জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়
৮৪ নং কিস্তি
প্রবীরদা আমার কাছ ঘেঁসে বসে গলা জড়িয়ে ধরলো—তুই থাকলে একটা আলাদা এনার্জি পাই বুঝলি।
আমি বললে গালাগাল করবে, ছোটোমাকে বলোনা সবার জন্য একটু চা দিতে। আমি বললাম।
ছোটোবৌদি তোকে গালাগাল করবে!
লেখাটা কে লিখবে? তুই! গম্ভীর গলায় কথাটা বলে, দাদা অরিত্রর দিকে তাকাল।
সবার দৃষ্টি এবার টেবিলের দিকে ঘুরে গেল। এতক্ষণ ওখানে কি চলছিল কারুর খেয়াল ছিল না।
তনুদি—
আমার হুকুম, অনি লিখবে।
তনু হাততালি দিয়ে উঠলো। আমার দিকে তাকাল।
এবার? ডিফেন্স করো।
সন্দীপ—
হ্যাঁ দাদা—
এককলম লিখে দিচ্ছি। ফ্রন্ট পেজে কালকে ছেপে দে। বাকিটা আমি বুঝে নেব। আঠার বছর অনেক লাঞ্ছনা গঞ্জনা সহ্য করেছি। দাদার গলাটা গম গম করছে।
মল্লিক ও ঘর থেকে নিউজপ্রিন্টের প্যাডটা নিয়ে আয়। দাদা, মল্লিকদার দিকে তাকাল।
মল্লিকদা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
সায়ন্তন তুই ক্যামেরা নিয়ে এসেছিস। অর্ক বললো।
কেন বল—
অনিদার এই অবস্থার ছবিগুলো তুলে রেখেছিস।
ঠিক কথা মনে করিয়ে দিয়েছিস।
সায়ন্তন ছুটে ঘরের বাইরে চলে যাচ্ছিল।
শান্ত ঘরটা হঠাৎ অশান্ত হয়ে উঠলো।
সাধুবাবা এবার তোমার দিন শেষ, আমাদের শুরু। পালিয়ে যাবে কোথায়। অরিত্র বললো।
এই কোথায় যাচ্ছিস? দাদার ডাকে সায়ন্তন ঘুরে দাঁড়াল।
ও ঘরে—
ছোটোকে বল একটু চা দিতে।
প্রবীর গেছে এডিটর, তাড়াহুড়ো করলে হবে? ডাক্তারদাদা বললো।
সায়ন্তন বেরিয়ে গেল।
ঘটনাটা কি বলো—ডাক্তারদাদা বললো।
এ তো দেখছি গতো সপ্তাহের কেশ।
আপনি কিছু বুঝতে পারছেন না! অনিমেষদা দাদার দিকে তাকাল।
একটু একটু ধরতে পারছি। সত্যি বলছি অনিমেষ এখন মাথাটা ঠিক আগের মতো আর কাজ করে না।
চা খান বুঝতে পারবেন।
তাই হোক। ডাক্তার আজ প্রেসারটা একটু দেখো।
সব নর্মাল আছে, তোমায় দেখেই বলে দিচ্ছি। আর যন্ত্রের সাহায্য নিতে হবে না।
সায়ন্তন এলো। বেশ কিছুক্ষণ ফটোসেশন পর্ব চললো, হাসাহাসি হলো, হই হই হলো। মাঝে সুরো একটু কেঁদেও ফেললো। আমি আলাদা করে সুরোর ছেলে, মিলির মেয়টাকে কোলে নিয়ে ছবি তুললাম।
অনুপ, হিমাংশু আসাতে ফটোসেশন থামলো।
তুই তো বেশ জমিয়ে বসেছিস।
হিমাংশু আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
বড়োমার দিকে তাকিয়ে হিমাংশু বললো। বড়োমা বহুত খিদে লেগেছে।
অনুপ আমার দিকে তাকিয়ে। ব্যাপারটা এরকম কিরে আমি ভ্যাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি। সবার তো নাম জানি, একবার অন্ততঃ পরিচয় করা।
ওকে সবার সঙ্গে আলাপ করালাম।
অনুপ আগে কাউকে দেখে নি? প্রবীরদা, মিত্রার মুখের দিকে তাকাল।
এর আগে অফিসে একদিন এসেছিল। বড়োমারা নাম শুনেছে দেখেনি। মিত্রা বললো।
অনুপ সকলকে প্রণাম করলো।
অনিসাকে দেখে বললো তুই তো বাপকা বেটি।
তারপর বড়োমার দিকে তাকিয়ে বললো। সবাইকে দিল্লীর লাড্ডু দিয়েছেন।
দেখলাম সাগির গেটের মুখ থেকে প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়লো।
বুঝলাম ভুলে গেছে।
কিরে নেপলা—অনুপ তাকাল।
ওই দায়িত্ব তুমি সাগিরকে দিয়েছিলে।
তারমানে এখনও গাড়ি থেকে ব্যাগ বেরোয়নি?
সাগির এলে জিজ্ঞাসা করো। সকলে হাসছে।
সুন্দর এসে অনুপকে জড়িয়ে ধরলো।
এই আঙ্কেলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দাও।
তুই নিজে পরিচয় করে নে।
ওকে ইংরেজিতে কথা বলতে দেখে হিমাংশু একটু অবাক।
অনুপ প্রথমে বাংলায় হিমাংশুকে বললো।
তারপর সুন্দরের দিকে তাকাল।
তুই বুঝলি?
একটু।
তোর ড্যাডের লিগাল এ্যাডভাইজার।
তুমি?
আমিও।
অনিমেষদা তাকিয়ে আছে সুন্দরের দিকে।
আমার দিকে তাকাল।
ওকে দেখে বোঝাই যায় না মালতীর ছেলে।
কাগজপত্র আছে।
আমার কথাটা অনিমেষদা ধরতে পারল।
তোর সব সময় মাথায় বদ বুদ্ধি। আমি কি তাই বলেছি।
সাগির লাড্ডুর বাক্স নিয়ে এলো। আবার হই হই। কান পাতা দায়। লাড্ডু খাওয়া হলো। বড়োমা কাছে এসে বললো।
তুই কি খাবি?
চুপ করে রইলাম।
একটু মুড়ি, ছাতু, কলা, আম দিয়ে মেখে দেব।
সামলাতে পারবে না।
হেসেফেললো।
প্রবীরদা ওই ফাইলটা নিয়ে এসেছেন? অনুপ বললো।
অনিমেষদা একবার প্রবীরদার দিকে, একবার অনুপের দিকে তাকাল।
তোমার সঙ্গে অনুপের আলাপ আছে?
প্রবীরদা মুচকি মুচকি হাসছে।
অনিমেষদা, রূপায়ণদার দিকে তাকাল, দেখছো রূপায়ণ কাণ্ডটা দেখছো।
সত্যি কথা বলে দিন, অসুবিধে নেই। প্রবীরদা, অনুপের দিকে তাকিয়ে।
অনিমেষদা হাসছে, রূপায়ণ শুনছো ওদের কথা।
এখন ছবিগুলো কেমন যেন পরিষ্কার হচ্ছে। এতো ঝড় ঝাপটাতেও ও বেশ ফ্রেস ছিল।
রূপায়ণদা বললো।
কেন তোরা ছিলি না?
প্রবীরদার কথায় রূপায়ণদা হেসে ফেললো।
তোর মতো অতোটা ছিলাম না। অনুপদা বললো।
সাঁট গাঁট ভালোই বেঁধেছিস। রূপায়ণদা বললো।
প্রবীরদা ইশারা করে বললো সকালেই অনিকে ফাইল দিয়ে দিয়েছি।
অনুপ আমার কাছে ফাইলটা চাইলো।
মিত্রাকে ডাকলাম, ও তখনও টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে গিলে যাচ্ছে। আমার দিকে তাকাল।
সকালে যে ফাইলটা দিয়েছিলাম সেটা অনুপকে দে।
মিত্রা বেরিয়ে গেল।
আমি উঠে দাঁড়ালাম।
কোথায় যাচ্ছিস! অনিমেষদা বললো।
অনুপ আর হিমাংশুর সঙ্গে একটু কথা বলবো।
এখানে বসে বল।
বলা যাবে না।
হিমাংশু হাসছে।
তিনজনে উঠে এলাম। বাইরেটা অন্ধকার হয়ে গেছে। চারিদিকে লাইট জ্বলছে, সারাটা দিন কোথা থেকে কিভাবে যে চলে গেল বুঝতে পারলাম না। চিকনা বারান্দায় দাঁড়িয়ে। ইশারায় ডাকলাম। কাছে এলো।
সিগারেট আছে?
আছে।
আয়।
মিত্রা ঘর থেকে বেরচ্ছিল, একটু দাঁড়িয়ে ওর কাছ থেকে অনুপ ফাইলটা নিল।
বাগানে এলাম। ইসলামভাইরা ওই দিকে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। নেপলা ফুল ফর্মে ব্যাট করছে। ওরা সবাই হেসে গড়িয়ে পরে।
আমরা চারজন আমগাছটার তলায় এসে দাঁড়ালাম।
চিকনা সিগারেটের প্যাকেট বার করলো।
বিড়ি দে।
যাঃ তুই ফাইজলাম করছিস।
দে তো, তোর কাছে বিড়ি থাকবে না, এ হয় না কি।
অনুপদারা?
ওদের সিগারেট দে।
এক যাত্রায় পৃথক ফল কেন?
চিকনা, অনুপের কথায় লজ্জা পেয়ে গেল।
বিড়ি বার করলো। ধরালাম।
অনুপের দিকে তাকালাম।
হিমাংশুকে তুই বলিসনি। অনুপ বললো।
কি?
উইলের কথা।
না।
ও তো শুনে অবাক।
যাক অন্যান্যগুলোর ড্রাফ্ট করেছিস।
হ্যাঁ।
ওদেরকে দিয়ে তাহলে সই করাতে হবে।
এই দায়িত্ব তোকে নিতে হবে।
সে আমি করিয়ে দেব—কোনও সমস্যা?
সমস্যা কিসের। টার্মস এন্ড কন্ডিসন অনুযায়ী আঠার বছর আছে। পার হয়ে গেছে। ওরা এখন সাবালোক। উইলের প্রবেড নিতেই পারে।
কাগজের হাল কি?
হিমাংশুর দিকে তাকালাম।
ঠিক আছে। যৎসামান্য লোন আছে। আশা রাখছি কামিং সিক্স মান্থের মধ্যে সেটাও শোধ হয়ে যাবে। তুই কি কাল যাচ্ছিস?
হ্যাঁ। কো-অপারেটিভ?
ওটা একটা বড়ো ঘোটালা হয়ে আছে। তোকে চিকনা কিছু বলেনি।
বলেছে। চলছে না বন্ধ হয়ে গেছে?
চলছে। তবে সিক হয়ে যাবে মনে হচ্ছে—
দেখছি। অনাদির এগেন্সটে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছিস?
এখন মন্ত্রী তাও রুলিং পার্টির। কাগজ-পত্রও প্রপার নেই।
চিকনা হেসে ফেললো।
চিকনা হাসছে কেন?
ওর হাসির রোগ আছে।
তারমানে আমরা যতটুকু জানি ও তার থেকে বেশি জানে—
সে তো জানবেই। এতদিন তোরা যেটুকু খবর পেয়েছিস সব ওর মাধ্যমে। আমাকে একটু লাস্ট আপডেট দে।
তোকে দিয়ে দেব।
তোর কাছে সিপি এসেছিল? অনুপ জিজ্ঞাসা করলো।
হ্যাঁ। তুই গেছিলি?
আমি কপিটা সার্ভ করে এলাম।
তুই নিজে!
ইচ্ছে করেই গেছিলাম। বাইরের রিসেপসনেই জমা দিচ্ছিলাম। তারপর তোর নামটা দেখে দাঁড়াতে বললো। তারপর ভদ্রমহিলা ফোন করলো। ডেকে পাঠালো। গেলাম।
কি বলছে?
উনি আলাপ করলেন আমার সঙ্গে। কাল সকালের ফ্লাইটে দিল্লী যাচ্ছেন।
রাঘবন লাস্ট কি বললো?
ওর চাকরি করা বার করে দেবে।
মনে হচ্ছে এখন কেউ আর এদিকে মাথা ঘামাবে না। হিমাংশু বললো।
আগে চাকরি বাঁচাক। অনুপ বললো।
অনাদি এখানে আসছে। আমি বললাম।
কখন! তোকে ফোন করেছিল?
আমাকে? সে সাহস ওর আছে? ওর প্লাস, মাইনস সব আমার হাতে।
ওরও পেছনে ভয় আছে। হিমাংশু বললো।
এতদিন সোনার ডিম পেয়েছে। এখন লোহার বল হয়ে যাবে। অনুপ বললো।
হিমাংশু থনার ওসিটাকে দিয়ে ডাইরীটা তুলতে হবে। অনুপ, হিমাংশুর দিকে তাকাল।
সে তুই যদি চাস এখুনি পেয়ে যাবি। থানার ওসি এখন পাল্টি খেয়ে গেছে। সামান্য হিন্টস দিল, তাতেই বুঝলাম।
একটা লালবাতি ওয়ালা গাড়ি গেটের সামনে এসে থামলো।
ইসলামভাই এগিয়ে গেল।
দরজা খোলার আগেই গাড়ি থেকে অনাদি নমে এলো।
শালা ধুতি, পাঞ্জাবী পরে নেতা হয়েছে। চিকনা চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো।
আস্তে চিকনা।
শালাকে জুতায় ছাল খিঁচি দিব। একবার গ্রামে যাক না।
তুই কি ভাবছিস ও যাবে?
যেতে ওকে হবেই অনি। কাঞ্চনকে দেখলে তোর মন খারাপ হয়ে যাবে।
ইসলামভাই বাইরে বেরিয়ে গেছে। হয়তো মন্ত্রী মহোদয়কে রিসেপশন করছে। যা কথা হচ্ছে এখান থেকে শোনা যাচ্ছে না।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম ইসলামভাই-এর পাশে পাশে অনাদি হেঁটে ভেতরে ঢুকলো। বেশ হেঁসে হেঁসেই কথা বলছে। ধুতি, পাঞ্জাবী পরেছে। এই আধো অন্ধকারে ওর চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে বেশ ঝকঝকে। সেই রোগা-প্যাটকা চেহারা আর নেই। বেশ গোলগাল, জৌলুস ফিরেছে। সঙ্গে আরও তিনজনকে দেখতে পাচ্ছি। মনে হচ্ছে সেই সচিব ভদ্রলোকও আছে। অনাদির কাজের ফুল টিম।
বড়োমা আমার জন্য খাবার নিয়ে ওঘরে চলেছে। বারান্দায় উঠে বড়োমার সঙ্গে দেখা হতেই অনাদি নীচু হয়ে প্রণাম করলো। এইবার আলোয় ওর পরিষ্কার মুখটা দেখতে পাচ্ছি। মাথার চুলটা সামান্য পাতলা হয়ে এসেছে। চোখে মুখে সামান্য টেনসনের ছাপ।
থাক বাবা থাক।
অনি কোথায়?
ও ঘরে।
কেমন দেখতে হয়েছে গো?
নিজের চোখেই দ্যাখো।
শুনলাম বিশাল বিশাল দাড়ি রেখেছে মাথায় জটা।
বললো কালকে দেশে গিয়ে কাকার কাজ করবে।
এখনও এ সব মনে রেখেছে?
অনাদি ঘরে ঢুকলো।
আমি যে এক দৃষ্টিতে অনাদিকে দেখছিলাম চিকনা সেটা খেয়াল করেছে।
তোর দেখা শেষ হলো?
হেসেফেললাম।
মালটা দেখেছিস। তোর থেকে বড়ো দাদা। চমকানি দেখলে মাথা খারাপ হয়ে যাবে।
আফটার অল মানুষ, এটা মনে রাখবি চিকনা। বুকের ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল।
ও অনি। বড়োমা বারান্দায় এসে চেঁচাল।
এগিয়ে গেলাম।
কি করছিলি অন্ধকারে দাঁড়িয়ে।
চুপ করে থাকলাম।
বারান্দায় উঠে বাইরের ঘরের বেসিনে গেলাম। চোখে-মুখে ভালো করে জল দিলাম। নিজের পরনের কাপরটা দিয়ে মুখ মুছলাম।
বড়োমা আমার পেছন পেছন।
এখানে নিয়ে আসবো—
না—
অনাদি এসেছে—
দেখেছি—
অনুপরা আর এ ঘরে আসেনি। ও ঘরে চলেগেছে।
ওঘর থেকে ভাসা ভাসা কথা ভেসে আসছে।
বুঝলাম আলাপ পর্ব চলছে।
বড়োমা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে। দামিনীমাসি রান্নাঘর থেকে আমাকে দেখছে।
মিলিরা মনে হয় বড়োমার ঘরে বসে। গলার আওয়াজ পাচ্ছি।
মিলির মেয়েটা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো পেছন পেছন সুরোর ছেলে। দুজনে বেশ ভালো জুটি বেঁধেছে।
দারি আঙ্কেল, আম খাবে?
গুটি গুটি পায়ে আমার কাছে এগিয়ে এলো।
ওদের মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলাম। মাথা দুলিয়ে চোখের ইশারায় বললাম খাব।
তুই কার সঙ্গে কথা বলছিস!
মিলি মনে হয় খাটে বসেছিল। উঠে এলো। আমি দুটোকে নীচু হয়ে কোলে তুললাম।
তোরা খাবি?
হ্যাঁ। মাথা দোলাল।
দিদানকে বল—
না—
কেন—
মা বকবে—
খালি পাকা পাকা কথা না। আর নাম পেলে না দারি আঙ্কেল। মিলি বললো।
সুরো হাসছে।
ওরা দুজনেই আমার দারি ধরেছে।
নিবি।
হ্যাঁ।
ঠিক আছে কালকে দেব।
ইসলামভাই এসে গেটের সামনে দাঁড়াল।
কিরে, মন্ত্রী সাহেব অধৈর্য হয়ে যাচ্ছে।
হাসলাম।
দুটোকে কোলে নিয়ে ধীর পায়ে বারান্দা পেরিয়ে এ ঘরে এলাম।
গেটের মুখে আসতেই অনাদি উঠে এলো। জড়িয়ে ধরতে চাইলো, পারলো না। ওরা দুটো কোলে আছে।
চেহারার এ কি হাল করেছিস! জটাজুটধারী।
অনাদির মুখের দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। চোখে চোখ রেখে হাল্কা ভাবে পড়ার চেষ্টা করলাম। নাঃ অভিনয়ে এতটা পারদর্শী এখনও হয়ে ওঠে নি। ঠোঁটের কোনে হাল্কা হাসি মিশিয়ে বললাম।
কেন, খারাপ লাগছে।
না খুব ভালো লাগছে দেখতে।
ভেক না ধরলে ভিক্ষা মেলে না।
এখনও তুই সেরকম রইলি।
হাসলাম।
ধীর পায়ে ভেতরে এলাম। সকলে আমার দিকে তাকিয়ে।
এরা কারা।
আমার ছেলে, মেয়ে।
হি-হি, হি-হি।
ওরা হাসছে।
দেখছিস তুই যে বাজে কথা বলছিস, সেটা ওরাও বুঝে ফেলেছে।
এগিয়ে গেলাম।
সারা ঘরের সকলের চোখ আমার দিকে।
কবে এলি?
কাল রাতে।
বড়োমার দিকে তাকালাম। বড়োমা দাও।
অনাদির দিকে তাকালাম।
ছাতু-মুড়ি খাবি—
না রে শরীরটা ভালো নয়।
মিত্রারা মুখ ঘুরিয়ে মুচকি মুচকি হাসছে।
অনিমেষদা বড়োমার দিকে তাকিয়ে বললো, দিদি আপনি আর একটু মেখে আনুন।
কেন ওদের এক বাটি করে সবাইকে দিয়েছি।
আচ্ছা আপনি আর একটু মেখে আনুন না।
দামিনী ঠিক কথা বলেছে।
বড়োমা মিত্রার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকাচ্ছে।
আমি না তনু।
ছেলেটা সকাল থেকে কিছু খেয়েছে?
যাওনা বাবা, ওরকম করো কেন। মিত্রা বললো।
সোফায় বসলাম।
ওরা আমার কোলে।
আম খাবে।
ওদের দিকে তাকালাম।
এবার সবাই হাসলো।
দেখছো, আমরা শুধু একা নয়। মিত্রা চেঁচিয়ে উঠলো।
অনাদির দিকে তাকালাম।
বল।
তোর সঙ্গে দেখা করতে এলাম।
অরিজিন্যাল না নকল?
না না সেরকম কিছু নয়।
এঁদের চিনতে পারলাম না।
উনি তো সকালে এসেছিলেন। দেখেছিস।
হ্যাঁ।
ইনি আমাদের দক্ষিণবঙ্গ উন্নয়ণ পরিষদের দায়িত্বে আছেন।
মন্ত্রী না চেয়ারম্যান।
মন্ত্রী।
বুকের ওপর হাত তুললাম।
ইনি কৃষি দপ্তরটা দেখেন।
এখনও সেরকম চাষাই রইলি। পরিচয় করাবার সময় নামটা বলতে হয়। সে খেয়াল টুকুও থাকে না।
সরি, ইনি ভক্তিভূষণ বর, ইনি সুলতান লতিফ।
আমি অনিন্দ ব্যানার্জী সবার কাছে অনি ব্যানার্জী নামে পরিচিত।
অনাদি আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে, চোখের পলক পড়ছে না।
সব মন্ত্রী-সন্ত্রী নিয়ে হাজির হয়েছিস। আমাকে মার-ধোর করার মতলোব আছে নাকি?
আমার বাল্য বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করাতে এলাম।
বড়োমা ঘরে ঢুকলো।
সেন্টার টেবিলে ছাতু মুড়ির বাটিটা রাখতেই ও দুটো কোল থেকে নেমে গেল।
এই একবারে হাত দিবি না। বড়োমা ধমকে উঠলো।
ওরা আমার মুখের দিকে একবার তাকায়, একবার বড়োমার মুখের দিকে।
দুটো চামচে নিয়ে এসো। ঠিক আছে থাক লাগবে না। তোমার মোবাইলটা কোথায়?
ও ঘরে।
একবার নিয়ে এসো।
বড়োমা গেটের দিকে তাকাল। দেখলাম সুরো দৌড় দিল।
এতো বড়ো বড়ো সব মন্ত্রীরা এসেছেন, দিল্লীর লাড্ডু খাওয়াও।
দেখলাম ভক্তিবাবুর ঠোঁটটা একটু ফাঁক হলো।
তোর বাল্যবন্ধুর দু-দুটো মা, বৌ তার আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে পরিচয় করিয়েছিস?
অনাদির দিকে তাকালাম।
সময় পেলাম কোথায়?
একে একে সবার সঙ্গে আমিই পরিচয় করিয়ে দিলাম। মিত্রাকে বান্ধবী, তনুকে স্ত্রী হিসাবে বলতেই সকলে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।
তুই এখনও সেই অনি রয়ে গেলি। অনাদি বললো।
তুই বন্ধুর বাড়িতে এসেছিস, তোর বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে, আমি কি তোর সঙ্গে ভাব গম্ভীর পরিবেশে কথা বলবো।
সুরো ফোনটা নিয়ে এসে বড়োমার হাতে দিল।
এই মেয়েটা হচ্ছে আমার বোন। ওরফে অনিমেষদার মেয়ে।
ভক্তিবাবু এবার মুখ খুললেন, ওর বিয়েতে আমরা এই বাড়িতে এসেছিলাম।
তাই!
অনিমেষদা আমার দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে।
তুই যে ফোনটা চাইলি—
বড়োমার দিকে তাকালাম।
একবার নিরঞ্জনদাকে ধরে আমাকে দাও।
বড়োমা আমার চোখে চোখ রাখলো।
বুঝলো অনি ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে।
অনাদির দিকে তাকালাম। বুঝলাম সোনায় দাগ লাগলো। সামান্য মর্চে পড়ে যাচ্ছে চোখে মুখে।
বৌদি, ইসি, লাড্ডু-চা নিয়ে এলো।
নে।
অনাদির দিকে তাকালাম।
আপনারা একটু এগিয়ে আসবেন প্লিজ।
কে রে নিরঞ্জন।…. কেমন আছিস….আমি তোর সঙ্গে পড়ে কথা বলছি….হ্যাঁ ও-ই তো বললো নিরঞ্জনদাকে ধরে আমাকে দাও। ….আর বলিস না, সকাল থেকে যেন কাক উড়ছে চিল পরছে।…. কেউ বাকি নেই সবাই এসেছে। ঠিক আছে তুই আগ অনির সঙ্গে কথা বল।
বড়োমা ফোনটা আমার হাতে দিল।
আড়চোখে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম। ডাক্তারদাদার মুখখানা ভাবলেশহীন। প্রবীরদার যেন দম বন্ধ হয়ে যাবার দশা।
প্রণাম স্যার।
ইয়ার্কি হচ্ছে।
হা হা হা।
কেমন আছো।
ভালো নেই রে, বয়স হলে যা হয়।
তুমি এরকম করে বলো না। তুমি এখনও ইয়ং।
তুই হচ্ছিস এখন দাদা, পার্টির পরামর্শদাতা।
এরকম বললে হবে। তোমরা হচ্ছো পার্টির মাথা, সে জায়গায় আমি চুনোপুঁটি।
অনিমেষদা আমার মুখের থেকে চোখ সরাচ্ছে না।
কাল কি করছো?
কি করবো, এখন ফুল টাইম বাড়িতে।
পার্টি ফুটিয়ে দিয়েছে।
এই শুরু করলি।
ওরা দুজন চামচেতে করে খেতে শুরু করেছে। বড়োমা চোখ দেখাচ্ছে। একবার থামে। একবার আমার মুখের দিকে তাকায়। আমি ইশারায় বলি খা-খা, আমি আছি।
লালাবাতির গাড়ি চড়ছো?
সে দিন কি আর আছে—
কাল তোমার বাড়িতে গাড়ি পাঠাব। প্রশ্ন করবে না, গাড়িতে উঠে বসবে।
কোথায় যাব বল?
প্রশ্ন করতে বারন করেছি।
সচিব ভদ্রলোকের মুখটা শুকনো শুকনো লাগছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে।
তোমার কাছে একটা খবর নেওয়ার জন্য ফোন করেছিলাম।
বল।
তোমার বোন কোথায়?
বাড়িতে।
কেন?
কপাল খারাপ।
আবার কপাল খারাপ কিসের গো?
তুই জানিস না।
জানব কি করে?
সে তো বহুদিন ডিভোর্স হয়ে গেছে।
ডিভোর্স হয়ে গেছে! এ্যাঃ স্যাড নিউজ।
তা সেই স্বামী ভদ্রলোক বেঁচে আছেন, না মরে গেছেন?
বহাল তবিয়েতে আছে।
ঠিক আছে কাল তোমার কাছ থেকে ডিটেলসে সব খোঁজ খবর নিয়ে নেব। এখন বড়োমার সঙ্গে কথা বলো।
ফোনটা বড়োমার হাতে দিলাম। বড়োমা ফোনটা নিয়ে একটু দাঁড়াল।
ওরা কি করছে দেখছিস। বড়োমা বললো।
দেখেছি। তুমি নিরঞ্জনদার সঙ্গে কথা বলো।
সবাই ওদের ছাতু মাখা মাখি দেখে চোখে মুখের ইশারায় এমাগো এমাগো করছে।
তোকে খেতে হবে না। আমি আবার মেখে দিচ্ছি।
কেন! দে-তো বাবা আমি একটু খাই।
চামচে করে ওদের মুখে দু-চামচ তুলে দিয়ে আমি চামচে করে মুখে দিলাম। চোখ চারিদিকে বন বন করে ঘুরছে। বুঝতে পারছি সচিববাবু ঘেমেঘুমে একসা। অনাদি আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে।
নিস্তব্ধ ঘর। আমি তাড়াহুড়ো করে খেলাম।
যা এবার দিদানের কাছে গিয়ে বাকিটা খেয়ে নে।
দুজনে হাতে তালি দিয়ে হি হি করে হেসে উঠলো। হাত ময় মাখামাখি করেছে, আমার কাপরে যে তার ছিটে ফোঁটা পরেনি তা নয়।
জলটা খেয়ে, চায়ে চুমুক দিলাম।
কাল কখন যাবি?
আনাদি আমার দিকে তাকিয়ে।
দেখি, যতো সকালে বেরতে পারি। রোদটা এড়াতে চাইছি। বয়স হচ্ছে।
আমিও কাল যাব, আমার গাড়িতে চল।
খেপেছিস। তোদের প্রশাসনের যা অবস্থা। তারপর রাস্তায় গাড়ি উড়ে গেল, তোর সঙ্গে আমিও বেঘরে প্রাণ দিলাম। আমার চার চারটে বউ গোটা দশেক ছেলে-মেয়ে বিধবা হয়ে যাবে।
সবাই হেসে উঠলো।
অনাদি, অনিমেষদার দিকে তাকিয়ে।
দেখছেন দাদা দেখছেন।
আমার দিকে তাকিয়ে।
তোর কি এখনো বয়স হয়নি।
সুন্দর এদিকে এসো।
সুন্দর কাছে এলো। ওর সঙ্গে ইংরাজীতেই কথা বললাম।
তোমাকে অনাদিকাকুর গল্প বলেছিলাম মনে আছে।
হ্যাঁ।
এই হচ্ছে অনাদিকাকু। অনাদি এ হচ্ছে আমার ছেলে। নাম সুন্দর ব্যানার্জী।
অনাদি দেখছে।
অবাক হোসনি। আমার আর তনুর পালিত পুত্র। ও কিন্তু এইসব ঘটনা জানে। টনা-মনাকে তোর মনে আছে। সেই ভাসিলা ভেড়ি।
হ্যাঁ!
ওর জন্মদাতা মা-বাবার নাম মালতী-মনা।
বর্তমানে খাতায় কলমে ওর মার নাম তনুশ্রী চক্রবর্তী বাবার নাম অনিন্দ ব্যানার্জী। সরকারী কাগজ পত্র থেকে সব কিছুতেই এই দুটো নাম ব্যবাহার হয়।
তনু আমি ওকে দত্তক নিয়েছি। এখন ইংলণ্ডে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে। ওর ইচ্ছে আছে ব্যারিস্টারি পড়বে।
দাদা ওটা তাহলে প্রেসে পাঠিয়ে দিচ্ছি।
অর্ক আমার দিকে তাকাল।
পাঠিয়ে দে, আমি রাতে বসে দুটো ইনস্টলমেন্ট লিখে দেব। বাকিটা ওখান থেকে ফিরে এসে দেব।
কিরে আবার কি লিখবি!
মুখফস্কে কথাটা বেরিয়ে যেতেই অনাদি আমার দিকে তাকিয়ে।
হেসে ফেললাম।
ওর মন্ত্রীরাও আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে।
প্রবীরদা, অনুপদা, রূপায়ণদা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
আমার জীবনী লিখবো।
তাই বল।
আমার খবর নিলি, এবার তোর খবর বল।
চলে যাচ্ছে।
চিকনার সঙ্গে দেখা হয়?
না।
তুই এখন ওখানে থাকিস না?
মাঝে মাঝে যাই।
তুই কোন পার্টির মন্ত্রী?
অনাদি চুপ করে গেল।
আমাদের আর সব বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়?
মাঝে মধ্যে হয়।
তা হঠাৎ তুই এ বাড়িতে এলি?
এমনি। শুনলাম তুই কলকাতায় এসেছিস তাই।
ওর থেকেও আমাদের বেশি ইন্টারেস্ট ছিল আপনাকে দেখার। ভক্তিবাবু বললেন।
কেন। আমি কি কোনও….।
না না আপনার সম্বন্ধে অনেক গল্প শুনেছি ওনার কাছে। তা উনি যখন বললেন, অনি আমার বুজুম ফ্রেন্ড, তখন বললাম, চলুন তাহলে ওনার সঙ্গে আলাপ করে আসি।
আমার সৌভাগ্য।
তোরা কথা বল। আমরা উঠি—অনিমেষদা বলে উঠলো।
ঘরের ভিড়টা দেখলাম আস্তে আস্তে পাতলা হয়ে গেল।
তাকিয়ে দেখলাম টেবিলের ওপর ল্যাপটপটা অন করা আছে। স্কিন সেভার চলছে। ঘরের জানলা দরজা হাট করে খোলা। তিনজনে যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।
সব কথা সবার সামনে বলা যায়। অনাদি এগিয়ে এলো।
সেটা আগে বললেই পারতিস, সবাইকে ফুটিয়ে দিতাম।
সিগারেট খাবি।
ছেড়ে দিয়েছি।
ওরা তিনজন সিগারেট ধরালো।
সত্যি তুই একেবারে সাধু হয়ে গেছিস।
খিস্তী চলতে পারে—আর দুজন মন্ত্রীর দিকে তাকালাম।
জিভ বার করলেন।
এবার ভনিতা না করে খোলসা করে বল—
তুই তো সব জানিস। নতুন করে কি বলবো—
ঝেড়ে কাশ—
ব্যাপারটা নিয়ে তুই আর ঘাঁটা ঘাঁটি করিস না—
কোন ব্যাপার—
লোকটার আসল নাম মিঃ নীল টোডি—
বাজাচ্ছিস—
তোকে বাজাব এ সাহস আমার আছে—
হাসলাম।
তোর সিপি, এসপি, সচিব এতো ইন্টরোগেশন করে গেল।
আমি জানতাম না, তুই বিশ্বাস কর।
তোকে না জানিয়ে এরা এই সব কাজ করে ফেললো?
অনাদি চুপ করে রইলো।
দেখ ব্যাপারটা পলিটিক্যাল ইস্যু হয়ে গেছে। তাছাড়া আমার নামে তোর এসপি ওয়ারেন্ট বার করে ফেললো, আর তুই জানিস না। এটা বিশ্বাস করি কি করে?
তোর নামে না, অনি ব্যানার্জীর নামে।
হাসলাম।
তারমানে তুই এখনও আমার ওপর রাগ করে আছিস?
তুই আমার বাল্যবন্ধু। রাগ করতে পারি।
তোর সঙ্গে আমি পার্সোনালি কথা বলতে চাই।
এটা কি করছিস?
শুধু আমি তুই।
সম্ভাবনা কম।
আমি তোর ভালোর জন্য বলছি।
অনাদির দিকে তাকালাম। চোখের রং মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেল। নিজেকে সামলাতে গিয়েও পারলাম না। খুব ধীর স্থির ভাবে বললাম।
পর্শু ফার্স্ট ইনস্টলমেন্টটা বেরলে সেটা তুই বুঝতে পারবি।
তারমানে তুই লিখবি!
সেটা দেখতেই পাবি।
এরপর আমার কিছু করার থাকবে না।
মাথায় রাখবি দেবাকে আমি তুলে নিয়ে গেছি।
অনি!
তোর সিপি, এসপি, সচিব ম্যায় তোর পার্টির বাবার ক্ষমতা নেই তোকে বাঁচায়। আর তুই কি জানিস কার সঙ্গে বসে এখানে কথা বলছিস? গেট আউট স্কাউনড্রেল। এরা কেউ আমার রূপ দেখেনি, তুই দেখেছিস। আটচল্লিশ ঘণ্টা তোকে সময় দিলাম।
আমার গলার স্বরটা যতোটা রূঢ় হওয়া দরকার তার থেকে মনে হয় বেশি হয়ে গেছে।
গেটের কাছে দেখলাম ভিড় জমেগেছে। অনিমেষদা ভেতরে চলে এসেছে।
অনাদির মুখ শুকনো হয়েগেছে।
হঠাৎ এরকম একটা পরিবেশ তৈরি হয়ে যেতে পারে ঘরে বসে থাকা আর তিনজন বিশ্বাস করতে পারে নি।
কি হচ্ছে কি অনাদি!
বিশ্বাস করুণ দাদা।
তোর মন্ত্রীত্ব আমি ঘোঁচাব। তোর মুখ্যমন্ত্রীকে বলিস তার দম থাকলে তোকে বাঁচাতে।
তুই বৃথা আমার ওপর রাগ করছিস।
সেটা তুই পর্শুদিন থেকে বুঝতে পারবি।
প্লিজ অনিবাবু, অনাদিবাবুর ভুল হয়ে গেছে।
ভক্তিবাবু বলে উঠলেন।
আপনি একটু শান্ত হোন।
নিজের বউ কি খায় তার হিসাব রাখিস। সেটাও আমাকে রাখতে হয়। আমি মনে করি সে আমার ছোটো বোন।
দেখলাম চিকনা, বাসু ছুটে ঘের এলো।
অনাদির দিকে তাকাল।
কেন তুই ফালতু কথা বলছিস। চিকনা বললো।
তুই বিশ্বাস কর চিকনা। অনাদি বললো।
বিশ্বাসের তেইশ। তুই মন্ত্রী হয়েছিস তোর জায়গায় আছিস, তোর অনেক ক্ষমতা, এবার এ্যাপ্লাই করে দেখা। ঠেলা বুঝে যাবি।
আমাকে অনি ভুল বুঝছে।
চল চল তোকে আর এখানে থাকতে হবে না।
অনিমেষদা আমার হাত ধরে এ ঘরে নিয়ে চলে এলো। সুন্দরের মুখটা থমথমে। ও ওর ড্যাডকে এই অবস্থায় কখনও দেখেনি। ভ্যাবাচাকা খেয়ে গেছে।
রতন, আবিদরা চুপচাপ। শুধু চোখে চোখ রেখে ওয়াচ করে যাচ্ছে।
বারান্দা দিয়ে আসার সময় দেখলাম সাগির, অবতার, নেপলা এ ঘরের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে। ইসলামভাই, ইকবালভাই এ ঘরের দরজার সামনে স্থির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে। কারুর সঙ্গে কোনও কথা বললাম না।
আমি এ ঘরে সোফায় এসে বসলাম। বড়োমা, ছোটোমা দু-পাশে এসে বসলো।
জ্যেঠিমনি ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে থম মেরে বসে আছে।
সুন্দর, তনুকে জড়িয়ে ধরেছে। চোখ ছলছলে। অনিসা, অনন্য, শুভ মিত্রার পাশে। বাবার এই রূপ ওরা কখনও দেখেনি।
চেনা মুখগুলো হঠাৎ অচেনা দেখাচ্ছে। আমি গুম হয়ে বসে।
সেন্টার টেবিলের ফাঁক দিয়ে বাচ্চা দুটো আমার কোলে ঢুকে এলো।
আঙ্কেল লজেন খাবে?
মিলির মেয়ের গাল দুটো টেনে ধরলাম। একটা চুমু খেলাম। হাত দিয়ে মুখ মুছে নিল।
উঁ দাড়ি।
লজেন দে।
সুরোর ছেলের পকেটে হাত দিল।
তোরটা দে। সুরোর ছেলে বলে উঠলো।
না। নেই।
দেএএএ না।
হাসছি। থাক পরে খাব।
অনিমেষদা ঘরে ঢুকলো।
একবার চল।
না যাবে না। চলে যেতে বলুন। ছোটোমা ঝাঁকড়ে উঠলো।
উঃ ছোটো সব সময় মাথা গরম করলে চলে।
আপনার জন্য ও এতো বার বেড়েছে।
ঠিক আছে সে কথা এখন বলে কি হবে। অনিমেষদা আমার মুখের দিকে তাকাল।
তুই একবার চল।
কোথায় ও।
ও ঘরে বসে আছে।
চেলুয়াগুলো আছে না চলে গেছে।
আছে।
মিত্রা, তনু হাসছে।
এখানে ডাকো।
ডাকলে আসবে। তোর বন্ধু হতে পারে, ও তো এখন মন্ত্রী।
বাড়ি চলে যেতে বলো, ময়দানে দেখা হবে।
তুই সব সময় রণংদেহি মূর্তি।
মানে?
ঠিক আছে ভুল হয়ে গেছে। আমি ওকে বলেছিলাম এখানে আসলে কিছু হবে না।
কিছু তো হয় নি!
অনেক বেশি হয়ে গেছে। তোর হুল যার শরীরে বিঁধেছে সে বুঝেছে তার যন্ত্রণা কি।
বড়োমা হেসে ফেললো।
সুন্দরদের মুখের অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।
চলো। উঠে দাঁড়ালাম।
মিলির মেয়ের গালটা টিপে দিলাম। দাঁড়া আসছি।
ঘর থেকে বেরতেই দেখলাম সবাই ওই ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে। ইসলামভাইরা বাগানে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে।
ঘরে ঢুকে সোফায় এসে বসলাম।
দেখলাম ডাক্তারদাদা, দাদা, মল্লিকদা খাটে বসে আছে।
কি হয়েছে বল।
অনাদি আমার দিকে তাকাল।
তুই আমাকে ভুল বুঝছিস।
কিসের ভুল?
তুই বিশ্বাস কর আমি জানতাম না।
তাহলে যারা জানত তারা কেশ খাবে। তখন বুঝতে পারবো তুই জানতিস না।
এটা আপনি কেমন কথা বলছেন অনিবাবু। সচিব ভদ্রলোক বলে উঠলেন।
সচিব ভদ্রলোকের দিকে তাকালাম।
আপনার মন্ত্রীর সঙ্গে আমি কথা বলছি। আপনার কিছু নোট করার থাকলে করে নিন।
ব্যাপারটা তো এবার আমার ঘাড়ে চলে আসছে।
চুপ করুন। অনাদি ধমকে উঠলো।
ঘরের সবাই একটু অবাক হয়ে গেছে।
সব সময় প্যানপ্যানানি।
তার মানে! কিছু হলে আমিও ছাড়বো না।
কি বলতে চান কি আপনি। কালকেই আমি সিএমকে বলে আপনাকে আমার কাছ থেকে সরাবার ব্যবস্থা করবো।
আমি ওদের দেখছি আর মনে মনে হাসছি।
শোন অনাদি, বাড়ি যা, ভালো করে ভাবনা চিন্তা কর। আমার প্রত্যেকটা জিনিষ ঠিক মতো বুঝে পেয়ে গেলে চুপ করে যাব।
আমি সব ব্যবস্থা করে দেব।
ঠিক আছে।
লেখাটা তুই শুরু করিস না।
এটা আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার নয় যে তোকে না বলবো। তুই একটা কাগজের স্বাধীনতায় হাত দেবার চেষ্টা করছিস।
তুই ম্যাডামকে বল।
আইনত ম্যাডাম আমার স্ত্রী নয়।
অনাদি আমার মুখের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে।
ম্যাডাম অনি ব্যানার্জীর স্ত্রী। অনি ব্যানার্জী আজ থেকে আঠারো বছর আগে মারা গেছে। এটা তুই ভালো করে জানিস। সেই জায়গাটা ধরেই তো তুই এতদূর এগিয়েছিস।
অনাদি চুপ করে গেল।
আমার মনেহয় এরপর আর কোনও কথা থাকতে পারে না।
অনাদি আমার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে আছে।
ঠিক আছে আজ উঠি, মাঠে ময়দানে তোর সঙ্গে মাঝে মাঝে অবশ্যই দেখা হবে।
হাতজোড় করে দাঁড়ালাম।
অনাদির মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেল।
হঠাৎ অনাদি ঘুরে এসে আমার পায়ে হাত দিয়ে বসে পরলো।
তুই আমাকে বাঁচা অনি।
ঘরের সবাই অবাক। প্রবীরদারা পর্যন্ত বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে ফেলেছে।
ওঠ ওঠ। সবার মাঝে এসব কি করছিস? তুই একজন স্বনামধন্য মন্ত্রী। এসব দেখলে এঁরা কি মনে করবেন? এঁরা আমার সম্বন্ধে কিছুই জানেন না। তুই সব জানিস। আশা রাখি তোর কাছে সব কাগজপত্র এরইমধ্যে পৌঁছে গেছে।
তুই বিশ্বাস কর, আমি বুঝতে পারিনি।
এতদিন রাজনীতি করছিস। স্বরাষ্ট্রদপ্তরের মতো দপ্তর চালাচ্ছিস।
বিশ্বাস কর, আমি সত্যি বলছি।
এতবড়ো একটা খেলা তুই বুঝতে পারিসনি, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।
স্যার আমরাও কি জড়িয়ে পড়েছি?
ভক্তিবাবু কথাটা বলে আমার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
কি করে বলবো বলুন। হয়তো জড়িয়ে পড়েছেন।
কথাটা শোনার পর ভদ্রলোক কেমন থম মেরে গেলেন।
কাল দেশে যাব। আমি খুব শান্তিপ্রিয় মানুষ। রাস্তাঘাটে কোনও ডিস্টার্ব যেন না হয়। সেটা দেখার দায়িত্ব তোকে দিলাম।
তুই বললে কাল সকালে এস্কর্ট পাঠিয়ে দেব।
আমি মন্ত্রী নই, ভিআইপিও নই।
অনাদি চোখে চোখ রাখতে পারছে না। মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে।
তোর ফোন নম্বরটা দে।
এই মুহূর্তে আমার কোনও ফোন নং নেই। হলে তোকে জানিয়ে দেব।
অনাদিকে সঙ্গে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। বেরোবার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রইলো।
আসছি স্যার।
দু-জন মন্ত্রী বুকে হাত তুললেন।
সকলে অবাক হয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মন্ত্রীরা অনিকে ‘স্যার’ বলছে!
আমি নমস্কারের ভঙ্গিতে তার প্রীতি নমস্কার জানালাম।
বারান্দার শেষ মাথা পর্যন্ত এসে আমি আর গেলাম না।
আমি আর যাচ্ছি না। ভীষণ ক্লান্তি লাগছে।
না না ঠিক আছে।
অনাদিরা বাগানে নামলো। ইসলামভাই গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলো। আমি এসে বাইরের ঘরে ঢুকলাম। সুন্দর জড়িয়ে ধরলো।
ইউ আর রাইট ড্যাড। আমাকে বোন সব বলেছে।
হাসলাম।
আমি সোফার দিকে যেতে চাইলাম, প্রবীরদা পেছন থেকে হাতটা শক্ত করে ধরলো।
ওদিকে নয়, দাদার ঘরে।
কেন!
আমাদেরও কিছু জানার আছে।
শুনলে তো সব।
তুই জানিস আর অনাদি জানে, আমরা জানি না।
একটা ছোট্ট কাজ সেরে নিই।
আবার কি কাজ!
আছে।
প্রবীরদা হাসছে। দামিনীমাসি গরম চা।
তুই কি একা খাবি নাকি। অনুপদা, প্রবীরদার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো।
অনুপ, হিমাংশু কোথায়? মাসির দিকে তাকালাম।
তুই এক নম্বর দু-নম্বর করতো, শুধু গোলমাল পাকছে। অনুপদা বলে উঠল।
হাসলাম।
বাবা আঙ্কেলরা মাঠে।
অনিসা পেছন থেকে বলে উঠলো।
ওদের একটু ডাকতো।
ইসি।
দিদিভাই ও ঘরে। মিত্রা আমার দিকে তাকাল।
ইসি মনেহয় আমার কথা শুনতে পেয়েছে। বড়োমার ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
আমাকে ঝাড়বি নাকি?
পিকু কোথায়?
ওপরে, অনন্য, শুভর সঙ্গে কি করছে।
একবার ওদের ডাক।
অনুপ, হিমাংশু ঘরে এলো।
খামকা কেন লোকের রাতের ঘুম নষ্ট করিস। অনুপ ঢুকতে ঢুকতে বললো।
ওদের দুজনের কথায় আমি হাসলাম।
উইলটা বার কর।
ডাক্তারদাদা জোরে হেসে উঠলো। ঘরের আর সবাই চুপ।
সবাই ডাক্তারদার ওই রকম অট্টহাসির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে। আমিও ডাক্তারদার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসছি।
তোর সব কাজ টাইম বাঁধা, তাই না?
মাথা দোলালাম, অনুপের দিকে তাকালাম।
পড়িয়েছিস?
দাদা, মল্লিকদা, ডাক্তরদাদা পড়েছে।
মিত্রাকে দেখিয়েছিস?
বলেছি।
কি বললো?
মিত্রা আমার দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে।
আচ্ছা অনি তুই একটা কথার একটু জবাব দে।
প্রবীরদা আমার দিকে তাকিয়ে।
বলো।
তুই বললি মিত্রা তোর আইনত স্ত্রী নয়। তাহলে তোর স্ত্রী কোনটা?
এই মুহূর্তে কেউ নেই।
মিত্রা, তনু এবার জোরে হেসে উঠলো।
তাহলে এই বাড়িতে তুই কার পার্মিসনে ঢুকলি। কেনই বা মিত্রা তোর কথা শুনবে।
সরাসরি বলবো, না তোমাকে প্রশ্ন করবো, তার মধ্যে দিয়েই তুমি তোমার উত্তরটা পেয়ে যাবে।
প্রবীর কেন ঘাঁটাচ্ছ, ও সব ঘুঁটি সাজিয়ে এসেছে।
অনিমেষদা কথাটা বলেই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
বাবা ডেকেছো।
অনন্য সামনে এসে দাঁড়াল। ওর পেছনে শুভ, পিকু।
হ্যাঁ। অনুপ আঙ্কেল, হিমাংশু আঙ্কেল যেখানে যেখানে সই করতে বলবে, তুমি, পিকু, অনিসা তিনজনে সই করে দাও।
দাও করে দিচ্ছি।
কোথায় সই করছো একবার অনুপ আঙ্কেলের কাছ থেকে জেনে নেবে।
ছেলে মাথা দোলালো, অনিসা, পিকু আমার দিকে তাকিয়ে।
যাও দুদুনের ঘরে চলে যাও। ওরা আছে।
আমার তিরিশ হাজার।
প্রবীরদা হাত পাতলো।
ওরা তিনজন ভাগ করে দেবে।
এই তো, পুরোটা খরচের খাতায়।
মিত্রা, তনু দুজনেই হেসে উঠলো।
ব্যাপার কি-রে ছুটকি! ইসি জিজ্ঞাসা করলো।
সামনে দাঁড়িয়ে আছে জিজ্ঞাসা কর।
ইসি হাসছে।
কাল থেকে ক্যাম্পেনিং চালু করে দাও। প্রবীরদার দিকে তাকালাম।
সে তুই বলতে। দাদা ডিস্ট্রিক্টে খবর পাঠিয়ে দিয়েছে।
অনিমেষদার দিকে তাকালাম। হাসছে।
তোকে পাত্তা দিল না। ইসির দিকে তাকিয়ে মিত্রা বললো।
না।
আমাদেরও এরপর থেকে দেবে না।
ইসলামভাইরা সকলে মিলে ঘরে ঢুকলো।
পেছন পেছন নেপলা, সাগির। দু-হাতে চারটে প্লাস্টিকের ব্যাগে করে অনেকগুলো প্যাকেট নিয়ে ঢুকলো। ইকবালভাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে।
কাছে এসে জড়িয়ে ধরলো।
তোকে এই জন্য ভালো লাগে। তুই প্রত্যেকের কাজ বেশ সুন্দর ভাবে ভাগ করে দিয়েছিস।
মিট মিটে শয়তান, নিজের গায়ে একটুও আঁচড় লাগতে দেবে না। ছোটোমা কট কট করে উঠলো।
না বহিন শুধু নিজের নয়। ওর আশে পাশে যারা আছে তাদেরও কোনও ক্ষতি হলে ও ঠিক থাকতে পারে না।
ছোটোমা কাছে এগিয়ে এলো। ধরবো কানটা।
ও ছোটো ওরকম করিস না। ছেলে মেয়ারা কি ভাববে।
ছোটোমা হাসি হাসি মুখে বড়োমার দিকে তাকাল।
সায়ন্তন ঝড়ের মতো ঘরে ঢুকলো।
ম্যাডাম দারুন ছবি এসেছে।
তাই!
মিত্রারা সায়ন্তনের পেছন পেছন বেরিয়ে গেল।
কিসের ছবি!
প্রবীরদা আমার দিকে তাকিয়ে।
কি করে বলবো।
অর্ধেক ঘর ফাঁকা হয়ে গেল।
অনিমেষদা উঠতে গিয়েও বসে পরলো।
পরে দেখবো।
বিধানদা হাসছে।
টেবিলে সব প্লেট পাতা হয়ে যাচ্ছে। বুঝতে পারছি টিফিনের ব্যবস্থা হচ্ছে।
দামিনী একটু চা খাওয়াবে না? বিধানদা বললো।
খাবারটা খেয়ে নিন।
তুমি চা দাও আগে। মাথা ধরে গেছে।
ইকবালভাই, ইসলামভাই, আমি এসে সোফায় বসলাম।
তুই কবে ফিরছিস? অনিমেষদা আমার দিকে তাকাল।
পর্শু কাজটা করবো। পরদিন।
এরা তোর সঙ্গে যাবে?
কাল সকালে আমি বেরিয়ে যাব। ছেলে, মেয়ে, পিকু সকালে একটু কোর্টে যাবে। তারপর যদি পারে চলে যাবে। না হলে পর্শু দিন সকাল।
হবে না।
বড়োমা রান্নাঘরের সামনে থেকে চেঁচিয়ে উঠলো।
আমি তাকালাম।
আমি তোর সঙ্গে যাব। তোকে একলা ছাড়বো না।
অনিমেষদা হাসছে।
সুরো, তোর বৌদি, অংশু যাবে বলেছে।
জ্যেঠিমনি কাঁদো কাঁদো মুখে দাদার ঘর থেকে বেরিয়ে বড়োমাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
বড়োমা একটু অবাক হয়ে গেছে।
ওরা তিনজন হাসতে হাসতে এসে আমাকে প্রণাম করলো। আমি উঠে দাঁড়ালাম। ওরা সবাইকে প্রণাম করছে। ইকবালভাইকে অনিসা প্রণাম করতে যেতেই হাতটা চেপে ধরলো।
দাঁড় করিয়ে কপালে চুমু খেলো।
বাবাকে চিনতে পারলি?
সৌম্য শান্ত মুখখানা। গা দিয়ে ভুর ভুর করে আতরের গন্ধ বেরচ্ছে।
অনিসা মাথা নীচু করে।
বল। আমি যা বললাম, ঠিক কিনা?
অনিসা কোনও কথা বললো না।
এই কয় মাসে আমাকে অনেক প্রশ্ন করেছিস, সঠিক উত্তর দিতে পারিনি। জানলেও বলতে পারিনি। ওর সাধনায় ব্যাঘাত ঘটবে। আজ বুঝতে পারলি বাবার কিছু নেই।
অনিসা ছল ছল চোখে ইকবালভাই-এর দিকে তাকাল।
তোরাই ওর সব।
একটু থেমে।
এই মর্যাদা টুকু রাখিস।
অনিসা মাথা নামিয়ে নিল।
আমরা বিজাতীয় হয়েও ওকে কেন এতো ভালোবাসি, বুঝতে পারছিস।
ইকবালভাই। আমি চেঁচিয়ে উঠলাম।
আমায় বলতে দে অনি। ওরা আগামী দিনের কারিগর। ওদের জানা উচিত।
আমি চুপ করে গেলাম।
(আবার আগামীকাল)
অসাধারণ