শুক্রবার | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ৯:৫৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

হাই হিল জুতোর কড়চা : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৭৪২ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

রেড কার্পেট থেকে অফিস পার্টি হাইহিল জুতোর জয়জয়কার সর্বত্র। ‘কমপ্ল্যান’ যখন উচ্চতা বাড়াতে হার মানে, তখন সৌন্দর্য বাড়াতে হাই হিল জুতোই একমাত্র ভরসার সঙ্গী হয়ে ওঠে। জানলে অবাক হতে হয়, হাই হিল জুতোর জন্ম হয়েছিলো মূলত পুরুষদের জন্য।

এইধরনের জুতোর ধারণা প্রথম আসে পার্সিয়ান সৈনিকদের হাত ধরে। সেই সময় ঘোড়ায় সওয়ারি ছিলো পরিবহন আর সামরিক অভিযানের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ঘোড়ায় চড়ার সুবিধার্থে তারা জুতোর নীচের অংশ বিশেষভাবে উচুঁ করে তৈরি করতো। ঘোড়ায় চড়ে যুদ্ধ করার সময় পাদানিতে দাঁড়ানোর প্রয়োজন হলে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য হাই হিল পরা জুতো কাজে লাগতো।

উচুঁ হিলের ‘চেলসি বুট’

এরপর ১৬ শতকের দিকে “হাই হিল” জুতো প্রচলিত হয়ে ওঠে নারী পুরুষ সবার মাঝে। নারীদের হাই হিল জুতোর তুলনায় পুরুষদের জুতো চওড়া, সমতল ও শক্তভাবে তৈরি করা হতো। তবে এই ধরণের জুতোগুলোর আদি বাসস্থান ছিল তুরস্ক আর ভেনিসে। পরবর্তীতে তা ইউরোপে প্রচলিত হয়ে ওঠে।

সপ্তদশ শতাব্দীতে ইরান তথা এশিয়া থেকে ইউরোপে হাই হিল জুতোর কনসেপ্ট ছড়িয়ে পড়ে পার্সিয়ান সৈনিকদের মাধ্যমে। তত্কালীন ইরানি সম্রাট শাহ আব্বাস ইউরোপের দেশগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলতে উপহার-সহ একদল উচুঁ হিলের জুতো পরা সৈনিক পাঠান। তাদের অনুকরণেই হাই হিলের ফ্যাশন ইউরোপে চালু হয়।

রেনেসাঁ পরবর্তী যুগে ইউরোপের গন্যমান্য ব্যক্তিরা নিজেদের ব্যবহৃত পোশাক পরিচ্ছেদ সাধারন মানুষের থেকে আলাদা করে রাখতো। এই জন্য তারা তাদের জুতোয় যোগ করতেন বিশাল লম্বা সব “হিল”। সমাজে পৌরুষ, ক্ষমতা ও সামরিক দক্ষতার প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় এই হাই হিল জুতো।

ইউরোপে হিলের উচ্চতা এতটাই বেশি ছিলো যে, ধনী ব্যক্তিরা জুতোর উপর ভর দিয়ে হাঁটার সময় যাতে পরে না যায় দু-জন করে ভৃত্য নিয়োগ করতেন। ৩০ ইঞ্চি উঁচু জুতোরও খোঁজ পাওয়া গেছে।

যার হিল যত বেশি উচুঁ ও লাল রঙের হবে, তাকে তত বেশি ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হবে।

ইউরোপে হাই হিল জুতোর প্রচারে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন ‘সান কিং’ চতুর্দশ লুই (‘Sun King’ Louis XIV)। যার হিল যত বেশি উচুঁ ও লাল রঙের হবে, তাকে তত বেশি ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হবে। তিনি আইন প্রণয়ন করেন যে, সমাজের উচুঁ জাতের লোকেরা লাল হিলের জুতো পড়বে। তিনি নিজে লাল হিলের জুতো পরতেন ও তার সভার সদস্যেরা ও লাল হিলের জুতো পরতেন। তার এই দৃষ্টিভঙ্গিতে অনুপ্রাণিত হয়ে শু-ডিজাইনার ক্রিশ্চিয়ান লুবউটিন (christian louboutin) নব্বইয়ের দশকে বিখ্যাত হয়েছিলেন।

রিংগোর ব্র্যান্ড ‘বিটলস’

তবে ফরাসী বিপ্লবের পর থেকেই হাই হিল পুরুষের ফ্যাশন তালিকা থেকে বাদ হতে শুরু করে।

আঠারো শতকের শুরুতে হাই হিল ক্রমে ক্রমে পুরুষ থেকে নারীদের ফ্যাশনে পরিণত হয়। আভিজাত্যের প্রকাশ ঘটাতে জুতোর হীল উঁচু ও অলঙ্কার সমৃদ্ধ হতে থাকে।

উনিশ শতকে এসে আমেরিকার উত্তর-অংশের কাউবয়রা উচুঁ হিলকে পুনরায় ফ্যাশন ট্রেন্ডে নিয়ে আসে। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে যুক্তরাজ্যের চার তরুণের দল সুরের মূর্ছনায় বিশ্বকে মাতাল করে দেওয়া জন লেনন (John Lennon), পল ম্যাককার্টনি (Paul McCartney), জর্জ হ্যারিসন (George Harrison) ও রিংগোর ব্র্যান্ড ‘বিটলস’-এর (Ringo’s Brand ‘Beatles’) হুজুগে পুরুষদের ফ্যাশনে আবারও ফিরে আসে হাই হিল। জন লেনন তো এক সাক্ষাৎকারে বলেই ফেলেন, “বিটলস ব্যান্ড যিশু খ্রিস্টের চেয়েও বেশি জনপ্রিয়”। সঙ্গীতের বাইরে তাদের সাজ পোশাক, জুতো, কেশবিন্যাস, বক্তব্য ইত্যাদিকে নকল করতে থাকে ফ্যানের দল। মূলত তারা সমতলভাবে তৈরি বিশেষ উচুঁ হিলের ‘চেলসি বুট’ (Chelsea boots)-কে নতুনভাবে ফিরিয়ে আনে।

ম্যাডোনা

সে যুগের বাড়াবাড়ি রকমের হিল জুতোর চল এ সময়ে না থাকলেও হাই হিল জুতোর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েনি এতটুকু। বরং পশ্চিমের দেশের মেয়েদের সাজের অন্যতম উপকরণ ছিলো এই হাই হিল। তাদের মতে নারীর সৌন্দর্য বাড়াতে হাই হিল জুতোর কোন বিকল্পই নেই। জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেরিলিন মনরো একবার বলেছিলেন, ” জানি না হাই হিল জুতো কে আবিষ্কার করেছে, কিন্ত সব মেয়েরাই তাকে শ্রদ্ধা করে।” ম্যাডোনার মতো বিখ্যাত তারকারা যখন ফ্যাশনের অঙ্গ হিসেবে হাই হিলকে ব্যবহার করে, তখন ফ্যাশন স্টেটমেন্ট হিসাবে জনজীবনে এর প্রভাব থাকবেই।

উনিশ শতকের শেষের দিক থেকে পর্নোগ্রাফাররা চিত্রশিল্প অথবা ভাস্কর্যে নগ্ন নারীর ছবির সৌন্দর্য বাড়াতে হাই হিল জুতো পায়ে ছবির প্রচলন করে।

জানি না হাই হিল জুতো কে আবিষ্কার করেছে, কিন্ত সব মেয়েরাই তাকে শ্রদ্ধা করে।

মডেলদের ভঙ্গিতে ধ্রুপদি ছোঁয়া থাকলেও আরো আবেদনময়ী করে তুলতে ‘পিন-আপ’ ফটোগ্রাফিতে মডেলকে পড়ানো হয় হাই হিল জুতো। এই চিত্রই ছড়িয়ে পরে ফ্যাশন জগতে ফলে নারীর ফ্যাশন আইকনে পরিণত হয় হাই হিল।

তবে নারীর পায়ে হই হিলের সবচেয়ে পুরনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় বারো শতকের ভারতের রামাপ্পা মন্দিরে (Ramappa temple high heels) এক ভাস্কর্যে। সেই যুগ থেকে আজ অবধি যুদ্ধ, আইন, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, ও রাজনৈতিক বিপ্লব পেরিয়ে আজকের হাই হিল জুতোর বর্তমান রূপ আমরা পেয়েছি। নারীর সৌন্দর্য্যের অবধারিত সংযোজন এই হাই হিল।

হই হিলের সবচেয়ে পুরনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় বারো শতকের ভারতের রামাপ্পা মন্দিরে

কিন্তু চিকিৎসকেরা বলেন, আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হাই হিল জুতোর এই স্টাইল মোটেও স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সারাদিন এই ধরণের জুতো পরে থাকলে কাফ মাসেলের যন্ত্রণা, লো ব্যাক পেন, পায়ের পাতা, হাঁটুর ব্যথার কারণ হয়ে ওঠে।

বর্তমান বিশ্বের নামীদামী মডেল, অভিনেতা অভিনেত্রীদের হিল পরার অভ্যাস চালু আছে। সমকামী পুরুষ ছাড়া ফ্যাশন সৌন্দর্যের অঙ্গ হিসেবে বহু পুরুষের  পায়ে থাকে হাই হিল জুতো। তাই যদি কেউ হাই হিল জুতো পরা শুধুমাত্র নারীর বৈশিষ্ট্য বলে, তাকে মনে করিয়ে দিতে হবে হাই হিল জুতোর ইতিহাস।

Source : Various articles and journals have been referred for the Writeup.


আপনার মতামত লিখুন :

12 responses to “হাই হিল জুতোর কড়চা : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Pallab dey says:

    খুব সুন্দর লেখনী👏👏👏

  2. তপন says:

    খুবই ভালো লেখা। খুব ভালো।

  3. ধীরাজ দণ্ডপাট says:

    অজানা তথ্যের ইতিহাস জেনে ভালো লাগলো।

  4. p k biswas says:

    *হাই হিল হাই হিল হাই হিল পরনে*
    খাট খিট ঠিক ঠিক শব্দের ধরনে*
    পদশোভা গৌরব সুশ্রীর শ্রীচরণে*
    পেজ ফোর*আর রিঙ্কি সামন্ত’র প্রতিবেদন খুব
    আকর্ষণ করে পাঠকদের। এই ইতিহাস ঘাটা
    বিবরণে,ছবিতে মনের খিল খুলতে বাধ্য করলো
    *হাই হিল* ভালোলাগা ভালোবাসা*

  5. Amar Nath Banerjee says:

    তুই কতো জানিস! কোন গব্ব নেই।

  6. শুভাশিস ঘোষ says:

    বাহ! ভালো লাগল।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন