শনিবার | ১৪ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | বিকাল ৩:৪৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
বল পয়েন্ট কলমের জার্নির জার্নাল : রিঙ্কি সামন্ত মহেঞ্জোদারো নামের নতুন ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস পরিসংখ্যানে দারিদ্রতা কমলেও পুষ্টি বা খাদ্য সংকট কি কমেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী অথ স্নান কথা : নন্দিনী অধিকারী তন্ত্র বিদ্যার বিশ্ববিদ্যালয় চৌষট্টি যোগিনীর মন্দির : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মেসোপটেমিয়া ও সিন্ধুসভ্যতার ভাষায় ও স্থাননামে দ্রাবিড়চিহ্ন : অসিত দাস ধরনীর ধুলি হোক চন্দন : শৌনক দত্ত সিন্ধুসভ্যতার ভাষা মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির নামে : অসিত দাস বিস্মৃতপ্রায় জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় ভাষায় সিন্ধুসভ্যতার মেলুহার ভাষার প্রভাব : অসিত দাস বঙ্গতনয়াদের সাইক্লিস্ট হওয়ার ইতিহাস : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘ঝড়ের পরে’ ভালো থাকার পাসওয়ার্ড (শেষ পর্ব) : বিদিশা বসু গাছে গাছে সিঁদুর ফলে : দিলীপ মজুমদার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড : বিদিশা বসু সলিমুল্লাহ খানের — ঠাকুরের মাৎস্যন্যায় : ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা : মিল্টন বিশ্বাস নেহরুর অনুপস্থিতিতে প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদও ৩৭০ অনুমোদন করেছিলেন : তপন মল্লিক চৌধুরী সিঁদুরের ইতিকথা আর কোন এক গাঁয়ের বধূর দারুণ মর্মব্যথা : দিলীপ মজুমদার সাহিত্যিকদের সংস্কার বা বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে শ্রীপাণ্ডবা বা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘সময়ের প্ল্যাকটফর্ম’ গুহাচিত্র থেকে গ্রাফিটি : রঞ্জন সেন জামিষষ্ঠী বা জাময়ষষ্ঠী থেকেই জামাইষষ্ঠী : অসিত দাস কার্বাইডে পাকানো আম দিয়ে জামাইষষ্ঠীতে জামাই খাতির নয়, হতে পারে ক্যান্সার : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভক্তের ভগবান যখন জামাই (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত কাশ্মীর নিয়ে বিজেপির নেহরুকে দোষারোপ ধোপে টেকেনা : তপন মল্লিক চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই প্রভু জগন্নাথদেবের শুভ স্নানযাত্রার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মহেঞ্জোদারো নামের নতুন ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস

অসিত দাস / ৯১ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০২৫

মোহেনজোদারো তথা মহেঞ্জোদারো নামটির অর্থ ও ব্যুৎপত্তি নিয়ে ধোঁয়াশা কাটেনি। সিন্ধিভাষায় যতই একে মোয়েন-জো-দারো তথা Mound of dead বলা হোক না কেন, সেটি সর্বসম্মত মত নয়। অনেকে সংস্কৃত ও দ্রাবিড় ব্যুৎপত্তির কথাও ভেবেছেন।

তবে একটি কথা জানা দরকার, Mohenjodaro শহরের কয়েকশো মাইলের মধ্যে Judeirjodaro, Chanhudaro, Kahujudaro, Lakheerjodaro ইত্যাদি দারো-অন্তক জনপদ আছে এখনও।

আলেকজান্ডার কানিংহাম, জন মার্শাল ও বাঙালি প্রত্নতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম মহেঞ্জোদারো আবিষ্কারের নেপথ্যে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

মহেঞ্জোদারো (Mohenjo-daro) একটি প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন, যা সিন্ধু উপত্যকা সভ্যতার (Indus Valley Civilization) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর হিসেবে পরিচিত। এই শহরটি বর্তমান পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে অবস্থিত এবং এর নামটি একাধিক ভাষাতাত্ত্বিক ব্যাখ্যার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

“মহেঞ্জোদারো” শব্দটি মূলগতভাবে সিন্ধি ভাষা থেকে এসেছে বলে প্রচলিত বিশ্বাস। এটি দুটি পৃথক শব্দের সমন্বয়ে গঠিত বলে ধারণা করা হয়।

১. “মহেঞ্জো” (Mohen-jo)

২. “দারো” (Daro)

সিন্ধিভাষায় জো মানে বাংলা এর বা ইংরেজির of।

এই দুটি শব্দ একত্রে গঠিত করে “মহেঞ্জোদারো” অর্থাৎ “মৃতদের টিলা” বা “মৃত মানুষের পাহাড়” (Mound of Dead)।

প্রচলিত বুৎপত্তি অনুসারে মহেঞ্জোদারো নামটিকে দুটি ভাগে(বা তিনটি) বিভক্ত করা হয়। এটি দারো-অন্ত অন্য জনপদগুলির ক্ষেত্রেও করা যায়।

১. “মহেঞ্জো” বা মহেন-জো

“মহেঞ্জো” শব্দটি সিন্ধি ভাষার “মোয়ান” (Muhan) বা “মোহান” (Moen) শব্দ থেকে উদ্ভূত বলে ধারণা করা হয়, যার অর্থ হতে পারে “মৃত” বা “মৃত্যুর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তি”। আবার অনেকে মনে করেন এটি “মুওঁ” (Muo)-যার অর্থ “মৃত”-এই শব্দের পরিবর্তিত রূপ। এই শব্দটি সংস্কৃত “মৃত” (মরণ) শব্দের সঙ্গেও ধ্বনিগত মিল রাখে।

জো মানে এর বা Of।

সুতরাং, “মহেঞ্জো” বা ‘মহেন-জো’ বলতে বোঝানো হতে পারে “মৃত ব্যক্তি”-দের বা “যে ব্যক্তি মারা গেছে” তার, বা সামগ্রিকভাবে “মৃতদের”।

২. “দারো”:

“দারো” শব্দটি সিন্ধি ভাষায় “টিলা”, “উঁচু জায়গা” বা “উঁচু জমি”-র অর্থে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ভৌগোলিক পরিভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা কোনো ধ্বংসাবশেষ বা প্রাচীন বসতির উঁচু স্তূপকে বোঝায়।

এই ধরণের টিলাগুলি প্রাচীন সভ্যতার ধ্বংসপ্রাপ্ত বসতির উপর মাটি ও ধ্বংসাবশেষ জমে ওঠার ফলে গঠিত হতো। বর্তমানে প্রত্নতাত্ত্বিক ভাষায় এগুলিকে “mound” বা “tell” বলা হয়।

এই দুটি শব্দ যখন একত্রে ব্যবহৃত হয়—“মহেঞ্জো + দারো”—তখন এর অর্থ দাঁড়ায় “মৃতদের টিলা” বা “মৃত মানুষের স্তূপ/পাহাড়”। এ থেকেই অনুমান করা হয়, সম্ভবত এই অঞ্চলটি একসময় একটি বড় কবরস্থান বা মৃতদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে পরিচিত ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধানে এখান থেকে বিভিন্ন কঙ্কাল, দাহসামগ্রী ও মৃতদের ব্যবহৃত বস্তু উদ্ধার হওয়ায় এই নামকরণ সঙ্গত মনে হয়। ওই অঞ্চলে লোকবিশ্বাস ছিল যে ওই টিলায় উঠলে যে কোনও লোকের গায়ের রঙ নীল হয় যেত।

তবে এখানে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি—“মহেঞ্জোদারো” নামটি সম্ভবত প্রাচীন কালে ব্যবহৃত হতো না। এটি আধুনিক যুগে, ব্রিটিশ আমলে বা তার পরবর্তী প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের সময় স্থানীয় মানুষের মুখে প্রচলিত একটি নাম হিসেবেই উঠে এসেছে। আসল শহরের নাম কী ছিল, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি, কারণ এখনো পর্যন্ত সেই সময়ের কোনো নিশ্চিত লিখিত নাম উদ্ধার হয়নি।

যদিও সিন্ধুলিপি বিশেষজ্ঞ ইরাবথম মহাদেবন মহেঞ্জোদারোর প্রাচীননাম ‘কুক্কুটারমা’ বলে চিহ্নিত করেছেন। একটি সিল বা ফলক থেকেই নাকি তিনি এই নাম পেযেছিলেন।

সিন্ধি ভাষা একটি প্রাচীন ভাষা, যার শিকড় রয়েছে সংস্কৃত ও প্রাকৃতিক ভারতীয় উপভাষাগুলিতে। তাই “মহেঞ্জো” ও “দারো” শব্দগুলির উৎস অনুসন্ধানে দেখা যায় যে সেগুলির সঙ্গে সংস্কৃত, প্রাকৃত এমনকি দ্রাবিড়ীয় ভাষার মিল রয়েছে।

কিছু গবেষক মনে করেন, সিন্ধু সভ্যতা দ্রাবিড় জনগোষ্ঠীর দ্বারা গঠিত ছিল, এবং তাদের ভাষা দ্রাবিড় পরিবারের সদস্য হতে পারে। এ কারণে “দারো” বা “দ্র” জাতীয় শব্দের ব্যুৎপত্তি দ্রাবিড় ভাষার উপাদান থেকেও আসতে পারে।

বেশ কয়েকজন গবেষক দাবি করেছেন যে “মহেঞ্জোদারো” নামটির এই ব্যাখ্যা একান্তই আধুনিক এবং স্থানীয় জনশ্রুতির উপর নির্ভরশীল। তারা মনে করেন, এই নামের পেছনে কোনো নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। প্রাচীন নাম কী ছিল, সেটি হয়তো হারিয়ে গেছে অথবা এখনো কোনো লিপিতে গচ্ছিত রয়েছে, যা আমরা পড়তে পারিনি (কারণ, সিন্ধুলিপির এখনো পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়নি)।

“মহেঞ্জোদারো” নামটির ব্যুৎপত্তি ভাষাতাত্ত্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি শুধু একটি স্থানের নাম নয়, বরং একটি সভ্যতার পরিচায়ক। নামটির অর্থ “মৃতদের টিলা”—যা একদিকে প্রত্নতাত্ত্বিক সত্যতা বহন করে, আবার অন্যদিকে এটি ইতিহাসের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সংযোগও গড়ে তোলে।

তবে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে এই নামকরণ হয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের অনেক পরে, এবং এটি স্থানীয় জনশ্রুতি ও ভাষার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতার আসল নাম জানার জন্য আরও গবেষণা এবং লিপি বিশ্লেষণের প্রয়োজন রয়েছে।

আমার মনে হয় প্রত্নতাত্ত্বিক খননের সময় স্থানীয় মানুষের মুখের কথা শুনে মহেঞ্জোদারো নামটি দেওয়া হলেও এর মধ্যেই লুকিয়ে ছিল অঞ্চলটির আদিনামের সূত্র।

দ্রাবিড় জনগোষ্ঠী যে ওই এলাকার আদি ভূমিপুত্র ছিল তা বিভিন্ন তথ্যে উঠে এসেছে। তামিল ‘মনরম’, মালয়লম ‘মন্নম’ বা কন্নড় ‘মনদে’ শব্দের অর্থ গৃহ, গোশালা, সভাগৃহ। আবার দ্রাবিড় তোদা ভাষায় মন্দু শব্দের অর্থ হল ছোট গ্রাম। উর বা উরু শব্দের অর্থ দ্রাবিড়ে শহর, গ্রাম বা জনপদকে বোঝায়। ‘ওর’ মানে দ্রাবিড়ে প্রান্তভাগ। উদাহরণ, কারুর, মেলুর, কালাম্বুর ইত্যাদি, — এগুলি সবই বর্তমান তামিলনাড়ুর শহরের নাম।অন্য এক দ্রাবিড় ভাষা কন্নড়েও এর প্রচলন আছে স্থাননামে। যেমন কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু, মাইসুরু, ম্যাঙ্গালুরু ইত্যাদি। মন্নমউরু, মনরমউরু, মনদেউরু নামেই হয়তো পরিচিত ছিল আজকালকার তথাকথিত মহেঞ্জোদারো। কারণ এই নগরসভ্যতায় সুনির্মিত গৃহ, সারিবদ্ধ গোয়ালঘর ও সভাগৃহ ছিল অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মনদেউরু-ই লোকমুখের উচ্চারণে হাজার হাজার বছরের পরে মোয়েঞ্জোদরো তথা মহেঞ্জোদারো হয়ে গেছে। মনদেউরু > মনদেদুরু (ব্যঞ্জনাগম) > মঞ্জেদুরু > মহেঞ্জোদরো। ব্যঞ্জনাগম মনে হয় বাংলাভাষার একার সম্পত্তি নয়। কেউ এটিকে গাঁজাখুরি তত্ত্ব বলে উড়িয়ে দেওয়ার আগে নিজেও যেন একটি স্বকপোলকল্পিত তত্ত্ব উপস্থাপিত করেন। কারণ সিন্ধুলিপির প্রোটোদ্রাবিড়ীয় ভাষার তত্ত্ব ইরাবথম মহাদেবন থেকে আস্কো পারপোলা প্রমুখ অনেক সিন্ধুসভ্যতা-বিশেষজ্ঞই দিয়েছেন। আমরা তো কোন ছার!

সূত্রঃ বাংলায় দ্রাবিড় শব্দ (ব্যুৎপত্তিকোষ) — ড. সত্যনারায়ণ দাশ


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন