মঙ্গলবার | ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | সন্ধ্যা ৬:২১
Logo
এই মুহূর্তে ::
স্মরণে মননে জন্মদিনে হেমন্ত মুখোপাধ্যায় : রিঙ্কি সামন্ত হুগলি জেলায় কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প মুখ থুবড়ে পড়ছে : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় খালিয়াজুরি মৌজার প্রাচীন ইমারত : ফারুকুর রহমান চৌধুরী দুর্দৈবপীড়িত রবীন্দ্রনাথ : দিলীপ মজুমদার শান্তি সভ্যতার গুণ, যুদ্ধ তার অপরাধ … ভিক্টর হুগো : অশোক মজুমদার হরপ্পার ব্যুৎপত্তি নিয়ে নতুন আলোকপাত : অসিত দাস বল পয়েন্ট কলমের জার্নির জার্নাল : রিঙ্কি সামন্ত মহেঞ্জোদারো নামের নতুন ব্যুৎপত্তি : অসিত দাস পরিসংখ্যানে দারিদ্রতা কমলেও পুষ্টি বা খাদ্য সংকট কি কমেছে : তপন মল্লিক চৌধুরী অথ স্নান কথা : নন্দিনী অধিকারী তন্ত্র বিদ্যার বিশ্ববিদ্যালয় চৌষট্টি যোগিনীর মন্দির : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মেসোপটেমিয়া ও সিন্ধুসভ্যতার ভাষায় ও স্থাননামে দ্রাবিড়চিহ্ন : অসিত দাস ধরনীর ধুলি হোক চন্দন : শৌনক দত্ত সিন্ধুসভ্যতার ভাষা মেসোপটেমিয়ার ব্যাবিলনের রাজা হামুরাবির নামে : অসিত দাস বিস্মৃতপ্রায় জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় ভাষায় সিন্ধুসভ্যতার মেলুহার ভাষার প্রভাব : অসিত দাস বঙ্গতনয়াদের সাইক্লিস্ট হওয়ার ইতিহাস : রিঙ্কি সামন্ত নন্দিনী অধিকারী-র ছোটগল্প ‘ঝড়ের পরে’ ভালো থাকার পাসওয়ার্ড (শেষ পর্ব) : বিদিশা বসু গাছে গাছে সিঁদুর ফলে : দিলীপ মজুমদার ভালো থাকার পাসওয়ার্ড : বিদিশা বসু সলিমুল্লাহ খানের — ঠাকুরের মাৎস্যন্যায় : ভাষা-শিক্ষায় সাম্প্রদায়িকতা : মিল্টন বিশ্বাস নেহরুর অনুপস্থিতিতে প্যাটেল, শ্যামাপ্রসাদও ৩৭০ অনুমোদন করেছিলেন : তপন মল্লিক চৌধুরী সিঁদুরের ইতিকথা আর কোন এক গাঁয়ের বধূর দারুণ মর্মব্যথা : দিলীপ মজুমদার সাহিত্যিকদের সংস্কার বা বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী জ্যৈষ্ঠ মাসের শুক্লপক্ষে শ্রীপাণ্ডবা বা নির্জলা একাদশীর মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত দশহরার ব্যুৎপত্তি ও মনসাপূজা : অসিত দাস মেনকার জামাই ও জামাইষষ্ঠী : শৌনক ঠাকুর বিদেশী সাহিত্যিকদের সংস্কার ও বাতিক : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী ভক্তের ভগবান যখন জামাই (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই প্রভু জগন্নাথদেবের শুভ স্নানযাত্রার আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ : আগমনেই আবির্ভাব : স্বপনকুমার মণ্ডল

স্বপনকুমার মণ্ডল / ৮৪১ জন পড়েছেন
আপডেট শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০২২

ইতিহাসের সঙ্গে উপন্যাসের নিবিড়তা নানাভাবেই প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে। সেখানে উপন্যাসের বিস্তৃত পরিসরে সময়ের অনুবাদ অত্যন্ত স্বাভাবিক। আধুনিক জীবনের বহুমুখী বিস্তার ও রূপান্তর উপন্যাসের শিল্পরূপের মধ্যে প্রথমাবধি মূর্ত হয়ে চলেছে। সেই মূর্তি তার আবেদনে কখনও মাইলফলকে পরিণত হয়েছে, কখনও আবার তা তীব্র আবেদনে প্রতিমা হয়ে উঠেছে। বস্তুবিশ্ব থেকে মননবিশ্বে তার বিস্তার লক্ষণীয়। বিশ শতকে উপন্যাসের বহুমাত্রিক চলনে ব্যক্তিচৈতন্য থেকে সমাজমনস্কতায় তার বিচিত্রবিহারী প্রকৃতি বর্তমান। সেখানে ব্যক্তিমানসের আত্মানুসন্ধান থেকে আত্মাবিষ্কারে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের উপস্থিতি যেভাবে প্রকট হয়ে উঠেছে, সেভাবে তার সামাজিক অস্তিত্বের পরিচয় শিথিল হয়ে পড়েছে। সেদিক থেকে উপন্যাসের ব্যক্তিজীবনের প্রতি যেভাবে আধুনিক জীবনের ছায়া ক্রমশ কায়ায় বিস্তার লাভ করেছে, সেভাবে সমাজমানসের বহুমাত্রিক পরিচয় নিবিড়তা লাভ করেনি। সমাজবিচ্ছিন্ন মানুষের উত্তরণে ব্যক্তিমানসের পরিচয়ের প্রতি উপন্যাসের অভিমুখই সেক্ষেত্রে তার সামাজিক অবস্থানের প্রতি বিমুখ করে তোলে। সেখানে আধুনিক জীবনে স্বাধীন জীবনের কথায় সমাজের বন্ধনকে উপেক্ষা করতে গিয়ে অস্বীকার করার প্রবণতায় স্বাভাবিক ভাবেই তার প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টির বড় অভাব দেখা দেয়। বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রেও তার পরিচয় নানাভাবেই প্রকাশমুখর। বিশ শতকের বাংলা উপন্যাসে চারিত্রিক উত্তরণের বৈচিত্র্য যেভাবে ক্রমশ আন্তরিক হয়ে উঠেছে, বৈষম্যপীড়িত সমাজবাস্তবতার পরিচয় সেভাবে অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। তার ফলে উপন্যাসের সঙ্গে সমাজমানসে ইতিহাস ক্রমশ নিবিড়তা হারিয়েছে। সময়ের অনুবাদে যেভাবে ব্যক্তির উত্তরণের দিশায় তীব্র আবেদনক্ষম হয়ে উঠেছে, সেভাবে তার সমাজের বিবর্তনের ধারা প্রবাহিত হয়নি। অথচ গতিশীল সময়ের স্রোতে সেই সামাজিক বিবর্তনকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যায় না। তাহলে তার অনুবাদের আবেদন আন্তরিক হতে পারে না। সেই গতিশীল সময়ের ক্যানভাসে বাংলাদেশের উপন্যাসের ধারায় আখতারুজ্জমান ইলিয়াসের(১৯৪৩-১৯৯৭) ‘চিলেকোঠার সেপাই’ (১৯৮৬) একটি অভিনব উপন্যাস। সেখানে ব্যক্তিমানসের উত্তরণের স্বরূপ যেমন উন্মোচিত হয়েছে, তেমনই সেইসঙ্গে সমাজমানসের বহুমাত্রিক বিবর্তনও অপূর্ব শিল্পসুষমা লাভ করেছে। ইতিপূর্বের উপন্যাসে যার অভাব স্বভাব হয়ে উঠেছিল, এই উপন্যাসে তাই নতুন করে ভাবনার খোরাক করে তোলে। বাংলা উপন্যাসের ধারায় উপন্যাসটির আবেদন তাই অভিনব সংযোজন হয়ে ওঠে। এজন্য প্রথমে উপন্যাসটির আবেদন সম্পর্কে আলোচনা করা জরুরি।

সাতচল্লিশের দ্বিখণ্ডিত স্বাধীনতায় দেশভাগের শিকার হয়ে ওপার বাংলার মুক্তিকামী মানুষের সংগ্রামী প্রয়াস নানাভাবে ছড়িয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনের সাফল্য থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম তাই অপ্রত্যাশিত ছিল না। সময়ের সঙ্গে দমনপীড়ন যত বেড়েছে, ততই তার স্বাধীনতার দাবি মূর্ত হয়ে উঠেছে। আর তাই দ্বিতীয় স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল সময়ের অপেক্ষা। পাকিস্তানের সামরিক শাসক আয়ুব খানের দশ বছরের (১৯৫৮-১৯৬৮) শাসনকালে পূর্ব পাকিস্তানে শোষণ-শাসনে ক্রমশ যত নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা নেমে আসে, ততই তার প্রতিবাদে স্বাধীনতার স্বপ্ন বাস্তবমুখী হয়ে থাকে। ১৯৬৬-র ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে বিরোধী দলের জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লিগের জনপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবর রহমান যে ‘ছয় দফা’ দাবি পেশ করেন তার মধ্যেই ওপার বাংলার স্বাধীনতার স্বপ্ন জেগে ওঠে। কেন্দ্রীয় সরকারের আধিপত্যকে বিরত করে প্রাদেশিক সরকারের ক্ষমতাবৃদ্ধির প্রস্তাব স্বাভাবিক ভাবেই পাকিস্তান সরকার নাকচ করে দেয়। অথচ সেই ‘ছয় দফা’র মধ্যে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন জেগে ছিল,তা শেখ মুজিবর কথাতেই আন্তরিক হয়ে ওঠে। তাঁর ভাষায় সেই দাবি ছিল, ‘আমাদের বাঁচার দাবী’। সেই দাবির সমর্থনে পূর্ব পাকিস্তানে জনমত গড়ে তুলতে গিয়ে ১৯৬৬ থেকে শেখ মুজিব বছর দেড়েক কারাবন্দি থেকে মুক্তি পাওয়ার পর আবার দাবি আদায়ে সক্রিয় হয়ে উঠলে ১৯৬৮-এর ৩ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকার তাঁর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের করে যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে প্রচার লাভ করে। তাতে শেখ মুজিবসহ পয়ত্রিশ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছিল। সেই মামলার বিরুদ্ধে তীব্র জনমত গড়ে ওঠে ও প্রতিবাদী আন্দোলন সক্রিয়তা লাভ করে। ১৮ জানুয়ারি শেখ মুজিবর রহমান গ্রেফতার হলে ক্রমশ সেই আন্দোলন ওপার বাংলাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর মুক্তিকে কেন্দ্র করেই সেই আন্দোলন গণ-আন্দোলনের রূপ লাভ করে যা অচিরেই ১৯৬৯-র প্রথম থেকেই গণঅভ্যুত্থানে পরিণত হয়। সেবছরের সূচনায় সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদে’র ‘এগারো দফা’ দাবির মধ্যে পূর্বের ‘ছয় দফা’ তো ছিলই, সঙ্গে ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক ও রাজনৈতিক কর্মীর নানা দাবিদাওয়াও সংযুক্ত হয়। সেক্ষেত্রে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার প্রতিবাদে ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিকে সামনে রেখে যে আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে ক্রমশ আমজনতার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে,তা অচিরেই সরকারের নির্মম ও নিষ্ঠূর অমানবিক প্রতিরোধে আরও বেপরোয়া প্রকৃতি লাভ করে। তারই চূড়ান্ত পরিণতি গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে প্রকট হয়ে ওঠে। শেষে পাকিস্তান সরকার বাধ্য হয়ে অনতিবিলম্বে শেখ মুজিবকে মুক্তি দেয় এবং ১৯৬৯-এর ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্সের ঐতিহাসিক ভাষণে তাঁর বঙ্গবন্ধু হয়ে ওঠার ইতিহাস রচিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণের উত্তাল গণআন্দোলনের আবহে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এর সূচনা এবং গণঅভ্যুত্থানের ব্যর্থতার প্রবাহে তার সমাপ্তির মধ্যে সময়ের স্রোতকে অভিনব ভাবে অথচ বিশ্বস্ত করে তুলে ধরার প্রয়াসেই উপন্যাসের আবেদন নিবিড় হয়ে ওঠে।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সেই গণঅভ্যুত্থানে সক্রিয় ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা লাভ করলেও তা নিয়ে সাময়িক দূরত্ব বজায় রেখে তাঁর গভীর অধ্যাবসায়ের মাধ্যমে উপন্যাস রচনায় ব্রতী হয়েছেন। সেখানে তাঁর লক্ষ্যভেদী অর্জুনের দৃষ্টিতে উপন্যাসটি নিয়ে দীর্ঘকাল ভাবনাচিন্তা করতে হয়েছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯৬৯-এর মার্চে লিটল ম্যাগাজিন ‘আসন্ন’তে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠায়’ নামে একটি গল্প প্রকাশিত হয়। ১৯৭৫-এ দৈনিক ‘সংবাদ’-এর সাহিত্যের পাতার ‘চিলেকোঠায়’ নামে উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে বেরোতে শুরু করে। আবার ১৯৮১-এর জানুয়ারিতে সাপ্তাহিক ‘রোববার’ পত্রিকায় উপন্যাসটি ‘চিলেকোঠার সেপাই’ নামে ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়ে ১৯৮৩-এর জানুয়ারিতে তা শেষ হয়ে যায়। তারও বছরতিনেক পরে ১৯৮৬-তে উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত বলে পরিচিতি পেলেও সময়ের দিক থেকে উপন্যাসটির সূচনা হয়েছে ১৯৬৮-এর ডিসেম্বর থেকে। উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদেই মাওপন্থী ন্যাপ-এর নেতা মৌলানা ভাসানীর আহবানের পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে্ হরতাল প্রতিরোধে পাকিস্তান সরকারের পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আকস্মিক উত্তেজনামুখর পরিসর বর্তমান। শুধু তাই নয়, উপন্যাসের আধারে বাঙালির অস্তিত্বের প্রবাহে অতীতে ফিরে দেখার অবকাশের মাধ্যমে স্বাভাবিক ভাবেই যোগসূত্রকে অবিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। সেখানে উপন্যাসের সূচনা বাক্যেই তথা রহমতউল্লার চিলেকোঠাবাসী ওসমান গ্ণির স্বপ্নদেখার শুরুতেই সাতচল্লিশের দেশভাগের ট্রাজিক পরিণতি ভেসে উঠেছে, ‘তোমার রঞ্জু পড়ি রইলো বিভুঁয়ে, একবার চোখের দ্যাখাটাও দেখতি পাল্লে না গো !’ শুধু তাই নয়, যেভাবে ঔপন্যাসিক মাসতিনেকের (১৯৬৮-এর ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৯-এর ফেব্রুয়ারি) ঘটনাস্রোতের মধ্যে গণআন্দোলন থেকে গণঅভ্যুত্থানের পরিচয়কে নিবিড় করে তুলে ধরেছেন, তাতে স্বাভাবিক ভাবেই ফ্লাসব্যাকে ফিরে দেখার অবকাশে খণ্ডিত স্বাধীনতায় দেশভাগোত্তর পরিসরে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিজীবনের অসহনীয় দুরবস্থার কথা ফিরে ফিরে এসেছে। সেখানে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের দৃষ্টি শুধু সামনের দিকে এগিয়ে চলেনি, তাঁর অন্তর্দৃষ্টি পিছনে ফিরে গিয়েছে। এই দেখা ও দেখানোয় ঔপন্যাসিকের অনন্যতাই উপন্যাসটির অভিনব প্রকাশে পালাবদলের আকাশ হয়ে উঠেছে।

উপন্যাসের ছকবন্দি ধারণায় আধুনিক মানুষের জীবনজিজ্ঞাসা যতই মূর্ত হয়ে উঠুক, তার বিনোদনী পাঠকে উপেক্ষা করা যায়নি। সেখানে ইতিহাসের চিত্তাকর্ষক কাহিনি ও তার বীরত্বব্যঞ্জক চরিত্রের পরিচয় থেকে অবৈধ প্রণয় সবেতেই সেই বিনোদনী পাঠ প্রকট হয়ে ওঠে। উনিশ শতকেই বাইরের জগৎ ছেড়ে যখন তার বিষয় মনের জগতে প্রবেশ করে,সেখানেও তার শিল্পরূপে উত্তরণের হাতছানি নানাভাবে মানসিক তৃপ্তির খোরাক হয়ে ওঠে। বিশ শতকেও সেই ধারা আরও পরিণতি লাভ করে। শুধু তাই নয়, তাতে মননবিশ্বই তার আশ্রয় হয়ে ওঠে। অথচ তাতেও তার শিল্পিত রূপে পরিশীলিত হাতছানিতে ইচ্ছে-অনিচ্ছের একমুখী চলনে নিজেকে খুঁজে পাওয়ার অবকাশ বর্তমান। সেক্ষেত্রে ব্যক্তিমানসের উত্তরণের প্রয়াস যেভাবে উপন্যাসের মধ্যে আলো হয়ে ওঠে, তেমনই তার ছায়ায় সমাজমানসের পরিচয় আড়ালে চলে যায়। বাংলা উপন্যাসের মধ্যেই তার পরিচয় নিবিড় হয়ে ওঠে। তাতে উপন্যাসের সূচনাপর্ব থেকে সাধারণ মানুষের যোগ অত্যন্ত ক্ষীণ। উদ্দেশ্যমূলকতায় দৃষ্টিনিবদ্ধ করতে গিয়ে তার শিল্পরূপে সমাজমানসের খণ্ডিত চিত্রেই বাস্তবতার অপূর্ণ পরিচয় স্বাভাবিকতা লাভ করেছে। সামাজিক জীবনের চেয়ে দেশের ইতিহাসের চিত্তাকর্ষক ঘটনা, বীরত্বব্যঞ্জক ও মহিমান্বিত চরিত্রই সেখানে আবেদনক্ষম হয়ে উঠেছে। আসলে যেখানে সমাজের দাসত্বমুক্ত হয়ে ব্যক্তিস্বাধীনতায় উত্তরণ প্রয়াসী মানুষের একেঅপরকে জানার অবকাশে যে উপন্যাসের শিল্পরূপ আবেদনক্ষম হয়ে উঠেছিল, স্বাভাবিক ভাবেই তাতে সমাজমানসের পরিচয়ে ঔপন্যাসিকের দৃষ্টিভঙ্গির রক্ষণশীলতা, সংস্কারাচ্ছন্নতা ও সীমাবদ্ধতা এবং একদেশদর্শিতা অত্যন্ত স্বাভাবিক। অন্যদিকে সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়ে তোলার ধারণাও সেক্ষেত্রে পরিপন্থী মনে হয়। অন্যদিকে মতাদর্শভিন্নতায় সেই সমাজের বাস্তব চিত্রও অধরা মাধুরী। সেদিক থেকে বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে সমাজ পরিবর্তনের নিখুঁত বাস্তবায়ন দুর্ল্ভ হয়ে ওঠে। গাছের মূল উপড়াতে গিয়ে তার কাণ্ড ধরে টানতে গিয়ে মূলই ছিঁড়ে যায়। তাতে গাছের অদেখা অংশ অজানা থাকে, মূলের ধারণাও অজ্ঞাত থেকে যায়। উপন্যাসের সমাজবাস্তবতাও সেভাবে মূলের পরিচয়ের অভাব নানাভাবেই অনুভূত হয়। বিশেষ করে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের প্রতি উদাসীনতা বা উপেক্ষা স্বাভাবিকতা লাভ করে। অন্যদিকে বাংলা উপন্যাসের ক্ষেত্রে ইউরোপীয় উপন্যাসের মতো ব্যক্তিত্বের পরিচয়ও সুল্ভ নয়। আবার সেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যও ব্যক্তিসর্বস্ব হয়ে ওঠে। বাংলা উপন্যাসে সেই ব্যক্তিসর্বস্বতার অনুকরণও লক্ষণীয়। সেখানে সামাজিক মানুষের ব্যক্তিত্বের অভাব অত্যন্ত প্রকট। সেবিষয়ে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস অত্যন্ত সচেতনই ছিলেন না, প্রকট ভাবে তা প্রকাশও করেছেন।

উপন্যাস বিষয়ে আখতারুজ্জামানের স্বচ্ছ ধারণাই তাঁকে গতানুগতিক উপন্যাস রচনা থেকে বিরত করেছিল। সেখানে ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এর বছরদশেক পরে তাঁর ‘খোয়াবনামা’(১৯৯৬) উপন্যাসটি প্রকাশিত হয় এবং আনন্দ পুরস্কার লাভ করে। ‘লেখকের দায়’ (‘আনন্দবাজার পত্রিকা’, ২৮ এপ্রিল ১৯৯৬)) নিবন্ধে পুরস্কার প্রসঙ্গে তিনি সেকথাই স্মরণ করিয়ে লিখেছেন : ‘আমাদের এই উপমহাদেশের ব্যক্তির বিকাশ প্রথম থেকেই বাধা পেয়ে এসেছে। এখানে ব্যক্তিপ্রবরটি জন্ম থেকেই পঙ্গু ও দুর্বল। পাশ্চাত্যের সর্বত্রই যেহেতু ব্যক্তিসর্বস্বতার জয়গান, আমাদের এখানেও তাই জন্মরোগা ব্যক্তিটির দিকেই আমাদের লেখকদের অকুণ্ঠ মনোযোগ। বাংলা উপন্যাসে প্রথমে এই রুগ্ণ ব্যক্তির শরীরে একটু তেজ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সেই নকল তেজ তাকে শক্তি জোগাতে পারেনি। কেবল তা-ই নয়, বাংলা সাহিত্যের প্রথম সফল উপন্যাসগুলোয় বরং দেশের কুসংস্কার ও ধর্মান্ধতাকে প্রতিষ্ঠিত মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের মর্যাদাই দেওয়া হয়। অথচ অন্যান্য সাহিত্যের উপন্যাসে তখন প্রচলিত সংস্কার, মূল্যবোধ ও বিশ্বাসকে অবিরাম আঘাত করা হয়েছে।‘ শুধু তাই নয়, বাংলা উপন্যাসে সেই ‘জন্মরোগা ব্যক্তিটির’ প্রতি সম্যক দৃষ্টি প্রদান করা জরুরির কথাও আখতারুজ্জামান স্পষ্ট ভাষায় তার অব্যবহিত অনুচ্ছেদেই জানিয়ে দিয়েছেন : ‘ঔপনিবেশিক শক্তির উপহার এই খঞ্জ ব্যক্তিটিই হয়ে ওঠে লেখকদের আদরের ধন। তাকে নানা ভাবে তোয়াজ করাই আমাদের ঔপন্যাসিকদের আসল কাজ। দেশের অসংখ্য শ্রমজীবি মানুষের স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গ এবং আবার স্বপ্ন দেখার অসীম শক্তি আমাদের চোখে পড়ে না। এজন্য শ্রমজীবী, নিম্নবিত্ত মানুষকে নিয়ে যখন লিখি তখনও পাকেপ্রকারে তার মধ্যে ঢুকিয়ে দেই মধ্যবিত্তকে এবং শক্তসামর্থ্য, জীবন্ত মানুষগুলোকে পানসে ও রক্তশূন্য করে তৈরি করি।‘ সেক্ষেত্রে আখতারুজ্জামানের উপন্যাস ভাবনাই তাঁর উপন্যাসকে অভিনবত্বে স্বতন্ত্র করে তুলেছে। তিনি বামপন্থী মনস্ক হলেও তাঁর মধ্যে মার্ক্সবাদী সাহিত্যাদর্শ সক্রিয় হয়ে ওঠেনি। সেখানেও তাঁর স্বীয় আদর্শ অবিচল ছিল। তার প্রতিফলন তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এর মধ্যেই প্রতীয়মান। সেখানে তিনি আরোপিত সাহিত্যাদর্শকে সচেতন ভাবেই অস্বীকার করেছেন। সাক্ষাৎকারের (শাহাদুজ্জামান গৃহীত সাক্ষাৎকার চট্টগ্রামের ‘লিরিক’ পত্রিকায় বিশেষ উপন্যাস সংখ্যায়(এপ্রিল ১৯৯২) প্রকাশিত হয়।) মাধ্যমে সেকথা নানাভাবে তূলে ধরেছেন ঔপন্যাসিক। Reality দেখাতে গিয়ে তিনি তার ভেতরটা দেখাতে চেয়েছেন। সেখানে Idea চাপাতে চাননি। তাঁর মতে সেটা হবে wrongful thinking সেক্ষেত্রে শ্রমিককে মহৎ বানালে তাকে disown ও Refuse করা হয় বলে তাঁর ধারণা। শুধু তাই নয়, সমাজকে দেখাতে গেলে তাঁর স্পষ্ট অভিমত, You must live in it. অন্যদিকে যৌনতা বিষয়েও তাঁর আত্মসচেতনতা অত্যন্ত সংবেদনশীল। তাঁর মতে, Sex নিয়ে সাহিত্য করা Risky। সেক্ষেত্রে Sexকে Glorify না করে তার পিছনে living-classকে, তার society দেখাতে চেয়েছেন তিনি। সেদিক থেকে আখতারুজ্জামানের স্বীয় সাহিত্যভাবনাই তাঁর সাফল্যের চাবিকাঠি হয়ে উঠেছে।

সাহিত্যে বিষয়ের চেয়ে দেখানোর কৌশল অধিক গুরুত্ব পূর্ণ। কেননা দেখানোর মধ্যেই বিষয়ের বাস্তবতা বিশ্বাসযোগ্যতা লাভ করে, তার আবেদন গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে। সেক্ষেত্রে লেখকের দেখার আধারে দেখানোর অন্তর্দৃষ্টি নানাভাবে বিস্তার লাভ করে। ইতিহাসের প্রামাণ্য গণ্ডি অতিক্রম করে তার পরিসর লোকের মধ্যে প্রচলিত কিংবদন্তি, রূপকথা, অলোকিক বিশ্বাস ও সংস্কার প্রভৃতিতে ছড়িয়ে পড়ে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এ সেভাবেই অন্তেবাসী মানুষের আকাঁড়া জীবনকে তূলে ধরেছেন। তাতে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য মানুষের জীবনসংগ্রামকে তুচ্ছ করে দেখেননি, বরং সেই স্বাধীনতার পর দেশের আমজনতার শোষণ-শাসনের অপরিবর্তিত প্রকৃতির কথাও নানাভাবে তূলে ধরেছেন। সেখানে শহরের সঙ্গে শহরতলী, ঘিঞ্জি বস্তি থেকে গ্রামগঞ্জের আকাঁড়া জীবনসংগ্রামের বাস্তবচিত্র উঠে এসেছে। রুশবিপ্লবোত্তর পরিসরে বাংলা কবিতায় প্রেমেন্দ্র মিত্র যেভাবে ‘প্রথমা’ (১৯৩২) কাব্যের ‘মানে’ কবিতায় রক্ত-মাংস, হাড়-মেদ-মজ্জা, ক্ষুধা-তৃষ্ণা, লোভ-কাম-হিংসাসহ গোটা মানুষের মানে চেয়েছিলেন, ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এ সেভাবেই তার পরিচয়ের প্রয়াস বর্তমান। শ্রম-ঘাম-পুঁজ নিয়েই আখতারুজ্জামান তাঁর সৃষ্ট চরিত্রগুলোকে রূপদান করেছেন। সেখানে নায়কের প্রাধান্য নেই, নেই ইতিহাসের প্রতি দায়বদ্ধতার ভাণ, রয়েছে জনগণের জীবনসংগ্রামের মধ্যে বেঁচে থাকার বিশ্বস্ত যাপনচিত্র, সহানুভূতির পরিবর্তে সমানুভূতির বৈষম্যহীনতা। অথচ তাতে নির্মোহ, নিরাসক্ত ও নিরাবেগ প্রকাশ। সেক্ষেত্রে ওপার বাংলায় সুদীর্ঘকাল পরে তথা ১৯৬২-তে শহীদুল্লাহ কায়সারের ‘সারেং বৌ’-এর চব্বিশ বছর পরে ‘চিলেকোঠার সেপাই’কে নিয়ে বিপুল উৎসাহ বা চর্চার নেপথ্যে শুধু তার অভিনব উপস্থাপনাকে চিহ্নিত করলে ভুল হবে। আসলে উপন্যাসটির মধ্যে পাঠক নিজেদের খুঁজে পেয়েছিল, সুধী সমাজও আত্মসমীক্ষার অবকাশে নতুন দিশায় জেগে উঠেছিল। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পূর্ব পাকিস্তানের শোষিত-শাসিত মুক্তিকামী বাঙালিমানসকে উজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে অসংখ্য উপন্যাস লেখা হয়েছিল। আবার ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধই অন্যতম প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে। শুধু তাই নয়, সে দেশের উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধের প্রবাহ সুদূর প্রসারী বিস্তার লাভ করে। হু্মায়ূন আহমেদ, সেলিনা হোসেন প্রমুখের অসংখ্য উপন্যাসের পরিচয়েই তা প্রতীয়মান। আসলে সাফল্যে আবেগ ঘনিয়ে ওঠে, নতুন করে স্বপ্ন দেখার পথ প্রশস্ত হয়, গৌরববোধে ইতিহাসকে ফিরে দেখায় উদযাপনী প্রয়াস আন্তরিকতা লাভ করে। ব্যর্থতার ইতিহাস সেখানে ব্রাত্য হয়ে পড়ে, বিস্মরণের সদিচ্ছাই জেগে ওঠে। সেক্ষেত্রে ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ব্যর্থতা অচিরেই ব্রাত্য হয়ে পড়ে। উপন্যাসের বিশ্বাসী মনোভাবের প্রকাশ সেখানে স্থির হতে পারে না, ব্যর্থতার করুণ পরিণতি বিমুখ করে তোলে। অথচ তা নিয়েও আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ ওপার বাংলার উপন্যাসে তীব্র সাড়া জাগিয়ে তোলে।

আসলে উপন্যাসের প্রচলিত ছক ভেঙেই আখতারুজ্জামান স্বীয় লক্ষ্যে সফল হননি, দৃষ্টিভঙ্গির অনন্যতাই তাঁকে পাঠক ও সমালোচকের কাছে নিবিড় করে তুলেছে। সেক্ষেত্রে বৃহৎ পরিসরে (১৯৬৫-১৯৬৯) লেখা শওকত আলীর ত্রয়ী উপন্যাস ‘দক্ষিণায়নের দিন’, কুলায় কালস্রোত’ ও ‘পূর্বরাত্রি পূর্বদিন’ তাঁর পূর্বে প্রকাশিত হলেও সেভাবে সাড়া ফেলেনি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সাপ্তাহিক বিচিত্রা’য় উপন্যাসগুলি যথাক্রমে ১৯৭৬, ১৯৭৭ এবং ১৯৭৮-এ প্রকাশিত হয়ে ১৯৮৫-তে তিনটি একসঙ্গে ‘দক্ষিণায়নের দিন’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় এবং ১৯৮৬-তে ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার লাভ করে। সেখানে ষাটের দশকে দেশের মানুষের চিন্তাভাবনার পরিবর্তনে আলোড়িত সমাজের কথাই প্রাধান্য পেয়েছে। অথচ তার পরের বছরে (১৯৮৬) ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এ সেই আলোড়িত সমাজের আশার আলোই নিস্তেজ হওয়ার ছবিতে পরিণত হয়। তারপরেও উপন্যাসটি নিয়ে বহুমাত্রিক চর্চার পরিসর গড়ে ওঠে। সেখানে গণঅভ্যুত্থানের ব্যর্থতা নয়, উপন্যাসে গণমানুষের নবপরিচয় ভাবিয়ে তোলে। এভাবে গ্রাম-শহরের গণজীবনের অপূর্ব সমন্বয় করে সমাজবাস্তবতার পরিচয় ইতিপূর্বে লক্ষ করা যায় না। সেদিক থেকে ওপার বাংলার উপন্যাসে সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহের ‘যথার্থ উত্তরসূরি আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। শুধু তাই নয়, তাঁর চেয়েও আখতারুজ্জামানের পরিসর বিস্তৃত, জটিল এবং সুগভীর উৎকর্ষমুখর ও অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তার আকাঁড়া জীবনচিত্রে মানবিক আবেদন নানাভাবেই প্রকাশমুখর। সেখানে দেশবাসীর জীবনসংগ্রামের সঙ্গে দেশের মুক্তিসংগ্রাম কীভাবে নিবিড়তা লাভ করেছে, তার সুগভীর পরিচয় আন্তরিক হয়ে উঠেছে। অথচ তাতে ঔপন্যাসিকের দরদি মনের আবেগ নেই, দেশ ও দশের প্রতি স্বদেশপ্রেম জাগরণের দৃষ্টি আলো হয়ে ওঠেনি, বরং তাঁর অন্তর্দৃষ্টির গভীরতায় আঁতের কথায় নির্মম ও নিষ্ঠুর বাস্তবতায় জেগে ওঠা স্বপ্ন ভেঙে যায়, গড়ে তোলা বিশ্বাস নিস্তেজ হয়ে পড়ে। সেদিক থেকে ‘লালসালু’র সুদীর্ঘ আটত্রিশ বছর পরে ‘চিলেকোঠার সেপাই’-এর আগমন আবির্ভাব হয়ে ওঠে।

প্রফেসর, বাংলা বিভাগ, সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়, পুরুলিয়া-৭২৩১০৪।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন