না, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকায় কো মরবিডিটিতে মৃত্যুর কথা উল্লেখ করতেই আমরা উদ্বাহু নৃত্য করব তা নয়! আমাদের পোর্টালের প্রতিবেদনে আমরা আগেই তুলে ধরেছি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সাংবাদিক বৈঠকে বলা কো মরবিডিটির কারণে মৃত্যুর কথা। ফলে এটা যেহেতু নতুন কিছু নয়, তাই নতুন করে পৈতে বের করে নিজেদের ব্রাহ্মণ প্রমাণ করার মরিয়া চেষ্টা কিছু সংবাদমাধ্যমের মতো আমাদের করার দরকার নেই। বরং পাঠকরা নিজেরাই চোখ-কান খোলা করে বিকেলে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রেস কনফারেন্স শুনতে থাকুন। রাজ্য সরকারের সাংবাদিক বৈঠক শুনুন। আগেরগুলিও দেখুন, দেখবেন লব আগরওয়াল অনেক দিন ধরে অনেকবার কো মরবিডিটির কথা উল্লেখ করেছেন। ফলে নিজেরাই সংবাদমাধ্যম বেছে নিন সত্যটা জানাতে। কোন চ্যানেলে কাকে খুশি করতে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধিতে কোন ইস্যুতে ধুয়ো তুলবে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই।
করোনা যেহেতু নতুন রোগ তাই তা মোকাবিলায় কিছু পরিকল্পনা করতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। হু, আইসিএমআর-এর গাইডলাইন মেনে করোনাতেই মৃত্যু হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের রেখে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর একটি কমিটি গড়ে। যার কাজ ডেথ কেস অডিট করা, ডেথ সার্টিফিকেট অডিট করা নয়। তবু না জেনেবুঝে অডিট কমিটি নিয়ে, কো মরবিডিটিতে মৃত্যু নিয়ে বিরোধীরা সস্তা রাজনীতি শুরু করেছিল। এরা প্রেস ব্রিফিং শোনে না, সত্য জানার আগ্রহ নেই। রাজ্যে ৭২ জন কো মরবিডিটির কারণে মারা গিয়েছেন এটা মেনে নিতেও তাঁদের আপত্তি। কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশিকায় মৃতের সংখ্যা লিখতে গিয়ে যে লিখেছে, করোনায় আক্রান্ত হলেও ৭০ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে কো মরবিডিটিতে, এরপর বিজেপি হয়তো ঢোঁক গিলবে। আসলে বাংলা কোনও কিছুতে ভালো করলেই ওদের গায়ে জ্বালা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে সঠিক পথেই করোনা মোকাবিলা করছেন, প্রবল রাজনৈতিক আক্রমণ আর কটাক্ষ উপেক্ষা করে, এটা ভাবলেই ভালো লাগে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অডিট কমিটি অন্য রাজ্যও গড়েছে। কো মরবিডিটির কারণে মৃত্যুর কথাও বলেছে অন্য রাজ্য। সেগুলি এতদিন কেন সামনে আসেনি টিভির গরম আলোচনায়, জানতে চান পাঠকরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাই দুশো, তাঁর সঙ্গে আছেন সৈনিকরা, আছেন জনগণ, মা-মাটি-মানুষ। ফলে কোন সংবাদমাধ্যম কী বলল তাতে থোড়াই কিছু এসে যায়! এবার আপনাদের দেখাই দেশের কিছু ছবি। যেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুসরণ করে অডিট কমিটি গড়েছে রাজ্য, কো মরবিডিটিতে মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করেছে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলি। বাংলায় অডিট কমিটি গড়া হয় ৩ এপ্রিল।
দিল্লি দিয়ে শুরু করি। ২১ এপ্রিল মঙ্গলবার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানিয়েছিলেন, দিল্লিতে যাঁরা করোনায় মারা যাচ্ছেন তাঁদের ৮০ শতাংশের বেশি মানুষের বয়স ৫০-এর উপরে। আর ৮০ শতাংশের মৃত্যুর কারণ কো মরবিডিটি অর্থাৎ রোগী অন্য জটিল অসুখে ভুগছিলেন। ২২ এপ্রিল বাংলার মতোই সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে করোনায় মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণে অডিট কমিটি গড়ে দিল্লি সরকার ডা. অশোক কুমারের নেতৃত্বে।
আসি পাঞ্জাবের কথায়। সেখানেও বাংলার মতো ডেথ কেস অডিট করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়েন মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং। এই কমিটির মাথায় রাখা হয় পিজিআইয়ের প্রাক্তন ডিরেক্টর ডা. কে কে তলওয়ারকে। এই কমিটি কী বলল? পাঞ্জাবে যতজন করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের বেশিরভাগের মৃত্যুর কারণ কো-মরবিডিটি অর্থাৎ তাঁদের হাই প্রেসার, সুগার, ক্যান্সার, এইচাইভি ইত্যাদি রোগ ছিল। পাঞ্জাবের মানুষ সরকারি হাসপাতালের চেয়ে বেশি বেসরকারি হাসপাতালকে প্রাধান্য দেন। ফলে অনেক রোগীকে শেষ পর্যায়ে সরকারি হাসপাতালে আনা হয়, যাঁদের বাঁচানো যায়নি। ৩০ এপ্রিল পাঞ্জাব সরকার বেসরকারি কিছু হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় সরকারি সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন। পাঠকরা নিশ্চয় মনে রেখেছেন, কিছু বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং খরচ বহনের পদক্ষেপ কত আগে করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা-মাটি-মানুষ সরকার।
বিহারে যে চারজন করোনা আক্রান্ত মারা গিয়েছেন তাঁদের সকলের মৃত্যুর কারণ কো মরবিডিটি। কেউ রেনাল ফেলিওর, কেউ বা ক্যান্সারে মারা গিয়েছেন। ১৬ এপ্রিল কর্নাটকের স্বাস্থ্য দফতর জানায়, যে ১২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন তাঁদের সকলের ক্ষেত্রে কো মরবিডিটি বড়ো ফ্যাক্টর। সেই হাঁপানি, ক্যান্সার, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ইত্যাদি রোগী। দশজন আবার খুব ধূমপান করতেন।
এবার বিজেপি-শাসিত গুজরাট। সেই রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরও জানিয়েছিল, ২৩ মার্চ যখন সুরাটে প্রথম করোনায় মৃত্যুর খবর আসে তখন থেকে ২৫ এপ্রিল অবধি যে ১৩৩ জন মারা যান তাঁদের ৭১ শতাংশের মৃত্যুর কারণ কো মরবিডিটি। কিডনি বা রেনাল প্রবলেমে ৮ জন, ১২ জন কার্ডিয়াক রোগী, ফুসফুসের সমস্যায় ভোগা ৬ জন এবং পাঁচজন মানসিক রোগী মারা যান। এ ছাড়া ক্যান্সার, ডেঙ্গু, টিবি, এপিলেপ্সি, উচ্চ রক্তচাপের রোগীও করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বিজেপি নেতারা কী বলবেন এরপর?
২৮ এপ্রিল বাংলার মতোই করোনা চিকিৎসায় স্টেট লেভেল ডেথ অডিট কমিটি গড়ে অন্ধ্রপ্রদেশ। ওইদিন অবধি অন্ধ্রপ্রদেশে ৩১ জন মারা যান, যাঁদের বেশিরভাগ ছিলেন হাঁপানি, হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগী। অর্থাৎ কারণ সেই কো মরবিডিটি।
১৪ এপ্রিল। ডা. অর্চনা পাতিলের নেতৃত্বে ৫ সদস্যবিশিষ্ট অডিট কমিটি গড়ে মহারাষ্ট্র সরকার। মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করতে শুধু মুম্বাইয়ের জন্য ৯ সদস্যের আলাদা একটি অডিট কমিটি গড়া হয়।
আবার আসি বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে। বাংলাকে ফলো করে যোগী সরকারও ডেথ অডিট কমিটি গঠন করে। গত ১৫ এপ্রিল উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্য সচিব অমিত মোহন প্রসাদ সেই কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে বলেছিলেন, উত্তরপ্রদেশে মৃতদের সকলের মৃত্যুর কারণ কো মরবিডিটি ও বার্ধক্যজনিত অসুখ।
কেরল সরকারও কো মরবিড রোগীদের প্রতি যত্ন নিচ্ছে। ফলে কো মরবিডিটি বা অডিট কমিটি গঠন নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা না করে দেশকে দিশা দেখানোর জন্য তারিফ করুন। আর আমাদের হাতে
এমন তথ্য অনেক আছে। এক দিনে দিলে বিজেপি, সিপিআইএমের বদহজম হয়ে কো মরবিডিটির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অডিট কমিটি তো বটেই, করোনা বিপর্যয় কাটিয়ে অর্থনীতির হাল ফেরাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গড়া গ্লোবাল অ্যাডভাইসরি বোর্ড ফর কোভিড রেসপন্স-ও দেশকে দিশা দিশা দেখাবে। কারণ, বাংলা আজ যা ভাবে, দেশ কাল তা ভাবে।