সোমবার | ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১:১৩
Logo
এই মুহূর্তে ::
বিজয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’ বাংলাভাষার নেচিতে ‘ময়ান’ ও ‘শাহিস্নান’-এর হিড়িক : অসিত দাস একটু একটু করে মারা যাচ্ছে বাংলা ভাষা : দিলীপ মজুমদার রাজ্যে এই প্রথম হিমঘরগুলিতে প্রান্তিক চাষিরা ৩০ শতাংশ আলু রাখতে পারবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় সামরিক জান্তার চার বছর — মিয়ানমার পরিস্থিতি : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন ১৯ ফেব্রুয়ারি ও স্বামীজির স্মৃতিবিজড়িত আলমবাজার মঠ (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চাষিদের বাঁচাতে রাজ্যের সরাসরি ফসল কেনার দাওয়াই গ্রামীণ অর্থনীতি আরও চাঙ্গা হবে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার মোদীর মিডিয়া ব্যস্ত কুম্ভের মৃত্যুমিছিল ঢাকতে : তপন মল্লিক চৌধুরী রেডিওকে আরো শ্রুতিমধুর করে তুলেছিলো আমিন সায়ানী : রিঙ্কি সামন্ত গোপাল ভাঁড়ের আসল বাড়ি চুঁচুড়ার সুগন্ধ্যায় : অসিত দাস প্রতুলদার মৃত্যু বাংলা গানের জগতে অপূরণীয় ক্ষতি — মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় : সুমিত ভট্টাচার্য মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্র ও গোপাল ভাঁড়, মিথ এবং ডিকনস্ট্রাকশন : অসিত দাস মহাকুম্ভ ও কয়েকটি প্রশ্ন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব কাশীকান্ত মৈত্রের জন্মশতবর্ষ উদ্‌যাপন : ড. দীপাঞ্জন দে অমৃতের সন্ধানে মাঘী পূর্ণিমায় শাহীস্নান : রিঙ্কি সামন্ত বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (ষষ্ঠ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির সঙ্গে মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের যোগ : অসিত দাস ‘হরিপদ একজন বেঁটে খাটো সাদামাটা লোক’-এর গল্প হলেও… সত্যি : রিঙ্কি সামন্ত রোহিঙ্গা সংকট — ফেলে আসা বছর ও আগামীদিনের প্রত্যাশা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (পঞ্চম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার ‘রাঙা শুক্রবার অথবা কহরকন্ঠ কথা’ উপন্যাস বিষয়ে শতদল মিত্র যা বললেন রবীন্দ্রনাথের ধর্মীয় পরিচয় : গোলাম মুরশিদ কেজরিওয়াল হারলো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে অরাজকতা ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্য : তপন মল্লিক চৌধুরী বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (চতুর্থ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সাহেব লেখক দেড়শো বছর আগেই বলেছিলেন পঞ্চানন কুশারীর কবিয়াল হওয়ার সম্ভাবনার কথা : অসিত দাস বাংলার নবজাগরণের কুশীলব (তৃতীয় পর্ব) : দিলীপ মজুমদার সর্বপাপবিনাশীনি জয়া একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বসন্ত পঞ্চমী ও সরস্বতী পুজোর  আন্তরিক শুভেচ্ছা শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’

মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য / ৪৭ জন পড়েছেন
আপডেট রবিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

বিয়ের পর অন্তরার দিনগুলো যেন প্রজাপতির ডানায় ভর করে উড়ে যাচ্ছে। এত রঙচঙে রঙিন তবুও ধরে রাখা যায় না। এম.এ পাশ করার পর অন্তরাকে যখন ওর বাবা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “কি রে, এবার সরকারী চাকরির পরীক্ষার জন্য তৈরী হবি নাকি পিএইচডি করবি?” মুহূর্তকাল না ভেবেই ও জবাব দিয়েছিল, “অনেক হয়েছে বাবা, আর কিচ্ছু নয়। এখন শুধু খাব আর ঘুমোবো।” মেয়ের কথা শুনে ওর মা বলেছিলেন, “বেশ, তবে গানের রেওয়াজ বন্ধ করা চলবে না।” তারপর ওর বাবার উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “এবার মেয়ের জন্য পাত্র দেখ। তবে হ‍্যাঁ, এমন পাত্র চাই যার পরিবারের সাথে ও এমনভাবেই থাকতে পারবে।” অন্তরার বাবা সেই কথা রেখেছেন। বিয়ের পর ওকে এক গ্লাস জলও গড়িয়ে খেতে হয় না। শ্বশুর-শাশুড়ীর নয়নের মণি অন্তরা।

নিত‍্যনতুন সাজগোজ, বেড়ানো, পার্টি, শপিং এত আনন্দের মাঝে অন্তরার আজকাল কেন যেন মনে হয় জীবনে কোথাও একটা বড়ো ফাঁক থেকে গেছে। জীবনের সুর যেন তালে মিলছে না। শ্বশুর মলয়বাবুকে দেখলে একথাটা যেন বড় বেশি করে মনে হয়।

মানস অফিস বেরোনোর আগে ব্রেকফাস্ট করার সময় শিখাদেবী নিজে ছেলের তদারকি করেন। অন্তরা পাশে দাঁড়িয়ে থাকে। মানস একদিন অন্তরাকে বলেছিল, “একসাথেই বসে পড়ো।” ছেলের কথা শিখাদেবী সঙ্গে সঙ্গেই নাকচ করে দিয়ে বলেন, “ও তো আর অফিস যাবে না! তোর সাথে তাড়াহুড়ো করে খাওয়ার কোনো দরকার নেই। আমাদের সাথে ধীরেসুস্থে খাবে।”

মনে মনে বলেন, এ যে রান্নাঘরের রাজনীতি। অন্তরা দেখে রোজই একঘেয়ে সাহেবী ঘরানার ব্রেকফাস্টে এরা অভ‍্যস্ত। একটু মুখ বদলানোর জন্য একদিন বলে, “জলখাবারের মেনুতে মাঝেমধ্যে লুচি বা কচুরী আলুরদম হতে পারে না?” মানস যেন আঁতকে ওঠে, “উফফ্ ওই তেল, ঘিয়ের ক‍্যালোরি ঠাসা খাবার! একদম না।” শিখাদেবী ছেলের কথা কানেও নেন না। অন্তরাকে বলেন, “তোমার সংসার, তোমার ইচ্ছে খাটবে না তা কি হয়! তবে রান্নার মাসী তো এসব করতে পারবে না। ওকে যেমনটা বলা আছে তার বাইরে ও কিছুই করতে চায় না। তাই এসব করতে হলে তোমাকেই দায়িত্ব নিতে হবে। দেখ যদি একা সবকিছু সামলাতে পার।” আর কথা বাড়ান না শিখাদেবী। ভালো করেই জানেন বৌমা আর এগোতে সাহস পাবে না। তিনি বিচক্ষণ মানুষ। তাই সংসারটি বৌমার হাতে তুলে দিয়ে শুধুমাত্র চাবিকাঠিটি নিজের কাছে রেখে দেন।

রোজকার মতো সেদিনও জলখাবারের পাট চুকলে শিখাদেবী স্নান সেরে ঠাকুরঘরে ঢুকেছেন। মলয়বাবু খবরের কাগজ নিয়ে সোজা নিজের ঘরে। অন্তরা রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে রান্নার মাসীর সাথে খানিক বকবক করার পর নিজের ঘরে আসার সময় কি ভেবে শ্বশুরের ঘরে উঁকি দেয়। দরজার সামনে আসতেই কানে আসে মিউজিক প্লেয়ারে খুব আস্তে আস্তে বাজছে, “আমারে তুমি অশেষ করেছ এমনই লীলা তব”। ও দাঁড়িয়ে পড়ে। গান শেষ হয়। ওর চোখে জল। এখন ও বুঝতে পারে মায়ের ধরে বেঁধে শেখানো রবীন্দ্রসঙ্গীতের রেওয়াজের মধ্যেই ওর জীবনের ছন্দ বাঁধা ছিল। অনুভব করে আজ এত বৈভবের মাঝেও ও কেন তালহীন। ধীর পায়ে ঘরে ঢোকে অন্তরা। বলে, “বাবা, ভলিয়ুমটা একটু জোরে দিলেই তো আমরা সবাই শুনতে পারি।” মলয়বাবু খানিকক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থাকেন। তারপর বলেন, “তোমার শাশুড়ী আর স্বামীর রবীন্দ্রসঙ্গীত পছন্দ নয়।” শুনে অন্তরার কেমনযেন একটা রোখ চেপে যায়। বলে, “আপনি তো পছন্দ করেন। আমিও করি। মানস ইংরাজী গানের ভক্ত। অফিস থেকে ফিরে ঘরে রোজ ওর পছন্দসই গান চালায়। আমার ভালো না লাগলেও শুনতে বাধ‍্য হই। মা গুরুদেবের স্মরণে প্রতিমাসে একদিন করে হরিনাম সংকীর্তনের আসর বসান। এটাও তো ওনার ভালোলাগার জন‍্যই। তাহলে সকালবেলায় সবাই যখন নিজের নিজের কাজে ব‍্যস্ত থাকে তখন না হয় আমার আপনার ভালোলাগার রবীন্দ্রসঙ্গীত বাজুক।” মলয়বাবু অবাক হয়ে অন্তরার চাপা তেজের আলো দেখতে থাকেন। বড় ভালো লাগে। ওকে কাছে ডাকেন। মাথায় হাত রেখে বলেন, “তুই চেষ্টা করে দ‍্যাখ্।”

পরদিন সকালে শিখাদেবী ছেলের ব্রেকফাস্টের তদারকি করছেন এমন সময় কানে আসে রবীন্দ্রনাথের গান, “বিপুল তরঙ্গ রে…” মা-ছেলে মুখ চাওয়াচাওয়ি করে। আওয়াজটা আসছে মলয়বাবুর ঘর থেকে। অন্তরা ভলিয়ুমটা এমনভাবে দিয়েছে যাতে উচ্চকিত না হয় অথচ বাড়ির সবার কানে পৌঁছয়।

শিখাদেবী গজগজ করতে শুরু করেন, “সকালবেলায় কোথায় ঠাকুরের নামগান করবে তা নয়, ওই প‍্যানপ‍্যানানি গান চালিয়ে বাড়িশুদ্ধু লোককে ঝালাপালা করে দিল!”

অন্তরা এসে শাশুড়ীকে জড়িয়ে ধরে আব্দারের সুরে বলে, “মা, তোমার মুখে তো রাতদিন ঠাকুরের নামগান শুনি, মাসে একবার অষ্টপ্রহর ধরে হরিনাম শুনি, রোজ মানসের পছন্দের ইংরেজী গান শুনি। এখন থেকে আমার আর বাবার পছন্দের রবিঠাকুরের গানও তোমাদের শুনতে হবে। বেশীক্ষণ নয়, রোজ সকালের এই সময়টুকু।” বৌমার আব্দার শিখাদেবী ফেলতে পারেন না। সকালের ব‍্যস্ত সময়টুকু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দখলে চলে যায়।

সময় গড়ায়। অন্তরার কোলে এসেছে ফুটফুটে খুকু। খুকুর মুখে বুলি ফুটতে না ফুটতেই শিখাদেবী শুরু করেন, “অন্তরা, মনে রেখো, খুকু তোমার মতো বাংলা ইস্কুলে যাবে না। ও পড়বে ইংরেজী ইস্কুলে। এবার থেকে ওই প‍্যানপ‍্যানানির বদলে বরং ছোটদের ইংরেজী গান চালালে খুকুরই ভালো হবে।” মানসও মাঝেমাঝেই বলে, “মায়ের কথাটা ফেলনা নয়। শুনে চললে মেয়েরই ভালো হবে।” অন্তরা মুখে কিছু বলে না। নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। খুকুও একটু বড় হতেই রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি নিজের বিরক্তি প্রকাশ করতে থাকে। অন্তরা ওসবে পাত্তা দেয় না। মেয়েকে বলে, “তুই তো পড়াশোনা করে একদিন মস্ত চাকরি করবি। হয়তো বাইরে কোথাও চলে যাবি। আমার বাঁচার জন্য এই অভ‍্যাসটুকু আমাকে ছাড়তে বলিস না।

বিশ্বমানের আইটি ফার্মের চেন্নাইয়ের শাখা অফিসে কর্মরত আধ‍্যা। মাসতিনেক হল এখানে জয়েন করেছে। চিরকাল ডাকাবুকো ধরণের হলেও এই প্রথম নিজের বাড়ির বাইরে এসে নিজেকে একটু গুটিয়েই রাখে ও। সহকর্মীদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে ছোট একমাত্র বাঙালী আধ‍্যাকে কিছুটা মজা করেই সবাই কলকাতার রসগুল্লা বলে ডাকে। ও রেগে গেলেও মুখে প্রকাশ করে না। মনে মনে ভাবে, দক্ষিণী সম্বর, বড়া, দোসার চেয়ে রসগোল্লার স্বাদ যে কত মধুর তা ইণ্ডিরিপিণ্ডিরি ভাষার লোকজন বুঝবে কি করে! আসলে দক্ষিণ ভারতের বেশিরভাগ আঞ্চলিক ভাষাগুলোকে আধ‍্যার একইরকম মনে হয়। মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারে না। তাই এসব ভাষাকে ও একান্তে ইণ্ডিরিপিণ্ডিরি ভাষা বলে।

এখানে আসার পর ও এই অফিসে সাড়ম্বরে বড়দিন পালন হতে দেখেছে। শুনেছে বছরের বিভিন্ন দিনে গুটিকয়েক উৎসব একইসাথে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে থাকা এই ফার্মের প্রতিটি শাখায় পালিত হয়।

আজ একুশে ফেব্রুয়ারী। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আধ‍্যার অফিসের সেমিনার হলে সব কর্মী উপস্থিত। ইংরাজী মাধ‍্যমে পড়াশোনা করা আধ‍্যার মাতৃভাষা নিয়ে কোনওকালেই মাথাব্যথা ছিল না, আজও নেই। বাংলাভাষাটা না বলতে পারলেই ও বাঁচে। নেহাৎই দায়ে পড়ে এমন অনুষ্ঠানে ওর আসা। অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে। সহকর্মীরা যে যার নিজস্ব মাতৃভাষায় বক্তব্য রাখছে। গান, কবিতা, আবৃত্তি ইত্যাদি পরিবেশন করছে। হিন্দী আর ইংরাজী ভাষার অনুষ্ঠানগুলো ছাড়া সবকিছুই ওর একঘেয়ে মনে হতে থাকে। এদিকওদিক তাকিয়ে বুঝতে পারে বেশিরভাগেরই অবস্থা ওরই মতোন। যে যার মতো গল্প করছে, কেউ বা ফোনে ব‍্যস্ত।

অনুষ্ঠান প্রায় শেষের দিকে। সঞ্চালক সবাইকে শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ জানাতে ব‍্যস্ত। দর্শকরাও সীট ছাড়ছে। হঠাৎই আধ‍্যার বুকের ভেতরটা কেমনযেন তোলপাড় করে ওঠে। ও ছুটে গিয়ে স্টেজের ওপর উঠে সঞ্চালকের হাত থেকে মাইকটা কেড়ে নেয়। ওর এমন আচরণে সবাই হতভম্ব। ও তখন যেন অন‍্য মানুষ। নিজের খেয়ালে খোলা গলায় গেয়ে ওঠে, “মম চিত্তে নিতি নৃত‍্যে কে যে নাচে”। ওর গান শুনে সবাই দাঁড়িয়ে পড়ে। গানের ছন্দে তাল মিলিয়ে সহকর্মীরা তালি দিতে থাকে। গান শেষ হলে হাততালিতে হল ফেটে পড়ে। সমস্বরে আওয়াজ ওঠে, “আধ‍্যা, আধ‍্যা।”

আজ ওর মনে হয় মাতৃভাষা মায়ের মতোই, বড়ই আপন। নিজের পছন্দ, অপছন্দ, বিরক্তি সবটুকু মায়ের ওপর উগরে দিলেও মা যেমন সবসময় ভালোবাসায় আগলে রাখে ঠিক তেমনই বোধহয় এই বাংলাভাষা। তা না হলে কোনোদিন না শেখা, মন দিয়ে না শোনা গানটা এমন অনায়াসে সে গাইল কি করে!

ফোনের ওপার থেকে খুকুর কাঁপা কাঁপা গলা, “জান মা, রবীন্দ্রসঙ্গীত বড্ডো ভালো। আমি এখন শুধুমাত্র কলকাতার রসগুল্লা নই, আমি আধ‍্যা।”

অন্তরা মেয়ের এইসব কথার মাথামুণ্ডু কিছু বুঝতে না পারলেও অনুভব করে নিজের সত্তার শিকড় মেয়ের মনেও ছড়িয়ে পড়েছে। ধীরে ধীরে মেয়েকে বলে, “যা কিছু আপন তা চেতনা জুড়ে থাকে। তার লয়, ক্ষয় নেই। চেষ্টা করেও তাকে অস্বীকার করার কোনও উপায় নেই রে।”

ফোনটা নামিয়ে রাখে অন্তরা। বিকেলের মরা আলোটা হঠাৎই যেন উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। দূরে কোথাও কোকিল ডাকছে। চারদিক আজ বড়ই ছন্দোময়।।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “মৌসুমী মিত্র ভট্টাচার্য্য-র ছোটগল্প ‘শিকড়ের টান’”

  1. পার্থ রায় says:

    খুব সুন্দর গল্প🍁☘️

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন