রবিবার | ৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:০২
Logo
এই মুহূর্তে ::
সিন্ধুসভ্যতা ও সুমেরীয় সভ্যতায় কস্তুরীর ভূমিকা : অসিত দাস রবি ঠাকুর ও তাঁর জ্যোতিদাদা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তরল সোনা খ্যাত আগর-আতর অগুরু : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সাদা-কালো রীল’ গঙ্গার জন্য লড়াই, স্বার্থান্বেষীদের ক্রোধের শিকার সাধুরা : দিলীপ মজুমদার সিন্ধুসভ্যতার প্রধান মহার্ঘ রপ্তানিদ্রব্য কস্তুরী : অসিত দাস রাখাইন পরিস্থিতি রোহিঙ্গা সংকট ও মানবিক করিডোর : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন রামকৃষ্ণ মিশন মানে ধর্মকর্ম নয়, কর্মই যাঁদের ধর্ম তাঁরাই যোগ্য : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে সিংহবাহিনী মন্দির, নবগ্রাম (ঘাটাল) : কমল ব্যানার্জী পরিবেশ মেলা ২০২৫ : ড. দীপাঞ্জন দে মন্দির-রাজনীতি মন্দির-অর্থনীতি : দিলীপ মজুমদার স্বাধীনতা-সংগ্রামী মোহনকালী বিশ্বাস স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে অক্ষয়তৃতীয়া, নাকি দিদিতৃতীয়া : অসিত দাস আরএসএস-বিজেপি, ধর্মের তাস ও মমতার তৃণমূল : দিলীপ মজুমদার সাবিত্রি রায় — ভুলে যাওয়া তারার খোঁজে… : স্বর্ণাভা কাঁড়ার ছ’দশক পর সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বা সাময়িক অকার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন : তপন মল্লিক চৌধুরী বিস্মৃতপ্রায় বঙ্গের এক গণিতবিদ : রিঙ্কি সামন্ত অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

হেঁসেল কথা : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ১০১৯ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ৩ জুন, ২০২২

“If you can organize your kitchen, you can organize your life.” Louis Parrish

লুইস প্যারিস কথাগুলির সত্যতা অনুভূত হয়েছিল ব্যক্তিগত অনুভূতি দিয়ে পঞ্চাশ দশকে তৈরি তপন সিংহের কালজয়ী সিনেমা “গল্প হলেও সত্যি” দেখে। ঔপনিবেশিক রান্নাঘর, তার সামনে শ্যাওলা ধরা উঠোন আর তার উল্টোদিকের দালানে বসে খাওয়া দাওয়া। সেই পরিবারে নেই সুখ শান্তি, আছে মনোমালিন্য এবং কর্মবিভাগ নিয়ে ক্ষোভ আর রান্নাঘরের দায়িত্ব এড়ানোর জন্য একে অপরের প্রতি দোষারোপ। আসলে রান্না-বান্না যৌথ যাপনের অঙ্গ, অনেক বড় সমাজধর্ম। রান্নাঘরেই বোনা হয় পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে ভালোবাসার সুতো। সিনেমাতে এই সুতো বাঁধার ভূমিকা নিয়েছিলেন রবি ঘোষ।

“পুরুষের মনের রাস্তা পেট হয়ে যায়” এই আপ্ত বাক্যটি কিন্তু পরিবারের সকলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ভাজা, ভাতে, পোড়া, সিদ্ধ, শুক্তো, ঘণ্ট, ছ্যাঁচড়া, ছেঁচকি, চচ্চড়ি, ছক্কা, ছোকা, ঘ্যাঁট, লাবড়া, ঝাল, ঝোল, ভাপা, ডালনা, দোলমা, অম্বল, টক… এক পঙ্‌ক্তিতে ধরানোর মুশকিল পদগুলির সৃষ্টির স্থান এই রান্নাঘর।

রবীন্দ্রনাথের পঞ্চাশতম জন্মদিনে তাঁকে ‘কবিসম্বর্ধনা বরফি’ রেঁধে খাইয়েছিলেন হেমেন্দ্রকুমার ঠাকুরের মেজো মেয়ে প্রজ্ঞাদেবী। নিত্যনতুন পদের জন্ম দিতেন এই রান্নাঘরেই। তিনি রচনা করেছিলেন গার্হস্থবিজ্ঞানেরও কিছু বই, রন্ধন প্রণালী সম্পর্কিত বেশকিছু প্রয়োজনীয় তথ্য। নতুন সৃষ্টির সঙ্গে যুক্ত করতেন তাঁর প্রিয়জনদের নাম যেমন — ‘রাম মোহন দোলমা পোলাও’, ‘দ্বারকানাথ ফিরনি পোলাও’, ‘সুরভি’ (তাঁর অকাল মৃত মেয়ের নাম); এছাড়াও আছে আরো বেশকিছু উদ্ভট মজার নতুন ব্যঞ্জন যেমন খেজুরের পোলাও, লঙ্কা পাতার চচ্চড়ি, রসগোল্লার অম্বল, পানিফলের ডালনা, ঝিঙ্গা পাত পোড়া, মিঠা দই মাছ, মাংসের বোম্বাই কারী ইত্যাদি।

পুরনো আমলের রান্নাঘরের গল্পের কথা কারুর মনে থাকলে বুঝতে পারবেন… দেওয়ালে ঝুলকালি মাখানো, কোথাও বেতের ঝুড়ি, বাজারের থলে ঝুলছে, ধোঁয়ায় ভরা অন্ধকার ঘরের ছবি ভেসে ওঠে। বাঙালিনীর পরাধীনতা আরো বেশি আন্ডারলাইন হয়েছে এই রান্নাঘরে। শ্বাশুড়ি বা পিসশ্বাশুড়ির সঙ্গে বৌমাদের অহরহ মনস্তাত্ত্বিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সংঘাতের স্থান ছিল এই রান্নাঘর।

সময়ের সঙ্গে সামাজিক বিবর্তনের মধ্যে পরিবর্তিত হয়েছে কুলীন হেঁশেল। ক্রমে ক্রমে সে হয়ে উঠলো বর্গফুটের মডিউল কিচেন বা আধুনিক ওপেন কিচেন। হামেশাই শোনা যায় রান্নাতে জাদু আছে, তাই জাদুঘর পরিবর্তিত হলো হেঁশেলে।

বাস্তুশাস্ত্র অনুযায়ী বাড়ির বা ফ্ল্যাটের অগ্নিকোণ অর্থাৎ দক্ষিণ-পূর্ব কোন কিচেনের আদর্শ জায়গা। একান্তই অগ্নিকোনে করা না গেলে বিকল্প হিসেবে বায়ুকোণকে অর্থাৎ উত্তর-পশ্চিম দিক বেছে নেওয়া যেতে পারে।

কিচেন যাতে যথেষ্ট আলো, হওয়া পায় ও প্রায় সারাটা দিন ধরে শুকনো থাকে তার দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

ঘরের “High Touch Area” অর্থাৎ যে সকল স্থানে আমাদের হাতের স্পর্শ বেশি থাকে তাকে অবশ্যই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

আমরা আধুনিক কিচেনকে মডিউলার কিচেনই বলি কিন্তু মডিউলার কিচেন আর সেমি-মডিউলার কিচেন এক নয়। মডিউলার কিচেন কোন ফ্যাক্টরি থেকে মেসিনের সাহায্যে তৈরি হয়ে আপনার হেঁসেলে এনে ফিট করে দেওয়া হয় ও প্রয়োজনে তা খুলে অন্য কোথাও লাগিয়ে নেওয়া যায়। কিন্তু সেমি-মডিউলার কিচেন হলো কাস্টমাইজড কিচেন, যেটি আপনি নিজের মতো করে বানিয়ে নিতে পারেন। এক্ষেত্রে বাড়ী চেঞ্জের সময় আপনি সবকিছু খুলে নিয়ে যেতে পারেন কিন্তু টেবিল টপ অর্থাৎ গ্রানাইট বা টালি অটুট অবস্থায় খুলে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

কিচেনে চিমনি লাগানোটাও বেশ একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিচেন ফিটিংসের ক্ষেত্রে যাতে জায়গার অপচয় না হয় সেটির সিদ্ধান্ত আপনি নিজেই নিতে পারেন অথবা চটজলদি না করে ইন্টিরিয়র ডিজাইনারের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়াটাই ঠিক।

রান্না যে কেবলমাত্র গৃহকোণের হেঁসেলে আটকে থাকা দৈনিক খাটনি নয়, তা যে শিল্প, সেই কথা প্রমাণিত হয়েছে বহুবার বহুভাবে।

“জীবনের নানা কথা অনায়াসে বলে গেছেন আশাপূর্ণা দেবী এই রান্নাঘরে বসে। লেখার প্লট ভাববার জন্য তাঁকে হাতে পেন তুলে নিয়ে বন্ধ ঘরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়নি। রান্নাঘরে কুটনো কুটতে কুটতে, কড়াইতে ফোড়ন দিতে দিতেও আশাপূর্ণা দেবীর ভাবনায় তৈরি হয়ে গেছে গল্প, উপন্যাসের রেখাচিত্র। হলুদ মাখা আঁচল নিয়ে লেখার টেবিলে বসে এভাবেই তিনি লিখে গেছেন মেয়েদের কথা, সমাজের কথা সর্বোপরি জীবনের কথা।”

রান্নাঘরে সময় কাটাতে এগিয়ে এসেছে পুরুষও। মিথ ভেঙেছে বহুদিন। যে কোনও বড় রেস্তোরাঁর শেফ কিন্তু বেশিরভাগ ছেলেরাই হন। হোস্টেল কিংবা মেসলাইফে এসে অনেক পুরুষই রন্ধন পটিয়সী হয়ে ওঠেন।

সাম্প্রতিক একটি সমীক্ষা বলছে যেসব ছেলেরা ভালো রান্না করতে পারেন বা জানেন মেয়েরা নাকি তাঁদের প্রতি একটু বেশিই আকৃষ্ট হন। বিশেষ করে, লকডাউনের সময় হোম কোয়ারেন্টিনে অফিসের কাজের ফাঁকে রান্না শিখে নিয়েছেন অনেকেই।

কোন বাড়িতে কত সুখ তা হেঁশেল দেখে বোঝা যায়। “the home is where the hearth is…”

যে বাড়ির রান্নাঘর যত জমজমাট, সে বাড়ি তত সুখের আলয়। এবং সুখ হল ছোট্ট বাড়ি, যার রান্নাঘরটি বৃহৎ। (Happiness is a small house, with a big kitchen… Alfred Hitchcock .)

এখানে রান্নাঘর কোন ছোট ঘর না তা নদীর পাড়, উঠোন, ধান ভাণার জায়গা…. সর্বত্র ব্যাপ্ত। সেখানে উনুন সূর্য দেব এবং তিনিই গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত, বসন্ত।

Sources: Various books and articles have been referred to for the writing.


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “হেঁসেল কথা : রিঙ্কি সামন্ত”

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন