বুধবার | ১৫ই জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১লা মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:০৮
Logo
এই মুহূর্তে ::
বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দশম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুর ও তৎকালীন বঙ্গসংস্কৃতি : অসিত দাস দধি সংক্রান্তি ব্রত : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (নবম পর্ব) : আবদুশ শাকুর সপ্তাহে একদিন উপবাস করা স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো : অনুপম পাল অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত’র ভাষা : ড. হান্স্ হার্ডার সবগুলো গল্পেই বিজয়ার নিজস্ব সিগনেচার স্টাইলের ছাপ রয়েছে : ড. শ্যামলী কর ভাওয়াল কচুর কচকচানি : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (অষ্টম পর্ব) : আবদুশ শাকুর রামলোচন ঠাকুরের উইল ও দ্বারকানাথের ধনপ্রাপ্তি : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (সপ্তম পর্ব) : আবদুশ শাকুর যে শিক্ষকের অভাবে ‘বিবেক’ জাগ্রত হয় না : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভিয়েতনামের গল্প (সপ্তম পর্ব) : বিজয়া দেব বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (ষষ্ঠ পর্ব) : আবদুশ শাকুর দিল্লি বিধানসভা ভোটেই নিশ্চিত হচ্ছে বিজেপি বিরোধি জোটের ভাঙন : তপন মল্লিক চৌধুরী দ্বারকানাথ ঠাকুরের গানের চর্চা : অসিত দাস মমতা বললেন, এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে দুষ্টচক্র হু জানাল চিন্তা নেই : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (পঞ্চম পর্ব) : আবদুশ শাকুর পৌষ পুত্রদা একাদশী : রিঙ্কি সামন্ত বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (চতুর্থ পর্ব) : আবদুশ শাকুর জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির দুর্গাপূজায় কবিগান ও যাত্রার আসর : অসিত দাস সসীমকুমার বাড়ৈ-এর ছোটগল্প ‘ঋতুমতী হওয়ার প্রার্থনা’ সামাজিক মনস্তত্ত্বের প্রতিফলনে সিনেমা : সায়র ব্যানার্জী নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘সুও দুও ভাসে’ বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (তৃতীয় পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভিয়েতনামের গল্প (ষষ্ঠ পর্ব) : বিজয়া দেব নীলমণি ঠাকুরের মেছুয়া-যাত্রা, একটি ঐতিহাসিক পুনর্নির্মাণ : অসিত দাস বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (দ্বিতীয় পর্ব) : আবদুশ শাকুর কাদের প্রশ্রয়ে বাংলাদেশের জঙ্গিরা বাংলার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রসাহিত্যে কবিয়াল ও কবির লড়াই : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী : নন্দিনী অধিকারী

নন্দিনী অধিকারী / ৪১৫ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০২৩

মহাষ্টমীতে একবার ঝাঁসির দুর্গে পৌঁছেছিলাম। বীরাঙ্গনা লক্ষ্মীবাঈয়ের স্মৃতিচারণায় ছিল সে বছরের পুষ্পাঞ্জলি।

উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি শহরের বাঙ্গিরা পাহাড়চূড়ায় রাণীর কেল্লা। শহরের মাটি থেকে উঁচুতে গড়া কেল্লা একসময় রাজপরিবারকে সুরক্ষা দিয়েছিল। দূর থেকে শত্রুদের নজরদারি সহজ হয়েছিল। এখন সে কেল্লা রাণীর কীর্তি, খ্যাতি, বীরত্বের প্রতীক হয়ে সমুন্নত। শক্তপোক্ত লালরঙের ফোর্ট সিপাহী বিদ্রোহের রক্তরাঙা ইতিহাস স্মরণ করায়।

দুর্গে রয়েছে দশটি প্রবেশদ্বার। দরজার বিভিন্ন নাম যেমন দাতিয়া দ্বার, খান্ডেরাও দ্বার এবং বিখ্যাত ভান্ডেরী দরজা সেখান দিয়ে ১৮৫৭-র মহাবিদ্রোহে লক্ষ্মীবাঈ ইংরেজদের থেকে পালিয়ে বাঁচেন। মূল প্রবেশদ্বারের সামনে মহাদেব এবং গণপতি মন্দির। ঈশ্বরবিশ্বাসী নেবালকর পরিবারের রক্ষাকর্তা হয়ে তাঁরা একসময় বিরাজমান ছিলেন। কেল্লার একেবারে অভ্যন্তরে রাণীর গুপ্তমন্ত্রণা কক্ষ। সে গুপ্তঘরে পৌঁছনোর সিঁড়ি অলিগলি, অন্ধকারে রহস্যময়। মন্ত্রণাকক্ষের আকারটিও অভিনব। দেওয়ালের ও কান আছে, তাই সেখানে দেওয়াল কম থাম বেশি।

ঝাঁসির এই দুর্ধর্ষ কেল্লা মনে করিয়ে দেয় যে এর দক্ষিণবুরুজ থেকে একদা যুদ্ধের রক্তনিশান উড়িয়ে ছিলেন রাণী। দুর্গের বাগানে বিশাল কালো দেহ নিয়ে জং ধরে পড়ে আছে রাণীর দুই প্রিয় কামান ভবানীশঙ্কর ও কড়কবিজলী। ইংরেজদের গোলার আঘাতগুলি আজও ঝাঁসী নগরীর প্রাচীরগাত্রে সুস্পষ্ট। ১৮৫৮ সালের ৪ঠা এপ্রিলে রাতের অন্ধকারে ছেলেকে পিঠে বেঁধে সাহসিনী ঘোড়ায় চড়ে ঝাঁপ দিয়েছিলেন দুর্গের একটি উঁচু জায়গা থেকে। সে ঘটনা এবং সেই স্থান আজও বিস্ময় জাগায়।

‘এক মহীয়সী’ মহাশ্বেতা দেবী লিখেছেন এই বীরাঙ্গনার কথা । ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত মহাশ্বেতা দেবীর প্রথম বই ‘ঝাঁসির রাণী’। রাণীর কথা লিখতে গিয়ে তিনি শুধুমাত্র বিখ্যাত ঐতিহাসিকদের প্রামাণ্য গ্রন্থের ওপর ভরসা করেন নি। তিনি মনে করেছিলেন, সিংহাসন সেদিন যাঁদের ছিল, কলমও ছিল তাঁদের অধিকারে। ঝাঁসিতে গিয়ে দিনের পর দিন দুর্গ পরিভ্রমণ করেছেন মহাশ্বেতা। বুন্দেলখণ্ডের সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশেছেন। শুনেছেন তাদের লোককথা, গান। বাঈসাহেবকে নিয়ে তাদের সুখদুঃখ, বিশ্বাস, ভাবনা। কথা বলেছেন রাণীর জীবিত বংশধরদের সঙ্গে।

বইয়ের ভূমিকাটি প্রায় রূপকথার ভাষায় লেখা। কিছু প্রামাণ্য তথ্য লেখিকা আমাদের জানিয়েছেন, সেসব কথা আমাদের সামনে এর আগে কখনো প্রকাশ পায় নি।

কাশীতে জন্মেছিলেন বলে এই মারাঠি মেয়েটির নাম মণিকর্ণিকা বা মনু। দু-বছর বয়সেই মাতৃহীনা মেয়েটি তেজী এবং দুরন্ত ছিলেন বলেই তার খেলার সঙ্গী ছিল ছেলেরা। আটবছরের মণিকর্ণিকার বুন্দেলখণ্ডের ঝাঁসির মারাঠি শাসক, নেবালকর বংশের রাজা গঙ্গাধর রাওয়ের সঙ্গে বিয়ে হল। সেই বিবাহসভায় সবাইকে অবাক করে দিয়ে গৌরী বালিকা পুরোহিতকে বলে উঠল, “চাংগলী বলকট গাঁঠ বান্ধা” অর্থাৎ গ্রন্থি ভালো করে বাঁধুন। আঠেরো হাতের নবারি শাড়ি পরা, কপালে অর্ধচন্দ্র, এবং তারকার উল্কি আঁকা মারাঠী কন্যা ঘাগরা পরা মেয়েদের দেশে এসে পরিচিত হলেন লক্ষ্মীবাঈরূপে।

উনত্রিশ বছরের পতি গঙ্গাধরের শিক্ষা শিল্পসংস্কৃতিতে যথেষ্ট রুচি ছিল। তিনি বালিকাবধূটিকে রাজগ্রন্থাগারের তত্ত্বাবধানের ভার দিলেন। বিদ্যাশিক্ষায় মন দিলেন রাণী। গীতার একটি ক্ষুদ্র সংস্করণ তাঁর বড় প্রিয় ছিল।

রাণীর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে যতটুকু লেখিকা জানিয়েছেন তা হল, আহারে তাঁর বিশেষ রুচি ছিলনা। নিজের পরিচারিকাদের সঙ্গে তিনি সহচরীর মত ব্যবহার করতেন। অপরিচ্ছন্ন বেশ, অসংস্কৃত কেশ এবং অমার্জিত ব্যবহারে তাঁর বিরক্তির প্রকাশ ঘটত।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সুগঠনা রাণীর গমের মত গায়ের রঙ ছিল। গোলমুখে ভুট্টা দানার মত দাঁত, আয়তনেত্র। তাঁর সুন্দর কেশদাম, নাতিদীর্ঘ নাতিখর্ব দেহ। যখন সধবা ছিলেন তখন নাকে নথ, কণ্ঠে চিঞ্চপেটি বা চিক্, সাতলহরী মুক্তাহার, কানে বুগড়ী বা কর্ণিকা, হাতে বালা, পায়ে নুপূর পরতেন। মকর সংক্রান্তিতে সধবাদের মাঙ্গলিক হলদিকুঙ্কুম অনুষ্ঠানে সব্বাইকে খুশি করতেন তিনি।

লক্ষ্মীবাঈ-গঙ্গাধরের মাত্র দু-মাসের পুত্রসন্তানটি মারা যাবার পরে শোকে প্রায় অসুস্থ গঙ্গাধর রাওয়ের জীবিতকালেই পাঁচ বছরের আনন্দকে তাঁরা দত্তক নেন। আনন্দ ছিল তাঁদেরই এক জায়গীরদার পুত্র। দত্তক নেবার পর তাঁর নাম হল দামোদর গঙ্গাধর রাও।

মহাশ্বেতা লিখছেন, রাণীর এগারো বছরের বিবাহিত জীবনের গল্প শেষ হল স্বামী গঙ্গাধরের মৃত্যুতে। পরিপূর্ণ বিবাহ সজ্জায় রাজার মৃত্যু শয্যার পাশে রাণী যেন বাসর সাজিয়ে বসে রইলেন।

এরপরে ডালহৌসীর সেই স্বত্ত্ববিলোপনীতি। যার সুযোগ নিয়ে উত্তরাধিকারহীন দেশীয় রাজ্যগুলি একে একে বৃটিশরাজের করায়ত্ত্ব হচ্ছিল। চিকের আড়াল থেকে রাণীর ঐতিহাসিক উক্তি করলেন, “মেরী ঝাঁসী নহীঁ দুঙ্গী”। তাঁর এই প্রতিবাদ সেই ঘর আর গন্ডি ছাড়িয়ে আরো অনেক যুগ, আরো অনেকদিন, আরো অনেককালের বাধা জয় করে বেঁচে রইল। রাণীর এই উক্তিই ছিল প্রথম এবং একমাত্র প্রতিবাদ ইংরেজদের ক্রমবর্ধমান করালগ্রাসের বিরুদ্ধে। যে প্রতিবাদ প্রবল হয়ে উঠল লক্ষ লক্ষ মানুষের সংগ্রামে।

তিনি জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঝাঁসির মানুষকে একত্রিত করলেন। মজবুত সেনা বাহিনী গড়ে তুললেন। নিজে ঘোড়সওয়ারী, অস্ত্রচালনা অভ্যাস করলেন। বিদেশী নাগপাশের বিরুদ্ধে প্রথম সচেতন বিদ্রোহে তিনি অংশ নিলেন। পশ্চাৎপদ সমাজে বসে রানি নিজে যেমন যুদ্ধ করেছেন, তেমনি যুদ্ধে নামিয়েছেন রাজ্যের নারীদেরও। স্বাধীনতার জন্য প্রাণপণ লড়াইয়ের আদর্শে জনতাকে উজ্জীবিত করতে তিনি প্রজাদের ঘরে ঘরে গিয়েছিলেন। নিজের বিলাসিতার সমস্ত সম্পদ বিলিয়ে দিয়েছিলেন। বাইশ বছরের জীবন আহুতি দিয়েছিলেন গোয়ালিয়রের রণক্ষেত্রে।

সেদিনের ভুলত্রুটি অক্ষমতা পরাজয় সব ছাপিয়ে এই কথাটিই সবথেকে বড় সত্যি ছিল, আপামর ভারতবাসী ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সমুদ্র গর্জন তুলেছিলেন।

শক্তিরূপিণী দুর্গাকে আমরা ভক্তি করি। তিনি ঈশ্বরী। তাঁকে আমরা মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করি। গল্পে, গাথায়, গানে, বহু মানুষের মনে আজও লক্ষ্মীবাইয়ের নিত্যপূজা। তাঁরা বলেন, “রাণী মরগেই ন হোউনী, আভি তো জীন্দা হোউ”। তাই তো জ্যোৎস্না রাতে ঝাঁসির বৃদ্ধ টাংগাওয়ালা এখনো দেখতে পায় সারেংগী ঘোড়া ছুটিয়ে বাঈসাহেব চলেছেন। পরনে তাঁর কাছা দেওয়া নবারি শাড়ি হাতে তার তরবারি, গলায় মোতির মালা।


আপনার মতামত লিখুন :

2 responses to “দুর্গে দুর্গে দুর্গতিনাশিনী : নন্দিনী অধিকারী”

  1. Jaya Dey says:

    দূর্দান্ত লাগলো… সাথের ছবিগুলো খুবই সুন্দর এবং এত ভাল লেখা পড়তে পড়তে এক না দেখা জায়গার কৌতূহল নিরসনে খুবই কার্যকরী…!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন