শনিবার | ২২শে মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:১৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘অমৃতসরী জায়কা’ মহিলা সংশোধনাগারগুলিতে অন্তঃসত্ত্বা একের পর এক কয়েদি, এক বছরে ১৯৬ শিশুর জন্ম : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় ‘শোলে’র পঞ্চাশ বছর : সন্দীপন বিশ্বাস বিভাজনের রাজনীতি চালিয়ে হিন্দুত্ববাদীরা ইতিহাস পালটাতে চায় : তপন মল্লিক চৌধুরী অশোক সম্পর্কে দু-চারটে কথা যা আমি জানি : অসিত দাস চৈত্রের শুরুতেই শৈবতীর্থ তারকেশ্বরে শুরু হলো সন্ন্যাস মেলা : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় প্রথম বাঙালি পরিচালকের প্রথম নির্বাক লাভ স্টোরি : রিঙ্কি সামন্ত গোপিনী সমভিব্যাহারে রাধাকৃষ্ণের হোলি ও ধ্যানী অশোকবৃক্ষ : অসিত দাস শেখাওয়াটির হোলী-হাভেলী : নন্দিনী অধিকারী সংস্কৃত সাহিত্যে অশোকবৃক্ষ যখন দোহলী : অসিত দাস প্রাণগৌরাঙ্গের প্রিয় পঞ্চব্যঞ্জন : রিঙ্কি সামন্ত ‘দ্য স্টোরিটেলার’ — শিল্প এবং বাজারের মধ্যে দ্বন্দ্ব : কল্পনা পান্ডে অপুষ্টি আর দারিদ্রতা ঢাকতে সরকার আর্থিক উন্নয়নের পরিসংখ্যান আওড়ায় : তপন মল্লিক চৌধুরী দোহলী মানে অশোকবৃক্ষ, তা থেকেই দোল ও হোলি : অসিত দাস সিনেমা প্রেমীদের হোলির গান : রিঙ্কি সামন্ত দোলের আগের দিনের চাঁচর নিয়ে চাঁচাছোলা কথা : অসিত দাস খোল দ্বার খোল, লাগল যে দোল — দোলা লাগল কি : দিলীপ মজুমদার শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৃন্দাবন যাত্রা (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত সিঙেরকোণ-এর রাধাকান্ত এখনও এখানে ব্যাচেলর : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর বৃন্দাবন যাত্রা (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত বাজারে ভেজাল ওষুধের রমরমা দায় কার : তপন মল্লিক চৌধুরী বাঙালি বিজ্ঞানীর গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য ‘কুড়কুড়ে ছাতুতে’ ক্যানসার নিকেশ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বোলপুর কি সত্যিই বলিপুর : অসিত দাস রাখাইন পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের উপর প্রভাব : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন অসুখী রাজকন্যাদের লড়াইয়ের গল্প : রিঙ্কি সামন্ত বিশ্ব থেকে ক্যানসারকে নির্মূল করতে গবেষণায় একের পর এক সাফল্য রূপায়ণের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কল্পনার ডানায় বাস্তবের রূপকথা : পুরুষোত্তম সিংহ হাইকোর্টের রায়ে ভাবাদিঘীতে তিন মাসের মধ্যে কাজ শুরুর নির্দেশ : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী কমছে, সঙ্কটে সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল : তপন মল্লিক চৌধুরী ফল্গু নদীর তীরে একটি ছোট শহর এই বুদ্ধগয়া : বিজয় চৌধুরী
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ দোলপূর্ণিমা ও হোলি ও বসন্ত উৎসবের  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘অমৃতসরী জায়কা’

নন্দিনী অধিকারী / ৭৬ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ২১ মার্চ, ২০২৫

ববিতার অস্থি যমুনার কালো জলে ভাসিয়ে দিল উমেশ। পন্ডিতজী বলেছিল, “আর পিছন ফিরে তাকাবে না। পত্নীকে তুমি এই সংসারের মোহমায়া থেকে মুক্তি দিয়ে দিলে!”

কালিন্দীর কালো রঙের মত আকাশেও সেদিন আঁধার ঘিরে আছে। চারিদিকে চাপ চাপ অন্ধকার। আজ কি অমাবস! না মেঘে ঢেকে আছে চাঁদনি! কে জানে! এইসব তিথি নক্ষত্রের হিসেব রাখত ববিতা। আজ প্রদোষ হ্যায়, ঐ বৃহস্পতি বার পূর্ণিমা, এরপর আসবে সোমবতী অমাবস্যা… সব মুখস্থ ববিতার। একটা বাচ্চার জন্যে এত বারব্রত! রান্নাঘরের ছোটোমোটো কৌটোবাটাও যে প্রাণে ধরে ফেলতে পারত না, মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে সে সংসারের মোহমায়া থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে!

উমেশকে উদাস দেখে ধীরজ তার কাঁধে হাত রাখল, “মন খারাপ কোরো না। সময় সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। কদিন কাটুক, তারপর না হয় দেখেশুনে একটা শাদী…”

কথা শেষ হল না ধীরজের। উমেশ তার দিকে এমনভাবে তাকাল! ধীরজ তার এক গেলাসের ইয়ার, তাই বলে মুখে যা আসে তাই বলবে! আশেপাশের হাওয়ায় মিশে আছে হয়তো ববিতার আত্মা। সেই বা কত কষ্ট পাবে!

ববিতার পরিশ্রম-হাতযশ, উমেশের সামান্য পুঁজি নিয়ে চার বছর আগে শুরু করা তাদের অমৃতসরী জায়কা ঠেলা এখন রমরমিয়ে চলে। অমৃতসরী নাম নিয়ে ঠাট্টা করেছিল ববিতা,

— কবে তোমার দাদাপরদাদা মুলুক ছেড়ে চলে এসেছে! এখনো তুমি অমৃতসরকে ভুলতে পারছ না!

— আরে ও শহরকা বাতহি কুছ অলগ হ্যায়। এ গুরগাঁওওলারা কি জানে! দ্যাখো না আমার ঠেলার অমৃতসরী চুরচুরা কুলচা, দহি ভাল্লা, পিন্ডি চানা লোকে কেমন চেটেপুটে খায়! পুলের পাশ দিয়ে যাবার সময় গাড়ি দাঁড় করিয়ে এসে খেয়ে যায়!

— সে কি অমৃতসরের নামে না আমার রান্নার গুণে! আমার কদর কখনো করবে না তুমি….

চোখ পাকিয়ে, কপট রাগ দেখিয়ে ববিতা আবার রান্নায় মন দিত।

ঠেলার রান্নাবান্না ,ঘরসংসারের সব কাজ একা হাতে সামলাত ববিতা। ঠেলার কাজে ইদানিং ছোটুকে রেখেছে উমেশ। সে নাকি বাল শ্রমিক। চোদ্দ বছর বয়স হয় নি তার। পুলিশ এসে মাঝে মাঝে হুজ্জোতি করে। দু-চার পয়সা দিয়ে দিলে কিছুদিন চুপ করে থাকে। মা মরা ছেলে ছোটু। বাপটা কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়! উমেশের কল্যাণে তবু তো দুটি খেতে পরতে পায়! মরা ববিতার পা জড়িয়ে ধরে খুব কাঁদছিল বেচারী ছোটু।

সবকিছু কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে উমেশের। ববিতাকে ছাড়া তার সংসার তো শূন্য! কি হবে তার ধান্দার। বিনা নোটিশে দু-দিনের বুখারে ববিতা হঠাৎ চলে গেল। ডাগদার বাবু কি সব কঠিন বিমারীর নাম বললেন, সেসব সে বাপের জন্মে শোনেনি।

শোক সামলে, ক্রিয়াকর্ম সেরে উমেশ ছোটুকে নিয়ে ধান্দা আবার শুরু করল। অপটু হাতে কিছুই যেন ঠিকঠাক হয় না। পিন্ডিচানায় মজা এল না। বিস্বাদ হয়েছে। ববিতার রান্নায় নিজস্ব কিছু তুক ছিল। তাতেই সোয়াদ আসত।

রাতের ছেঁড়া ছেঁড়া স্বপ্নে ববিতা এল। কলকলিয়ে বলল, “আরে গরম জলে চায়ের পাতা, দারচিনি, লবঙ্গ, এলাচ, তেজপাতা দিয়ে খানিকক্ষণ ফুটিও। তারপর সেটা চানার সবজিতে মিশিও। তবেই তো কালার আর সোয়াদ বাড়বে।”

সত্যিই তো ববিতার টিপসে পিন্ডিচানার স্বাদ বদলে গেল! খরিদ্দাররা আবার চেটেপুটে খাচ্ছে।

এখন প্রায় রোজই রাতে আসে ববিতা। নানারকম টিপস্ নিয়ে। একদিন বলল, “দহিভাল্লায় একটু আনার দানা ছড়িয়ে দিও। দেখতেও ভালো লাগবে। খেতেও”।

ববিতার হাতের অমৃতসরী চুরচুর নানের খুব ডিমান্ড ছিল। লোকে এখনো ইয়াদ করে।

— কেমন করে বানাতে ববিতা? আমাকে তরীকা বতাও।

— সবকিছু এত তাড়াতাড়ি শিখিয়ে দেব!তাহলে তো তুমি আমাকে ইয়াদই করবে না।

স্বভাবসুলভ ঠাট্টা করল ববিতা।

— শোনো, তন্দুর থেকে বার করেই গরম গরম নানগুলোতে দেশী ঘী বেশ ভালো করে মাখিয়ে নেবে। তারপর হাতের হাতের তালুতে চাপ দিয়ে ভেঙে দেবে। তবেই তো চুরচুরে নানের মজা!

আবার চুরচুরে নান ফিরে এল উমেশের অমৃতসরী জায়কা ঠেলায়। ধীরে ধীরে তার জীবনের সব স্বাদ… টক, ঝাল, নোনতা, মিষ্টি। গুরগাঁওয়ের রুক্ষ, শুষ্ক ব্যস্ত শহরেও শিমূল ফুটল। পলাশের আগুন রাঙা ফুলে এখন মৌটুসীরা মধু খায়। বসন্তের হাওয়ায় শুকনো পাতারা ঘুর্ণিনাচন নাচে। থেকে থেকে কোন জঙ্গল থেকে ভেসে আসে কেকাধ্বনি।

আজকাল এক গোরী, লাল দুপাট্টাওয়ালী রোজ উমেশের ঠেলায় চটপটা দহিভাল্লা খেতে আসে। সে কাছেপিঠে কোনো ভিলায় কাজ করে। বাড়ি ফেরার সময় সখিদের সঙ্গে টক-ঝাল-নোনতার স্বাদ নিতে নিতে সে কেমন তিরছি নজরে উমেশ কে দ্যাখে। উমেশ বিহ্বল হয়! একদিন ছোটু ঠেলার এককোণ থেকে একটুকরো কাগজ উমেশের হাতে তুলে দিল। ফোন নম্বর লেখা। কার ফোননম্বর! কে দিল! উমেশ কি একবার ফোনটা করে দেখবে!

আশ্চর্য! আজকাল রাতেরবেলা ববিতা রান্নার টিপস্ দিতে আর আসে না!


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন