শুক্রবার | ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ১২:৪৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত গোপাল ভাঁড়ের আসল বাড়ি চুঁচুড়ার সুগন্ধ্যায় : অসিত দাস প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : সুমিত ভট্টাচার্য মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস মহাকুম্ভ ও কয়েকটি প্রশ্ন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন : ড. দীপাঞ্জন দে অমৃতের সন্ধানে মাঘী পূর্ণিমায় শাহীস্নান : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (দ্বিতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বাজেটে সাধারণের জীবনমানের উন্নয়নের একটি কথাও নেই : তপন মল্লিক চৌধুরী শঙ্খ ঘোষ-এর ‘এখন সব অলীক’ নস্টালজিক অনুভূতি দিয়ে ঘেরা মায়াময় এক জগৎ : অমৃতাভ দে বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (প্রথম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার কালো গোঁসাইয়ের চিঠি — চিঠিকেন্দ্রীক স্মৃতির পুনর্জীবন : মোঃ তুষার উদ্দিন নব নব রূপে : নন্দিনী অধিকারী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ২০৬ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫

আধুনিকতার আগ্রাসনে শীতের উদযাপনের মোহে হারিয়ে যাচ্ছে শীতকালীন অনেক ব্রত। প্রকৃতির নিয়মে শীতের ব্যাপ্তিও কমতে শুরু করেছে শহরাঞ্চলে। তবুও হারাতে হারাতেও হারায়নি অনেক কিছু। এখনো প্রবীন মানুষেরা মনে করতে পারেন পৌষসংক্রান্তির সময়ে পিঠে খাওয়া, নবান্নর গল্প, ঘুড়ি ওড়ানো, পৌষ আগলানো কিম্বা মকরসংক্রান্তি, দধিসংক্রান্তি ব্রত।

সংক্রান্তির উৎসব হল প্রকৃতির উৎসব। পৌষ মাসে সূর্য মকর রাশিতে প্রবেশ করে তাই এই উৎসবকে মকর সংক্রান্তি বলা হয়। এই দিনেই সূর্য পৃথিবী পরিক্রমায় পথ পরিবর্তন করে উত্তরের দিকে ঢলে পড়ে তাই একে উত্তরায়নও বলা হয়। সূর্যের এই সংক্রমনের সাথে জীবনের সংক্রমণও জুড়ে আছে। আসলে লৌকিক ও ধর্মবিশ্বাসে জড়িত প্রতিটি উৎসবের পেছনে রয়েছে অর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট।

বাংলা কৃষি প্রধান দেশ, বেশিরভাগ মানুষের জীবিকা এখানে কৃষিকাজ। পৌষ মাসকে ‘লক্ষ্মী মাস’ বলে মনে করা হয়। বর্ষার শুরুতে যে ধান রোপন করা হয়েছিল, সেই ধান অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই তোলা হয়। নবান্ন উৎসবের মধ্যে দিয়ে যার সূত্রপাত হয়, পৌষ সংক্রান্তির পিঠে পুলি ও সংক্রান্তির উৎসবে তার সমাপ্তি ঘটে।

পৌষ সংক্রান্তি সংক্রান্তির দিন দধিসংক্রান্তি ব্রতের সূচনা হয়। এরপর প্রতিসংক্রান্তিতে এটি পালন করা হয়। পরের বছর ওই একই দিনে ব্রতের সমাপ্তি উদযাপন করা হয়।

এই বিষযয়ে পুরাণে একটি প্রসিদ্ধ কাহিনী আছে। অগস্ত্য বলিলেন, হে করুণাময় মাধব এই সকল মানুষের মনে দুঃখ দারিদ্র কি করলে যাবে? কোন তপস্য বা ব্রতে তাদের সকল জ্বালা-যন্ত্রণা লোপ পেতে পারে? শ্রীকৃষ্ণ বললেন তাহলে শোনো সেই দিব্য কথা —

পুরাকালে আমি তখন অনন্ত নাগের উপর শুয়েছিলাম আর লক্ষী আমার পদ সেবা করছিলেন। তখন সাগরের তীরে এক কন্যা প্রবল দুখে কাঁদতে কাঁদতে বিলাপ করতে করতে চলেছিলেন। তাকে দেখে মনে হয়েছিল সে যেন কোন মানসিক দুঃখে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সেই বালিকার কান্নায় অন্তর ব্যথিত হলো মা লক্ষ্মীর। তিনি যে জগতজননী। সন্তানের কষ্টে মা কি করে স্থির থাকতে পারে! দুঃখে আকুল হয়ে মা লক্ষ্মীর চোখ দিয়েও বইতে লাগলো করুণাধারা।

আর সেই সন্তপ্ত অশ্রুধারার কয়েকটি বাড়ি বিন্দু এসে পড়ল আমার পায়ের উপর। সেই অশ্রুস্পর্শেই আমার ঘুম ভাঙলো।

আমি করুণায় দ্রবীভূত লক্ষ্মীকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে শুভে তুমি কাঁদছো কেন? তোমার এই দুঃখের কারণ কি?’

লক্ষী বললেন, ‘হে দেব, সাগরের তীরে রোজ এক কন্যাকে দেখি কাঁদতে কাঁদতে বিলাপ করে ঘুরে বেড়ায়। আর সেই শোকসন্তপ্ত বিলাপ শুনে আমি আমার অশ্রু ধরে রাখতে পারি না। মানুষের এই দুঃখের নিবৃত্তি কি কখনো হবে না? কি করলে এই মেয়েটি তার দুঃখের থেকে মুক্তি পাবে, তা শুনতে আমার বড় ইচ্ছে হয়। হে জগতের নাথ! আপনি আমাদের দয়া করে বলুন এর উপায়।’

কৃষ্ণ বললেন, ‘তাহলে তুমি দধিসংক্রান্তি ব্রতের কথা শোনো। মানুষের সমস্ত তাপের উপশম ঘটাতে পারে এই ব্রত।শুভকালে শুভ সংক্রান্তিতেই এই ব্রত করা যায়, তবে উত্তরায়ন সংক্রান্তি এর প্রশস্তকাল। সেই সময় থেকে আরম্ভ করে এক বছর কাল এই ব্রত করা উচিত। যদি কেউ তোমার সঙ্গে আমাকে দই দিয়ে স্নান করিয়ে গন্ধ উপাচারে বিধিবৎ আমাদের পুজো করে, তবে এই ব্রতর পুণ্যফল তাকে প্রদান করা হবে।’

‘গোদুগ্ধের দই আমার হাতে প্রদান করে দধিভোজ্য ব্রাহ্মণকে দান করে প্রত্যেক মাসের সংক্রান্তিতে সারা বছর ধরে এই ব্রত পালন করতে হয় এবং এই ব্রত যিনি পালন করেন তাকে সেদিন হবিষ্য গ্রহণ করতে হবে। ব্রত শেষ হলে গন্ধপুষ্প নিবেদন করে কাপড়, যজ্ঞোপবীত প্রভৃতি দিয়ে ১২ জন ব্রাহ্মণকে বিশেষভাবে ভক্তি সহকারে দই সহ ভোজন করাতে হবে। ব্রতের প্রতিষ্ঠার কারণে ব্রাহ্মণ ভোজন এরপর দক্ষিনা প্রদান অবশ্য কর্তব্য।

যিনি এই ব্রত সম্পন্ন করতে পারবেন তার আর কোন দুঃখ কষ্ট নতুন করে জন্মাবে না। বৈধব্য যন্ত্রনা থেকে নিস্তার পেয়ে তিনি ধনধান্য এবং সমৃদ্ধিতে পূর্ণ হয়ে উঠবেন। দম্পতির প্রীতি ও সুখ বর্ধনের জন্য পুরুষ ও স্ত্রীর এই ব্রত আচরণ মোক্ষকর।এবং এই যে ব্রতের কথা আমি বললাম, সকল ব্রতের মধ্যে এটি উত্তম। যিনি ব্রতকথা শ্রদ্ধা সহকারে শোনেন তিনি সমস্ত দুঃখ থেকে মুক্তি লাভ করে পরাগতি লাভ করেন। এই সংক্রান্তিতে হরীতকী দান করলে, হংসযুক্ত রথে আরোহণ করে বৈকুণ্ঠে গমন করা যায়।

আজো দধি সংক্রান্তি ব্রত পালন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। এই ব্রতে লক্ষ্মীনারায়ণকে দধি দিয়ে স্নান করিয়ে দধি ও ভোজ্য ব্রাহ্মণকে দান করা হয়। বহু রাজ্যে আজ এই দিনে ব্রাহ্মণকে তিলের নাড়ু দেওয়ার প্রথা প্রচলিত আছে। এর মধ্যে একটি মহান ভাব লুকিয়ে আছে।

পুরাকালে ব্রাহ্মণবর্গের কাজ ছিল অধ্যায়ন ও অধ্যাপনা। সমাজ জীবনের সংস্কৃতি যাতে টিকে থাকে তার জন্যই তারা ধর্ম ও সংস্কৃতি মেরুদন্ড স্বরূপ হয়ে কাজ করতেন। সমাজ যখন ধর্ম সংস্কৃতি ভুলে স্বেচ্ছাচারীতার পথে পা বাড়াতো, ঠিক সময় তাদের উপযুক্ত কথা বলে, শক্ত করে হাত ধরে সত্যের পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব পালন করতেন ব্রাহ্মণেরা। এর জন্য তাদের কিছু কটু কথা বলতে হতো। এর ফলে উভয়ের সম্পর্কের মধ্যে শিথিলতা আসতো।

যাতে সম্পর্কের মধ্যে কটূতা না আসে, সম্পর্কটুকু হারিয়ে না ফেলে, এই কথা স্মরণ রেখেই সম্পর্ক ছেদ না হওয়ার জন্য ব্রাহ্মণগণের নিকটে তিলের নাড়ু দেওয়া হয়। যাতে মনের স্নিগ্ধতা ও হৃদয়ের মিষ্টতা বজায় থাকে।

কোন কোন রাজ্যে তিলের নাড়ুর মধ্যে পয়সা রেখে দান করা হয়। এই প্রথা গুপ্তদানের মহিমাকে বোঝায়। সাংস্কৃতিক কার্যে লিপ্ত তেজস্বী ব্রাহ্মণগণের জীবিকার ব্যবস্থা সমাজে গুপ্তভাবেই করা উচিত। শুধু ব্রাহ্মণ নয়, গরিব দুঃখী যাদের প্রয়োজন তাদেরকে সামর্থ্য মত কিছু দান করা উচিত এই দিনে।

পৌষ মাসে কুমারী সদবা বিধবা নারীরা মকর সংক্রান্তির ব্রত পালন করেন। যার ঘরে যে ঠাকুর আছে তাকেই সেদিন সব নারীরা পূজা করেন। এই ব্রতে ব্রতীরা সবই খেতে পারেন। সার্বিক মঙ্গল কামনায় প্রত্যেক নারীই এই ব্রত পালন করেন।

বিজ্ঞানের উন্নতিতে সমাজে উন্নতি ও ঘটেছে প্রচুর তবুও এই হার কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে বাড়ির মহিলারা এই ব্রত পালন করেন। আধুনিকতা আজও মলিন করতে পারেনি বঙ্গসংস্কৃতির এই উৎসবগুলিকে।


আপনার মতামত লিখুন :

4 responses to “দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Amar Nath Banerjee says:

    দারুণ লেখা।

  2. Pallab Dey says:

    খুব সুন্দর লেখনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন