বৃহস্পতিবার | ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৯:৩৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
নানা পরিচয়ে গৌরী আইয়ুব : গোলাম মুরশিদ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (দ্বিতীয় পর্ব) : অভিজিৎ রায় কেন বারবার মণিপুরে আগুন জ্বলে আর রক্ত ঝড়ে : তপন মল্লিক চৌধুরী শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (শেষ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ হাইপেশিয়া — এক বিস্মৃতপ্রায় গনিতজ্ঞ নারীর বেদনাঘন উপাখ্যান (প্রথম পর্ব) : অভিজিৎ রায় শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (ষষ্ঠ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ জগদীশ গুপ্তের গল্প, কিছু আলোকপাত (শেষ পর্ব) : বিজয়া দেব শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (পঞ্চম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ? : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (চতুর্থ পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (শেষ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার শতবর্ষে সঙ্গীতের ‘জাদুকর’ সলিল চৌধুরী : সন্দীপন বিশ্বাস সাজানো বাগান, প্রায় পঞ্চাশ : অমর মিত্র শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (তৃতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (একাদশ পর্ব) : দিলীপ মজুমদার খাদ্যদ্রব্যের লাগামছাড়া দামে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের : তপন মল্লিক চৌধুরী মিয়ানমারের সীমান্ত ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রতিবেশী দেশগুলোর উদ্যোগ : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (দ্বিতীয় পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (দশম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার বুদ্ধদেব গুহ-র ছোটগল্প ‘পহেলি পেয়ার’ ‘দক্ষিণী’ সংবর্ধনা জানাল সাইকেলদাদা ক্যানসারজয়ীকে : দিলীপ মজুমদার শিবনাথ শাস্ত্রী ও তাঁর রামতনু লাহিড়ী (প্রথম পর্ব) : বিশ্বজিৎ ঘোষ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (নবম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘তোমার নাম’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (অষ্টম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত-র ছোটগল্প ‘হাওয়া-বদল’ কার্ল মার্কসের আত্মীয়-স্বজন (সপ্তম পর্ব) : দিলীপ মজুমদার প্রবোধিনী একাদশী ও হলদিয়ায় ইসকন মন্দির : রিঙ্কি সামন্ত সেনিয়া-মাইহার ঘরানার শুদ্ধতম প্রতিনিধি অন্নপূর্ণা খাঁ : আবদুশ শাকুর নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘শুভ লাভ’
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই দীপাবলি এবং কালীপুজোর আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

ভারতে চোখ রাঙাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ‘সুপারবাগ’ মহামারী — ড: স্বপ্না মুখোপাধ্যায় : মোহন গঙ্গোপাধ্যায়

মোহন গঙ্গোপাধ্যায় / ৪০২ জন পড়েছেন
আপডেট শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২

অ্য‌ান্টিবায়োটিক বা অ্য‌ান্টিব্যাক্টোরি‌য়াল ওষুধের সঙ্গে পরিচয় আছে আমাদের সকলেরই। একেবারে সদ্যোজাত শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার ক্ষেত্রেই বিভিন্ন অসুখ বিসুখে এই গোত্রের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। অ্যান্টিবায়োটিক হল এমন এক ধরনের ক্ষমতাশালী ওষুধ যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের হাত থেকে আমাদেরকে বাঁচায়। তাই অ্যান্টিবায়োটিক আমাদের কাছে আশীর্বাদ স্বরূপ। এই জীবন রক্ষাকারী ওষুধের বাণিজ্যিক ব্যবহার শুরু হওয়ার সাথে সাথে আমূল বদল এসেছে চিকিৎসাবিজ্ঞানে। এমনকি উন্নতি ঘটেছে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও। এমনটাই জানালেন মাইক্রোবায়োলজিস্ট সোসাইটি অব ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সভাপতি ড: স্বপ্না মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, আগে নানাবিধ সংক্রমণ যেমন টিবি, ধনুস্টঙ্কার, কলেরায় প্রচুর মানুষের মৃত্যু ঘটতো, এমনকী কম বয়সেই মারা যেত মানুষ। কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক আসার পরে সেই মৃত্যু হার অনেকটাই কমে গিয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়ে গিয়েছে মানুষের গড় আয়ু। কিন্তু আমরা কি জানি যে, প্রয়োজন ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বা ভুল ডোজের প্রয়োগ আমাদের কী ভয়ঙ্কর পরিণতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। রোগ নিরাময়ের বদলে শরীরে তৈরি করছে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (antibiotic resistance)। যার অর্থ, কোনো একটি বিশেষ অসুখের বিরূদ্ধে অ্যান্টিবায়োটিকের মারণক্ষমতা হ্রাস পাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া। অর্থাৎ, যে জীবাণুটি এই অ্যান্টিবায়োটিকে একসময় সংবেদনশীল ছিল (মানে ঔষধটি জীবাণুটিকে মেরে ফেলে রোগ নিরাময় করতে পারত), তার বিরুদ্ধে এটি এখন আর কাজ করতে পারবে না। আর যদি কোনও জীবাণু অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্টেন্ট হয়ে যায়, যাকে চলতি ভাষায় বলা হয় ড্রাগ রেজিস্টেন্ট হয়ে যাওয়া, তখন সেই জীবাণুর উপর সাধারণ কোনও অ্যান্টিবায়োটিক আর কাজ করতে পারবে না। ভয়ের কথা হল, জনসাধারণের মধ্যে বিনা প্রয়োজনে মুড়ি-মুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার প্রবণতা দিনের দিন বাড়ছে। ফলে এই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের বিপদ ত্বরান্বিত করছে। তা জেনেও যথেচ্ছভাবে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার হচ্ছে। এও দেখা যাচ্ছে ভুলভাল প্রেসক্রিপশনের ছড়াছড়ি। চিন্তিত বিশেষজ্ঞ মহল।

এছাড়াও গৃহপালিত পশুদের চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে আতঙ্কিত বিজ্ঞানী ও চিকিৎসক মহল। কারণ এটি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স ব্যাকটেরিয়া তৈরি হওয়ার পথ আরও সহজ করে তুলছে। যদি এখনই সচেতন না হওয়া যায়, কিংবা কোনও পদক্ষেপ না করা হয়, তা হলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ভারতে ড্রাগ রেজিস্ট্যান্স সংক্রমণে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ২০৫০ সালে বছরে ১০ লক্ষে গিয়ে ঠেকবে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য মহারাষ্ট্রের হাজার শয্যা বিশিষ্ট কস্তুরবা হাসপাতালের ডাক্তাররা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন,মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ‘সুপারবাগ’ সংক্রমণ নিয়ে। স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রখ্যাত মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে যে এই মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টেন্ট (Multi drug resistant) ‘সুপারবাগ’ (Superbug)-এর সংক্রমণের কারণে শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই বিশ্বব্যাপী দশ লক্ষের উপর মানুষের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকদের মতে “অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সে” যে দেশগুলি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ভারত তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রতি বছর প্রায় ৬০ হাজার নবজাতকের মৃত্যুর জন্য দায়ী শুধুমাত্র এই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণ৷ মুম্বাইয়ের কস্তুরবা হাসপাতালে করা পরীক্ষার ফল আরো বলছে, যে পাঁচটি প্রধান অ্যান্টিবায়োটিক, ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগজীবাণু মোকাবেলায় সবচেয়ে বেশি কার্যকর ছিল তাদের বিরুদ্ধেও গড়ে উঠেছে রেজিস্ট্যান্স। ফলে এইসব উন্নত ও কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিক (antibiotics) (ফার্স্ট এবং সেকেন্ড লাইন ড্রাগ) অকেজো হয়ে যাওয়ায় ডাক্তাররা রিজার্ভ গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। যেগুলি তুলনামূলকভাবে খুবই কড়া, দামী এবং রয়েছে নানান ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও। বিজ্ঞানীদের মতে সবচেয়ে প্যাথোজেনিক যে ব্যাকটেরিয়াগুলি এই দলে রয়েছে তাদের মধ্যে আছে E.coli (Escherichia coli), যা সাধারণত রোগাক্রান্ত মানুষ এবং প্রাণীর বৃহদন্ত্রে বা দূষিত মলে পাওয়া যায়; ক্লেবসিয়েলা নিউমোনিয়ায় (Klebsiella pneumonia), যা ফুসফুসে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটায় এবং মস্তিষ্কে মেনিনজাইটিস সৃষ্টি করতে পারে ; এছাড়া রয়েছে মারাত্মক ধরনের মেথিসিলিন রেজিস্টেন্ট (MRSA) ব্যাকটেরিয়া স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস (Staphylococcus aureus)। যা একটি খাদ্য-বাহিত ব্যাকটেরিয়া এবং এয়ার ড্রপলেটস বা এরোসলের মাধ্যমে সংক্রামিত হয়ে থাকে। উদ্বেগের বিষয় হল ওর এই সব প্যাথোজেনগুলি কোনো কোনো ক্ষেত্রে থার্ড জেনারেশন (খুবই আধুনিক) অ্যান্টিবায়োটিককেও প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়ে উঠছে। এদেরকেই আমরা বলছি সুপার রেজিস্টেন্ট ‘সুপারবাগ’।

সবচেয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে অ্যাসিনেটোব্যাক্টর (Acinetobacter baumannii) নামক মাল্টিড্রাগ রেজিস্টেন্ট সুপারবাগের আবির্ভাব। যা ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে লাইফ সাপোর্টে থাকা রোগীদের ফুসফুসকে আক্রমণ করে। কস্তুরবা হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ডাঃ এসপি কালান্তরির মতে “যেহেতু এই সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রায় কোনো রোগীই কড়া অ্যান্টিবায়োটিক সহ্য করতে পারে না, তাই তারা যখন আইসিইউতে ভেন্টিলেটর-বাহিত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয় তখন তাদের জীবনহানির ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়। বেশ কয়েক বছর ধরে, তিরিশটি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সংগ্রহ করা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স সংক্রান্ত তথ্যের ভিত্তিতে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (ICMR) যে নতুন প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে তাতে বলা হয়েছে যে, কার্বাপেনেমস (Carbapenems) নামক একটি শক্তিশালী শ্রেণীর অ্যান্টিবায়োটিক এবং থার্ড জেনারেশন আন্টিবায়োটিক সেফালোস্পোরিনস্ (Cephalosporins), যেগুলির সাহায্যে মাল্টি-ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়ার চিকিৎসা করা হয়ে থাকে। আবার কিছু ‘সুপারবাগ’ এই সব অ্যান্টিবায়োটিককেও প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়ে উঠেছে। গবেষক ও বিজ্ঞানী ডা. কামিনী ওয়ালিয়ার (Dr. Kamini Walia) মতে এটা নিয়ে এতটা চিন্তিত হওয়ার কারণ হল, এই ওষুধগুলি সেপসিস। একটি জীবনহানিকারক অবস্থা। চিকিৎসার আশঙ্কাপূর্ণ বিষয় হল অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের ঘটনা এখন বড় শহর ছাড়িয়ে গ্রাম ও ছোট শহরের রোগীদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত : নিউমোনিয়া এবং মুত্রনালীর সংক্রমণে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে। এরা অসুস্থ হয়ে যখন শহরে ডাক্তার দেখাতে আসেন তখন তাদের বেশিরভাগই সঙ্গে কোনো পুরোনো প্রেসক্রিপশন আনেন না বা পূর্ব ব্যবহৃত ওষুধগুলির নামও মনে করতে পারেন না, তাই ডাক্তারদের কাছে তাদের অ্যান্টিবায়োটিকের অতীত এক্সপোজারের কোনো রেকর্ড থাকেনা।

এই ধরনের রোগীদের চিকিৎসা করা ডাক্তারদের কাছে সবথেকে চ্যালেঞ্জিং। কিছু পরিস্থিতি এমনই জটিল হয়ে পড়ে যে তখন রোগীর চিকিৎসা করাই অসম্ভব হয়ে পড়ে। কলকাতার এএমআরআই (AMRI) হসপিটালের ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ শাস্বতী সিনহা বলেছেন, যে বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে তাদের আইসিইউতে প্রতি দশ জনের মধ্যে ৬ জন রোগীরই ওষুধ-প্রতিরোধকারী সংক্রমণ থাকছে। তিনি বলেন “আমরা এখন এমন একটি পর্যায়ে এসেছি যেখানে আমাদের হাতে এইসব রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুব বেশি বিকল্প নেই। ভেবে দেখুন তো, যে অ্যান্টিবায়োটিককে আমরা মিরাকল ওষুধ বলি সেই অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া পৃথিবীটা কেমন হবে? এক একটি অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার হতে যে সময় লাগে তার অনেক কম সময় লাগে রেজিস্ট্যান্স গড়ে উঠতে। অথচ আমরা একটু সচেতন হলেই এই ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারি। ভারতবর্ষে রেজিস্টেন্স গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ হিসেবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এখানকার অনেক ডাক্তার নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ, অ্যান্টিবায়োটিকগুলি ফ্লু বা সাধারণ সর্দির মতো ভাইরাল জ্বর নিরাময় করতে পারে না, তা জেনেও প্রায়শই প্রেসক্রাইব করা হয়। এমনকি ডেঙ্গু (একটি ভাইরাল সংক্রমণ) বা ম্যালেরিয়া (যা প্রোটোজোয়া (Protozoa) সৃষ্ট) কোনোটিতেই অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর না হওয়া সত্ত্বেও অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এতে ফল হয় হিতে বিপরীত। রোগ তো সারেই না বরং ওই অ্যান্টিবায়োটিগুলির কর্মক্ষমতা সীমিত হয়ে পড়ে। যেমনটি হয়েছে কোভিড -১৯ মহামারীর সময়। বিভিন্ন উপসর্গের হাত থেকে রেহাই পেতে রোগীদের যেমন যথেচ্ছ ভাবে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর। আইসিএমআর (ICMR) সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, গত ২০২১ সালে ভারতীয় হাসপাতালে ১৭,৫৩৪ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে যারা ড্রাগ-রেজিস্টেন্স সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছিলেন তাদের অর্ধেকেরও বেশি মারা গেছে।

আই সি এম আর এর সমীক্ষায় দেখা গেছে, ব্রড-স্পেকট্রাম অ্যান্টিবায়োটিকের যে ওষুধগুলি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং শুধুমাত্র দুরূহ ব্যাকটিরিয়াঘটিত রোগের জন্যেই প্রয়োগ করা উচিত, সেগুলিও আকছার প্রেসক্রাইব করা হয়। সত্যি বলতে কি, এর জন্যে ডাক্তারদের সম্পূর্ণ দোষ দেওয়াও যায় না। কারণ এই বৃহৎ, জনাকীর্ণ দেশের হাসপাতালগুলিতে অসংখ্য রোগীদের দেখে, তাদের অসুস্থতা নির্ণয় করে। ভাইরাল রোগকে ব্যাকটেরিয়ার থেকে বাছাই করে ওষুধ দেওয়া মোটেই সোজা কাজ নয়। তাছাড়া ডায়াগনস্টিকস পরীক্ষাগুলি (মল, মূত্র, রক্ত ইত্যাদি পরীক্ষা) ব্যয়বহুল হওয়ায় অনেক রোগী পরীক্ষা করাতেও পারেন না, তাই ডাক্তাররাও বাধ্য হয়ে পরীক্ষা না করিয়েই ব্রড স্পেকট্রাম ওষুধ লিখে দিচ্ছেন। অনেক ধনী ও শিক্ষিত রোগীরা তো আবার অসুস্থ হলেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করার জন্য ডাক্তারদের উপর চাপ দেন। এছাড়া হাসপাতালে থাকাকালীনও অনেক রোগী সংক্রামিত হন। হাসপাতালের দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি এবং স্যানিটেশনের অভাব পূরণের জন্য রোগীদের প্রায়ই অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে পাম্প করা হয়। সেটাও রেজিস্টেন্স তৈরি করতে সাহায্য করছে। তাই বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে সুপারবাগের ক্রমবর্ধমান হুমকি মোকাবেলা করতে গেলে ভারতকে কতকগুলি কড়া নিয়ন্ত্রণবিধি চালু করতে হবে। কী সেই কড়া নিয়ন্ত্রণবিধি? তা হল ডায়াগনস্টিক ল্যাবগুলিতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে যাতে সেগুলি সাধারণ মানুষের আয়ত্তাধীন হয়, সংক্রামক রোগের চিকিৎসকের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে, হাসপাতালের সংক্রমণ কমাতে হবে এবং পরীক্ষার ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের বিষয়ে ডাক্তারদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অন্যথায়, অ্যান্টিবায়োটিকের রেজিস্টেন্স অদূর ভবিষ্যতে একটি মহামারী আকার ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

ড: স্বপ্না মুখোপাধ্যায়

স্বপ্না মুখোপাধ্যায়ের মতে সেই সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার সম্বন্ধে কিছু সতর্কতা অবলম্বন অবশ্যই করতে হবে। প্রথমত, ভাইরাল জ্বর বা ভাইরাল ডায়রিয়ায় আগেই চট করে অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না। অপেক্ষা করুন। সমস্যা জটিল মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। তারপর ওষুধ খান। দ্বিতীয়ত, আগেরবার ডাক্তারবাবুর প্রেসক্রাইব করা অ্যান্টিবায়োটিক এবারও সর্দি-কাশিতে ডাক্তারের কাছে না গিয়েই দোকান থেকে কিনে খেয়ে ফেললেন। সেই ভুলটা করবেন না। তৃতীয়ত, রোগের উপসর্গ কমে গেলেও অ্যান্টিবায়োটিক ডোজ সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার আগে বন্ধ করবেন না। এতে সমস্যা হতে পারে। চতুর্থতঃ অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে অনেক সময় ডায়রিয়া, বমি বমি ভাব, অ্যালারজিক রিয়াক্সান হতে পারে। সাধারণত সব ওষুধেই এই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া মাঝপথে ওষুধ বন্ধ করবেন না। তাহলেই অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ‘সুপারবাগ’ মহামারী রক্ষা করা সম্ভব। বাঁচতে হলে নিয়ম মেনে চলতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন