আধুনিক কংক্রিটের জঙ্গলে থাকতে থাকতে সকলেরই ইচ্ছা করে প্রকৃতির সান্নিধ্যতা পেতে। চারদেওয়ালের ফ্ল্যাট বাড়িতে মন পেতে চায় সবুজের ছোঁয়া। এতে শরীর ও মন দুইই ভালো থাকে। ঘরের মধ্যে লাগানো ইনডোর প্ল্যান্টগুলি কেবলমাত্র ঘরের শোভাবর্ধন করে শুধু নয়, ঘরের ভিতরে দূষিত বায়ু শুদ্ধ করতে এদের ভূমিকা অসামান্য।
হর্টিকালচার থেরাপি প্রোগ্রামের সহকারী পরিচালক ‘গ্যারি এল. আল্টমান’ বলেন, “ইনডোর প্ল্যান্টের বায়ু বিশুদ্ধকরণ ক্ষমতা নির্ভর করে উদ্ভিদের আকার, ইনডোর স্পেস বা আবদ্ধ স্থানের আকার ও বায়ুতে টক্সিনের পরিমাণের ওপর। ৬ থেকে ৮টি মাঝারি থেকে বড় আকারের ইনডোর প্ল্যান্ট একটি বড় কক্ষের বায়ুর উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।”
ফ্ল্যাট বা বাড়ির সব ঘরেতে সূর্যের আলোর অনুপ্রবেশ কম। কম আলোয়, যত্ন কম করতে হবে অথচ অনেক অক্সিজেন উৎপাদন করতে সক্ষম অনেক গাছ রয়েছে যেগুলিকে ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে রাখা যায়। যেমন ধরুন…
অ্যালোভেরা : বাংলায় যার নাম ঘৃতকুমারী বা ঘৃতকাঞ্চন। প্রায় পাঁচহাজার বছর আগে থেকে আয়ুর্বেদ চিকিৎসায় অ্যালোভেরা ব্যবহৃত হয়। বিজ্ঞানীরা বলেন, নয়টি বায়োলজিক্যাল এয়ার পিউরিফায়ারে( বায়ু পরিশোধনকারীর) কাজ একাই করতে পারে একটি অ্যালোভেরা গাছ। ঘরের মধ্যে থাকা কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনো-অক্সাইড, ফরমালডিহাইডের মতো ক্ষতিকারক টক্সিন শোষন করে নেয়।
সাধারণত শেকড় থেকে বেরোনো ডাল বা শাখা থেকেও নতুন গাছ হয়। বাজারেও খুব বেশি দাম হয়না গাছটির। গাছের গোড়ায় যাতে জল না জমে সেদিকে নজর রাখতে হবে। ত্বক ও চুলের জন্য উপকারী অ্যালোভেরা। তাই প্রসাধনীর কৌটোয় এই গাছের ছবি দেখা যায়।রোদে পোড়া, ত্বকে ফুসকুড়ি বা চুলের পুষ্টি যোগাতে এর জুড়ি মেলা ভার।
ভিটামিন ও খনিজে সমৃদ্ধ অ্যালোভেরার রস পান করলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে, পরিপাকতন্ত্র সতেজ থাকে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ প্রশমনে খুবই উপকারী। তবে এটি পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া মুক্ত নয় তাই এর সঠিক পরিমাণ ব্যবহার বিশেষজ্ঞর মতামত নিয়ে করা উচিৎ।
মানিপ্ল্যান্ট : মানিপ্ল্যান্টকে ধন ও ঐশ্বর্যের গাছ বলা হয়। বাস্তুশাস্ত্র বলে,এই ইনডোর প্ল্যান্টটিকে ঘরের উত্তর-পূর্ব কোণে রাখা উচিত।ঘরের বাতাসকে ফিল্টার করে অক্সিজেন চলাচল বৃদ্ধি করে এই গাছ। গাছটি বাতাস থেকে অনেক বিষাক্ত যৌগ ফরম্যালডিহাইড, বেনজিন, জাইলিন, টলুইন, ট্রাইক্লোরোইথেন ইত্যাদি শোষণ করে ঘর দূষণমুক্ত করে। খুব বেশি যত্নের প্রয়োজন হয়না এই প্ল্যান্টের।
মাটি ভর্তি টবে মানিপ্ল্যান্ট এর কাটিং পুঁতে দিন আর ছায়ায় রেখে অল্প জল দিন। কিছুদিনের মধ্যেই কাটিংগুলো বাড়তে শুরু করবে। পাতা শুকিয়ে গেলে, পোকা ধরলে বা আকার নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রয়োজনমতো ছেঁটে দিন, তাহলেই সুস্থ থাকবে আপনার ‘টাকার গাছ’। মানিপ্ল্যান্টের প্রধান আকর্ষণ এর বাহারি পাতা।তবে গাছের পাতায় ও কাণ্ডে ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকায় ছোট বাচ্চা কিম্বা পোষ্যদের হাতের নাগালের বাইরে রাখাই ভালো।
স্নেক প্ল্যান্ট : ইন্ডোর প্ল্যান্টগুলির মধ্যে বায়ু-বিশুদ্ধকারী শীর্ষগাছগুলোর মধ্যে অন্যতম। একটি গবেষণায় জানা গেছে, বদ্ধ ঘরে একটি পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্য ৬-৮টি স্নেকপ্ল্যান্ট অক্সিজেনের সরবরাহ করতে পারে। এয়ার কন্ডিশনার থেকে নির্গত ফরমালডিহাইড শুষে নিয়ে প্রায় ২০০বর্গমিটার এলাকার বাতাস পরিশুদ্ধ করতে পারে এই গাছ। রাতেও অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে স্নেকপ্ল্যান্ট।
খুব ধীর গতিতে বৃদ্ধি পায় গাছটি। এলার্জির সমস্যা থাকলে ঘরে গাছটি রাখবেন। বাস্তু বলে, ঘরের দক্ষিণ-পূর্বে গাছটি রাখলে ইতিবাচক শক্তি ছড়িয়ে দেয় এই গাছ।
ব্যাম্বু প্ল্যান্ট : আফ্রিকার স্থানীয় গাছগুলো আসলে বাঁশ গাছ নয়। খুব কম আলোয়, যে কোন মরশুমে জলের মধ্যে বাড়ে ব্যাম্বু প্ল্যান্ট। খ্রিস্টপূর্ব নবম শতাব্দী থেকে প্রাচীন চীনা দর্শন (ফেং শুই) ঐতিহ্যগতভাবে সৌভাগ্য, প্রেম, স্বাস্থ্য এবং সমৃদ্ধির জন্য উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। বাতাসে দূষিত কণা টোলুইন, ক্ষতিকারক টক্সিন বেঞ্জিন ইত্যাদি কে শোষণ করে অক্সিজেনের লেভেল বাড়িয়ে তোলে এই গাছ। শুধুমাত্র ঘর সাজানো নয়, ঘরের ৫৮ শতাংশ পর্য্যন্ত দুর্গন্ধ শুষে নিতে পারে এই গাছ।
তুলসী গাছ : বৈজ্ঞানিক ও আধ্যাত্মিক দিক থেকে তুলসী হলো শ্রেষ্ঠতম গাছ। এই গাছটি কেবল অক্সিজেন সরবরাহ করে না এর পাতা, ফল ও মূল আমাদের সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এছাড়া ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে বিভিন্ন ধরনের অর্কিড, পাতাবাহার বা ক্রোটন, এরিকা পাম, রাবার গাছ, জেসমিন, স্পাইডার প্ল্যান্ট, ইংলিশ আইভি, ফ্ল্যামিংগো লিলি প্রভৃতি গাছ লাগাতে পারেন।
বাগানে বেড়ে ওঠা গাছের পরিচর্যা আর ইনডোর প্ল্যান্টের যত্নের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। বারান্দায় বা যে ঘরে আলো বাতাস চলাচল করে সেখানে রাখুন গাছ। লক্ষ্য রাখবেন, টবে ঝরা পাতা বা ফুল জমে না থাকে। গাছে ধূলাময়লা বা ঝুল জমলে সুতির কাপড় বা স্পঞ্জ দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। গাছে কুঁড়ি ধরলে টব এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাবেন না,এতে কুঁড়ি ঝরে যেতে পারে। চা পাতা-ডিমের খোলা একসাথে গুঁড়ো করে শুকিয়ে নিলে ভালো সারের কাজ করে মিশ্রণটি।
ঘরের দূষণ কমাতে, অক্সিজেন মাত্রা বৃদ্ধি করতে, রঙের মায়াজালে ঘরের শোভা বর্ধনের জন ইনডোর প্ল্যান্টের জুড়ি মেলা ভার। তাই, ইনডোর প্ল্যান্ট দিয়ে সঠিক যত্নের মধ্যে দিয়ে সাজিয়ে তুলুন আপনার ভালোবাসার নীড়কে।
Sources : Various journals and articles have been consulted for the Writeup.
দারুন হয়েছে। খুব ভালো। আমার বাড়িতে এর কয়েকটি আছে।
খুব দরকারি কথা।
জ্ঞানবর্ধক রচনায় পরিবেশ বান্ধব গাছেদের ভূমিকা ও তার প্রভাব সম্বন্ধে সচেতন হলাম
ঘরে বাইরে গাছপালাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাক
সবার এ লেখা পড়া ও পড়ানো উচিত।
আজকাল সচেতনতা বেড়েছে, তাই অধিকাংশ বাড়িতেই গাছের দেখা মেলে, রচনায় অজানা কিছু তথ্য উপকারে আসবে, চমৎকার বিষয় নির্বাচন।
সকলকে জানাই আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।