আজ বিশ্ব ঘুম দিবস। ঘুম জীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ। প্রতি বছর মার্চ মাসের তৃতীয় শুক্রবার ২০০৮ সাল থেকে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাসোসিয়েশন অব স্লিপ মেডিসিন’ একটি বিশ্বব্যাপী সচেতনতামূলক দিবস পালন করে। লক্ষ্য হল ভাল এবং স্বাস্থ্যকর ঘুমের সুবিধাগুলি উদযাপন করা, ঘুমের সমস্যাগুলির চিকিৎসা, শিক্ষাগত এবং সামাজিক দিকগুলির প্রতি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করা এবং ঘুমের ব্যাধিগুলির প্রতিরোধ ও পরিচালনার প্রচার করা।
তাই ‘বিশ্ব ঘুম দিবস’ ঘুম, ঘুমের ওষুধ, ঘুম সম্পর্কে শিক্ষা এবং দৈনন্দিন জীবনে ঘুমের অভাব যে সামাজিক প্রভাব ফেলতে পারে সে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করে। আমেরিকান স্লিপ অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ৫০ থেকে ৭০ মিলিয়নেরও বেশি লোকের নানা ধরণের ঘুমের ব্যাধি রয়েছে, ২৫ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের স্লিপ অ্যাপনিয়া রয়েছে এবং সবচেয়ে সাধারণভাবে ঘুমের যে সমস্যা দেখা যায় তা হল অনিদ্রা (একটু বা পুরো রাতের জন্য ঘুমাতে না পারা)।
এবছর বিশ্ব ঘুম দিবসের প্রতিপাদ্য হলো “Quality Sleep, Sound Mind, Happy World” একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো উচিৎ।
শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পড়লে স্বাভাবিকভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে, কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করা চেষ্টা করলেও শিসুদের মত আচরন করতে পারে না। তাঁরা অনুমান করতে পারে যে তাদের একই জিনিস করতে সক্ষম হওয়া উচিত অথচ তারা প্রায়ই পারে না! অতিরিক্ত কাজের চাপ, মানসিক চিন্তার প্রভাব পড়ছে ঘুমের ওপর। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ সঠিকভাবে ঘুমোন না।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে টানা ৬ ঘন্টার কম ঘুমের অভ্যাস ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,পেটের অসুখ, ওবেসিটি এবং কোলেস্টেরল জাতীয় রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। অপর্যাপ্ত ঘুম বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমায়। শিশুদের কম ঘুম স্বাভাবিক বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে। নিত্য শরীরের যত্ন নেওয়ার মতো (স্নান বা দাঁত ব্রাশ করার মাধ্যমে), একজন ব্যক্তির ঘুমের রুটিনে কিছুটা অতিরিক্ত মনোযোগ এবং যত্নের প্রয়োজন হতে পারে।
একটি স্বাস্থ্যকর ঘুমের জন্য দরকার— সঠিক শোবার সময় এবং জেগে ওঠার সময়: শরীরের সার্কেডিয়ান ছন্দগুলি আরও ভাল কাজ করে যখন ঘুমানোর সময় এবং ঘুম থেকে ওঠার সময় প্রতিদিন একই থাকে। চেষ্টা করুন ‘আর্লি টু বেড আর্লি টু রাইস’।
ব্যায়াম : যারা দিনে পর্যাপ্ত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ করেন না তাদের রাতে ঘুমাতে সমস্যা হতে পারে, তাই ঘুমানোর কয়েক ঘন্টা আগে দ্রুত হাঁটা বা অন্যান্য কার্ডিও অনুশীলন করতে ভুলবেন না।
ক্যাফিন থেকে বিরত থাকুন : উদ্দীপক হিসাবে, ক্যাফিন মন এবং শরীরকে সক্রিয় করে তুলতে পারে, তাই ঘুমানোর কমপক্ষে ৪ ঘন্টা আগে কফি, চা বা অন্যান্য ক্যাফিনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলা ভাল।
ঘুমানোর রুটিনের জন্য ৩০ মিনিট সময় দিন : বিছানায় শুয়ে পড়লেই টুক করে এখনই ঘুমিয়ে পড়ার আশা না করে, মৃদু সঙ্গীত, হালকা স্ট্রেচিং বা বিরক্তিকর বই পড়ার জন্য আধ ঘন্টা সময় রাখুন। শোবার ঘরের তাপমাত্রার দিকে নজর রাখবেন।
আলো ম্লান করুন : আমাদের শরীরে মেলাটোনিন নামক একটি হরমোন ঘুমের সহায়তা করে। আলো যত তীব্র হয় হরমোনের উৎপাদন তত কম হয়। অন্ধকার ও শব্দমুক্ত ঘরে শোয়ার চেষ্টা করুন।
রাতের খাবার : শোবার অন্তত একঘন্টা আগে সহজপাচ্য ও হাল্কা ডিনার করুন।
একটি স্লিপ অ্যাপ ডাউনলোড করুন : যারা তাদের ঘুমের জন্য সাহায্য খুঁজছেন তারা একটি স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারেন।
ঘুমানোর কমপক্ষে ত্রিশ মিনিট আগে, কম্পিউটার, টেলিভিশন, স্মার্টফোন, ভিডিও গেম বা অন্যান্য ডিভাইস আনপ্লাগ করুন। তার বদলে ধ্যান অনুশীলন করুন। ঘুমানোর আগে গভীর শ্বাস নেওয়া এবং মননশীলতার অনুশীলন মস্তিষ্ককে দিনের চাপ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করতে পারে যা ভাল ঘুমের সহায়ক।
ঘুম বড়ই দুর্লভ বস্তু সে সহজে ধরা দিতে চায় না।
ঘুমের জন্য চাই সঠিক গদি, বালিশ। এই ব্যাপারে একটি মজার ইনফরমেশন বলি।
শুধু আরাম করে ঘুমিয়ে আপনি চাকরি পেতে পারেন। অবাক হচ্ছেন! কোনো হোটেলের ‘বেড’ গেস্টদের পছন্দসই কি-না দেখতে হোটেল কতৃপক্ষ লোক নেন। কাজ সেই বিছানায় ঘুমানো। স্বস্তিতে ঘুম হলে পরীক্ষায় পাশ করলো বিছানা। আর চাকরিটা হলো হোটেল স্লিপ টেস্টারের।
কাউচে বা বিছানায় গা এলিয়ে ভিডিও গেম খেলাটাই আপনার চাকরি হতে পারে। অবাক হচ্ছেন!!
ভিডিয়ো গেম কোম্পানিগুলো তাদের গেমের স্মুদনেস খতিয়ে দেখার জন্য লোক নিয়োগ করার, যাদের কাজ সারাদিন শুধু শুয়ে বসে গেম খেলে যাওয়া।
আপনি সুন্দর বিছানায় নাক ডেকে ঘুমাবেন, আর তার জন্য লোকে আপনাকে টাকা দেবে!! উঁহু, এটা মোটেই ইয়ার্কি নয়। ‘স্লিপ স্টাডি’ অংশগ্রহণকারীদের শুধুমাত্র ঘুমোনোর জন্যই টাকা দেওয়া হয়।
বিশ্ব ঘুম দিবসে একটি ঘুম সচেতনতা ইভেন্টে অংশগ্রহণ করুন। স্লিপ অ্যাপনিয়া এবং অনিদ্রার মতো ব্যাধিগুলির বিষয়ে আরও গবেষণায় সহায়তা করতে World Sleep Day হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে এই দিনটিকে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন এবং আপনার বন্ধু, পরিবার এবং অনুসরণকারীদের জানাতে দিন যে ঘুম সর্বত্র মানুষের জন্য কতটা অপরিহার্য। প্রয়োজনে একজন স্লিপ প্রফেশনালের সাথে কথা বলুন।
এই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন সায়েন্স জার্নাল থেকে নেওয়া শুধুমাত্র তথ্যের জন্য, কোনও ওষুধ বা চিকিৎসা সংক্রান্ত নয়। বিস্তারিত তথ্যের জন্য অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।
খুবই সমৃদ্ধ হলাম।
ধন্যবাদ🌹
*ঘুম*সাধারণ নয় অসাধারণ এই কথাটি,জ্ঞান বিজ্ঞানের সাহায্যে পেজ ফোর’র পাতায় তথ্য
দিয়ে,উদাহরণ দিয়ে উপকার করলেন অনেকের
ধন্যবাদ।