শুক্রবার | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | রাত ৩:১৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
সিন্ধুসভ্যতার ফলক ও সিলে হরিণের শিং-বিশিষ্ট ঋষ্যশৃঙ্গ মুনি : অসিত দাস বৈশাখ মাসে কৃষ্ণপক্ষে শ্রীশ্রীবরুথিনী একাদশীর ব্রতকথা মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত সিন্ধুসভ্যতার লিপি যে প্রোটোদ্রাবিড়ীয়, তার অকাট্য প্রমাণ : অসিত দাস বাঙালির মায়াকাজল সোনার কেল্লা : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ট্যাটু এখন ‘স্টাইল স্টেটমেন্ট’ : রিঙ্কি সামন্ত ফের আমেদাবাদে হিন্দুত্ববাদীদের অন্য ধর্মের উপর হামলা : তপন মল্লিক চৌধুরী লোকসংস্কৃতিবিদ আশুতোষ ভট্টাচার্য ও তাঁর চিঠি : দিলীপ মজুমদার নববর্ষের সাদর সম্ভাষণ : শিবরাম চক্রবর্তী নববর্ষ গ্রাম থেকে নগরে : শিহাব শাহরিয়ার ফিরে আসছে কলের গান : ফজলুল কবির সিন্ধুসভ্যতার ফলকে খোদিত ইউনিকর্ন আসলে একশৃঙ্গ হরিণ : অসিত দাস একটু রসুন, রসুনের কথা শুনুন : রিঙ্কি সামন্ত ১২ বছর পর আরামবাগে শোলার মালা পরিয়ে বন্ধুত্বের সয়লা উৎসব জমজমাট : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় কোনিয়াকদের সঙ্গে দু’দিন : নন্দিনী অধিকারী স্বচ্ছ মসলিনের অধরা ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস বাড়বে গরম, চোখের নানান সমস্যা থেকে সাবধান : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী আঠালো মাটি ফুঁড়ে জন্মানো শৈশব : আনন্দগোপাল হালদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত ওয়াকফ হিংসার জের কি মুর্শিদাবাদেই থেমে গিয়েছে : তপন মল্লিক চৌধুরী এক বাগদি মেয়ের লড়াই : দিলীপ মজুমদার এই সেনসরশিপের পিছনে কি মতাদর্শ থাকতে পারে : কল্পনা পাণ্ডে শিব কম্যুনিস্ট, বিষ্ণু ক্যাপিটেলিস্ট : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় ‘গায়ন’ থেকেই গাজন শব্দের সৃষ্টি : অসিত দাস কালাপুষ্প : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু হোক বাঙালি-অস্মিতার প্রচারযাত্রা : দিলীপ মজুমদার মাইহার ঘরানার সম্রাট আলি আকবর খান (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত পেজফোর-এর নববর্ষ বিশেষ সংখ্যা ১৪৩২ প্রকাশিত হল সিন্ধিভাষায় দ্রাবিড় শব্দের ব্যবহার : অসিত দাস সিন্ধুসভ্যতার জীবজগতের গতিপ্রকৃতির মোটিফ : অসিত দাস হনুমান জয়ন্তীতে নিবেদন করুন ভগবানের প্রিয় নৈবেদ্য : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-এর আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের হেঁসেলের গল্প : রিঙ্কি সামন্ত

রিঙ্কি সামন্ত / ৮৭৪ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৩

শোনা যায় পাটনার লবণ কারখানায় ম্যানেজার হয়ে থাকার সময় কারখানার এপাশ ওপাশ ঘুরতে যেতেন জব চার্ণক। গঙ্গার ধার দিয়ে একদিন যাবার সময় দেখতে পেলেন শ্মশানে দাহ করার জন্য প্রচুর মানুষ জড়ো হয়েছে। ফুটফুটে সুন্দরী সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া এক বিধবা মেয়েকে জ্বলন্ত চিতায় তোলার জন্য টানাহেঁচড়া করছে কিছু মানুষ। ঢাক, ঢোল, শঙ্খ আর কাঁসরের ধ্বনিতে চাপা পড়ে যাচ্ছে বুক ফাটানো আর্তনাদ। শিউরে উঠলেন চার্ণক। সৈন্যদের নিয়ে হাজির হলেন শ্মশানে এবং উদ্ধার করলেন কন্যাটিকে।

পরে এই এদেশীয় হিন্দু সমাজচ্যুত রমণীর সঙ্গে পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হন চার্ণক ও তিন সন্তানের জনকও হন।অতএব বলা যেতেই পারে চার্ণকের বংশধররাও ছিল অ্যাংলো সম্প্রদায়ভুক্ত। ইউরোপ ও এশিয়ার মানুষদের এই মিশ্র বিবাহের ফলে উদ্ভূত সম্প্রদায়কে অ্যাংলো ইন্ডিয়ান নামটি নাকি দিয়েছেন স্বয়ং ওয়ারেন হেস্টিংস।

একসময় ব্রিটিশ অফিসারদের ভারতীয় নারীদের বিয়ে করার ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হতো। তারা ভাবতেন এমন একটি গোষ্ঠী তৈরি হবে যাদের শরীরে বইবে ব্রিটিশ রক্ত আবার যারা ভারত ভূমি সম্বন্ধে যথেষ্ট ওয়াকিবহল হবে, এবং সেটাই হবে ব্রিটিশ শাসনের মজবুত ভীত। গোড়াতে এদের ইউরেশিয়ান বলে ডাকা হতো। ১৯১১ সালে আদমশুমারিতে সরকারিভাবে প্রথম অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের পরিচয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

থ্রি প্লাম পুডিং

পরনে ফুল ছাপ স্কার্ট, গায়ে ফুলহাতা ব্লাউজ়, মাথায় বাঁধা গাঢ় লাল রঙের রুমাল, দীর্ঘাঙ্গী, চোখের পাতাগুলো ফুলের কেশরের মতো দীর্ঘ, মাথার চুলের ঘন বর্ণাঢ্যতা এবং গিটারে টুংটাং পুরনো গ্রামাফোনে বেজে ওঠা এলভিস প্রেসলি, জিম রিভসের গলায় মন কারা গানের সুর, ফক্স ট্রটের ছন্দে নাচ, ওয়াইন আর চকলেট — এসব কিছু নিয়ে অতি সহজেই চেনা যায় এক বিশেষ যাপনের চিত্র, এ শহরের রীনা ব্রাউনদের। ভারতীয় ও ব্রিটিশ দুটো সংস্কৃতির মিলনে সৃষ্টি অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের রন্ধন প্রনালী ব্রিটিশরাজের সময় বিকশিত হয়। আজ তাদের রান্নাবাটির গল্প থাকছে লেখায়।

অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের খাওয়া দাওয়া প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে প্রথমেই আসে এক অতি প্রিয় মুলগাতওয়ানি স্যুপের কথা। প্রচলিত আছে, এক সাহেব সাগর পেরিয়ে মাদ্রাজে পা দিয়েই বাবুর্চিকে স্যুপ বানানোর নির্দেশ দেন। তখন এদেশের পাচকদের স্যুপ সম্বন্ধে কোনো সম্যক ধারণাই ছিলনা। তখন সেই মাদ্রাজি বাবুর্চি গোলমরিচ গুঁড়ো, লঙ্কা, লবঙ্গ, সরিষার বীজ, মেথি, লবণ, কারিপাতা, ছোট পিয়াজ সামান্য ঘিয়ে ভেজে, তেঁতুল জলে গুলে সেটি ফুটিয়ে, যেটি তৈরি করে সাহেবকে দিলেন পরবর্তীকালে তাই মুলগাতওয়ানি (mulligatawny) স্যুপ নামে পরিচিত হয়েছিল। অল্প টক স্বাদের আড়ালে থাকা গোলমরিচের উষ্ণ আলিঙ্গন মুলগাতওয়ানি (mulligatawny) স্যুপকে আলাদা এক লেবেলে পৌঁছে দেয়।

ঝালফ্রেজি বা প্যানত্রাসে

মাদ্রাজে বসবাসকারী ইংরেজ সাহেবদের তাদের দেশের লোকজনেরা ডাকতেন মূল বলে, তাই হয়তো এই ধরনের নামকরণ। যদিও বা এ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। পরবর্তীকালে সাহেবি ধরনধারনে, খাদ্যাভাসে অভ্যস্ত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের হেঁসেলে সহজেই মুলগাতওয়ানি স্যুপ ঢুকে পড়েছিল সবজি, মাংস ও হালকা মসলা যোগ করে এক অসাধারণ বিশ্বজয়ী স্বাদু পদ হিসেবে। এছাড়াও অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের স্যুপ বাহিনীতে আর্মি ক্যাম্প চিকেন স্যুপ, রেড লেন্টিল স্যুপ (Red Lentil Soup), ল্যাম্ব ট্রটার্স স্যুপ (Lamb Trotters Soup), ক্রিম ভেজিটেবল স্যুপ, ড্রামস্টিক স্যুপ স্বাদ-গন্ধে-বর্ণে সুপারহিট।

অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা শুধু যে ভোজনবিলাসী তাই নয়, তারা অত্যন্ত অতিথিবৎসলও বটে। যেকোনো পারিবারিক অনুষ্ঠান তা সে জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী হোক বা যে কোন বিশেষ দিনে আজও এদের হেঁসেলে যজ্ঞ বাড়ির ধূম পড়ে যায়। সেদিনের মেনুতে থাকবে পেপার ওয়াটার, পোট্যাটো অ্যান্ড বিটরুট কাটলেট, হার্বড রাইস, বল লফ্রাই, মটন লেগ রোস্ট, জংলি পোলাও, কিমার পুর ভরা আলুর চপ, চিকেন কোরমা, প্রণ ঝালফ্রেজি, চিংড়ির দমপোক্ত, পর্ক কারি, ভুনি, ডেভিলস চাটনি ইত্যাদি। আর শেষপাতে বাড়ির গিন্নির হাতের তৈরি কেক, ক্যারামেল কাস্টার্ড বা শীতকাল হলে থ্রি প্লাম পুডিং (Three Plum Pudding)-এর মত জিভে জল আনা পদের।

জংলি পোলাও

মটন লেগ রোস্টের অংশ উদ্বৃত্ত থেকে গেলে তা দিয়ে পরের দিন অ্যাংলো গিন্নি বানিয়ে ফেলবেন ঝালফ্রেজি বা প্যানত্রাসের (Pantras) মতো সম্পূর্ণ ভিন্ন স্বাদের পদ। এদের খাদ্যের রুচিতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের এক অসাধারণ মেল বন্ধন ঘটে গিয়েছিলে। তা সত্ত্বেও কলকাতার কলিনস স্ট্রিট, এলিয়ট রোড বা বো ব্যারাকের অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের দুপুরের মেনুতে ভাত, ডাল যেমন থাকবে তেমন পেঁয়াজ লঙ্কা হলুদ রসুন বাটা দেওয়া ঝাল ঝাল চচ্চড়ি আর গড়গড়ে করে রান্না করা পর্ক বা বিফ কারি বা লঙ্কাবাটা লেবুর রস মাখানো ভেটকি বা ইলিশ মাছ ভাজা। এদের রান্নায় পড়ে ধনে জিরে লঙ্কা হলুদ সর্ষের মতো সব দেশি মসলা।

দুপুরের প্রায় দেশী সব খাবার খেলেও রাতে কিন্তু এরা সাধারণত খায় ‘থ্রি কোর্স ইংলিশ ডিনার (Three course English dinner)।’ যাতে থাকে স্যুপ, চিজ ম্যাকারনি, ব্রেড পুডিং বা বেক্‌ড আলাস্কা।

ব্রেকফাস্টে ওদের পছন্দ ছোলার ডাল বা হালুয়া দিয়ে কচুরি বা পুরি আবার কোন কোন দিন ওদের বিখ্যাত আলু চপ কিংবা কাটলেট বা ক্রাম্ব চপ বা প্যানত্রাস।

মুলগাতওয়ানি

অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের অতি পছন্দের জংলি পোলাও উদ্ভাবন বেশ মজাদার। তখনও রেফ্রিজারেটরের যুগ শুরু হয়নি। প্রচন্ড গরমে বাড়ির সদস্যদের ক্লান্তি ও খিদের অভাব মেটানোর চেষ্টায় অনেক সময় দুপুরের রান্না করা তরকারি, বেঁচে যাওয়া ভাতের বেশ খানিকটার সঙ্গে নানান ধরনের মসলা মিশিয়ে দু-একটা কাঁচা সবজি যোগ করে চৌখস অ্যাংলোইন্ডিয়ান গিন্নি বানিয়ে ফেলতো এক অভিনব পোলাও, যা পরবর্তীকালে খ্যাতি পেয়েছিল জংলি পোলাও (Junglee Pulao) নামে।

১৮ শতকের গোড়ায় জীবিকার সন্ধানে ও সাহেব মেমসাহেবদের হুকুম ফরমাইস মাফিক খাবার বানাতে বাবুর্চি আর খানসামাদের গলদঘর্ম হত। প্রয়োজনের তাগিদে জন্ম নেয় এক নতুন রসনা, স্বাদে-গন্ধে-মেজাজে রান্নার ডালি। এই অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের হেঁসেলের সুঘ্রাণ পৌঁছে গিয়েছিল ভোজনরসিক বাঙালির সন্ধানী নাকেও। তাই আজও অ্যাংলো ইন্ডিয়ান রসনার নস্ট্যালজিয়া জাগিয়ে রাখার প্রয়াসে আগস্ট মাসের প্রথমে পালিত হয় ফুড-ফেস্ট। সেই স্বাদ গন্ধের টান উপেক্ষা করে এমন ভোজনরসিকদের অস্তিত্ব বিরল।


আপনার মতামত লিখুন :

One response to “অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের হেঁসেলের গল্প : রিঙ্কি সামন্ত”

  1. Pallab dey says:

    অসাধারণ প্রতিবেদন সঙ্গে অনেক খাবারের নাম,,,,সুন্দর লেখনী।

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন