দ্বিতীয় গল্পটি আরো ইন্টারেস্টিং। ছত্র সিংয়ের কন্যা রত্নাবতী ছিলেন পরমা সুন্দরী ও বুদ্ধিমতি। সিন্ধিয়া নামের এক কুচক্রী তান্ত্রিক রাজকন্যার প্রেমে পরেন। কিন্তু রাজকুমারী তান্ত্রিকের প্রেম প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর তান্ত্রিক রত্নাবতীকে বশে আনার জন্য রাজকুমারীর দাসীর হাত দিয়ে মন্ত্রপূত সুগন্ধি তেল পাঠান যাতে ওই তেলের প্রভাবে সম্মোহিত হয়ে রাজকুমারী তার কাছে চলে আসে। রাজকুমারী তান্ত্রিকের অসৎ উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন। তৎক্ষণাৎ তিনি সুগন্ধি ছুঁড়ে ফেলে দেন একটি পাথরের উপর। তখন পাথর একটি বিশাল রূপ নিয়ে তান্ত্রিকের কাছে ছুটে এসে বুকে আঘাত করে ও তান্ত্রিক মারা যায়।
মৃত্যুর আগে তান্ত্রিক অভিশাপ দিয়ে বলেন যে, এই স্থানে কেউ শান্তিতে বেঁচে থাকতে পারবে না। কথিত আছে, তান্ত্রিকের অভিশাপের পরের বছরেই প্রতিবেশী রাজ্য আজবগড়ের সঙ্গে এক ভয়ংকর যুদ্ধে ভানাগড়ের দুর্গ প্রাসাদ সব ধ্বংস হয়ে যায় আর তাতে রত্নাবতীও মারা যায়। স্থানীয়দের বিশ্বাস যে অতৃপ্ত তান্ত্রিক ও রাজকুমারীর আত্মা এখনো প্রাসাদের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়।
প্রচলিত লোককথা ভানগড় দুর্গের ভগ্নদশার যাই গল্প বলুক না কেন বাস্তব হচ্ছে, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ ভানগড় দুর্গ-প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য সক্রিয় কোন ভূমিকাই গ্রহণ করেনি। মিডিয়া কিম্বা প্রচলিত লোককথার আড়ালে চলছে ভানগড় দুর্গের রোমহর্ষক বিজ্ঞাপন। রাজস্থান টুরিজিমের সরকারী ওয়েব সাইটে অবধি লেখা আছে ভারতের সবচেয়ে ভুতুড়ে স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম অভিশপ্ত ভানগড় দূর্গ। শুধু দেশের নয় বিদেশিরাও আসেন এখানে গাছমছমে মুহুর্ত উপভোগ করার জন্য।
১৭২০ সালে জয়পুর রাজ দ্বিতীয় জয় সিং ভানগড় দূর্গ একাধিক বার আক্রমণ করেন। যুদ্ধে বহু মানুষ মারা যায়। এরপর ১৭৮৩ নাগাদ দুর্ভিক্ষের প্রবল প্রকোপে পরে দূর্গবাসীগণ। অধিকাংশ মানুষই মারা যায় আর বাকি যে ক’জন বেঁচে ছিলো তারা ভয়ে দূর্গ ছাড়িয়ে পালিয়ে যায়।
ভানগড় দূর্গটি সরিষ্কা টাইগার রিজার্ভের প্রান্তে অবস্থিত হওয়ায় রাতে দূর্গে হানা দিতে পারে শেয়াল, হায়না, প্যান্থার এমনকি বাঘও। দুর্গের আলগা বোল্ডারে অসাবধানতাবশত পা পরে পিছলে যাওয়ায় দুর্ঘটনা বা মৃত্যু ঘটেছে অনেক।
স্থানীয় গ্রাম ‘গোলা কা বাস’। সন্ধ্যা নামার অনেক আগেই বন্ধ হয়ে যায় ঘরের দরজা। দিনের বেলায় নয়নাভিরাম স্পট দেখতে কোলাহলে পরিপূর্ণ স্থান নিঝুমপুরিতে পর্যবসিত হয় সন্ধ্যায়।
সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত দুর্গ শহরের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করলেই পাওয়া যায় মন্দির, প্রাসাদ এবং হাভেলি। ভানগড় দূর্গ-প্রাসাদ বেষ্টিত অঞ্চলটি একটি প্রাচীন শহরাঞ্চল। প্রাচীন শহরটি মোট পাঁচটি প্রবেশদ্বার দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্তে সংযুক্ত ছিলো। পাঁচটি প্রবেশ দ্বারের নাম হলো— লাহোরি গেট, আজমেরি গেট, ফুলবাড়ি গেট, হনুমান গেট এবং দিল্লি গেট। প্রত্নত্তত্ব বিভাগের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে প্রাসাদটি সপ্তমতল বিশিষ্ট একটি স্থাপত্য ছিলো। ধ্বংস হতে হতে এখন চারটি তলে এসে ঠেকেছে।
প্রধান ফটকের প্রবেশপথে অনেক হিন্দু মন্দির যেমন হনুমান মন্দির, গোপীনাথ মন্দির, সোমেশ্বর মন্দির, বিশাল দেবতা কেশব রাইয়ের মন্দির, মংলা দেবী মন্দির, গণেশ মন্দির এবং নবীন মন্দির রয়েছে। স্থানীয় মানুষেরা নিয়মিত এখানে পুজো দেন।
গোপীনাথ মন্দিরটি ১৪ ফুট উঁচু স্তম্ভের উপরে নির্মিত এবং মন্দিরের সূক্ষ্ম খোদাইয়ের জন্য হলুদ পাথর ব্যবহার করা হয়। পুরোহিতজি কি হাভেলি নামে পুরোহিতের বাসভবনটি মন্দির কমপ্লেক্সের চত্বরে অবস্থিত। এর পরেই রয়েছে নাচন কি হাভেলি (নৃত্যশিল্পীর প্রাসাদ) এবং জৌহরি বাজার (বাজার স্থান), তারপরে রয়েছে গোপীনাথ মন্দির। রয়্যাল প্যালেসটি দুর্গের সীমানার চরম প্রান্তে অবস্থিত।
মন্দির থেকে দূর্গ-প্রাসাদের প্রবেশমুখের মাঝখানের অঞ্চলটিতে রয়েছে একটি ভগ্ন বাগান। বাহারি ফুলে পরিপূর্ণ চওড়া বাগিচা। তবে এখানে রয়েছে হনুমানের প্রচন্ড দৌরাত্ম্য। বাগান পেরিয়ে সামনে দেখা যায় একটি জলাধার। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলা হয় ‘বউলি’।
হনুমান এবং শিব মহাদেবকে উৎসর্গ করা মন্দিরগুলি মন্দিরের পরিবর্তে সেনোটাফের শৈলীতে নির্মিত। তাদের নির্মাণে ঝিরি মার্বেল ব্যবহার করা হয়েছে। দুর্গের গেটের বাইরে দেখা যায় একটি মুসলিম সমাধি যা রাজা হরি সিংয়ের এক পুত্রের বলে খ্যাত।
আপনি ভূতে বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, প্রাসাদের সুবিশাল প্রাঙ্গনে একাকী দাঁড়িয়ে থাকলে অবশ্যই একটি শিহরণ জাগানো অনুভূতি হবে। ঐশ্বর্য ও দম্ভের পরিণতি নিয়ে ইতিহাস যেন এখানে ঘুমিয়ে আছে। মুখরোচক রহস্য গল্পে ভরপুর সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিক এই ভানগড় দূর্গ চাক্ষুষ করতে হলে অবশ্যই আপনি ঘুরে আসতে পারেন।
**Write up extracted from various sources**
সুন্দর হয়েছে লেখাটা । ছবির ক্যাপশন থাকলে ভালো হয় ।
আচ্ছা, চেষ্টা করবো। থ্যাংক ইউ🌹
খুব ভালো লাগলো গল্পটি। খুব পরিশ্রম সাপেক্ষ লেখা।
আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই আপনাকে🌹
ভানগড়” ভালো লাগলো সুন্দর পরিবেশনের গুণে। চমৎকার সুন্দর মুগ্ধতা
ইতিহাস ভিত্তিক তথ্য সম্মৃদ্ধ রহস্যে
অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই আপনাকে। ভালো থাকবেন
নিপুণ হাতে ভানগড়ের তথ্য ভান্ডার তুলে ধরেছেন লেখিকা, ওনার রচনার বৈশিষ্ট্য অনেকেরই পরিচিত, যথারীতি ভীষণ ভালো লাগলো।
অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই❤️