বৃহস্পতিবার | ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:৫২
Logo
এই মুহূর্তে ::
কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার প্রবোধিনী একাদশী ও হলদিয়ায় ইসকন মন্দির : রিঙ্কি সামন্ত সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শুদ্ধতম প্রতিনিধি অন্নপূর্ণা খাঁ : আবদুশ শাকুর নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘শুভ লাভ’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের হেঁসেলের গল্প : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৬৩৪ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩

শোনা যায় পাটনার লবণ কারখানায় ম্যানেজার হয়ে থাকার সময় কারখানার এপাশ ওপাশ ঘুরতে যেতেন জব চার্ণক। গঙ্গার ধার দিয়ে একদিন যাবার সময় দেখতে পেলেন শ্মশানে দাহ করার জন্য প্রচুর মানুষ জড়ো হয়েছে। ফুটফুটে সুন্দরী সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া এক বিধবা মেয়েকে জ্বলন্ত চিতায় তোলার জন্য টানাহেঁচড়া করছে কিছু মানুষ। ঢাক, ঢোল, শঙ্খ আর কাঁসরের ধ্বনিতে চাপা পড়ে যাচ্ছে বুক ফাটানো আর্তনাদ। শিউরে উঠলেন চার্ণক। সৈন্যদের নিয়ে হাজির হলেন শ্মশানে এবং উদ্ধার করলেন কন্যাটিকে।

পরে এই এদেশীয় হিন্দু সমাজচ্যুত রমণীর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন চার্ণক ও তিন সন্তানের জনকও হন।অতএব বলা যেতেই পারে চার্ণকের বংশধররাও ছিল অ্যাংলো সম্প্রদায়ভুক্ত। ইউরোপ ও এশিয়ার মানুষদের এই মিশ্র বিবাহের ফলে উদ্ভূত সম্প্রদায়কে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান নামটি নাকি দিয়েছেন স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংস।

একসময় ব্রিটিশ অফিসারদের ভারতীয় নারীদের বিয়ে করার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হতো। তারা ভাবতেন এমন একটি গোষ্ঠী তৈরি হবে যাদের শরীরে বইবে ব্রিটিশ রক্ত আবার যারা ভারত ভূমি সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহল হবে, এবং সেটাই হবে ব্রিটিশ শাসনের মজবুত ভীত। গোড়াতে এদের ইউরেশিয়ান বলে ডাকা হতো। ১৯১১ সালে আদমশুমারিতে সরকারিভাবে প্রথম অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের পরিচয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

থ্রি প্লাম পুডিং

পরনে ফুল ছাপ স্কার্ট, গায়ে ফুলহাতা ব্লাউজ়, মাথায় বাঁধা গাঢ় লাল রঙের রুমাল, দীর্ঘাঙ্গী, চোখের পাতাগুলো ফুলের কেশরের মতো দীর্ঘ, মাথার চুলের ঘন বর্ণাঢ্যতা এবং গিটারে টুংটাং পুরনো গ্রামাফোনে বেজে ওঠা এলভিস প্রেসলি, জিম রিভসের গলায় মন কারা গানের সুর, ফক্স ট্রটের ছন্দে নাচ, ওয়াইন আর চকলেট — এসব কিছু নিয়ে অতি সহজেই চেনা যায় এক বিশেষ যাপনের চিত্র, এ শহরের রীনা ব্রাউনদের। ভারতীয় ও ব্রিটিশ দুটো সংস্কৃতির মিলনে সৃষ্টি অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের রন্ধন প্রনালী ব্রিটিশরাজের সময় বিকশিত হয়। আজ তাদের রান্নাবাটির গল্প থাকছে লেখায়।

অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের খাওয়া দাওয়া প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে এক অতি প্রিয় মুলগাতওয়ানি স্যুপের কথা। প্রচলিত আছে, এক সাহেব সাগর পেরিয়ে মাদ্রাজে পা দিয়েই বাবুর্চিকে স্যুপ বানানোর নির্দেশ দেন। তখন এদেশের পাচকদের স্যুপ সম্বন্ধে কোনো সম্যক ধারণাই ছিলনা। তখন সেই মাদ্রাজি বাবুর্চি গোলমরিচ গুঁড়ো, লঙ্কা, লবঙ্গ, সরিষার বীজ, মেথি, লবণ, কারিপাতা, ছোট পিয়াজ সামান্য ঘিয়ে ভেজে, তেঁতুল জলে গুলে সেটি ফুটিয়ে, যেটি তৈরি করে সাহেবকে দিলেন পরবর্তীকালে তাই মুলগাতওয়ানি (mulligatawny) স্যুপ নামে পরিচিত হয়েছিল। অল্প টক স্বাদের আড়ালে থাকা গোলমরিচের উষ্ণ আলিঙ্গন মুলগাতওয়ানি (mulligatawny) স্যুপকে আলাদা এক লেবেলে পৌঁছে দেয়।

ঝালফ্রেজি বা প্যানত্রাসে

মাদ্রাজে বসবাসকারী ইংরেজ সাহেবদের তাদের দেশের লোকজনেরা ডাকতেন মূল বলে, তাই হয়তো এই ধরনের নামকরণ। যদিও বা এ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। পরবর্তীকালে সাহেবি ধরনধারনে, খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের হেঁসেলে সহজেই মুলগাতওয়ানি স্যুপ ঢুকে পড়েছিল সবজি, মাংস ও হালকা মসলা যোগ করে এক অসাধারণ বিশ্বজয়ী স্বাদু পদ হিসেবে। এছাড়াও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের স্যুপ বাহিনীতে আর্মি ক্যাম্প চিকেন স্যুপ, রেড লেন্টিল স্যুপ (Red Lentil Soup), ল্যাম্ব ট্রটার্স স্যুপ (Lamb Trotters Soup), ক্রিম ভেজিটেবল স্যুপ, ড্রামস্টিক স্যুপ স্বাদ-গন্ধে-বর্ণে সুপারহিট।

অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা শুধু যে ভোজনবিলাসী তাই নয়, তারা অত্যন্ত অতিথিবৎসলও বটে। যেকোনো পারিবারিক অনুষ্ঠান তা সে জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী হোক বা যে কোন বিশেষ দিনে আজও এদের হেঁসেলে যজ্ঞ বাড়ির ধূম পড়ে যায়। সেদিনের মেনুতে থাকবে পেপার ওয়াটার, পোট্যাটো অ্যান্ড বিটরুট কাটলেট, হার্বড রাইস, বল লফ্রাই, মটন লেগ রোস্ট, জংলি পোলাও, কিমার পুর ভরা আলুর চপ, চিকেন কোরমা, প্রণ ঝালফ্রেজি, চিংড়ির দমপোক্ত, পর্ক কারি, ভুনি, ডেভিলস চাটনি ইত্যাদি। আর শেষপাতে বাড়ির গিন্নির হাতের তৈরি কেক, ক্যারামেল কাস্টার্ড বা শীতকাল হলে থ্রি প্লাম পুডিং (Three Plum Pudding)-এর মত জিভে জল আনা পদের।

জংলি পোলাও

মটন লেগ রোস্টের অংশ উদ্বৃত্ত থেকে গেলে তা দিয়ে পরের দিন অ্যাংলো গিন্নি বানিয়ে ফেলবেন ঝালফ্রেজি বা প্যানত্রাসের (Pantras) মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের পদ। এদের খাদ্যের রুচিতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এক অসাধারণ মেল বন্ধন ঘটে গিয়েছিলে। তা সত্ত্বেও কলকাতার কলিনস স্ট্রিট, এলিয়ট রোড বা বো ব্যারাকের অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের দুপুরের মেনুতে ভাত, ডাল যেমন থাকবে তেমন পেঁয়াজ লঙ্কা হলুদ রসুন বাটা দেওয়া ঝাল ঝাল চচ্চড়ি আর গড়গড়ে করে রান্না করা পর্ক বা বিফ কারি বা লঙ্কাবাটা লেবুর রস মাখানো ভেটকি বা ইলিশ মাছ ভাজা। এদের রান্নায় পড়ে ধনে জিরে লঙ্কা হলুদ সর্ষের মতো সব দেশি মসলা।

দুপুরের প্রায় দেশী সব খাবার খেলেও রাতে কিন্তু এরা সাধারণত খায় ‘থ্রি কোর্স ইংলিশ ডিনার (Three course English dinner)।’ যাতে থাকে স্যুপ, চিজ ম্যাকারনি, ব্রেড পুডিং বা বেক্‌ড আলাস্কা।

ব্রেকফাস্টে ওদের পছন্দ ছোলার ডাল বা হালুয়া দিয়ে কচুরি বা পুরি আবার কোন কোন দিন ওদের বিখ্যাত আলু চপ কিংবা কাটলেট বা ক্রাম্ব চপ বা প্যানত্রাস।

মুলগাতওয়ানি

অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের অতি পছন্দের জংলি পোলাও উদ্ভাবন বেশ মজাদার। তখনও রেফ্রিজারেটরের যুগ শুরু হয়নি। প্রচন্ড গরমে বাড়ির সদস্যদের ক্লান্তি ও খিদের অভাব মেটানোর চেষ্টায় অনেক সময় দুপুরের রান্না করা তরকারি, বেঁচে যাওয়া ভাতের বেশ খানিকটার সঙ্গে নানান ধরনের মসলা মিশিয়ে দু-একটা কাঁচা সবজি যোগ করে চৌখস অ্যাংলোইন্ডিয়ান গিন্নি বানিয়ে ফেলতো এক অভিনব পোলাও, যা পরবর্তীকালে খ্যাতি পেয়েছিল জংলি পোলাও (Junglee Pulao) নামে।

১৮ শতকের গোড়ায় জীবিকার সন্ধানে ও সাহেব মেমসাহেবদের হুকুম ফরমাইস মাফিক খাবার বানাতে বাবুর্চি আর খানসামাদের গলদঘর্ম হত। প্রয়োজনের তাগিদে জন্ম নেয় এক নতুন রসনা, স্বাদে-গন্ধে-মেজাজে রান্নার ডালি। এই অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের হেঁসেলের সুঘ্রাণ পৌঁছে গিয়েছিল ভোজনরসিক বাঙালির সন্ধানী নাকেও। তাই আজও অ্যাংলো ইন্ডিয়ান রসনার নস্ট্যালজিয়া জাগিয়ে রাখার প্রয়াসে আগস্ট মাসের প্রথমে পালিত হয় ফুড-ফেস্ট। সেই স্বাদ গন্ধের টান উপেক্ষা করে এমন ভোজনরসিকদের অস্তিত্ব বিরল।


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের হেঁসেলের গল্প : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Pallab dey says:

    অসাধারণ প্রতিবেদন সঙ্গে অনেক খাবারের নাম,,,,সুন্দর লেখনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন