা ঝর্ণা উপত্যকায় নদী হয়ে বয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে নিয়ে বালি পাথর। সে নদী তিরতির করে চলে বিলীন হয়েছে সোন নদীর বুকে। সেই নদীর কাছে বসে থাকতে থাকতে মনে হল পাহাড় থেকে সগৌরবে ঝাঁপিয়ে পড়ে সে এমনটি শান্ত হয়ে গেল কি করে? তারপরে সোনের বুকে তার অস্তিত্ব হারালো! একেই কি বলে বৃহতের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ?

কৈমুর পাহাড়ের ধার ঘেঁষে চলতে চলতে পথ আমাদের পৌঁছে দিল রোহতাস গড়ে। দুর্গের ভাঙাচোরা বিশাল ফটকে কত গৌরবগাথা, পরাজয়ের বেদনা। কিংবদন্তি বলে, রহস্যে ঘেরা এই কেল্লা নাকি আদতে পৌরাণিক রাজা হরিশ্চন্দ্র পুত্র রোহিতাশ্বের। রোহিতাশ্ব লোকমুখে রোহতাস। ইতিহাস জানায়, এই দুর্গকে মহিমান্বিত করেছিলেন শের শাহ সুরি। দুর্গের ভিতর মসজিদ আছে। মন্দির ভি আছে। একা একা কখনো রাখালিনী বিজলী কিলাতে গেলে তার ডর লাগে। দুর্গের বাইরে সারি সারি ঘোড়াশাল, পিলখানা। বৃষ্টি পড়লে তার গায়-বাছরাদের সেখানে নিশ্চিন্ত আশ্রয়। কেল্লার সামনের মাঠে বর্ষায় সবুজ ঘাস লকলকিয়ে উঠেছে। এই চারণভূমি ছেড়ে নড়তেই চায় না রাখালিনী রাখালদের চারপেয়েরা।

দুর্গের হাতিশালে হাতি আর শোভা না দিলেও দুর্গের প্রধান দেউড়িতে দুটি সুন্দর অলঙ্কৃত হাতি। শের শাহের পর আকবরের সময় রাজা মানসিংহ এই কেল্লার দখল নিয়েছিলেন। তখন হয়তো আবার গমগমিয়ে উঠেছিল রোহতাসগড়। কেল্লার ভেতর মন্দিরের ঘন্টা বাজত। রাজস্থানী ঝরোখায় বাঈশাহদের হাসির লহর উঠত। শাহী দরবারে রাজপুত বীরদের মোজরীর আওয়াজ উঠত খসখস মচমচ। সেইসব স্মৃতি বুকে নিয়ে, বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এখন ধ্বংসের দিন গুনছে রোহতাসগঢ়। সরকার, পর্যটক সবাই কেমন যেন উদাসীন এই ঐতিহ্যের প্রতি।

শুধু প্রকৃতি এখানে অকৃপণ। বর্ষার জলে সে আনন্দে সেজে উঠেছে দিকে দিকে। দুর্গাবতী জলপ্রপাত পাহাড়ের বুকে তৈরি করেছে গভীর গুহা। তাঁর নাম তেল্‌হার কুন্ড। কর্মনাশা নদী নাচতে নাচতে এসে কঠিন পাথর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে নিচে। নাম নিয়েছে কর্কটগঢ় জলপ্রপাত। করমচাট জলাধার ঘিরে রয়েছে শিবলিঙ্গের মত একখন্ড পাহাড়কে। সবটাই বড় মনোরম। চোখ জুড়োনো। মালিন্য, নীচতা, অশুচির ঊর্দ্ধে ওঠা শান্তির এক একটি আবাসস্থল।

সাসারামে শেষ শয্যায় শুয়ে আছেন শেরশাহ সুরি তাঁর আত্মীয় পরিজনদের নিয়ে। শেরশাহ তাঁর আব্বাজান এবং প্রিয় বেয়াই মশাইকেও ভোলেন নি। তাঁদের সমাধিও রয়ে গেছে সাসারামের বুকে।

ইতিহাস বিখ্যাত এই আফগানী বাদশা মুঘল সাম্রাজ্যকে টক্কর দিয়েছিলেন। তাঁর চিরশত্রু হুমায়ূনও তাঁকে সম্মান দিয়ে ওস্তাদ-ই-বাদশাহাঁ বলতে কার্পণ্য করেননি। তিনি ছিলেন সুলতান-ই-আদিল বা ন্যায়পরায়ণ শাসক। শাসনব্যবস্থার সংস্কারে আকবরের পূর্বসূরী।

তাঁর সমাধিস্থলের চারিদিকে জলের পরিখা। স্থানীয় মানুষ এটিকে বলেন পানি রোজা। নিজের জীবদ্দশায় এই সমাধির কাজ শের শাহ শুরু করে দিয়েছিলেন। সূর্যাস্তে জলের ওপর ছায়া পড়ে সেই অপূর্ব ইন্দোইসলামিক স্থাপত্যের।

কেমন যেন মন বিষণ্ণ হয়ে যায় ।

তিন হাজার বছরেরও পুরনো সভ্যতা আর সংস্কৃতির পীঠস্থান বিহার। এখানেই প্রথম গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করেছিল লিচ্ছবিরা। বিহার আমাদের দিয়েছে বোধিবৃক্ষের ধ্যান, নালন্দা-ওদন্তপুরী-বিক্রমশীলার জ্ঞান। সেই কোন কলেজ জীবনে নালন্দা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দাঁড়িয়ে চোখের জল ধরে রাখতে পারিনি। সেকথা আবার মনে পড়ে গেল এতদিন পর আবার বিহারে এসে। আমরা যে বড্ড ভালোটুকু আঁকড়ে বাঁচতে চাই!


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “সাসারামের রোহতাসগড়, বৃহতের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ : নন্দিনী অধিকারী”

  1. Parama Dasgupta says:

    Khub bhalolaglo. known off beat place tar somporke jene

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন