সোমবার | ১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সকাল ১০:৫২
Logo
এই মুহূর্তে ::
উনিশের উত্তরাধিকার : শ্যামলী কর কেট উইন্সলেটের অভিনয় দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জিং ভূমিকার ৩টি চলচ্চিত্র : কল্পনা পান্ডে হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা — আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকট : সুব্রত কুমার দাস সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (ষষ্ঠ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস ভারতের সংবিধান রচনার নেপথ্য কারিগর ও শিল্পীরা : দিলীপ মজুমদার চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (পঞ্চম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস আলোর পথযাত্রী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (চতুর্থ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (তৃতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস লোকভুবন থেকে রাজনীতিভুবন : পুরুষোত্তম সিংহ চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (দ্বিতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত রবীন্দ্রনাথের ইরান যাত্রা : অভিজিৎ ব্যানার্জি ঠাকুরকে ঠাকুর না বানিয়ে আসুন একটু চেনার চেষ্টা করি : দিলীপ মজুমদার যুদ্ধ দারিদ্র কিংবা বেকারত্বের বিরুদ্ধে নয় তাই অশ্লীল উন্মত্ত উল্লাস : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ, পঁচিশে বৈশাখ ও জয়ঢাক : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী ও শান্তিনিকেতন : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বাঙালী রবীন্দ্রনাথ : সৈয়দ মুজতবা আলী অনেক দূর পর্যন্ত ভেবেছিলেন আমাদের ঠাকুর : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথের প্রথম ইংরেজি জীবনী : সুব্রত কুমার দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (প্রথম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস শুক্লাম্বর দিঘী, বিশ্বাস করে দিঘীর কাছে কিছু চাইলে পাওয়া যায় : মুন দাশ মোহিনী একাদশীর ব্রতকথা ও মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত নিজের আংশিক বর্ণান্ধতা নিয়ে কবিগুরুর স্বীকারোক্তি : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বিরসা মুন্ডা — মুন্ডা বিদ্রোহীদের কাছে “ধরতি আবা বা জগৎ পিতা” নামে পরিচিত : মনোজিৎকুমার দাস

মনোজিৎকুমার দাস / ৫২৯ জন পড়েছেন
আপডেট মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২২

কোল বিদ্রোহ, সাঁওতাল বিদ্রোহ সহ যে সমস্ত আদিবাসী বিদ্রোহ ইংরেজদের মধ্যে সাড়া জাগিয়েছিল তার মধ্যে মুন্ডা বিদ্রোহ অন্যতম। বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে সংগ,ঠিত হয় এই ঐতিহাসিক মুন্ডা বিদ্রোহ (১৮৮৫-১৯০০)। ভারতের ছত্তিসগড়, রাঁচি অঞ্চলের বিপ্লবী নেতা বিরসা মুন্ডা। মুন্ডা আদিবাসীরা ব্রিটিশ শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে বিরসা মুন্ডার নেতৃত্বে রুখে দাড়িয়েছিল। বিরসা মুন্ডা তাঁর ধরতি আবা বা জগৎ পিতা” নামে পরিচিত ছিলেন। রাঁচির দক্ষিণাঞ্চলে সৃষ্ট এই বিদ্রোহকে মুন্ডা ভাষায় বলা হয়,“উলগুলান”, যার অর্থ প্রবল বিক্ষোভ।

১৮৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর রাঁচির উলিহাতু গ্রামে (বর্তমান ঝাড়খন্ড) বিরসা মুন্ডা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম সুগানা মুন্ডা, মায়ের নাম করমি হাতু। ১৮৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর ছিল বৃহস্পতিবার। বৃহস্পতিবারে জন্ম বলে মুন্ডা প্রথা অনুযায়ী পিতা সুগানা ও মাতা করমি ছেলের নামা রাখেন “বিরসা”। বিরসা মুন্ডার প্রাথমিক পড়াশোনা জয়পাল নাগের সহায়তায় সালগা গ্রামে শুরু হয়। উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে আরেকটি দিক ছিল লুথারীয়, অ্যাংলিকান ও ক্যাথলিক মিশনগুলির আগমন। মিশনারি কর্মকান্ডের সঙ্গে শিক্ষার বিস্তার ঘটে। প্রাথমিক পড়াশোনার পরে বিরসা মুন্ডা জার্মান মিশন স্কুলে ভর্তি হতে গেলে স্কুলে তাঁকে খৃষ্ট ধর্মে দীক্ষা নিতে শর্ত দেয়া হয়। এই মিশন স্কুল গুলোর মূল লক্ষ্য ছিল যত সংখ্যক সম্ভব আদিবাসীদের খৃষ্ট ধর্মে ধর্মান্তরিত করা। ফলে বিরসা মুন্ডা হয়ে গেলেন বিরসা ডেভিড, পরবর্তীতে বিরসা ডাউদ। অবশ্য বিরসা কয়েকবছর পরে জার্মান মিশন স্কুল ত্যাগ করেন।

মিশনারী স্কুলগুলোর মাধ্যমে অনেক মুন্ডা খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে। খ্রিস্টান ও অখ্রিস্টান মুন্ডাদের মধ্যে সামাজিক বিভেদ সৃষ্টি হয়। ফলে জাতিগত ঐক্য হ্রাস পায়। এছাড়াও ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার পর হতে উপমহাদেশে অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর আগমন ঘটে। এরই সঙ্গে বাড়তে থাকে বলপূর্বক শ্রম বা বেথ বেগারি’ (beth begari) এর ঘটনা। একদিকে মুন্ডাদের মধ্যে খৃষ্ট ধর্ম আগমনে অসন্তোষ, জাতিগত বিভেদ অন্যদিকে ১৮৯৪ সালে জমিদারদের স্বার্থ রক্ষা এবং সাধারণ কৃষকদের জমি থেকে বঞ্চিত করতে পালামৌ, মানভুম, ছোটনাগপুর সহ বিভিন্ন বন এলাকায় সংরক্ষিত বন আইন (১৮৮২) পাশের ফলে ভূমি বিষয়ক অসন্তোষ মুন্ডা জনগোষ্ঠিদের মধ্যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের দানা বাঁধতে থাকে।

কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং বিভিন্ন অলৌকিক চর্চায় বিশ্বাসী বিভক্ত মুন্ডাদের মধ্যে ঐক্য গড়তে বিরসা মুন্ডা মাত্র কুড়ি বছর বয়সে ১৮৯৫ সালে ঘোষণা করলেন নতুন এক ধর্মের, যার মূল ভিত্তি ছিল ‘একেশ্বরবাদী মুন্ডা’। নিজেকে ঘোষণা করলেন ভগবানের অবতার হিসেবে। দলে দ লে মুন্ডা, ওঁরাও, খরাই নরনারীরা নতুন ধর্ম গ্রহণ করে পরিচিত হন “বিরসাত” নামে। বিরসা মুন্ডা তাঁর অনুসারীদের কাছে “ধরতি আবা বা জগৎ পিতা” নামে পরিচিত হলেন। বিরসাতরা বিরসা মুন্ডার নামে গান বানালো “মুন্ডারাজ ফিরাবে তাই নতুন রাজার জন্ম হে”।

ব্রিটিশ সরকার বন আইন প্রয়োগ করে আদিবাসীদের ভারতের বিস্তীর্ণ জঙ্গলে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দিল। যে জঙ্গলের উপর ভরসা রেখে আদিবাসীরা জীবনযাপন করতেন, সেই অরণ্যের অধিকার কেড়ে নেওয়া হলো। যখন সরকার ছোটনাগপুরে বন দখল করার উদ্যোগ নিলো, সে সময় প্রতিরোধে জেগে উঠলো বিরসাত বাহিনী। বিরসা মুন্ডা কোচাং, সিনজুরি, লোঙ্গা, কালমার, কাটোই, বীরবাঙ্কী, কুরুঙ্গার মত বিভিন্ন জঙ্গল এলাকার হাজার হাজার আদিবাসী মানুষদের একত্রিত করেন এবং সবাই ২০ বছরের যুবক বিরসাকে তাদের নেতা নির্বাচিত করেন। নেতা হিসেবে বিরসার উত্থান জমিদার, মহাজন এবং মিশনারীদেরকে ভীত করে। ফলে তারা বিভিন্ন অভিযোগ এবং চাপ প্রয়োগ করতে থাকে তার বিরুদ্ধে। হঠাৎ ১৮৯৫ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বরে বিরসা মুন্ডাসহ তার কিছু সহচর কে গ্রেপ্তার করে সরকার। দীঘ ২ বছরের জেলহাজত মেয়াদ শেষে ১৮৯৭ সালে মুক্তি দেওয়া হয় বিরসাকে। তার মুক্তির পরপরই ছোটনাগপুর এলাকায় গুটিবসন্ত প্রাদুর্ভাবের তৎবধি চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। দুর্ভিক্ষে ত্রান সহায়তার কাজে তার রাতদিনের নিমগ্নতা তাকে অবিসংবাদিত নেতা বানিয়ে দেয়। দুর্ভিক্ষ পিড়িত এবং রোগগ্রস্ত মুন্ডারা তাকে নিয়ে মুক্তির নতুন স্বপ্ন দেখা শুরু করে। মুন্ডারা একত্রিত হয় নব উত্থান প্রস্ততির জন্য-শুরু হয় উলগুলান, মুক্তির মহাবিদ্রোহ। ১৮৯৯ সনের ২৪ ডিসেম্বর রাচি, সোনপুর, চাইবাসার মত গুরুত্বপুর্ন স্থানে একযোগে একত্রিত উত্থান শুরু হয় এবং পরে ব্যপক এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এর জবাবে ব্রিটিশ সরকার পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে। সামরিক বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্য হাজার হাজার মুন্ডা তরুন-তরুনী তীর ধনুক, বর্শাসহ বিভিন্ন প্রকার ঐতিহ্যগত অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সেইল রাকাব পাহাড়ে সম্মিলিত হয়। ব্রিটিশ জেনারেল বিরসা মুন্ডা বাহিনির উপর গুলি করার নির্দেশ দিলে তারা তাদের ঐতিহ্যগত তীর এবং ধনুক দিয়ে সমুচিত জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের সাথে পেরে ওটা অনেক কঠিন ছিল। ফলে বারিসাত বাহিনী পরাজিত হয়। তাতেও ব্রিটিশ বাহিনী সন্তুষ্ট হয় নি। তারা নির্বিচারে মুন্ডা নারী এবং শিশুদের গুলি করে হত্যা করতে থাকে। বারিসাত বাহিনীর, মৃত্যুর এবং বর্বরতার খরব সম্পুর্নভাবে ধামাচাপা দিয়ে দেওয়া হয়। মৃত দেহ গুলো রাতারাতি গণকবরে পচানো হয় এবং বহু আহত বিদ্রোহীদের জীবন্ত কবর দেওয়া হয়। ডোম্বরু পাহাড়ের নাম হলো “তপেড় বুরু বা লাশের পাহাড়”। ব্রিটিশ সরকার ৫০০ টাকা পুরস্কার ঘোষনা করলেন বিরসাকে ধরে দেওয়ার জন্য।

ব্রিটিশ বাহিনি গ্রামের পর গ্রাম তল্লাসী চালাতে থাকে বিরসা মুন্ডাকে খুজে বের করার জন্য। বিরসা মুন্ডাকে না পেয়ে তার অনেক ঘনিষ্ট সহচরদের গ্রেপ্তার এবং হত্যা করে তাদের ঘরবাড়ি জালিয়ে পুড়িয়ে দেয় ব্রিটিশ বাহিনি। অনেক খোজা খুজির পর ব্রিটিশ বাহিনী বিরসা মুন্ডাকে চক্রধরপুরের যমকোপাই বনে ৩ মার্চ ১৯০০ সালে গ্রেপ্তার করে। চাইবাসা জেলে বিরসা মুন্ডাকে কারারুদ্ধ করা হয়। এলাকার আশে পাশের হাজার হাজার আদিবাসী মানুষ তাদের বিরসা ভগবানকে এক নজর দেখতে ভিড় জমান চাইবাসা জেলে। জেল কর্তৃপক্ষ বলে, বিরসা কলেরা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। কিন্তু বলা হয়, ফাঁসির প্রতিক্রিয়ায় আবার গণঅভুত্থান ঘটার সম্ভাবনা থাকায় তাকে বিষপানে হত্যা করা হয়। ৯ জুন ১৯০০ সনে বিরসা মুন্ডা রাঁচি কারাগারে শহীদ হন।

২০০৪ সালে বিরসা মুন্ডার জীবন নিয়ে “উলগুলান-এক ক্রান্তি” নামে একটি হিন্দী সিনেমা প্রকাশিত হয়। মহাশ্বেতা দেবীর জনপ্রিয় উপন্যাস “অরণ্যের অধিকার” বিরসা মুন্ডার জীবন নির্ভর। ভারতীয় পার্লামেন্ট হলে একমাত্র আদিবাসী নেতা হিসেবে বিরসা মুন্ডার ছবি রয়েছে। বিরসার জন্ম নিয়ে আজও মুন্ডারা গান গায়—

হে ধরতি আবা! জন্ম তোমার চালকাদেতে ভাদ্র মাসে

অন্ধজনের চোখ মিলল ভাদ্র মাসে

চলো যাই ধরতি আবাকে দেখি

এ বড়ো আনন্দ হে, তাঁকে প্রণাম করি

আমাদের শত্রুদের তিনি হারিয়ে দিবেন ভাদ্র মাসে।

বিরসার আত্মত্যাগ জাতি কোন দিন ভুলবে না। তার জন্মদিনে প্রণতি জানাই।

মনোজিৎকুমার দাস, প্রবন্ধিক, লাঙ্গলবাঁধ, মাগুরা, বাংলাদেশ।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন