শুক্রবার | ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১১:৫২
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত গোপাল ভাঁড়ের আসল বাড়ি চুঁচুড়ার সুগন্ধ্যায় : অসিত দাস প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : সুমিত ভট্টাচার্য মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস মহাকুম্ভ ও কয়েকটি প্রশ্ন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন : ড. দীপাঞ্জন দে অমৃতের সন্ধানে মাঘী পূর্ণিমায় শাহীস্নান : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

রামপ্রসাদ ও সেকাল — এক বীরাচারির দোটানার জীবন : প্রলয় চক্রবর্তী

প্রলয় চক্রবর্তী / ২৪১ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০২৪

বাংলার রাজনৈতিক সন্ধিক্ষণের পরোক্ষ কুশীলব ছিলেন সাধক- কবি রামপ্রসাদ। বাংলায় মুঘল শাহী-উত্তরাধিকার, কাশিমবাজার-চুঁচুড়া — সৈদাবাদে ইউরোপীয় বানিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলির বাজার দখলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং রাজনৈতিক ভূগোল ও ক্ষমতা দখলের এক বিরল সময়ের সাক্ষী ছিলেন রামপ্রসাদ। কুমারহট্র,বর্তমান হালিশহরে বীরাচারী সাধক রামপ্রসাদ এর জন্ম আনুমানিক ১৭২০ খ্রিষ্টাব্দ, মতান্তরে ১৭১৮। নবাব সিরাজের সঙ্গ, রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পৃষ্ঠপোষকতা, ইংরেজের চক্রান্তের বলি মহারাজ নন্দকুমার, সাবর্ন রায়চৌধুরীদের স্নেহ-আশ্রয় রামপ্রসাদকে জারিত করলেও, তাঁর সাধের পঞ্চমুন্ডী আসন থেকেই তিনি প্রত্যক্ষ করেছিলেন ইতিহাসের ‘বড় ঘটনাগুলো’। তাঁর জীবন ও কাব্যচর্চায় এইসব ঘটনাবলী কোন না কোনভাবে প্রভাব ফেলেছিল।

রামপ্রসাদ সেন বাঙালির কাছে তাঁর শ্যামা-সঙ্গীত ও কালী সাধনার জন্যই পরিচিত। তাঁর লেখা ও কন্ঠের জাদুতে ভরা গান বাঙালির একান্ত ঘরের আলাপের মত, নিজস্ব ও বাস্তব। মধ্যবয়সে তিনি বিদ্যাসুন্দরের প্রেমোপাখ্যানে মজেছিলেন। বীরাচারী সাধকের মানবজমিন তত্ব- তল্লাসের এ এক অভিনব প্রয়াস। দেবত্বের স্তরে উন্নীত মানুষ রামপ্রসাদ স্ত্রী-পুত্র-কন্যার ভরা সংসারে ‘কামরূপের রস থেকে যে বঞ্চিত ছিলেন না, জীবিকা ধারণে তবিলদারির সাধকও ছিলেন, ‘রত্নভান্ডার সবাই লুটে’ তাঁকে ফাঁকি দেয় — তিনি জানতেন। তাই তিনি লিখতে পেরেছিলেন নিপাট গদ্য কথা বিদ্যা ও সুন্দরের উপাখ্যান।

রামপ্রসাদ কোনও আখড়া বা আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেননি। শিষ্য শিষ্যা মুরুব্বী নিয়ে কোন দল গড়েননি। কোনও প্রচারক ছিলেন না তিনি। অত্যন্ত সাধারণ ও সাদাসিধে জীবনযাপনে অভ্যস্ত তিনি তাঁর যা কিছু ভাবনা তা গান গেয়েই প্রকাশ করতেন।

এহেন সাধক কবি সান্নিধ্য পেয়েছেন শাসক কুলের, পেয়েছেন পার্থিব যাপন প্রতিশ্রুতি। পলাশীর যুদ্ধ খ্যাত রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে সাক্ষাৎ, আলাপচারিতায় তিনি নিশ্চয়ই মুগ্ধ হয়েছিলেন! রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রামপ্রসাদকে তার রাজসভার ‘সভাকবি’ হতে বলেছিলেন। সহজ সরল দারিদ্র লাঞ্চিত জীবনচর্যায় অভ্যস্ত রামপ্রসাদ এই ‘সুবিধাজনক রাজপ্রসাদ’ গ্রহণ করেন নি! কৃষ্ণচন্দ্র কিন্তু এর জন্য রামপ্রসাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন নি। তিনি রামপ্রসাদকে ‘একশত বিঘা নিষ্কর জমি’ ও ‘কবিরঞ্জন’ উপাধি প্রদান করেছিলে! মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের সভাসদ হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও নিষ্কর জমি ও কবিরঞ্জন উপাধি নির্দ্ধিধায় গ্রহন করেন। এমনকি রাজ আজ্ঞায় তাঁর চর্চা ও অপছন্দের বিদ্যাসুন্দর কাব্য লিখতেও রাজি হয়ে যান! এখানে যে কথাটি প্রতিষ্ঠা পায় তা হল, যে রামপ্রসাদ রাজ সভাসদ হওয়ার মত লোভনীয় সু্যোগ অবলীলায় ছেড়ে দেন, সেই তিনি আবার রাজার মনোরঞ্জনে ব্যস্ত হন এবং রাজানুগ্রহ কে মান্যতা দেন!

তবে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ঠিক কত পরিমান জমি রামপ্রসাদকে দান করেছিলেন তা নিয়ে নানা মত আছে। রামপ্রসাদকে কৃষ্ণচন্দ্রের জমি দানের ঘটনাটি ঘটে পলাশীর যুদ্ধের পর। ঈশ্বর গুপ্ত তাঁর ‘কবিবর রামপ্রসাদ সেন’ রচনায় উল্লেখ করেছেন এর পরিমান ছিল ‘চৌদ্দ বিঘা’। আবার অপর এক গবেষক মনে করেন মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র রামপ্রসাদকে ‘বেওয়াড়িস গরজমা জঙ্গলভূমি সমেত পরগণে হাবেলী শহরে ১৬ বিঘা এবং পরগণে উখড়ায় ৩৫ বিঘা একুনে ৫১ বিঘা দান করেছিলেন। আরেকটি তথ্যে ওই ৫১ বিঘা থাকলেও স্থানের সামান্য গরমিল আছে। এসব উল্লেখের কারণ হল, কৃষ্ণচন্দ্র ছাড়াও সাধক কবি অন্যান্যদের কাছ থেকেও জমি ও বাড়ি দান হিসেবে পেয়েছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন দর্পনারায়ণ, রাম রায়, কালীচরণ রায়, সুভদ্রা দেবী। এছাড়াও তিনি আনুকূল্য পেয়েছেন কলকাতার সাবর্ণ রায়চৌধুরী ও মহারাজ নন্দকুমারের। আজন্ম দরিদ্র রামপ্রসাদ এর নির্লোভ ও বিষয়বিমুখ মানসিকতার সঙ্গে এই সম্পত্তিচিত সংযোগ কেমন বেমানান মনে হয়না! আবার এও সত্যি, রামপ্রসাদ রাজার দান প্রত্যাখ্যান না করতে পারলেও সভাকবি হয়ে কৃষ্ণনগরে যাননি, হালিশহরের বাড়িতেই থেকেছেন। রাজানুগ্রহে জমি ও উপাধি পেলেও রামপ্রসাদ তাঁর গানে বা অন্যান্য লেখায় কোথাও কখনও মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বন্দনা দূরে থাক, তাঁর নাম পর্যন্ত উল্লেখ করেন নি।

নৃশংস, হৃদয়হীন, নারীলোলুপ ইত্যকার নানা বিশেষণে বিশেষিত বাঙলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজুদ্দৌলা রামপ্রসাদের কাছে কালীকীর্তন শুনতে চেয়েছিলেন। এক অপরিচিত সাধকের কাছে একজন মুসলমান শাসকের কালীকীর্তন শুনতে চাওয়া সিরাজের উদার হৃদয়ের সাক্ষ্যই বহন করে। রামপ্রসাদের গান শুনে সিরাজ এতটাই মোহিত হন যে তিনি রামপ্রসাদ কে তাঁর দরবারে উচ্চ-পদের রাজকর্মচারী নিয়োগ করতে চেয়েছিলেন। রামপ্রসাদ এই প্রস্তাব গ্রহনে অসমর্থ হলে সিরাজ তাঁকে অভিযুক্ত করেন নি, ক্ষুদ্ধ হননি। লোকশ্রুতি ও বাস্তবের মিশেলে সিরাজ-রামপ্রসাদ কাহিনী আমাদের এক সর্বজনীন মানবতার ইঙ্গিত দেয়। আবার মনে রাখা দরকার, ক্লাইভের চন্দননগর আক্রমনের সময় ইংরেজ সেনাপতি ওয়াটসন কৃষ্ণচন্দ্রের সঙ্গে কুমারহট্রে আসেন, রামপ্রসাদের বাড়িতে এসে নাকি তাঁর আশীর্বাদ চান! রাজা কৃষ্ণচন্দ্র তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খা চরিতার্থ করতে সরলমনা সাধককে ব্যবহার করেছিলেন কিনা, কে বলতে পারে!

আবার এও সত্যি, সমসময়ের কালচক্র রামপ্রসাদের জীবনে কোন প্রভাব ফেলেনি। তিনি তাঁর কালীমায়ের চরণে সবকিছু সমর্পণ করে কাব্যচর্চা করেছেন। সমসময়ের ঘটনাবলী তাঁর নিবিষ্ট কাব্য চর্চার অন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। বর্গীর হাঙ্গামা, অত্যাচার, পলাশীর যুদ্ধ, ছিয়াত্তরের মন্বন্তর – এসব সমসময়ের ঘটনাবলী তাঁর চিন্তা চর্চার বাইরে থেকে গেছে। কখনও বিষয় সম্পত্তি না থাকায় আরাধ্য দেবীকে ‘এ ভাল করেছো’ বলেছেন, ‘অর্থ বিনা’ যে সংসার অচল একথা অস্বীকার করেননি, আবার — পান-বেচে-খাওয়া কৃষ্ণপান্তি জমিদারি পাওয়ায় আক্ষেপ করেছেন। এক বিভ্রান্ত সময়ের মানুষ ছিলেন রামপ্রসাদ, ভ্রান্তি ছিল স্ব-জীবনেও হয়তো!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন