বৃহস্পতিবার | ২২শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:৪৯
Logo
এই মুহূর্তে ::
পর্যটন মানচিত্রে রামমোহনের জন্মভূমিতে উন্নয়ন না হওয়ায় জনমানসে ক্ষোভ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সংগীতে রবীন্দ্রনাথ : সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস পুলওয়ামা থেকে পহেলগাঁও, চিয়ার লিডার এবং ফানুসের শব : দিলীপ মজুমদার ক্যের-সাংরী কথা : নন্দিনী অধিকারী সুপারি তথা গুবাক থেকেই এসেছে গোয়ার নাম : অসিত দাস রোনাল্ড রসের কাছে জব্দ ম্যালেরিয়া : রিঙ্কি সামন্ত রাজ্যে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়ছে, কমবে অন্য রাজ্যের উপর নির্ভরতা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় উনিশের উত্তরাধিকার : শ্যামলী কর কেট উইন্সলেটের অভিনয় দক্ষতা ও চ্যালেঞ্জিং ভূমিকার ৩টি চলচ্চিত্র : কল্পনা পান্ডে হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলা — আমেরিকায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংকট : সুব্রত কুমার দাস সিন্ধুসভ্যতার ভাষা যে ছিল প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার প্রমাণ মেলুহা তথা শস্যভাণ্ডার : অসিত দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (ষষ্ঠ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস ভারতের সংবিধান রচনার নেপথ্য কারিগর ও শিল্পীরা : দিলীপ মজুমদার চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (পঞ্চম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস আলোর পথযাত্রী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (চতুর্থ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (তৃতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস লোকভুবন থেকে রাজনীতিভুবন : পুরুষোত্তম সিংহ চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (দ্বিতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত রবীন্দ্রনাথের ইরান যাত্রা : অভিজিৎ ব্যানার্জি ঠাকুরকে ঠাকুর না বানিয়ে আসুন একটু চেনার চেষ্টা করি : দিলীপ মজুমদার যুদ্ধ দারিদ্র কিংবা বেকারত্বের বিরুদ্ধে নয় তাই অশ্লীল উন্মত্ত উল্লাস : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ, পঁচিশে বৈশাখ ও জয়ঢাক : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারি ও কুলাগার কৃষিব্যবস্থা : অসিত দাস

অসিত দাস / ৫৩ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ২১ মে, ২০২৫

গোয়া রাজ্যের নামটি সুপারির সংস্কৃত নাম গুবাক থেকে এসেছে শুনলে ভিরমি খাওয়ার কিছু নেই। গুবাক বলুন বা গুয়া বলুন বা গোয়া বলুন, গোয়ার সংস্কৃতিতে সুপারির ভূমিকা বিরাট।

গোয়ার সুপারির ইতিহাস জানতে হলে গোয়ার সুপ্রাচীন কৃষিব্যবস্থা ‘কুলাগার’ (kulagar agriculture) প্রথার কথা জানতে হবে। যেখানে পাহাড়ের ঢালের জমিতে সুপারি, গোলমরিচ ও কলা উৎপন্ন হয়ে আসছে হাজার বছর ধরে।

গোয়ার পোন্ডার স্যাভয় স্পাইস ফার্ম এবং নেত্রাবল্লি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের কাছে তানশিকর স্পাইস ফার্মের (tanshikar spice farm) মতো কয়েকটি খামারে কুলাগার নামে এই প্রাচীন ঐতিহ্যপূর্ণ পদ্ধতিতে আজকাল বৃক্ষরোপণ করা হয়। কুলাগার হল এমন একটি পদ্ধতি যেখানে প্রাচীনকালে পাহাড়ের ঢালে প্রাকৃতিক জলের উৎস আছে এমন উর্বর জমি অধিগ্রহণ করা হত। সেখানে একটি পরিবার বসবাস করত কেয়ারটেকার শ্রমিক হিসেবে এবং জমির চারপাশে তারা ধাপ বা সোপান তৈরি করত। এই সুপরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থার সাহায্যে জমিতে সুপারি, বিভিন্নপ্রকার মশলা ও কলাগাছ লাগাত তারা। বৃক্ষরোপণের এই ঐতিহ্যবাহী প্রক্রিয়ায় কোনও ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না।

সারস্বত ব্রাহ্মণদের সঙ্গে গোয়ায় এসেছিল অন্যান্য ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়। তাদের মধ্যে প্রধান করহাদে ব্রাহ্মণ। করহাদেরা দাবি করে যে তারা গোয়ায় অভিবাসীদের মধ্যে প্রথম দিকের আর্যদের মধ্যে ছিল। পাধে ব্রাহ্মণদের করহাদে ব্রাহ্মণদের একটি অংশ বলে মনে করা হয়। তারা মারাঠিতেও কথা বলে এবং তাদের আবাসস্থল মূলত পোন্ডা তালুকে কেন্দ্রীভূত এবং তারা বৃহৎ ‘কুলাগার’-এর (সুপারি, গোলমরিচ এবং কলাগাছের বাগান) মালিক।

গোয়ার ‘বামন’ নামে পরিচিত গৌড় সারস্বত ব্রাহ্মণ (জিএসবি) সম্প্রদায় হল গোয়ার বৃহত্তম ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়, এরা গোয়ার হিন্দুধর্ম ও সংস্কৃতিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে হাজার বছর ধরে। সংস্কৃত অভিধানকার বামন শিবরাম আপ্তে এই গোত্রের ব্রাহ্মণ।

জিএসবিদের ইতিহাস বেশ কয়েক সহস্রাব্দ ধরে চলে আসছে এবং এর ইতিহাস নিয়ে কিছু ধোঁয়াশা আছে। কিছু সূত্র অনুসারে, তারা ৭০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে গোয়ায় স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন যে গোয়ায় তাদের বসতি স্থাপনের সময় প্রায় ২,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ। আর্যদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে আদি ভূমিপুত্র — গৌড়, কুনবী, মাহর, ধাঙ্গড়, ভেলিপ ইত্যাদি – কে আর্যদের অধীন ধরে শূদ্র হিসেবে গণ্য করা হত। উপকূলীয় সমাজের বৈশিষ্ট্য ছিল গ্রামীণ সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের জমির প্রশাসন, যা ‘গাওপোন’ — সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন এবং তাদের দ্বারা পরিচালিত। জিএসবিরা এই প্রতিষ্ঠানগুলির নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে এবং সমাজের অর্থনৈতিক সম্পদ এবং সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানের উপর তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে।

জিএসবিরা তাদের উৎপত্তিস্থল দাবি করে সরস্বতীর তীরে অবস্থিত বৈদিক সভ্যতাকে। সরস্বতী বর্তমানে বিলুপ্ত নদী। গৌড় সারস্বত ব্রাহ্মণদের নাম সরস্বতী নদী তীরবর্তী সভ্যতা থেকে এসেছে। জিএসবিদের সঠিক উৎপত্তিস্থল নির্ণয় করা কঠিন। পুরাণ অনুসারে, তারা মধ্য এশিয়া থেকে আনুমানিক ৫,০০০-২,০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে দক্ষিণে হিন্দু-কুশ পর্বতমালার মধ্য দিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে এসেছিলেন। বৈদিক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে যে ঋগ্বেদীয় লোকেরা সরস্বতী নদীর তীরে বাস করত। বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, ভাগবত এবং ভবিষ্যপুরাণে সারস্বত ব্রাহ্মণদের উল্লেখ রয়েছে, তারা সরস্বতী নদীর তীরে বসবাসকারী বিশিষ্ট ঋষি সারস্বত মুনির বংশধর।

সাতটি নদী (সপ্ত সিন্ধু) দ্বারা সমৃদ্ধ, ব্রহ্মবর্ত অঞ্চলটিকে ভারতীয় সভ্যতার জন্মস্থান হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ভারতের এই প্রাচীন সভ্যতার বিকাশের সময়কাল ৫,০০০ থেকে ২০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ ছিল যখন এক বিরাট খরার সময় এটির অবসান ঘটে বলে মনে হয়েছিল। এই সময়কালে সরস্বতী নদীও শুকিয়ে যায় যার ফলে বৈদিক জনগণ পূর্ব, পশ্চিম এবং দক্ষিণে অভিবাসন করতে বাধ্য হয়। গোয়ায় স্থানান্তরিত তিনটি প্রধান দল ছিল ভোজ, চেদিয়া (চারদো) এবং সারস্বতরা, যারা বিহারের ত্রিহোত্র হয়ে এসেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। আরও দাবি করা হয় যে তারা বেশিরভাগই পশ্চিম উপকূলে সমুদ্রপথ ধরে সিন্ধু ও গুজরাট হয়ে দক্ষিণে চলে এসেছিল। তারা কেলোশি (কুলোসিম) এবং কুশস্থল (কর্টালিম) এর গোমন্তক অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিল। ত্রিশটি পরিবার একটি সম্প্রদায়ে এবং ষাটটি পরিবার অন্য সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল। প্রথম সম্প্রদায়টি তিস্বাদী অর্থ ৩০টি গ্রাম এবং অন্যটি শশস্থি অর্থ ৬৬টি (সালসেট) নামে পরিচিত ছিল। একসাথে ৯৬টি বসতি ছিল এবং সাহানাভিস (অর্থাৎ ৯৬) নামে পরিচিত। শেনভিস বা শেনয় নামটি সম্ভবত এখান থেকেই এসেছে।

ব্রাহ্মণদের অন্যান্য ছোট গোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে, — ১. করহাদে ২. পাধে ৩. ভট্টপ্রভু এবং ৪. ক্রমবন্ত জোশী। করহাদে ব্রাহ্মণরা মারাঠি ভাষায় কথা বলেন এবং সম্ভবত মহারাষ্ট্রের করাদের অধিবাসী ছিলেন। কোলহাপুরের শিলাহররা, দক্ষিণ শিলাহর এবং কদম্বরা করহাদে ব্রাহ্মণদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। করহাদেরা দাবি করেন যে তারা গোয়ায় অভিবাসীদের মধ্যে প্রথম দিকের আর্যদের মধ্যে ছিলেন।

পাধে ব্রাহ্মণদের করহাদে ব্রাহ্মণদের একটি অংশ বলে মনে করা হয়। তারা মারাঠিও কথা বলেন এবং তাদের আবাসস্থল মূলত পোন্ডা তালুকে কেন্দ্রীভূত এবং তারা বৃহৎ ‘কুলাগার’-এর মালিক। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এই কুলাগার হল সুপারি, মশলা ও কলাগাছের বাগান।

ভট্টপ্রভু সম্প্রদায় মূলত পোন্ডা তালুকের বোরি এবং সিরোদার বাসিন্দা। ভট্টপ্রভু এবং পাধেদের সামাজিক অবস্থার মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকলেও, করহাদে এবং পাধেয়ের বিপরীতে, ভট্টপ্রভুরা কোঙ্কনি ভাষায় কথা বলেন। ক্রমবন্ত ব্রাহ্মণরা আরেকটি ছোট কিন্তু পৃথক গোষ্ঠী যারা বেশিরভাগই মৃত্যুর পরে আচার-অনুষ্ঠান পালন করত এবং তাই তাদের ক্রিয়াবন্ত বলা হত, এই শব্দটি ক্রমবন্তে রূপান্তরিত হয়েছে।

গোয়ার অন্যান্য হিন্দু সম্প্রদায় হল —

গুরুব ব্রাহ্মণ : উপরোক্ত গোষ্ঠীর মতো, গুরুবরাও গোয়ার একটি ছোট সম্প্রদায়। গুরুবরা ছিলেন ভগবান শিবের উপাসক। চন্দ্রেশ্বর-ভূতনাথ, সপ্তকোটেশ্বর এবং ম্লাসার মন্দিরে গুরুব পুরোহিত আছেন এবং গোয়া জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রামদেবতাদের মন্দিরে পুরোহিত ছিলেন গুরুবরা।

পঞ্চাল ব্রাহ্মণ : স্বর্ণকার, কামার, ছুতার, ভাস্কর (শিল্পী ও স্থপতি), তামার শিল্পীদের মতো কারিগরদের পঞ্চাল ব্রাহ্মণ বলা হত। প্রচলিত বিশ্বাস এই যে গৌড় সারস্বত ব্রাহ্মণদের সাথে, পঞ্চাল ব্রাহ্মণদেরও প্রায় ২,৫০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে ভগবান পরশুরাম গোয়ায় এনেছিলেন পুরোহিতদের যজ্ঞে সহায়তা করার জন্য।

স্বর্ণকার : স্বর্ণকাররা সম্ভবত গৌড় সারস্বত অভিবাসনের সময় অন্যান্য কারিগরদের সাথে গোয়ায় এসেছিল। তারা নিজেদেরকে দৈববিদ্যা ব্রাহ্মণ বলে এবং সম্ভবত ভোজদের কাছ থেকে তাদের শিল্প উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে। স্থানীয় স্বর্ণকার, শেঠ বা চালিম, যেমনটি পর্তুগিজ নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীর গোয়ায় একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ্য তৈরি করেছিল। শিল্পে তাদের অসাধারণ দক্ষতার জন্য তারা দেশে এবং বিদেশে প্রচুর প্রশংসা অর্জন করেছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ পর্তুগালে গিয়ে রাজার জন্যেও কাজ করেছিল। সেই সময়ে শেঠদের অর্থনৈতিক শক্তি তাদের নিজস্ব শর্তে গোয়ায় বসবাস এবং কাজ করতে সাহায্য করেছিল। মধ্যযুগের প্রথম দিকে তাদের ধর্মের সাথে কৌশলে অভিবাসন করতে এবং উচ্চ মর্যাদা দাবি করতে সক্ষম করেছিল।

এই বিভাগের অন্যান্য দলগুলির মধ্যে ছিল ভাস্কর, স্থপতি, ছুতার এবং কামার। তাদের কাজ গোয়ামন্দিরের খোদাই করা কাঠের স্তম্ভ এবং কাঠের ছাদের নকশায় দেখা যায়। পর্তুগিজদের নৃশংসতার পর, এই দলগুলির বেশিরভাগই উত্তর কন্নড় অঞ্চলে চলে যায়।

বৈশ্য (বাণী) : ভোজরা হল প্রথম শাসক যারা গোয়ায় প্রশাসনিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং তারা জলদস্যুবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ করেছিল এবং বাণিজ্যিক কার্যকলাপ বৃদ্ধিতে উৎসাহিত করেছিল। দেবরাজের সিরোদা তাম্রশাসনে আদিত্যশ্রেষ্ঠীর উল্লেখ রয়েছে। এটা স্পষ্ট যে বণিকরা ৪০০ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে গোয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে নিযুক্ত ছিলেন এবং সম্ভবত মান্ডোভি ও জুয়ারি নদীর তীরে এবং বাণিজ্য পথগুলিতে তাদের বসতি ছিল। বাণীদের বলা হত শ্রেষ্ঠী এবং শিরসাত পারিবারিক নামটি সম্ভবত শ্রেষ্টী শব্দ থেকে এসেছে। সমাজের চতুর্বর্ণ বিভাগে (ক্ষত্রিয়) ক্ষত্রিয়দের পরে বৈশ্যরা আসে।

ক্ষত্রিয়/চার্দো : ক্ষত্রিয় পরিবারগুলি খ্রিস্টপূর্ব এবং প্রাথমিক খ্রিস্টীয় যুগে উত্তর থেকে দাক্ষিণাত্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল। কিছু পণ্ডিত গোয়ার চর্দোদের ক্ষত্রিয় বলে মনে করেন। কিছু পণ্ডিত মারাঠাদের ক্ষত্রিয় বলে মনে করেন এবং চালুক্যদের সময়কালে তারা গোয়ায় পৌঁছে থাকতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ করা হয়েছে যে রাষ্ট্রকূট এবং শিলাহররা মারাঠা ছিলেন।

সাত্তারির রাণ : রাণেরা নিজেদেরকে রাজপুতানার রাজপুতদের বংশধর বলে দাবি করে। তারা ছিল সানকেলিম এবং গিলোইলেমের সরদেশাই বা বংশগত জায়গিরদার, যাদের সামন্ততান্ত্রিক আধিপত্য ছিল সত্তরটি গ্রামের সাত্তারি অঞ্চল। গোয়া থেকে পর্তুগিজদের বিতাড়িত করার প্রচেষ্টার জন্য রাণেরা সুপরিচিত। মোট চৌদ্দটি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল যার মধ্যে সবচেয়ে সফল বিদ্রোহটি সংগঠিত করেছিলেন দীপাজি রাণ। কুষ্টোবা রাণ একজন সুপরিচিত ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব এবং লোকসংগীত ও জনপ্রিয় গানের একজন বিখ্যাত গায়ক।

গাভাদে-কুঁবি : গাভাদেরা “মূল গোয়েঙ্কর” বা গোয়ার আদিবাসিন্দা হিসেবে পরিচিত এবং তারা গ্রামীণ জনসংখ্যার একটি বড় অংশ, যার আনুমানিক সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ।

ভেলিপ : ভেলিপ সম্প্রদায় মূলত কানাকোনা এবং কুইপেম তালুকে পাওয়া যায়। গাভাদেদের তুলনায় তারা ফর্সা এবং সুদর্শন। ভেলিপদের মল্লিকার্জুনের লিঙ্গ আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেওয়া হয় এবং তাই, ভেলিপরা প্রতি বছর তিন মাস পুরোহিত হিসেবে কাজ করে। ভেলিপরা সাধারণত বনবাসী এবং ‘কুমারী’ (পোড়া এবং কেটে ফেলা) পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে।

ধাঙ্গড় : এই গাভালিরা মূলত মহারাষ্ট্র থেকে এসেছিল এবং বেশিরভাগই সাত্তারি এবং সাঙ্গুয়েম তালুকে পাওয়া যায়। ধাঙ্গররা কঠোরভাবে একটি পশুপালক উপজাতি।

কুলাগার যে গোয়ানিজ সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত, তা বুঝতে বেশি পরিশ্রম করতে হয় না। গাভাদে, ভেলিপ ও ধাঙ্গড়দের সাহায্যে যুগ যুগ ধরে কুলাগারে সেচ ও বৃক্ষরোপণ করে আসছে কুলাগারের পাধে-গোষ্ঠীর ব্রাহ্মণরা। সেখানে আবহমান কাল ধরে সুপারি, মশলা ও কলাগাছের চাষ হয়ে আসছে। সুপারি তাই হাজার হাজার বছর ধরে গোয়ার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুপারির ভালো নাম গুবাক, গুয়া বা গোয়া। গোয়ার নামের নেপথ্যে গুবাকের ভূমিকা তাই অস্বীকার করার উপায় নেই।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন