বুধবার | ১লা জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:৫২
Logo
এই মুহূর্তে ::
চলচ্চিত্র উৎসবে পানাজি থেকে কলকাতা (শেষ পর্ব) : সায়র ব্যানার্জী ফেলে আসা বছরে দেশের প্রবৃদ্ধির পালে হাওয়া না ঝড় : তপন মল্লিক চৌধুরী কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোয়ানিতা ম্যালে-র ছোটগল্প ‘নাইট জব’ অনুবাদ মনোজিৎকুমার দাস দেশজ ফসলের বীজকে কৃষির মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে হবে নদিয়া বইমেলা মুখপত্র : দীপাঞ্জন দে চলচ্চিত্র মহোৎসবে পানাজি থেকে কলকাতা (প্রথম পর্ব) : সায়র ব্যানার্জী শৌনক দত্ত-র ছোটগল্প ‘গুডবাই মাষ্টার’ হেলান রামকৃষ্ণ শিশু বিতানের রজত জয়ন্তী বর্ষপূর্তি উৎসব পালিত হল মহাসমারোহে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জীবনানন্দ দাশের স্বপ্নের নদী ধানসিঁড়ি আজও আছে কিন্তু মৃতপ্রায় : মনোজিৎকুমার দাস মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-এর ছোটগল্প ‘শঠে শাঠ্যং’ যথোচিত মর্যাদায় পালিত হল খানাকুলের রূপকার শান্তিমোহন রায়ের জন্মদিন : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় আবার দেখা যদি হলো সখা প্রাণের মাঝে আয় — নেতাজী নগর বিদ্যামন্দিরের পুনর্মিলন : সুশান্ত দাস মোদি বনাম মনমোহন: ইতিহাস বারবার এই বিশ্লেষণ করবে : সন্দীপন বিশ্বাস কবির লড়াইয়ের স্রষ্টা হলেন রবীন্দ্রনাথের পূর্বপুরুষ পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস চল্লিশতম নদিয়া বইমেলা স্মরণিকা : দীপাঞ্জন দে ভাগ্নার পদধূলিতে ধন্য হল মামার বাড়ি, বেলুড় মঠ ও মিশন অধিগ্রহণ করে মর্যাদা দিল : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ভিয়েতনামের গল্প (চতুর্থ পর্ব) : বিজয়া দেব কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ভিয়েতনামের গল্প (তৃতীয় পর্ব) : বিজয়া দেব চব্বিশে ভোট আর ফলাফলে ছিল উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পরিবর্তন : তপন মল্লিক চৌধুরী কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মৈত্রেয়ী ব্যানার্জি-র ছোটগল্প ‘জিঙ্গল বেল’ নোবেল বিজয়ী কথাসাহিত্যিক উইলিয়াম ফকনার : মনোজিৎকুমার দাস কার্ল মার্কসের পরিজন, পরিকর (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সফলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সুবিমল মিশ্র-র ছোটগল্প ‘বাব্বি’ হাইনরিখ হাইনে ও তাঁর ইতিহাসবোধ : মিনহাজুল ইসলাম আবার মহাভারত : শশী থারুর
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই ২০২৫ ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মোদি বনাম মনমোহন: ইতিহাস বারবার এই বিশ্লেষণ করবে : সন্দীপন বিশ্বাস

সন্দীপন বিশ্বাস / ৫৩ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪

মনমোহন সিংয়ের বিদায় মানে সুভদ্র রাজনীতির অবসান। মনমোহন সিংয়ের বিদায় মানে রাজনীতি থেকে চিন্তাশীল ব্যক্তিত্বের বিদায়। মনমোহন সিংয়ের বিদায় মানে শিক্ষিত, মননশীল চেতনার বিলোপ। মনমোহন সিং একটা সময়, সেই সময়কে যতই বিদ্রুপ করা হোক না কেন, সমালোচনা করে তাঁকে খর্ব করার চেষ্টা হোক না কেন, তাঁর উচ্চতা অনেক উপরে।

সুতরাং এই অবসরে একটা তুলনামূলক পার্থক্য এসেই যায়। সেই তুলনামলক প্রসঙ্গ টানতে গেলে মনে পড়ে ছেলেবেলায় পড়া কবি হরিশচন্দ্র মিত্রের কবিতার কয়েকটি লাইন। ‘আপনারে বড় বলে, বড় সেই নয়, / লোকে যারে বড় বলে বড় সেই হয়।’ লাইন দু’টির মধ্যে যে ঘোর বাস্তবতা রয়েছে, সেটা আমরা মাঝে মাঝেই টের পাই। অর্থাৎ এই পৃথিবীতে দুই ধরনের মানুষই আছেন। একদল মানুষ কাজের থেকে বাজনা বাজান বেশি। ‘হ্যান করেঙ্গা, ত্যান করেঙ্গা’ বলে বাজার গরম করে প্রচারের আলো শুষে নিয়ে হাততালি কুড়োন। আর একদল নিঃশব্দে কাজের কাজ করে ফেলেন। তাঁরা প্রচারের বা হাততালির তোয়াক্কা করেন না। আমাদের দেশের পরপর দুই প্রধানমন্ত্রীর তুল্যমূল্য বিচার করলে  এই কবিতার লাইন দু’টি মনে আসবেই।

দুই প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ সময় ধরে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাঁদের অবদান রেখেছেন। প্রায় প্রশ্ন ওঠে— কে বড় প্রধানমন্ত্রী, মনমোহন না মোদি?  সম্প্রতি এই বিতর্কটা উস্কে দিয়েছেন জার্মানির প্রাক্তন চ্যান্সেলার অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। তিনি ভারতের দুই প্রধানমন্ত্রীকেই খুব কাছ থেকে দেখেছেন। কূটনৈতিক সম্পর্কের বাইরেও তাঁদের যে মানসিক দৃষ্টিভঙ্গী, দেশ গঠনের রীতি, তা নিয়েও তাঁদের আলোচনা হয়েছে। সেখান থেকে মার্কেল একটা বিশ্লেষণ করেছেন তাঁর সাম্প্রতিক বই ‘ফ্রিডম: মেমোয়ার্স ১৯৫১-২০২১’ বইতে। বিশ্লেষণটাকে তিনি একেবারে ভিতরের দিক থেকে ধরতে পেরেছেন। মনমোহন সম্পর্কে মার্কেল লিখেছেন, ‘তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী। দেশকে কী করে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয় তিনি জানেন। সেই সঙ্গে তিনি উদার অর্থনীতির জনক। আধার, একশো দিনের কাজ সব তাঁর হাত ধরেই এসেছে। তাঁর কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা আছে।’ আবার মোদি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘উনি প্রচারসর্বস্বতায় বিশ্বাসী। আলোচনায় উনি তাঁর নির্বাচনী প্রচারের কৌশল নিয়ে অনেক কথা বলেছিলেন। আমার মনে হয়েছে, মনমোহন সিং কাজই করে গেছেন, মার্কেটিং নয়।’ এটাকেই মোদি বনাম মনমোহনের মার্কশিট বলে বিবেচনা করা যেতেই পারে।

একটা ব্যাপার ভুললে চলবে না যে, প্রথম পাঁচ বছরেই তিনি দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার নয় শতাংশে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। সেই সময় সারা বিশ্বে একটা আর্থিক মন্দার ঢেউ এসেছিল। সেটা না থাকলে অর্থনীতির বনিয়াদকে আরও শক্ত করে দিতে পারতেন।

২০১১ সালে সার্ক সম্মেলনের আসর বসেছিল মালদ্বীপে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার জন্যই এই মঞ্চ তৈরি হয়েছিল। সেই সম্মেলনে আমিও সাংবাদিক হিসাবে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়েছিলাম। দেখেছি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়কদের মধ্যে তাঁকে নিয়ে কতখানি সম্ভ্রম! তাঁর শিক্ষা ও বৈদগ্ধ তাঁকে অনেকের কাছেই শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছিল। সব প্রধানমন্ত্রীই একটা রীতি মেনে চলতেন। সেটা হল দেশে ফেরার সময় বিমানে বসে সাংবাদিক সম্মেলন। কী আন্তরিক কথাবার্তা তাঁর। প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বলে জানতে চেয়েছিলেন, সফরে কোনও সমস্যা হয়নি তো? সেই সময় তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে ভারতের সঙ্গে হাসিনা সরকারের আলোচনা চলছিল। মমতা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিস্তার জল ভাগ হতে দেব না। আমি সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম, দিদি যে আপত্তি জানাচ্ছেন, তাই নিয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী? মনমোহন হেসে বলেছিলেন, উনি আমার বোনের মতো। তাই ওঁর আপত্তি কোথায়, আমরা তা খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত নেব।  প্রধানমন্ত্রী মোদি সেসব বন্ধ করে দিয়েছেন। সাংবাদিকদের থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শত যোজন দূরে থাকেন। সফরে তিনি সবসময় সাংবাদিক বর্জিত। জানি না, তিনি কী লুকোতে চান!

হ্যাঁ, প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দু’জনের মধ্যে অসংখ্যা পার্থক্য রয়েছে। একজনের ভাবনার মধ্যে ছিলেন বর্ণ, ধর্ম, জাত, কুল নির্বিশেষে দেশের মানুষ। আর একজন হতে চান বিজেপি পন্থী হিন্দুদের প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং দৃষ্টিভঙ্গীর পার্থক্য থাকায় কাজের মধ্যে ফারাক আসা অনিবার্য। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেশগঠনের সময় মনমোহনের ভাবনার মধ্যে মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ ভীষণভাবে কার্যকর ছিল। গান্ধীজি বলেছিলেন, ‘সমস্ত দিক থেকে আমার ঘরে হাওয়া আসুক। কিন্তু সেই হাওয়া যেন আমাকে দিগভ্রষ্ট করতে না পারে।’ মনমোহন চেয়েছিলেন দেশের প্রতিটি মানুষের ঘরে সেই ‘হাওয়া’ পৌঁছে দিতে। একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, একজন পণ্ডিত মানুষ হিসাবে তিনি বুঝেছিলেন, উন্নয়নের প্রথম শর্ত হল, অর্থনীতির চাকাকে সক্রিয় রাখা। সেই কারণে তিনি চালু করেছিলেন একশো দিনের কাজ। মানুষের কাজের অধিকারকে শক্তিশালী করতে চেয়েছিলেন, তাঁদের রোজগার নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। তাই সেই প্রকল্প দেশের অর্থনীতিতে জোয়ার এনেছিল। আর মোদি এসে সেই বিকাশের অস্ত্রে বিভেদের শান দিয়ে বসলেন। শুরু করলেন, আমরা বনাম তোমরার রাজনীতি। বারবার বুঝিয়ে দিলেন— বশংবদ হও, নাহলে তোমাদের ভাতে মারব।

ভারতীয় অর্থনীতির একজন বড় জাদুগর হিসাবে মনমোহনের ধারে কাছে আমরা কাউকে ভাবতেই পারি না, তুলনা তো দূরের কথা। ভারতীয় অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে তাকে শক্তিশালী করার কাজ তিনি শুরু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও এক দশক আগে। ১৯৯১ সালে দেশের অর্থনীতি ভেঙে পড়ার মতো। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী নরসিমা রাও বুঝেছিলেন, এ দেশে আছেন একমাত্র মানুষ, যিনি এই ডুবন্ত সময়ে দেশকে পুনরুদ্ধার করতে পারেন। তাই তিনি মনমোহনকে নিয়ে এসে দায়িত্ব দিলেন দেশের অর্থমন্ত্রীর। লাইসেন্স রাজ প্রথা তুলে দিয়ে দেশের বাণিজ্যে মনমোহন নিয়ে এলেন এক মুক্ত হাওয়া। বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে গেল হু হু করে। দেশের বিদেশি মুদ্রাভাণ্ডার আবার চাঙ্গা হয়ে উঠল। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও সেই অর্থনীতি উন্নতির পথে ছুটেছে তাঁরই নেতৃত্বে। ২০০৭ সালে ভারতের জিডিপি দাঁড়ায় ৯ শতাংশে। তখন বিশ্বের দ্রুততম অর্থনৈতিক বিকাশের তালিকায় ভারতের স্থান ছিল দ্বিতীয়।

বিপরীত দিকে মোদি হেট স্পিচের মাধ্যমে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও তিনি গোধরা মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। এজন্য মনমোহন সিং মোদির তীব্র সমালোচনা করে বলেছিলেন, ‘মোদিজিই প্রথম  প্রধানমন্ত্রী, যিনি পদের মর্যাদাকে এভাবে ভূলুণ্ঠিত করেছেন। সেই সঙ্গে পরিকল্পনাহীন এক ব্যবস্থা দেশকে ভয়ঙ্কর পথে পরিচালিত করছে।’

তবুও বারবার ‘আচ্ছে দিন’এর কথা বলে মোদিজি প্রমাণ করতে চাইছেন, তিনি দেশকে ‘আচ্ছে দিনের’ মধ্যে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু সেই ‘আচ্ছে দিন’ আসলে একটা হরর মুভি। একবার মোদি ক্যাবিনেটের মন্ত্রী  নীতিন গাদকারি বলেছিলেন, ‘এই যে আচ্ছে দিন শব্দটি মোদি ব্যবহার করেন, সেটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং।’ সুতরাং শব্দটা তাঁর ধার করা।

মনমোহন সিংয়ের আমলে চালু হয়েছিল আরটিআই বা দেশের সাধারণ মানুষের তথ্য জানার অধিকার। সরকারি কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা আনাই ছিল এর উদ্দেশ্য। কিন্তু মোদির আমলে তার অনেকটাই অস্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। আসলে আরটিআইতে জমা পড়া বেশ কিছু প্রশ্ন মোদিকে অপ্রস্তুতে ফেলে দিয়েছিল। যেমন, দিল্লির এক বাসিন্দা দেখতে চেয়েছিলেন মোদির শিক্ষাগত যোগ্যতার কাগজপত্র। এছাড়া নোট বাতিল সংক্রান্ত ব্যাপারে অনেকেই সরকারের কাছে নানা প্রশ্ন করেও উত্তর পাননি। আধার সংক্রান্ত ব্যাপারে নাগরিকদের গোপন তথ্য সরকার গোপন রাখতে পারছে না। বহু ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের গোপন নথি অন্যের কাছে চলে যাচ্ছে। কেউ কেউ উজ্জ্বলা গ্যাসের সংযোগ নিয়েও আরটিআই করেছেন। এসব ক্ষেত্রে উপযুক্ত জবাব মেলেনি। এখন আরটিআই নিয়ে কোনও বিতর্কিত প্রশ্ন এলেই সরকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনও নথি নেই। এমনকী কোভিডকালে কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তাও সরকার জানাতে অক্ষম। নির্বাচনী বন্ড থেকে প্রাপ্য টাকার ব্যাপার লুকাছুপি করতে চেয়েছিল সরকার। সুতরাং সরকারের স্বচ্ছতা নিয়ে বিরাট প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

সম্প্রতি একটি নিবন্ধে ভারতীয় গণতন্ত্রের মুমূর্ষু অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে ভারতীয় গণতন্ত্রের মধ্য থেকে জেগে উঠছে একটা স্বৈরতান্ত্রিক অবয়ব। সেখানে প্রধান হয়ে উঠছে বিদ্বেষ, হিংসা, বৈষম্য, উস্কানি। সর্বত্র ‘গোলি মারো শালোকো’র প্রচ্ছন্ন হুঙ্কার গণতন্ত্রকে ঠেলে দিচ্ছে গঙ্গাযাত্রার দিকে। আসলে মোদি সরকার দেশকে দু’টি ভাগে ভাগ করে ফেলেছেন। বিজেপি, অবিজেপি। অবিজেপি হলেই নানাভাবে তাকে অতিষ্ঠ করে তোলার চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। নানা অজুহাতে পশ্চিমবঙ্গকে ভাতে মারার চেষ্টা করে চলেছেন দীর্ঘদিন ধরে। তার কারণ সুস্থ মানসিকতার বাঙালি মোদিজির নীতি ও মানসিকতাকে পছন্দ করেন না। তাই আক্রোশে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ মোদি নিজের গদি বাঁচাতে অন্ধ্রপ্রদেশ ও বিহারকে ঢেলে টাকা দিচ্ছেন। সুযোগ বুঝে চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমার দুয়ে নিচ্ছেন।  এটা গণতন্ত্র নয়। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় এভাবে বঞ্চনা করা যায় না। কিন্তু সবক্ষেত্রে সংবিধানের মর্যাদা রক্ষিত হচ্ছে না।

দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদরা বারবার বলছেন, কেন দীর্ঘদিন নিয়োগ বন্ধ? কেন রেল অপুষ্টিতে আক্রান্ত? কেন দিনের পর দিন সরকারের ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে? কেন সরকারকে সব বেচে কোষাগার ভরার দিকে যেতে হচ্ছে? এত বক্তৃতা, এত নিজেকে জাহির করা, নিজেকে অবতার সাজানো বা অন্যদের নানাভাবে অপমানিত করার মধ্যে অন্তত সুস্থ সংস্কৃতির পরিচয় পাওয়া যায় না। এর পাশে মনমোহন সিং সত্যিই বেমানান। তাঁর শিক্ষা কখনও তাঁকে পাল্টা ঢিল মারতে প্রবৃত্ত করেনি। একদিকে মাসের পর মাস মন কি বাতের অসারতা, অন্যদিকে আত্মপ্রচার, সেই সঙ্গে বিদেশভ্রমণ। এর মধ্যেই ডুবে আছেন মোদি। এই আত্মপ্রচারের পাশে মনমোহন সিং সত্যিই বেমানান। বিজেপি নেতারা তাঁকে ‘মৌনী’ বলে কটাক্ষ করেন। উত্তরে মনমোহন বলেন, ‘আমার নীরবতার উত্তর থাকে আমার কাজের মধ্য দিয়ে।’ চাণক্য শ্লোকেই আছে, ‘স্বদেশে পূজ্যতে রাজা, বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে’। মোদি ও মনমোহনের মধ্যে এই পার্থক্যটুকু চিরকাল থেকেই যাবে।

মোদি এবং মনমোহনের তুল্যমূল্য বিচার ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। দেশে শুরু হয়েছিল আগেই। এখন বিদেশেও শুরু হয়েছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়করা তাঁদের স্মৃতিকথায় এসব নিয়ে লিখতে শুরু করে দিয়েছেন। সেসব ক্রমশ প্রকাশ্য। ক্ষমতা থেকে যেদিন মোদি সরে যাবেন, তারপর থেকেই সমালোচনায় আরও বাড়বে। ইতিহাস বড় নির্মম ও নিরপেক্ষ! ‘গুণেতে হইলে বড়, বড় বলে সবে / বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।’ এই ছোট হওয়ার অর্থ অন্যকেও সম্মান কর। বদলে যাওয়া সময়, বদলে যাওয়া প্রজন্ম, বদলে যাওয়া তারুণ্য নতুন বিশ্ব গড়ার ক্ষেত্রে মনমোহনের নীতির প্রতিই বেশি করে আস্থাশীল হবে। কূপমণ্ডুকতার বাইরে যে আলোর জগৎ, সেখানে মনমোহন সিং বেঁচে থাকবেন। তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন কাজ করতে গেলে এত ‘মন কী বাত’এর দরকার হয় না। নিঃশব্দ বিপ্লব কাকে বলে তা তিনি দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন। রাজনৈতিক কারণে তাঁকে যদি ভারতরত্ন দেওয়া নাও হয়, তবু তিনি একজন প্রকৃত ভারতরত্ন। সরকার স্বীকার করুক বা নাই করুক, তাতে সত্যের এতটুকু হেরফের হয় না। বিদায় স্যার। দেশবাসী আপনাকে জানায় প্রণাম।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন