মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট বার্তা — আগে বাংলার মানুষ আলু খাবে, তারপর বাইরে পাঠানো হবে। বাজারে আলুর দাম যাতে না বাড়ে তার জন্য চলছে নজরদারি। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের কড়া বার্তাও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরও স্পষ্ট জানিয়েছেন রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে বাইরে আলু রফতানি করা যাবে না।
প্রসঙ্গত, রাজ্যে আলুর দাম কমাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য সরকার। আর আলু রফতানি করা যাবে না বলে এবার বিধানসভায় কড়া বার্তা দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আলু রফতানি নিয়ে আগেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাফ জানিয়েছিলেন, রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে আলু রফতানি করা যাবে না। চাহিদার অতিরিক্ত যা উৎপাদন হবে তা কিনে নেবে রাজ্য। আগে বাংলার মানুষ আলু খাবে, তারপর বাইরে পাঠানো হবে। এদিকে বাজারে আলুর দাম যাতে না বাড়ে তার জন্য চলছে নজরদারি। সেই সঙ্গে আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের কড়া বার্তাও দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, গত ২ ফেব্রুয়ারি বিধানসভাতেও উঠে আসে আলু-পেঁয়াজের রফতানির প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দেন, আগে বাংলার মানুষ আলু খাবে, তারপর বাইরে পাঠানো যাবে। মুখ্যমন্ত্রী মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করেন। এদিকে, খাদ্য দফতরের প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নিয়ে প্রশাসনিক প্রধান জানান, “আমরা কেন্দ্রের থেকে চালের ভর্তুকি বাবদ ১৪ হাজার কোটি টাকা পাই। আমাদেরকেও ৪০% টাকা দিতে হয়। আট কোটির মধ্যে অনেকেই আছেন তারা চাল পান না কেন্দ্রের থেকে। নানা কারণ আছে না পাওয়ার। সেই কারণেই রাজ্যের খাদ্যসাথী প্রকল্প চলছে। আগে আমাদের কাজ মানুষকে খাবার দেওয়া।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একইসঙ্গে স্পষ্ট করেন, সবটা রাজ্যের হাতে নেই।ব্যবসায়িক মুনাফার কথাও উঠে আসে মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আলু নিয়ে দেখলেন তো, কিছু লোক ব্যবসার জন্য কি কাজ করে দেখছেন তো? আগে ঘর সামলাব, না কি ব্যবসা দেখব কারও। আগে বাংলা পাবে, আগে ঘর সামলাব। বাংলায় মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে কম।” এটা মনে রাখতে হবে।
এদিকে আলুবীজের দাম আকাশছোঁয়া। তার উপর আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের। আলু চাষ নাবি হয়ে পড়বে। আর তা হলে রোগপোকার আক্রমণ ও ধ্বসার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। তাই বেশিরভাগ আলু চাষির চাষে অনীহা প্রকাশ পেয়েছে। এরফলে দুশ্চিন্তা বেড়েছে বীজ ব্যবসায়ীদেরও। কারণ, আলুবীজ বিক্রি একেবারে কমে গিয়েছে। চাষিদের পাশাপাশি বীজ ব্যবসায়ীরা লোকসানের কবলে পড়েছেন। চাঁপাডাঙার বর্ধিষ্ণু চাষি সুনীত মাইতি জানান, প্রতি বছর আমি দশ বিঘা জমিতে আলু বসাই। এবার মাত্র তিন বিঘা জমিতে আলু বসিয়েছি। জানি না কী হবে। আশঙ্কায় আছেন। তাছাড়া পেঁয়াজ চাষের ক্ষেত্রেও একই ক্ষতির ভয় পাচ্ছেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, এখন চলছে আলু চাষের মরশুম। এই সময় জ্যোতি আলুর বীজ (৫০ কেজির প্যাকেট) বিক্রি হচ্ছে ২৮০০ টাকায়। চন্দ্রমুখী আলুর বীজ বিকোচ্ছে ৩৫০০ টাকায় এবং পোখরাজ আলুর বীজের দাম পড়ছে ২২০০ টাকা। দাম শুনে অনেক কৃষক এবার আলু বসানোর পরিকল্পনাই বাতিল করছেন। আরামবাগের চাষি মধুসুদন ঘোষ বলেন, ‘চাষ করব না। যেভাবে সব জিনিসের দাম বাড়ছে, তাতে ক্ষতি ছাড়া লাভ হওয়ার আশা নেই। বীজের দাম আগে কখনও এতটা হয়নি। আলুবীজ ব্যবসায়ী অশোক পাল বলেন, এবার বীজ কেনার চাহিদা একেবারে তলানিতে। আমাদের মতো ছোট বীজ ব্যাবসায়ীর ক্ষেত্রে সমস্যা বেশি। মোটা টাকা দিয়ে বীজ কিনে এনেছিলাম। ভেবেছিলাম কিছু টাকা রোজগার হবে। কিন্তু সব জলে যাবে মনে হচ্ছে। কারণ, দাম শুনেই তো অনেকে পিছিয়ে যাচ্ছে।’ একই কথা বলছেন আরেক ব্যবসায়ী সমীর দাস। তাঁর কথায়, ‘আলুবীজ বিক্রি হচ্ছে না এবার। তাই বীজ নষ্ট হতে বসেছে। শুকিয়ে যাচ্ছে আলু। আমরা ক্ষতির আশঙ্কায় দিন গুনছি। পেঁয়াজের বীজও বিক্রি করি। তার চাহিদাও এবার খুব কম।’ এবারের খামখেয়ালী আবহাওয়ায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা পড়েছেন সঙ্কটে।