বৃহস্পতিবার | ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৭:১৭
Logo
এই মুহূর্তে ::
বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত গল্প লেখার গল্প : হাসান আজিজুল হক
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস

অসিত দাস / ৫১ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৫

তামিল ভাষায় মাছের প্রতিশব্দ হল মীন। এটি সংস্কৃতেও গৃহীত হয়েছে তামিল ভাষা থেকে। সেখান থেকে বাংলাতেও এসেছে। মীনাক্ষী, মীনরাশি শব্দগুলির কথা কে না জানে!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জীবনের প্রথম কবিতায় লেখেন, —

“মীনগণ হীন হয়ে ছিল সরোবরে

এখন তাহারা সুখে জলক্রীড়া করে।”

আবার তামিলে হরিণের প্রতিশব্দ মান। মালয়ালমেও মান। সিন্ধু সভ্যতায় যেসব ফলক ও সিল আবিষ্কৃত হয়েছে তার বেশ কয়েকটি হল ইউনিকর্ন বিশিষ্ট। এই ইউনিকর্নকে প্রাগৈতিহাসিক প্রাণী হিসেবে ধরে নিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু ভালো করে দেখলে বোঝা যায়, এটি একটি বলশালী হরিণের প্রোফাইল ভিউ। যেখানে হরিণের একটি শিং আর একটি শিংয়ের সঙ্গে ওভারল্যাপ করে গেছে। হরিণের কোনও ছবি সিন্ধুসভ্যতার কোনও ফলকে পাওয়া যায়নি। পশুপতি সিলের জীবজন্তুর মধ্যে বাঘ, হাতি ও গন্ডারের সঙ্গে একটি হরিণের থাকার কথা বলা হলেও সেটি আসলে বাঁকানো শিংবিশিষ্ট একটি আইবেক্স বা পাহাড়ি ছাগল।

সিন্ধুলিপির পাঠোদ্ধার সম্ভব হয়নি একশ বছরের চেষ্টাতেও।

দ্বিভাষিক লিপি আবিষ্কৃত না হওয়ার ফলেই এই বিপত্তি। Rosetta stone আবিষ্কার হওয়ার ফলে মিশরীয় হাইরোগ্লিফিক লিপির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। মেসোপটেমীয় ও প্রাচীন গ্রিক লিপির পাঠোদ্ধারেও দ্বিভাষিক লিপির সাহায্য নেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু সিন্ধুসভ্যতার ক্ষেত্রে কোনও দ্বিভাষিক লিপি না মেলায় পণ্ডিতরা আতান্তরে পড়েছেন। যদিও পাঠোদ্ধার সম্ভব না হওয়ার অনেক কারণ।

প্রথমত, হরপ্পীয় লিপি এবং ভাষার অগম্যতা। সিন্ধু-সভ্যতার চরম পর্যায়ে তাঁরা যে বহির্বাণিজ্যে যুক্ত ছিলেন, তার অকাট্য প্রমাণ কিন্তু আমাদের কাছে আছে। এখন এই বর্হিবাণিজ্য, বা যাকে অন্যদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বলে, সেটা সার্থক ভাবে করতে গেলে কিন্তু একটা মোটামুটি চলনসই ভাষা আর ঐরকমই, খুব উন্নত না হোক, অন্তত একটি লেখ্য লিপির প্রয়োজন। এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে রাখা খুব জরুরি যে হরপ্পা লিপির পাঠোদ্ধার এখনও অবধি কেউ করতে পারেন নি,যতই আজগুবি দাবি আন্তর্জালিক জগতে ঘুরুক না কেন! এর স্বরূপ উদঘাটন একেবারেই অসম্ভব থেকে যেতো যদি না দ্বিভাষিক একটি হরপ্পীয় শিলালিপি এবং লেখনের একটি পরিচিত রূপ আবিষ্কৃত হতো। কি সেই দ্বিভাষিক শিলালিপি? এই শিলালিপিতে রয়েছে মানুষ ও স্থানের নাম। আমাদের পরিচিত নামগুলো থেকেই এই চিহ্নগুলি কীভাবে উচ্চারিত হতো তার প্রাথমিক সূত্রটি পাওয়া যায়। হরপ্পার লিপি সাংকেতিক। এটিতে ৩৭৫ থেকে ৪০০টি চিহ্ন আছে, মতান্তরে ছয় শতাধিক। কাজেই বর্ণমালার ধারণাটি বাতিল হয়ে যায়, কেননা একটি বর্ণমালায় সাধারণত ছত্রিশটির বেশি চিহ্ন থাকতে পারেনা। সুতরাং, আবার সেই সম্ভাব্যতা! সম্ভবত হরপ্পীয় ভাষা ছিলো যৌগিক অর্থাৎ এমন একটি ভাষা যেখানে একটি অপরিবর্তনীয় মূল চিহ্নের শেষে প্রত্যয়-বিভক্তি-কারক যুক্ত হতো। এই বিশিষ্টতা ঠিক ইন্দো-আর্য ভাষার মত নয়, বরং চারিত্রিক ভাবে এটি প্রাচীন দ্রাবিড়ীয় ভাষার সঙ্গে সাদৃশ্য যুক্ত। আর একটি প্রমাণিত তথ্য হলো, ইন্দো-আর্য ভাষার প্রথম পর্বের রচনাগুলিতে, যেমন ঋগ্বেদে, দ্রাবিড়ীয় ভাষার বেশ কিছু শব্দ ও প্রভাব।

মোট ২৭টি দ্রাবিড় শব্দের উপস্থিতি ঋগ্বেদে আছে। রেভারেন্ড কিটেল, কল্ডওয়েল ও গুন্ডার্ট সাহেব সংস্কৃতে আসা আরও দ্রাবিড় শব্দের সন্ধানদিয়েছেন।উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাচীন ইন্দো-আর্যরা দ্রাবিড় ভাষাভাষী মানুষজনের সংস্পর্শে এসেছিলো এমন ইঙ্গিত মেলে। পরবর্তীকালে অধ্যাপক টি বারো সংস্কৃতে গৃহীত আরও কিছু দ্রাবিড় শব্দের কথা লিখেছেন। বিজয়চন্দ্র মজুমদার মোট ৭৮টি দ্রাবিড় শব্দের একটি সূচি দিয়েছেন তাঁর বইয়ে। এমন কথা বলাই যায় যে, হরপ্পার মানুষজনের ভাষা ছিলো সম্ভবত প্রোটো-দ্রাবিড়ীয়। লক্ষ্যণীয় যে, বর্তমানে দক্ষিণ বালুচিস্তানের পাহাড়ে যে ব্রাহুই ভাষার প্রচলন, সেটি কিন্তু একটি দ্রাবিড়ীয় ভাষা।

এখন আসি একশৃঙ্গ হরিণ ও মাছের কথায়। হরিণের তামিল নাম মান। মালয়ালমেও মান। মাছের তামিল নাম মীন। ফলকে উৎকীর্ণ তথাকথিত ইউনিকর্ন বা বলশালী হরিণের নাম যদি মান লেখা হয়, তাহলে বোঝা শক্ত। সমোচ্চারিত আর একটি প্রাণীনাম মীন (মাছ)। তাই মাছের ছবিও দেওয়া হয়েছে লিপিতে। যাতে হরিণের অস্তিত্ব লোককে সঠিকভাবে বোঝানো যায়।

অশোক পার্পোলা নামে এক সিন্ধুলিপি বিশেষজ্ঞ এটার বিষয়ে বলতে গিয়ে বলেছেন মাছের তামিল নাম মীন। আকাশের তারার আছে মীনরাশি। তাই মাছের ছবি নাকি আকাশের তারাকে বোঝায়। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। ফলকে বলশালী হরিণের (কালীঘাটের পটের নরদেহ ও ভেড়ার মতো এ ছবিও রিয়্যালিস্টক নয়, অতিরঞ্জিত ) অস্তিত্ব বোঝাতে, হরিণের তামিল নাম মান-এর সমোচ্চারণ-বিশিষ্ট শব্দনাম মীন বা মাছের ছবিও দেওয়া হয়েছে।লিপিকে ছবির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সমোচ্চারিত শব্দের টেকনিক নেওয়া হতো সম্ভবত। মাছের ছবির পাশে লিপির দিকে তাকালে তামিল শব্দের প্রাকদশা বেশ বোঝা যায়। জুড়ে দিলে, খুলে দিলে, উল্টে দিলে বর্তমান তামিল হরফ চলে আসে যেন চোখের সামনে।

তাই এ কথা হলফ করে বলা যায় যে সিন্ধুসভ্যতার ভাষা ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন