রবিবার | ১৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | সকাল ৮:৫৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (শেষ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর অনন্য লেখক মানিক : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (একাদশ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভেটকি থেকে ইলিশ, চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল, হুগলির মাছের মেলায় শুধুই মাছ : রিঙ্কি সামন্ত দিল্লি বিধানসভায় কি বিজেপির হারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে : তপন মল্লিক চৌধুরী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন — বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দশম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুর ও তৎকালীন বঙ্গসংস্কৃতি : অসিত দাস দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (নবম পর্ব) : আবদুশ শাকুর সপ্তাহে একদিন উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো : অনুপম পাল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত’র ভাষা : ড. হান্স্ হার্ডার সবগুলো গল্পেই বিজয়ার নিজস্ব সিগনেচার স্টাইলের ছাপ রয়েছে : ড. শ্যামলী কর ভাওয়াল কচুর কচকচানি : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (অষ্টম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুরের উইল ও দ্বারকানাথের ধনপ্রাপ্তি : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (সপ্তম পর্ব) : আবদুশ শাকুর যে শিক্ষকের অভাবে ‘বিবেক’ জাগ্রত হয় না : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (ষষ্ঠ পর্ব) : আবদুশ শাকুর দিল্লি বিধানসভা ভোটেই নিশ্চিত হচ্ছে বিজেপি বিরোধি জোটের ভাঙন : তপন মল্লিক চৌধুরী দ্বারকানাথ ঠাকুরের গানের চর্চা : অসিত দাস মমতা বললেন, এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দুষ্টচক্র হু জানাল চিন্তা নেই : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (পঞ্চম পর্ব) : আবদুশ শাকুর পৌষ পুত্রদা একাদশী : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (চতুর্থ পর্ব) : আবদুশ শাকুর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপূজায় কবিগান ও যাত্রার আসর : অসিত দাস সসীমকুমার বাড়ৈ-এর ছোটগল্প ‘ঋতুমতী হওয়ার প্রার্থনা’ সামাজিক মনস্তত্ত্বের প্রতিফলনে সিনেমা : সায়র ব্যানার্জী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ভূত চতুর্দশী — নেত্যকালীর মিরর ইমেজ ও প্রেতলোকের চোদ্দকাহন : প্রলয় চক্রবর্তী

প্রলয় চক্রবর্তী / ২৪২ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪

“সেদিন শুক্লপক্ষের চতুর্দশী। ঘরের দাওয়ায় কচুপাতার আসনে ডাকিনীর সম্মুখে বসিয়া শিবু মন্ত্রপাঠের উদজোগী করিয়া উৎসুক চিত্তে বলিল — এইবার ঘোমটাটা খুলতে হচ্ছে।

ডাকিনী ঘোমটাটা সরাইল। শিবু চমকিত হইয়া সভয়ে বলিল — অ্যাঁ, তুমি নেত্য!

নৃত্যকালী বলিল — হ্যাঁরে মিনসে। মনে করেছিলে ম’রে আমার কবল থেকে বাঁচবে। পেত্নী শাঁকচুন্নীর পিছু পিছু ঘুরতে — বড় মজা না? ”

এ আমাদের নেত্যকালী। পরশুরামের ভুশন্ডীর মাঠে’র শিবুর দজ্জাল বৌ। মরেও শান্তি নেই! এখানেও নেত্যকালী! নেত্যর মিরর ইমেজ যেন। ভূতে মানুষে সম্পর্ক এমনই। দ্বন্ধমূলক, একে অপরের পরিপূরক। একের অস্তিত্ব অপরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট। গল্পের বিচারে মানুষ ও ভূতের অবস্থান বড়ই দ্বান্দ্বিক। মানুষ মরিলে ভূত হয়, কিন্তু এর সাথে স্বর্গ, নরক, পুনর্জন্ম, খাপ খায় কেন? বিলাতি ভূতেদের কাহিনী আলাদা রকম। হিন্দু মরিলে ভূত হয়, তারা স্বাধীনভাবে চলতে ফিরতে পারে, ইহলোকের সঙ্গে দিব্যি কারবার করে। মাঝে মাঝে তাদের চেঞ্জে পাঠানো হয়, স্বর্গে বা নরকে। ফির দিব্য ফিরে আসে আপনজনের কাছাকাছি! এই যেমন নেত্যকালী। পরশুরাম, আমাদের রাজশেখর বসু জানিয়েছেন, হিন্দু ভূতেদের তাড়া নেই তেমন, বিশেষ, জন্ম নিতে দু’দশ দিনতো লাগেই! এর মধ্যে কেউ একটু প্ল্যানচেট করল, হিন্দুভূত চট করে হাজিরা দিল, চাইকি মরণের আগে না খেতে পারা চা’ টুকু চুকচুক করে গলায় ঢালল! হয়তো এমন! সাহেব ভুতের রকম আলাদা, সাহেবি কিনা!

কিন্তু ত্রৈলোক্যনাথের লুল্লু ভূত! সে আশা ছাড়েনি। আমিরের খুপসুরত জেনানাকে রূপে ভোলাতে তখনও সে দুই বেলা গায়ে সাবান মাখত, ঘষতে ঘষতে হাড়ের মজ্জা খসে পড়ত, রক্ত থাকেনা ভুতেদের না হলে গাঁ গড়িয়ে এক্কেরে চিত্তির। এ এক সাচ্চা প্রেম, নেত্যকালীকা মাফিক।

ত্রৈলোক্যনাথের গল্পে মজে রবীন্দ্রনাথ যখন ‘কঙ্কাল’, ‘নিশীথে’, ‘মনিহারা’, — এইসব লিখলেন তখন সবাই কেমন চমকে গেল। সতীসাধ্বী পেতনিরা ভাবল, কী দজ্জাল মেয়েমানুষরে বাবা, ভুত হয়ে এ কেমনতরো কান্ড! মরা মেয়েমানুষগুলো চায় কী? আর কত দিন! শুনে ভয় পায় পুরুষও। সত্যি তো, সে ভুলেই গেছিল দরজার ওপারেও কী ভাবে জীবন কাটে, ক্ষোভ জন্মায়, আর সেই ক্ষোভ মৃত্যুতে নতুন প্রাণ পায়? এই যেমন গায়ে কেরোসিন ঢেলে নেত্যকালী মারা গিয়েছিল, কিন্তু ভুলতে কি পেরেছিল, তার মিনসে ‘শিবুকে’!

ভয় পাই, অথচ বিশ্বাস করিনা — এমত ধারনার মানুষ কে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ও হয়, বোঝানো যাবেনা। ভূত আমাদের জীবনে এমন এক বিষম বিভীষিকা! যাকে পাশে নিয়ে শুয়েছি, আদরে আশ্লেষে মাখামাখি করেছি, সে কেন মৃত্যুর পর এত ভয়ের, এত অপর, কে জানে তার উত্তর।

সেই পোড়ো বাড়ির হাঁ মুখ ইট পাজরা, ফিসফিস কথা, সরসর করে কারোর চলে যাওয়া, ধুপের গন্ধ, মাঝেমাঝে শাঁখের আওয়াজ — এমন পরিবেশেই তাদের আসা যাওয়া। কিংবা নিশীথ সময়, ঝমঝম বৃষ্টি, নিকষ অন্ধকার, ঠাকুমার কোলে বসে বাড়ির বেলগাছে ব্রহ্মদত্যির আলাপ, কিংবা রাতের অন্ধকারে বাড়ির পথে মেছোপেত্নির খোনা গলা ‘মাছ দে, মাছ দে, না হলে ঘাঁড় মটকাবো’ — এমন গা ছমছমে আবহাওয়ায় — ‘ভূত আমার পুত, পেত্নি আমার ঝি’ — এমন উচ্চবর্গীয় সংলাপ কি অন্তজ ভূতেদের থেকে মুক্তি দিতে পেরেছে আবালবৃদ্ধবনিতা বাঙালি কে?

তাই ভূত চতুর্দশীর দিন সারাদিন সংযম। কি হয়, কি হয়, না হারায় যেন এ লোকের দিন! তাই চোদ্দ ভূতের শ্রাদ্ধ করতে এদিন ঘরে ঘরে থাকুক চোদ্দ প্রদীপ এর আলো, চোদ্দ শাকের ভেষজ শক্তি হোক ভুতের যম। তফাত যাক অশুভ কিছু, কিংবা এসো, বোসো, আশীর্বাদ করে যাও তোমার এ লোকের স্বজনসকলকে।

চোদ্দ ভূতের কাহিনী থাকে এই দিনের পরতে পরতে। কত ভূত, কিম্ভুত। শাঁখচুন্নি, চোরাচুন্নি, মেছোভূত, মামদোভূত, ব্রহ্মদত্যি, স্কন্ধকাটা, আলেয়া, নিশি, কানাখোলা, পেঁচাপেঁচি, কাঁদরা মা, মামদো ভূত, ডাইনি, ডাকিনী, শাকিনী। এদের মধ্যে উচ্চবর্ণের কুলীন ভূত ব্রহ্মদত্যি। ব্রাহ্মণ মারা গেলেই তবে জাত বিচারে শ্রেষ্ঠত্ব, সে ভূতের রাজত্ব হোক কিংবা মনুষ্যলোকের! আর নিকৃষ্ট ভূতেদের গোত্রে পড়ে মেছোভুত। তবে মামদো বোধহয় হিন্দুগোত্রের নয়। এটি মুসলমান আত্মা। বসবাস কবর- গোরস্থানে। যমালয়ে জীবন্ত মানুষ সিনেমায় বলা হয়েছে, ‘মামদো ভূত শকটের সারথী’। সম্ভবত এরা নরলোকে গাড়ির কোচোয়ানের কর্মে নিযুক্ত ছিল! আর নিশীথ রাতে নিশির ডাকে সাড়া দিয়ে এ লোকে ও সে লোকে কত যে জন বিবাগী হয়েছেন, কে তার খবর রাখে।

এযাবৎ কথিত কাহিনী নরলোকের সঙ্গে পরলোকের। এবার, ভূতেদের প্রেতলোকে কথোপকথনের সেই গল্প। বনফুলের লেখা, ‘নক্ষত্র ও প্রেতাত্মা’। “আকাশে অপূর্ব দ্যুতি বিকিরণ করিয়া একটি নক্ষত্র জ্বলিতেছিল। প্রেতরাও শূন্যে সঞ্চরণ করে”। এখানেই দেখা নরলোকের দুই পরিচিত চরিত্রের।

“প্রেতটিকে দেখিয়া নক্ষত্র বলিয়া উঠিল — অ, আপনি এসে গেছেন! কি করে এলেন —

স্বদেশিওলারা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। আমি জানতাম এ শাস্তি আপনাকে পেতেই হবে। স্বদেশদ্রোহী বিশ্বাসঘাতকতরা কখনও রেহাই পায় না —

আপনি কে! আপনাকে তো চিনতে পারছিনা ঠিক। আপনাকে ঘিরে এত জ্যোতি কেন।”

নক্ষত্রখোচিত সেই জ্যোতি বলে উঠল, “আমি কিন্তু আপনাকে দেখেই চিনতে পেরেছি। আপনিই তো পুলিশ ডেকে আমাকে মোকামা স্টেশনে ধরিয়ে দিয়েছিলেন।” এ দুই চরিত্রের একজন পুলিশের খোচর নন্দলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। আর অপরজন? প্রফুল্ল চাকী, দেশমাতৃকার সন্তান। পরলোকেও বিচার চলে, একজন প্রেতযোনিতেই থেকে যায়, আর কেউ কেউ সে লোকেও অপূর্ব সে জ্যোতি বিচ্ছুরণে নক্ষত্র হয়ে থাকেন!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন