ধরুন আপনি রেস্তোরাঁয় খেতে গেছেন, অর্ডার ও দিয়েছেন। খানিক বাদে এলো অন্য কোন খাবার, শুধু তাই নয় খাবার মুখে দিয়ে দেখলেন বিস্বাদ বা নুনে পোড়া। সেই মুহূর্তে আপনি কি করবেন? প্রচণ্ড রেগে যাবেন। তাইতো?
জানলে অবাক হবেন, জাপানের টোকিওতে অবস্থিত “দ্য রেস্তোরাঁ অফ অর্ডার মিসটেকস” এমনই একটি অনন্য পপ-আপ রেস্তোরাঁ আছে যেখানে প্রতিটি অর্ডারই ভুল সার্ভ করা হয় অথচ কোনও গ্রাহকই রেস্টুরেন্টের কর্মীদের ওপর চিৎকার-চেঁচামিচি করে না। নির্দেশিত সঠিক খাবারের মূল্য প্রদান করেন। ভাবছেন কেন?
কারণ এই রেস্তোরাঁয় ডিমেনশিয়ায় (Dementia) আক্রান্ত ওয়েটারদের নিয়োগ করা হয়৷ এখানকার গ্রাহকরা এই ভুলের জন্য বিরক্ততো হয়ই না বরং হাসিমুখে খাবারের গুণগান করে। এই ধরনের মহৎ উদ্যোগের পিছনে ধারণাটি হল সাহচর্য। অ্যালজাইমার্স (Alzheimer) রোগীদের মেডিসিনের সঙ্গে দরকার আপনার সচেতনতা ও সংবেদনশীলতা। মানুষকে বোঝানো যে অ্যালজাইমার্স আক্রান্ত মানুষের ভুল করা খুবই স্বাভাবিক।
সমীক্ষা বলছে, ডিমেনশিয়ার উপসর্গযুক্ত প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষই অ্যালজাইমার্স রোগের শিকার। অথচ, এই রোগ নিয়ে সচেতনতাই নেই সাধারণ মানুষের মধ্যে। পাশ্চাত্য দেশগুলিতে এই রোগের উপযুক্ত পরিচর্যার কাজে পর্যাপ্ত সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সহায়তার ব্যবস্থা আছে। এই ব্যাপারে আমাদের দেশ এখনও কিন্তু অনেকটাই পিছিয়ে।
মানুষের জ্ঞানবৃত্তির এবং মস্তিষ্কের আশ্চর্য ক্ষমতার এক বিশেষ প্রকাশ হলো স্মৃতি। তার চিত্তবৃত্তির, আত্মো উপলব্ধির, আবেগের ও যোগাযোগের প্রকাণ্ড আধার এই স্মৃতি শক্তি। অভিশপ্ত অ্যালজাইমার্স রোগের কারনে সেই স্মৃতিকে সে হারিয়ে ফেলে। অ্যালজাইমার্স মানুষের অস্তিত্বের অন্তরতম প্রদেশে এমনভাবে আঘাত হানে যে অসাধারণ মেধাসম্পন্ন মানুষটির বোধ শক্তিও সম্পূর্নভাবে বিপর্যস্ত হতে পারে। অ্যালজাইমার্স এ আক্রান্ত হয়েছেন বুঝবেন কি ভাবে!
যেমন ধরুন, রাস্তায় হঠাৎই ছোটো বেলার বন্ধুর সঙ্গে দেখা। নাম মনে করা দূরের কথা, চিনতেই পারলন না। কিম্বা ‘বইপোকা’ বলে পরিচিত মানুষটি একেবারেই বই পড়তে চাইছেন না, মুখস্থ করে গেলেন বাজারে কি কি আনতে হবে, মনেই পড়লো না বা আপনার একই প্রশ্নের উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত পরিবারের সকল। সাবধান হোন। অবহেলা না করে, চিকিৎসকের পরামর্শ নিন শীঘ্রই।
প্রবীণ নাগরিকদের প্রায় ৩.৭ শতাংশ এতে ভোগেন, যার মধ্যে ৪৬,০০০ মানুষ শুধু বেঙ্গালুরুতে এবং ৬.১ মিলিয়ন ভারতে। ডিমেনশিয়া ইন্ডিয়ার রিপোর্ট অনুসারে, ২০৫০ সালের মধ্যে এটি তিনগুণ হবে বলে আশা করা হচ্ছে কারণ ষাটোর্ধ্ব বয়সী মানুষ মোট জনসংখ্যার ১৯.১ শতাংশ।
ডিমেনশিয়া ইন ইন্ডিয়া (Dementia in India) ২০২০ রিপোর্ট ৩৬ অনুসারে ২০২০ সালে আনুমানিক ৫.৩ মিলিয়ন ৬০ বছর বয়সী ভারতীয় মানুষের ডিমেনশিয়া ছিল এবং এই সংখ্যা ২০৫০ সালের মধ্যে ১৪ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে বলে অনুমান করা হয়েছে।
নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে যে করোনা আক্রান্ত বয়স্কদের আলঝাইমারের প্রবণতা বেড়েছে। বয়স্কদের মধ্যে আবার আশি ঊর্ধ্বদের এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আর, তিনি যদি মহিলা হন, তবে আরও বেশি সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন গবেষকরা।
এই রোগ ঠেকাতে নিয়মিত শরীরচর্চা, ধূমপান বন্ধ করা, উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। খাদ্যের মধ্যে টাটকা সবজি এবং ফল, আস্ত শস্যদানা, জলপাই (অলিভ) তেল; বাদাম, মাছ মাঝারি পরিমাণে, মুরগির ডিম এবং দুগ্ধজাত খাবার; মাঝারি পরিমাণে লাল ওয়াইন এবং লাল মাংস অল্প পরিমাণে খাওয়া দরকার।
অ্যালজাইমারে আক্রান্ত মানুষকে দেখাশোনা অনেক ক্ষেত্রেই চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। আক্রান্ত ব্যক্তি খিটখিটে, বিভ্রান্ত হয়ে উঠতে পারে। এই সময়ে ভালবাসা, সাহচর্য, ধৈর্যর মানসিকতা নিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গ দিন। বলা হয় অ্যালজাইমারে আক্রান্ত মানুষদের বিদেশী ভাষা শেখানো, বাদ্যযন্ত্র বাজানো, আপনার লোকাল স্বেচ্ছাসেবক সংস্থায় দলগত খেলায় অংশ নেওয়া, যেমন বোলিং…, নতুন কার্যকলাপ, “মস্তিষ্কের প্রশিক্ষণ” কম্পিউটার গেমগুলি খেলা, দাবা খেলা, বই পড়া, গান গাওয়া, বাগান করা… এইসব হস্তক্ষেপগুলি অল্প সময়ের মধ্যে জ্ঞানের উন্নতি করতে সাহায্য করে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, মনুষ্যত্বের প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলে স্বীকার করা যায় না। যত বড়, যত কঠিন সমস্যা হোক না কেন মানুষ তার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করছে। এবং পরিণামে সফলও হয়েছে।
অ্যালজাইমার্স রোগের প্রতিকারে সারা বিশ্বে গবেষণা চলছে। একদিন নিশ্চয়ই সফলতা আসবে। যতদিন না সেই লক্ষ্যে পৌঁছন যাচ্ছে, সেই মধ্যবর্তি সময়ে মেডিসিন ও উপযুক্ত পরিচর্যার মাধ্যমই হলো এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রধান অস্ত্র।
২১ শে সেপ্টেম্বর সারা পৃথিবী জুড়ে পালিত হচ্ছে বিশ্ব অ্যালজাইমার্স দিবস। আশা করা যায় যে, এই রোগের বিরুদ্ধে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শামিল হবে সমাজ ও পরিবারের সকল স্তরের মানুষ। যাতে এই রোগ সম্বন্ধে সচেতনতাবোধ পৌঁছে যাবে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও।।
Source : Various sources have been referred to for information.
অসাধারণ তথ্য সমৃদ্ধ লেখনী
অনেক ধন্যবাদ 🌹🌹
Khub bhalo
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই ❤️
সুন্দর লেখা, অনেককিছু জানা গেলো
চমৎকার সুন্দর প্রতিবেদন”স্মৃতি থেকে মুছে যাওয়া সুন্দর মুহূর্তগুলো” খুব ভালোলাগা মুগ্ধতা