শুক্রবার | ২রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ১১:১০
Logo
এই মুহূর্তে ::
রামকৃষ্ণ মিশন মানে ধর্মকর্ম নয়, কর্মই যাঁদের ধর্ম তাঁরাই যোগ্য : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী সংস্কারের অভাবে ধুঁকছে সিংহবাহিনী মন্দির, নবগ্রাম (ঘাটাল) : কমল ব্যানার্জী পরিবেশ মেলা ২০২৫ : ড. দীপাঞ্জন দে মন্দির-রাজনীতি মন্দির-অর্থনীতি : দিলীপ মজুমদার স্বাধীনতা-সংগ্রামী মোহনকালী বিশ্বাস স্মারকগ্রন্থ : ড. দীপাঞ্জন দে অক্ষয়তৃতীয়া, নাকি দিদিতৃতীয়া : অসিত দাস আরএসএস-বিজেপি, ধর্মের তাস ও মমতার তৃণমূল : দিলীপ মজুমদার সাবিত্রি রায় — ভুলে যাওয়া তারার খোঁজে… : স্বর্ণাভা কাঁড়ার ছ’দশক পর সিন্ধু চুক্তি স্থগিত বা সাময়িক অকার্যকর হওয়া নিয়ে প্রশ্ন : তপন মল্লিক চৌধুরী বিস্মৃতপ্রায় বঙ্গের এক গণিতবিদ : রিঙ্কি সামন্ত অসুখবেলার পাণ্ডুলিপি : পুরুষোত্তম সিংহ বাবু-ইংরেজি আর সাহেবি বাংলা : মাহবুব আলম সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ অক্ষয় তৃতীয়ার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

রামকৃষ্ণ মিশন মানে ধর্মকর্ম নয়, কর্মই যাঁদের ধর্ম তাঁরাই যোগ্য : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী

মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী / ১০৩ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

কদিন আগেই ঘটে গেছে একটি ধর্মীয় হত্যাকান্ড। নারকীয়, ঘৃণ্য এই নরমেধ যজ্ঞ হয়েছে ভূস্বর্গে। এটাই Irony। যে স্থানে পা রাখলে মনে হয় যদি স্বর্গ কোথাও থাকে সে এখানেই, সে এখানেই। কিন্তু একই ভাবে বলা যেতে পারে নরক যদি কোথাও থেকে থাকে সে এখানেই। কারণ এখানে একটি বিশেষ ধর্মের মানুষ অন্য একটি বিশেষ ধর্মের মানুষকে Identify করে করে মেরেছে। এমনকি কিছু বিশেষ চিহ্ন দেখে confirm হয়ে মারা হয়েছে। ভয়ংকর দুঃখের এটাই যে, এই কাশ্মীর শঙ্করাচার্যের এবং এই কাশ্মীর বাঙালি তথা গোটা জগতের স্বামী বিবেকানন্দের। এই পহেলগাঁও-এর উপর দিয়ে ভগিনী নিবেদিতা ও অন্যান্য কয়েকজনকে নিয়ে তিনি অমরনাথ যাত্রা করেছিলেন। এই অমরনাথের কাছেই তিনি পেয়েছিলেন ইচ্ছামৃত্যুর আশীর্বাদ। আর এই কাশ্মীরেই ক্ষীর ভবানী মন্দিরে তিনি অন্য ধর্মের এক শিকারা চালকের কন্যাকে কুমারীমাতা রূপে পূজা করে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন ধর্ম কারো ভাতের হাঁড়িতে থাকে না, কারো শরীরের বিশেষ চিহ্নেও থাকে না।

১৮৯৭-এর পয়লা মে প্রতিষ্ঠিত হয় রামকৃষ্ণ মিশন। বিবেকানন্দর স্বপ্ন সাকার হল। মিশন প্রতিষ্ঠা করার মূল উদ্দেশ্য ছিল শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের আদর্শ প্রচার করা এবং মানুষের মধ্যে ঈশ্বর চেতনা জাগ্রত করা। ঈশ্বর চেতনার মাধ্যমে মানুষের বোধ উন্নত করা, জনকল্যাণমুখী ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, শিক্ষা বিস্তার এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ ও চিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের পাশে থাকা। এখানে ধর্মের কথা নেই। পুজোর ঘন্টা নাড়া নেই। আছে শুধু জনকল্যাণ, আছে শুধু মানুষ হয়ে মানুষের পাশে থাকা।

মিশন তৈরি হয়ে যাবার আটত্রিশ বছর পরের একটি ঘটনা দেখলে খানিক মিশন সম্বন্ধে মানুষের ধারণা হবে। তারিখটা ৭ই ফেব্রুয়ারি ১৯৩৫, স্থান হরিদ্বার। স্বামী সর্বগতানন্দের স্মৃতিচারণা। “বাজারের কাছে এসে যখন আমি জিজ্ঞেস করতে লাগলাম, রামকৃষ্ণ মিশনের স্থানীয় কেন্দ্রটা কোথায় তখন কেউই আমার কথা বুঝতে পারছে না।… সেখানে খুঁজতে খুঁজতে শেষ পর্যন্ত গঙ্গা খালের ধারে একটা সুন্দর বাড়ি নজরে এলো, সেখানে সাইনবোর্ড আঁটা ‘ম্যাড্রাসি ধর্মশালা’। ভিতরে ঢুকে গিয়ে এক স্বামীকে জিজ্ঞেস করলাম : রামকৃষ্ণ মিশন সেন্টারটা কোথায়? সন্ন্যাসী বলল, ও! তুমি বাঙালি হাসপাতালের কথা জিজ্ঞেস করছ! তাই হবে নিশ্চয়। সন্ন্যাসী জানতে চাইল, কেন আমি ওখানে যেতে চাইছি? আমি বললাম, ‘আমি রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দিতে এসেছি।’ সন্ন্যাসী আমাকে নিরুৎসাহ করে বললেন আমাদের এখানে যোগ দাও। ‘না, আমি রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দেব সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি।'”

এবার সন্ন্যাসীর কাছে পথের সন্ধান পাওয়া গেল। নারায়ণ মহারাজ বা স্বামী সর্বগতানন্দ তখন তরুণ। হাঁটতে হাঁটতে মস্ত একটি কম্পাউন্ড দেখতে পেলেন। হাসপাতালে ঢুকে বেশ কিছু পরে এক সন্ন্যাসীর দেখা পেলেন। অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে আগত এই তরুণ শুধুমাত্র মানুষকে সেবা করার জন্য রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দিতে এসেছিলেন। ওঁকে গঙ্গাধর মহারাজ বা স্বামী অখন্ডানন্দ মহারাজ দীক্ষা দেন। তারপর বলেন, “এখান থেকে হাজার মাইল দূরে কনখলে মিশনের একটি সেবাশ্রম আছে। সেখানে তোমায় পায়ে হেঁটে যেতে হবে। পারবে তো?” বাইশ বছরের নারায়ণ পায়ের জুতো খুলে ফেললেন। শুরু হল পরিক্রমা। স্বামী কল্যাণানন্দ নারায়ণকে অতীত সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তারপর স্বামী অখন্ডানন্দের চিঠিটা পড়ে নারায়ণকে শোনালেন। “এই ছেলেটাকে তোমার কাছে পাঠাচ্ছি, ওকে দেখাশোনা কোরো।” ব্যস। আর কিচ্ছু নেই। নারায়ণ যে সুদূর অন্ধ্রপ্রদেশ থেকে হরিদ্বার এলেন, এবং তারপরে পায়ে হেঁটে কনখলে এলেন সন্ন্যাসী হতে, সেই সন্ন্যাসের কোনো উল্লেখ স্বামী অখন্ডানন্দের চিঠিতে নেই।

নারায়ণ মহারাজ পরে বলেছেন যে তিনি এমন একটি জায়গার সন্ধানে ছিলেন যেখানে আধ্যাত্মিক উন্নতির সঙ্গে মানুষের সেবা সমান ভাবে চলবে। কারো সঙ্গে কারো বিরোধ থাকবে না। ধর্ম ও কর্ম সমভাবে চলবে। আমরা যদি রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতীকটি লক্ষ্য করি তাহলে দেখব কর্ম, ভক্তি, জ্ঞান, যোগ এবং পরমাত্মার মিলনস্থল। এটি স্বামী বিবেকানন্দের নিজের ডিজাইন করা।

তরঙ্গায়িত জল : কর্মের প্রতীক। এটি নির্দেশ করে যে কর্মের ঢেউয়ে জীবন অগ্রসর হয়।

পদ্ম : ভক্তির প্রতীক। পদ্ম ফুলটিকে পবিত্রতা ও ভালোবাসার প্রতীক ধরা হয়।

উদীয়মান সূর্য : জ্ঞানের প্রতীক। এটি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলো ছড়ানোর প্রতীক।

সর্প : যোগ ও জাগ্রত কুন্ডলিনী শক্তির প্রতীক। এটি শারীরিক ও মানসিক শক্তিকে একত্রিত করে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির দিকে চালিত করে।

রাজহাঁস : পরমাত্মার প্রতীক। এটি আত্ম — সচেতনতা ও আধ্যাত্মিক উপলব্ধির প্রতীক।

এই প্রতীকটি মূলত কর্ম, যোগ, এবং জ্ঞানের সমন্বয়কে নির্দেশ করে। যা রামকৃষ্ণ মিশনের মূল আদর্শ।

কনখলে পৌঁছে কদিন পর নারায়ণ বলেছিলেন স্বামী কল্যাণানন্দকে যে তিনি হাসপাতালের কাজে সাহায্য করতে চান। স্বামী কল্যাণানন্দ তখন জিজ্ঞেস করেছিলেন, “তুমি এখানে আসার আগে কি করতে?” নারায়ণ জবাব দিলেন যে তাঁর ব্যাঙ্কিং এবং অ্যাকাউন্টিং — এ যৎকিঞ্চিৎ অভিজ্ঞতা আছে। মহারাজ বললেন, “এটাই তো চাইছিলাম।” এরপরে মহারাজের রসিকতা — “জীবনকালে চুন-সুরকির ব্যবসা করত এমন একজন লোক স্বর্গে গেলেন। স্বর্গে মানুষটা কি করবে? ওখানেও অবশ্যই চুন-সুরকি বেচবে। তুমিও সাক্ষাৎ স্বর্গে এসেছ, কিন্তু তোমার ভাগ্যেও একই অবস্থা হতে চলেছে।”

সংসার ছেড়ে দক্ষিণারঞ্জন গুহ বেলুড়ে ১৮৯৮ সালে এসে হাজির। তিনি ডাক্তারি পড়েছেন দুটি বছর। এই সময় স্বয়ং স্বামীজি ওখানে উপস্থিত। তিনি রসিকতার লোভ সামলাতে পারেন নি। গ্রাম্য সরল ছেলেটিকে স্বামীজি বললেন, “আচ্ছা, ধর আমার কিছু টাকা দরকার, তার জন্যে যদি তোকে চা বাগানের কুলী বলে বিক্রি করি — তুই রাজী আছিস তো?” বরিশালের পোলা এক কথায় রাজী হলেন।

এই দক্ষিণারঞ্জন সন্ন্যাস নিয়ে নাম পেলেন স্বামীজির থেকে স্বামী কল্যাণানন্দ। কেন এমন নাম? জীবের কল্যাণের জন্য নিশ্চয়। বেলুড়ে সন্ন্যাস দিয়ে বিবেকানন্দ বললেন, “কল্যাণ আমাকে কি গুরুদক্ষিণা দেবে?” কল্যাণের কাছে কিছুই ছিল না। তিনি বললেন, “আমি নিজেকেই আপনার দাসরূপে আপনাকে নিবেদন করছি।”

এতসব কথার অবতারণা শুধু এইটুকুর জন্য যে রামকৃষ্ণ মিশন মানে ধর্মকর্ম নয়। কর্মই যাঁদের ধর্ম হয়েছে তাঁরাই শুধু এই মিশনের যোগ্য। শুধু ধ্যান করা আর অং বং চং মন্ত্র পড়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা নয়। মানুষের ধর্ম সে মানুষ।

অন্ধকার এখন খুব গাঢ়। সেই সময়ও অন্ধকার কম ছিল না। তবে সেসময় একটি বিবেকানন্দ ছিলেন। অন্যায়ে তিনি নীরবে কষ্ট পেতেন। “ঠাকুরঘরে ঠাকুরের সামনে মার্বেল পাথরটায় জল দিয়ে বেশ করে ভিজিয়ে রেখে আয়। মোটে মুছবি না। দেখছিস না, চারিদিকে কী হচ্ছে? সব শরীর জ্বলে যাচ্ছে, তাই আত্মারামের কাছে গড়াগড়ি দিচ্ছিলাম, ঠান্ডা হবো, সব শরীর জুড়াবো বলে।”

বিবেকানন্দ তাঁর প্রতিষ্ঠিত মঠ ও মিশনকে সবচেয়ে কম সময় দিতে পেরেছেন। মিশনের শৈশবেই তিনি ইহলীলা সংবরণ করেছেন। কিন্তু একশো আঠাশ বছর পরেও এই মিশনের ক্রমবিস্তার অব্যাহত। আজও ভারতমাতাকে এই সংঘ শতাধিক সন্ন্যাসীসন্তান উপহার দিয়ে চলেছে। প্রেমের সঙ্গে নিয়ম, নীতি ও নিষ্ঠার মেলবন্ধনে স্বামীজি এই সংঘকে এমন ভাবে বেঁধে দিয়েছেন যে এটি সহজেই কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। এইখানেই সংগঠক বিবেকানন্দের অবিশ্বাস্য সাফল্য।


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “রামকৃষ্ণ মিশন মানে ধর্মকর্ম নয়, কর্মই যাঁদের ধর্ম তাঁরাই যোগ্য : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী”

  1. Bhaswati Mitra says:

    ভারি সুন্দরভাবে রামকৃষ্ণ মিশনের প্রকৃত চরিত্র আঁকা হয়েছে। কর্ম যে তাঁদের প্রাণ ও ধর্ম, একথা আজও সমান সত্যি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন