শুক্রবার | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:১১
Logo
এই মুহূর্তে ::
সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

কর্মব্যস্ত জীবনে যদি নেওয়া যায় একটু মায়াদুপুরের ভাতঘুম : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৮০১ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৩

দুপুরবেলা লাঞ্চের পর কাজে বা মিটিংয়ে বসলেই জুড়িয়ে আসে চোখ। সঙ্গী হয় হাল্কা ঝিমুনি আর একটু নাক ডাকা। ব্যাপারটা ওয়াক ফ্রম হোম হলেও ঝক্কি কম ছিল কিন্তু ভাবুন তো অফিসের ডেস্কে বা মিটিং রুমে, ক্লাসে স্টুডেন্টদের সামনে এমন হলে কেমন লাগে! কর্মক্ষেত্রে ঘুমানো নিয়ে কত কাণ্ডই না ঘটে! বিষয়টা অস্বস্তিকর হলেও, এমন অভিজ্ঞতা কমবেশি সকলেরই রয়েছে।

প্রকৃপক্ষে সভ্যতার জন্মের পিছনে লুকিয়ে আছে মানুষের বুদ্ধি ও শ্রম। জীবনে শ্রমের প্রয়োজনীয়তা যতটা, ততোটাই দরকার বিশ্রামের। আর এই কর্মব্যস্ত জীবনে যদি নেওয়া যায় একটু ভাতঘুম, তবে মন্দ হয়না বৈকি।

দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর শরীরজুড়ে যে ঝিমুনি ভাব আসে তাকে চলতি ভাষায় ভাতঘুম বা দিবানিদ্রা বলা হয়। বিশেষ করে উষ্ণ জলবায়ুর দেশগুলোতে এ রকম ঝিমুনি ভাব বেশি প্রত্যক্ষ করা যায়। তাইতো ঘরে থাকলে দুপুরে বিছানার অমোঘ আকর্ষণ এড়িয়ে যাওয়া এ যেন এক চরম বিপ্লব। “ভোজনং যত্রতত্র শয়নং হট্টমন্দিরে” এই প্রবাদের উদাহরণ অফিস-কাছারি থেকে বাসে-ট্রেনে সর্বত্র পরিলক্ষিত হয়।

আর বাঙালি বোধহয় একমাত্র জাতি যাঁরা দিবানিদ্রার জন্য আয়োজন করে। রবিবারের দুপুরে এই আয়োজনের প্রধান দুই অঙ্গ হলো মহার্ঘ্য খাসির মাংসের ঝোল এবং দ্বিতীয় উপাদান পাশবালিশ। এক বাটি লাল রগরগে মাংসের ঝোল দু-টুকরো আলুর সঙ্গে বাঁশকাঠি চালের গরম ভাত চটকে মেখে খেয়ে তৈরি করা হয় ভাতঘুমের বেস। যদিও বা গুরুপাক আহার নিবিড় নিদ্রার অন্তরায় তথাপি মাংস ভাত খেয়ে পাশবালিশ জড়িয়ে না ঘুমাতে পারলে ছুটির দিনে মজাই মাটি।

শুধু স্বদেশেই নয়, এই ভাতঘুম বেশ পপুলার বিদেশেও। সিয়েস্তা কথাটি (স্প্যানিশ শব্দ sjesta যার অর্থ ঘুম ) ভূমধ্যসাগরীয় এবং দক্ষিণ ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, মূল ভূখণ্ড চীন, এবং ভারতীয় উপমহাদেশ জুড়ে প্রচলিত আছে। সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়ায় ছোট একটি ঘুম বা ভাতঘুম বড়ই প্রয়োজন।

উইনস্টন চার্চিলকে যুক্তরাজ্য তথা বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং লেখক হিসেবে গণ্য করা হয়। ৯১ বছরের জীবদ্দশায় দিনে পাঁচ ঘন্টা করে ঘুমালেও নিয়মিত ভাতঘুম দিয়ে তা পূরণ করতেন। ঘুম নিয়ে অনেক মজার মজার কথা বলতেন। শোবার ঘরে থাকতো দুটি বিছানা। একটিতে ঘুম না এলে, অন্যটিতে শুতেন। তাঁর মতে, দিবানিদ্রা নিলে বেশি কাজ করা যায়। দুপুরে ঘুমোলে তিনি একদিনে দেড় দিনের কাজ করতে পারতেন।

সৃষ্টিশীল ও ব্যতিক্রমী শিল্পী সালভাদোর দালি বিশ্বাস করতেন বিখ্যাত শিল্পী হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে তাঁর হাতে চাবি নিয়ে ঘুম। এক সেন্টের কাছ থেকে শিখেছিলেন এই গোপন কৌশল। বৈকালিক ছোট্ট ঘুমের জন্য বুড়ো আঙুল ও তর্জনীর ফাঁকে ধাতুর তৈরি একটি ভারী চাবি নিয়ে, আরাম কেদারায় শুতেন। মেঝেতে রাখতেন একটি কাঁচের প্লেট। ঘুমিয়ে গেলে হাত থেকে চাবিটি কাঁচের প্লেটে পরলেই ঝনঝন আওয়াজে দালির ঘুম ভেঙ্গে যেতো।

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি দুপুরে নিতেন একটা ভাতঘুম। নির্দেশ দেওয়া থাকতো অতি জরুরী ব্যাপার ছাড়া তাঁকে যেন সেইসময় ডাকা না হয়। ঘুম থেকে জেগে স্নান করে বিশাল উদ্যমে শুরু করতেন কাজ।

একান্তই যদি দুপুরে ঘুমাতে না চান তবে ঢুলুঢুলু ভাব লাগলেই শুনতে পারেন একটু রক মিউজিক।

দুপুরে খাওয়ার পর এনার্জি ড্রিংক না খেয়ে, টকদই বা সবুজ আপেল খেতে পারেন। কিছুক্ষনের জন্য খোলা হওয়ায় হাঁটতে পারেন। কর্মস্থলে থাকলে সহকর্মীদের সঙ্গে হালকা আড্ডা দেওয়া যেতেই পারে। এমনিই কর্মক্ষেত্রে ঘুমানো নিয়ে কত ট্রোলের ফাঁদে পরতে হয়। শুরু হয়ে যায় আজগুবি সব গল্প। তাতে মেশে রামধনুর রঙ। রাষ্ট্র হতে সময় লাগে কিছুক্ষণ। এতে বিব্রত হতে হয় ব্যক্তিটিকে।

অথচ চীনে মধ্যাহ্নভোজের পর কর্মীদের আধাঘন্টা ঘুমাতে উৎসাহিত করা হয়। কর্তৃপক্ষ মনে করেন উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য এটি জরুরী।

সমীক্ষায় দেখা গেছে, দিনের বেলার ঘুম দুপুর ১টা থেকে ৩টের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্কদের রাতে ঘুমের উন্নতি করতে সাহায্য করে। এবং তার সঙ্গে বিকালে মাঝারি ব্যায়ামের সাথে হাঁটা, রাতের ঘুম উন্নত করতে সাহায্য করে যা মানসিক এবং শারীরিক স্বাস্থ্যর পক্ষে সহায়ক। দুপুরের ঘুম ব্লাড প্রেসারের উপর পজিটিভ এফেক্ট ফেলে।

সম্প্রতি বেঙ্গালুরুর স্টার্ট-আপ সংস্থা ডি-টু-সি (D2C) হোম-এন্ড-স্লিপ ‘ওয়েকফিট সলিউশনস’ কর্মীদের দুপুরে ভাতঘুমের ব্যবস্থা করেছে। প্রতিদিন দুপুর দুটো থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ৩০ মিনিট কর্মীদের ঘুমের জন্য সময়টি অফিশিয়ালি তারা চিহ্নিত করেছেন। এমনকি পাওয়ার ন্যাপের আদর্শ জায়গা বা নিঃশব্দ ঘরের ব্যবস্থাও তারা করেছে। অনিদ্রার সমস্যা বা স্পনডেলাইটিসের কারণে অনেকেই ভালোভাবে ঘুমোতে পারেন না। তাদের নিশ্চিন্ত ঘুমের জন্য আরামদয়ক গদি, বিছানা, আসবাব বিক্রি করে বেঙ্গালুরুর এই সংস্থা। এমনকি ক্রেতাদের জন্য আরামদায়ক বিছানা বা ম্যাট্রেসে ১০০ দিনের ট্রায়াল দিচ্ছে এই কোম্পানি। কোম্পানির এই পদক্ষেপ শুধু কর্মীদের কাছে নয়, সোশ্যাল মিডিয়াতেও অনেক সাড়া ফেলেছে।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী আহার, নিদ্রা ও মৈথুনে লুকিয়ে আছে জীবনের পরম সুখ। সুষম আহার যেমন সুখনিদ্রাকে আমন্ত্রণ জানায়, তেমনিই তুরীয় পর্যায়ের সঙ্গম শরীরকে নিয়ে যায় গভীর নিদ্রার দিকে।

উপসংহারে বলা যায়, ছোট্ট একটি ভাতঘুম কেবল আপনার শরীরকেই নয়, আপনার মনকেও সতেজ করতে পারে। আপনাকে আরও সতর্ক করে তোলে। আপনার ধৈর্য্য, সৃজনশীলতা বাড়ায়, আপনাকে আরও কর্মক্ষম করে তোলে। কিন্তু আপনাকে আপনার ঘুমের জন্য সীমা সময় নির্ধারণ করতে হবে যাতে জেগে ওঠার পর বিষণ্ণ বোধ করতে না হয়। জীবন তো তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করার জন্য আর সেই উপভোগের অন্যতম উপকরণ একটি ছোট্ট পাওয়ার ন্যাপ বা মায়াদুপুরের ভাতঘুম।।

“বিরাম কাজেরই অঙ্গ এক সাথে গাঁথা, / নয়নের অংশ যেন নয়নের পাতা।”


আপনার মতামত লিখুন :

8 responses to “কর্মব্যস্ত জীবনে যদি নেওয়া যায় একটু মায়াদুপুরের ভাতঘুম : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Pallab dey says:

    অসাধারণ লেখনী।

  2. শুভাশিস ঘোষ says:

    বাঃ! চমৎকার প্রতিবেদন। খুব ভাল লাগল।

  3. p k biswas says:

    আহা ঘুম বাহা ঘুম,মায়া ঘুম,রাত ঘুম ঘুমিয়ে*
    স্বপ্নের দেশে যাই শত বাধা পেড়িয়ে*ভাত ঘুম
    দুপুরের নাহলেতো চলেনা,সারাদিন ঝিমুনি কোনো বাধা মানেনা*বিছানা বা মাটিতে কিংবা
    গাছের ছায়া ঘুম পরিপাটিতে!!*
    অপূর্ব প্রতিবেদন*ঘুমের প্রয়োজন,তার ইতিহাস
    আপনি পাঠককে সম্মোহন করেন জাদু লেখোনীতে। ভালোলাগা ভালোবাসা।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন