‘জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না’, এই কবিতার সঙ্গে বহু বাঙালিই পরিচিত। আর এই লেখার সৃষ্টিকর্তা ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। তাঁর হাত ধরেই সৃষ্টি হয়েছে বহু জনপ্রিয় কবিতা ও ছড়া। প্রয়াত সেই জনপ্রিয় কবি, ছড়াকার ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। আজ আর আমাদের মধ্যে নেই। বুধবার ভোর রাতে চির শান্তির দেশে পাড়ি দিয়েছেন। বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। সৌভাগ্য হয়েছিল একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকায় একসঙ্গে কাজ করার। ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন। পারিবারিক আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। যা আজও ভোলার নয়। মূলত ছোটদের জন্যই লিখতেন ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। তাঁর লেখায় বারবার উঠে এসেছে সামাজিক স্যাটায়ার। ‘জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসে না’, এই কবিতার সঙ্গে বাঙালি পরিচিত। আর এই লেখার সৃষ্টিকর্তা ভবানীপ্রসাদ মজুমদার। নিজের জীবনে প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি ছড়া লিখেছেন তিনি। নিজের লেখায় করেছেন নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা। মজার ছড়া, সোনালি ছড়া, ‘কলকাতা তোর খোল খাতা’, ‘হাওড়া-ভরা হরেক ছড়া’, ‘ডাইনোছড়া’র মতো বহু বই লিখেছেন। লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সত্যজিৎকে নিয়েও। লিখেছেন, ‘রবীন্দ্রনাথ নইলে অনাথ’, ‘ছড়ায় ছড়ায় সত্যজিৎ’-এর মতো কবিতা।
কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের জন্ম ১৯৫৩ সালের ৯ এপ্রিল হাওড়া জেলার জগাছা থানার দাশনগরের কাছে দক্ষিণ শানপুর গ্রামে। তাঁর বাবা ছিলেন নারায়ণচন্দ্র মজুমদার এবং মা নিরুপমা দেবী। কবির শৈশব জীবন কেটেছে সেই গ্রামেই। কর্মজীবনে প্রবেশ করে কবি ভবানীপ্রসাদ মজুমদার শিক্ষকতা করেছেন। বিশিষ্ট এই কবি ও ছড়াকার হাওড়া জেলার শানপুর গ্রামের কালিতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক হিসাবে নিজের কর্মজীবন শুরু করেন। পরে তিনি ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন। সেই সঙ্গে লেখালিখিও চালিয়ে গিয়েছেন।
উল্লেখ করা যেতে পারে ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের বিখ্যাত সেই কবিতা যা আজও বাঙালির জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে। ইংরাজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা ছেলেমেয়েদের বাবা-মায়ের গর্ব নিয়ে তৈরি ‘বাংলাটা ঠিক আসে না’ একমুহূর্তে ছড়িয়ে পড়েছিল চারিদিকে। স্কুল শিক্ষক হিসেবে জীবন শুরু করার মাঝেও সাহিত্যচর্চা। সেইসঙ্গে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লেখালেখি। যা পাঠক সমাজে সমাদৃত হয়েছিল। তাঁর বাংলা ভাষার জন্য লড়াই আজও সকলের কাছে অনুপ্রেরণার। শিল্পীর প্রয়াণে বড় ক্ষতি সাহিত্য জগতের।
প্রসঙ্গত, বাংলা ভাষার প্রতি বাঙালির যে অনীহা, তা কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছিলেন তিনি। তাঁর ক্ষুরধার লেখা, শব্দের প্রয়োগ, আর নজরকাড়া কিছু কথা অনেকেই ভেবেছেন বটে, তবে বলে ওঠা হয়নি। কবির মৃত্যুতে শোকের ছায়া সাংস্কৃতিক জগতে।
ওনার স্ত্রী জানালেন ওনার মরদেহ ওনার দাসনগরের বাসভবনে সকাল দশটা পর্যন্ত রাখা হবে। যাঁরা ওনাকে শ্রদ্ধা জানাতে চান তাঁরা যেতে পারেন।