শুক্রবার | ১৬ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ | দুপুর ১২:৩৬
Logo
এই মুহূর্তে ::
চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (শেষ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস জাতিভিত্তিক জনগণনার বিজেপি রাজনীতি : তপন মল্লিক চৌধুরী গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তালশাঁসের চাহিদা : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (ষষ্ঠ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস ভারতের সংবিধান রচনার নেপথ্য কারিগর ও শিল্পীরা : দিলীপ মজুমদার চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (পঞ্চম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস আলোর পথযাত্রী : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (চতুর্থ পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস কন্নড় মেল্ল থেকেই সিন্ধুসভ্যতার ভূখণ্ডের প্রাচীন নাম মেলুহা : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (তৃতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস লোকভুবন থেকে রাজনীতিভুবন : পুরুষোত্তম সিংহ চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (দ্বিতীয় পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস রবীন্দ্রনাথের চার্লি — প্রতীচীর তীর্থ হতে (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত রবীন্দ্রনাথের ইরান যাত্রা : অভিজিৎ ব্যানার্জি ঠাকুরকে ঠাকুর না বানিয়ে আসুন একটু চেনার চেষ্টা করি : দিলীপ মজুমদার যুদ্ধ দারিদ্র কিংবা বেকারত্বের বিরুদ্ধে নয় তাই অশ্লীল উন্মত্ত উল্লাস : তপন মল্লিক চৌধুরী রবীন্দ্রনাথ, পঁচিশে বৈশাখ ও জয়ঢাক : অসিত দাস রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীজী ও শান্তিনিকেতন : প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় বাঙালী রবীন্দ্রনাথ : সৈয়দ মুজতবা আলী অনেক দূর পর্যন্ত ভেবেছিলেন আমাদের ঠাকুর : দিলীপ মজুমদার রবীন্দ্রনাথের প্রথম ইংরেজি জীবনী : সুব্রত কুমার দাস চল্লিশের রাজনৈতিক বাংলার বিস্মৃত কথাকার সাবিত্রী রায় (প্রথম পর্ব) : সুব্রত কুমার দাস শুক্লাম্বর দিঘী, বিশ্বাস করে দিঘীর কাছে কিছু চাইলে পাওয়া যায় : মুন দাশ মোহিনী একাদশীর ব্রতকথা ও মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত নিজের আংশিক বর্ণান্ধতা নিয়ে কবিগুরুর স্বীকারোক্তি : অসিত দাস ঝকঝকে ও মজবুত দাঁতের জন্য ভিটামিন : ডাঃ পিয়ালী চ্যাটার্জী (ব্যানার্জী) সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে দেখা : লুৎফর রহমান রিটন সংস্কৃতি জগতের এক নক্ষত্রের নাম বসন্ত চৌধুরী : রিঙ্কি সামন্ত আংশিক বর্ণান্ধতাজনিত হীনম্মন্যতাই রবীন্দ্রনাথের স্কুল ছাড়ার কারণ : অসিত দাস
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা (গুরু পূর্ণিমা) আন্তরিক প্রীতি শুভেচ্ছা ভালোবাসা।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

সতীর ৫১ পীঠের (শক্তিপীঠ) শুলুক সন্ধানে (তৃতীয় পর্ব) : জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়

জ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায় / ১১৫২ জন পড়েছেন
আপডেট বুধবার, ৩ নভেম্বর, ২০২১

এই পর্বে আরও বেশ কিছু শক্তিপীঠের কথা উল্লেখ করা হলো। বিভিন্ন গবেষক বিভিন্ন শক্তি পীঠের কথা উল্লেখ করেছেন। কিছু মতভেদও রয়েছে। তবে মাথায় রাখতে হবে সতীর ৫১ পীঠ হচ্ছে শক্তিপীঠ। আর সব সিদ্ধপীঠ।

অমরকণ্টক : নর্মদা মন্দির থেকে ৪-৫ কিলোমিটার দূরে শোনমূঢ়া। এখানে শোন নদীর উত্পত্তিস্থলে গড়ে উঠেছে দেবী শোনাক্ষীর মন্দির, যা একান্ন সতীপীঠের অন্যতম পীঠ। কথিত আছে, শোনমূঢ়ায় দেবীর বাম নিতম্ব পড়েছিল। যেখানে সতী, সেখানেই শিব। শোনাক্ষী দেবীর মন্দিরের পাশেই রয়েছে শিবলিঙ্গ। শঙ্কর এখানে মহাকাল ভদ্রসেন নামে পূজিত হন। সতীপীঠের স্থান নির্বাচন নিয়ে মতভেদ যাই থাক না কেন, অমরকণ্টকের স্থান মাহাত্ম্য নিয়ে কোনও সংশয় নেই। শোনা যায় যে, সূর্যবংশীয় রাজা মান্ধাতা এই মন্দির নির্মাণ করেন ছয় হাজার বছর আগে। আরও অনেক গল্প কথা স্থানীয় মানুষদের থেকে শোনা যায়।

কন্যাকুমারী : আরবসাগর, বঙ্গোপসাগর, ভারত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত দক্ষিণ ভারতের সর্বশেষ মন্দির। দেবী দুর্গা বাণাসুরকে বধ করেছিলেন কুমারী রুপে। বাণাসুরের ওপর বর ছিল তাকে যে বধ করবে সে যেন চিরকুমারী হয়। তাই দেবী কন্যাকুমারী রুপে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আবার মনে করা হয় এটি একটি সতীপীঠ। এখানে দেবী সতীর পৃষ্ঠদেশ পতিত হয়েছিল। দেবী এখানে কুমারী এবং ভৈরব নিমিষ নামে খ্যাত।

কঙ্কালীতলা : বীরভূমের বোলপুর স্টেশন থেকে ৯ কিমি উত্তর-পূর্বে কোপাই নদীর তীরে এই সিদ্ধস্থান অবস্থিত। দেবী স্থানীয় মানুষদের কাছে কঙ্কালেশ্বরী নামে পরিচিত। এখানে দেবীর শ্রোণি পতিত হয়। দেবীর নাম এখানে দেবগর্ভা ও ভৈরব রূরূ নামে প্রসিদ্ধ। পাশেই একটা কুন্ড আছে যার জল নাকি কখনও শুকায় না। ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্যগ্রন্থ অনুসারে এখানে সতীর কোমরের অংশ পড়েছিল। এই পীঠকে একান্নপীঠের সর্বশেষ পীঠ বলা হয়। সতীর কঙ্কাল পৃথিবীর বুকে পড়ে যাবার পরেই মহাদেবের চৈতন্য আসে। সেই কারণে এই পীঠ চৈতন্যপীঠ নামেও পরিচিত।

কঙ্কালীতলা সতীপীঠে আগে কোনও মন্দির ছিল না। শুধুমাত্র একটি কুণ্ড ছিল। পরে মন্দির তৈরি হয়। প্রচলিত জনশ্রুতি অনুসারে কয়েকশো বছর আগে এক সাধু এই পীঠের অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন। পরবর্তীকালে  আরেকজন মায়ের সাধককে মা স্বপ্নাদেশ দিয়ে জানান তিনি ওই কুণ্ডের জলে নিমজ্জিত আছেন। স্বপ্নাদেশে সেই সাধক মায়ের পুজোর ব্যবস্থা করার আজ্ঞা পান। স্থানীয়দের মতে এই মন্দিরে রাত্রিনিবাস করা কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। এখানে নাকি নানা বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে থাকে। মায়ের কঙ্কাল নিমজ্জিত কুণ্ডে সচরাচর কেউ নামে না। বিশ্বাস করা হয় কেউ এই জলে নামলে তার ক্ষতি হবে। এই কুণ্ডের জলে কিছু পাথর নিমজ্জিত রয়েছে এগুলোকেই অনেক ভক্ত দেবীর দেহাংশ বলে মনে করেন। বলা হয় এই পাথর খণ্ডগুলি কুড়ি বছর অন্তর কুণ্ড থেকে তোলা হয়। পূজা শেষে সেগুলিকে পুনরায় কুন্ডের জলে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। বলা হয় গরমকালে বীরভূমের অনেক জায়গার জলাশয় শুকিয়ে গেলেও এই কুণ্ডের জল নাকি শোকায় না। অনেকের মতে সুড়ঙ্গের মাধ্যমে কঙ্কালীতলার সাথে কাশীর মণিকর্ণিকা ঘাটের সরাসরি যোগাযোগ আছে।

রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বাংলার ইতিহাস’ নামক বইতে উল্লেখ আছে প্রথম মহীপালের রাজত্বের সময়কালে রাজা ছিলেন কাঞ্চিরাজ রাজেন্দ্রচোল। তিনি সেই সময় অনেক রাজাকে পরাজিত করেছিলেন। বলা হয় অনেক বছর আগে বীরভূমের এই জায়গাটি কাঞ্চিরাজের অধীনে ছিল। কাঞ্চিরাজা ছিলেন শিবভক্ত। তিনি কোপাই নদীর তীরে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই থেকে এখানের শিবলিঙ্গ রাজার নামানুসারে কাঞ্চীশ্বর শিবলিঙ্গ নামেও পরিচিত। এই শিবমন্দিরের পাশে রয়েছে মহাশ্মশান ও পঞ্চবটিবন।

কর্ণাট : হিমাচলপ্রদেশের কাঙরা অঞ্চলেই এই তীর্থস্থান অবস্থিত। এখানে দেবীর কর্ণযুগল পতিত হয়। দেবী জয়দুর্গা রূপে পূজিতা ও ভৈরব আভীর নামে পরিচিত।

কিরীটেশ্বরী (কিরীট) : মুকুট-সহ দেবীর শিরোভূষণ পড়েছিল এখানে। বর্তমান অবস্থান মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জে। দেবীর পরিচয় এখানে কিরীটেশ্বরী বা মুকুটেশ্বরী নামে। শিব পূজিত হন সংবর্ত রূপে। মুর্শিদাবাদের লালবাগ কোর্ট রোড স্টেশন থেকে ৩ কিমি দূরে কিরীটকোনা গ্রামে এই সতীপীঠ অবস্থিত। এখানে দেবীর কিরীট বা মাথার মুকুট পড়েছিল। হাজার বছরের প্রাচীন এই মন্দির। আসল মন্দির ১৪০৫ সালেই ধ্বংস হয়ে যায়। নতুন মন্দির নির্মাণ করেন ১৯ শতকের লালগোলার জমিদার দর্পনারায়ণ। একটি কাহিনি থেকে জানা যায়, পলাশীর যুদ্ধের পর যখন মিরজাফর, নবাব সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করে তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা রাজবল্লভকে ডুবিয়ে মারেন। সেই দিন এই মন্দিরের এক শিবলিঙ্গ নাকি নিজে থেকেই ফেটে গিয়েছিল। তার চাইতেও বড় কথা, মিরজাফর শেষ বয়সে কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত হন। তিনি তখন নাকি অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন। তাঁর বিশ্বাস জন্মায়, দেবীর চরণামৃত পান করলে তিনি রোগমুক্ত হবেন। দেবীর চরণামৃত যখন তাঁর কাছে পৌঁছয়, তখন সুবে বাংলার নবাব শেষ নিশ্বাস নিচ্ছেন। দেবীর চরণামৃত মুখে নিয়েই নাকি প্রয়াত হন বাংলার ইতিহাসের অন্যতম বিতর্তিক চরিত্র মিরজাফর।

আনন্দময়ী : ৫১ সতীপীঠের (Sati Pith) অন্যতম হুগলির খানাকুলের রত্নাবলী কালীমন্দির (Ratnabali Temple)। পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এখানে মায়ের দক্ষিণ স্কন্ধ বা ডান কাঁধ পড়েছিল। রত্নাকর নদীর নামানুসারে মায়ের নাম রত্নাবলী। ঘণ্টেশ্বর মন্দির (Ghanteshwar Temple) এবং সংলগ্ন এই সতীপীঠ ভক্তদের কাছে বরাবরই প্রিয়। মন্দিরের ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটলে জানা যায়, আগে এখানে বাবা ঘণ্টেশ্বর প্রতিষ্ঠিত হন, পরে আসেন মা রত্নাবলী। মন্দির সম্বন্ধে যে মিথটি অনেককাল ধরে চলে আসছে, “অনেককাল আগে খানাকুলের পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দা বটুক কারকের একটি গরু এই অঞ্চলে একটি শিমূল গাছের পাশে এসে দুধ দিত। কিন্তু কোনওভাবেই বাড়িতে দুধ দিত না গরুটি। রোজ রোজ এই ঘটনা ঘটতে দেখে মনে প্রশ্ন জাগে বটুকবাবুর। একদিন তিনি শিমূল গাছের পাশে ওই নির্দিষ্ট জায়গাটি চিহ্নিত করে সেখানে খনন কার্য শুরু করেন। কিছুটা খোঁড়ার পরেই দেখা মেলে ভগবান শিবের, বা বলা ভাল বাবা ঘণ্টেশ্বররের। এরপর ওই এলাকায় আসেন বর্ধমানের জমিদার বংশের সন্তান স্বরূপ নারায়ণ ব্রহ্মচারী। তিনি ধ্যানে বসে জানতে পারেন ওই অঞ্চলের পাশেই পড়েছে সতীর দক্ষিণ স্কন্ধ বা ডান কাঁধ। একদিন গভীর রাতে শিমূল গাছের পাশে যেখান থেকে বাবাকে পাওয়া গিয়েছিল সেই একই জায়গা থেকে একটি স্ফুলিঙ্গকে সংলগ্ন একটি জায়গায় পড়তে দেখেন স্বরূপ নারায়ণ। এরপর সেই স্থানে গিয়ে একটি প্রস্তর খণ্ড পান স্বরূপ নারায়ণ ব্রহ্মচারী। সেখানেই ধ্যানে বসেন তিনি। এরপর মায়ের আদেশে তিনি মূর্তি গড়ে সাধান শুরু করেন। এমনকি মায়ের আদেশেই শবদেহের ওপর আসন বানিয়ে ধ্যানে বসেন স্বরূপ নায়ারণ এবং সেখানেই দেহ রাখেন। তবে সেই প্রস্তর খণ্ডটি তিনি কোথায় রেখে গিয়েছেন তা আজও জানা যায়নি। স্বরূপ নারায়ণের নির্দেশ মতো আজও মায়ের পুজোয় প্রথম সংকল্প হয় তাঁর নামেই।” মন্দিরের বয়স প্রায় ৭০০ বছর।

ভ্রামরী (ত্রিসোতা) : জলপাইগুড়িতে তিস্তার তীরে শালবাড়ি গ্রামে পড়েছিল সতীর বাঁ-পায়ের পাতা। তিনি এখানে ভ্রামরী। শিব পূজিত হন ঈশ্বররূপে। সতীর ৫১ পীঠ নিয়ে আছে বহুমত, দ্বিমত। কথা, উপকথা অনুসারে যুগে যুগে পল্লবিত হয়েছে বিশ্বাস। এবং সেই সনাতনী বিশ্বাসেই মিলিয়ে গেছে বস্তু। না’ই বা হল তর্কের দূরত্ব মেপে দেখা।

এই ‘ত্রিস্রোতা’ শক্তিপীঠে এসে পতিত হয়েছিল দেবী সতীর বাঁ পায়ের বুড়ো আঙ্গুল।এখানে দেবী ‘ভ্রামরী’ আর ভৈরব ‘ঈশ্বর’ নামে পূজিত হন। এই শক্তিপীঠের অবস্থান জলপাইগুড়ি জেলার বোদা অঞ্চলে শালবাড়ি গ্রামে তিস্তানদীর তীরে। জলপাইগুড়ির গোশালা মোড় থেকে উত্তর-পশ্চিম দিকে এই তীর্থস্থানের অবস্থান।কোচবিহার থেকে যেতে হলে গোশালা মোড়ে দেবী চৌধুরাণী মন্দিরকে বাঁয়ে রেখে ডানদিকের রাস্তা বরবর সোজাসুজি যেতে হবে। গোশালা মোড় থেকে মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ১৬ কিমি। পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় ২৬ মিনিটের কাছাকাছি। দেবী মন্দির পৌঁছাবার রাস্তাটি চলে গেছে বৈকুন্ঠপুর ফরেস্টের মধ্য দিয়ে। প্রবেশপথের কিছু আগে গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে।সেখান থেকে শান বাঁধানো পথ চলে গেছে মন্দিরের প্রবেশ দরজা। মন্দিরে প্রবেশ করতেই সামনে দেবীমূর্তি। দেবী সালংকারা ও অষ্টভূজা। সুন্দর শাড়ি পরিহিতা।দেবীর মাথায় সুন্দর রূপোর মুকুট আর তার থেকে দেবীর কপালের উপর টিকলি ঝুলছে। অপরূপ দেবী মূর্তি দেখে চোখ জুড়ায়। পাশে রাখা আছে পিতলের তৈরী দেবীর চরণদ্বয়, যা পূজিত হয়। দেবীর ডান পাশে মহাদেবের মূর্তি আর তাঁর পাশে বসে আছেন ষাড় রূপী নন্দী মহারাজ। কক্ষের থেকে সিঁড়ি দিয়ে কয়েকধাপ নিচে নামলেই ভ্রামরী মাতার মন্দিরের গর্ভগৃহ। যেখানে দেবী সিংহবাহনা, দেবীর গাত্র কৃষ্ণবর্ণা। সামনের বেদীতেই রয়েছে দেবীর প্রস্তরীভূত বামপদ। সেই চরণে সধবামহিলারা সিঁদুর ঢেলে দিয়ে তাঁদের স্বামীর মঙ্গল কামনায় আবার কিছু সিঁদুর কৌটাতে তুলে নিয়ে আসে। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন দেবদেবী। এমনকি বীরভদ্রের কাঁধে সতীর দেহ সমেত মূর্তিটিও। শরৎকালে নবরাত্রির পূজোয় সেজে ওঠে মন্দির। চলতে থাকে দেবীর আরাধনা। ভক্ত সমাগম হয় প্রচুর। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন পূজো অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া মন্দির প্রাঙ্গনের বাইরের দিকে আছে বিশালাকায় শিবমূর্তি।

মানস সরোবর : পুরাণে আছে মা সতীর ডান হাত মানস সরোবরে পড়েছিল। এখানে দেবীর নাম দাক্ষায়ণী আর ভৈরবের নাম হর। এই দেবীর ভৈরবের নাম অনেকের মতে অমর। ভারতচন্দ্রের অন্নদামঙ্গল কাব্য অনুসারে ভৈরবের নাম হর। পীঠনির্ণয়তন্ত্র বলে—মানসে দক্ষহস্তো যে দেবী দাক্ষায়ণী হর। অমরো ভৈরবস্ত্রত্র সর্বসিদ্ধি প্রদায়কঃ।। ভ্রমণবিদ ভূপতি রঞ্জন দাসের মতে মানসে দেবীর বাম হস্ত পতিত হয়েছিল। ‘নামষ্টোত্তরশতম’ মতে “মানসে কুমুদা নামা বিশ্বকায়া তথাম্বরে”। এর মতে দেবীর নাম এখানে কুমুদা। চিন্তাহরণ চক্রবর্তী তাঁর ‘তন্ত্র কথা’ তে লিখেছেন—মানস সরোবরের দেবী হলেন ভীষনাকৃতি দেবী দশভুজা।

পুষ্কর (মণিবেদক) : দেবীর হাতের তালু থেকে কনুই অবধি অর্থাৎ মণিবন্ধ পড়েছিল এখানে। সতী এখানে পূজিত হন গায়ত্রী নামে। শিবের নাম সর্বানন্দ। রাজস্থান মরুভূমি ও শুকনো এলাকা হলেও এই স্থান ভক্তির জন্য বিখ্যাত। এখানে একটি পবিত্র কুন্ড আছে। তার নাম পুস্কর। এই কুন্ডের জল মহাপবিত্র। রাজপুতনার পরিহার বংশীয় রাজা লহোর ছিলেন কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত। একদা তিনি এই অঞ্চলে শিকারে আসেন। একটি শ্বেত বরাহের পেছনে ছুটতে ছুটতে তিনি এই এলাকায় এসে তৃষ্ণার্ত হয়ে মজে যাওয়া সেই পুকুরের জল পান করেন। এতে তার শরীরের রোগ সকল সেড়ে যায়। পদ্মপুরান অনুযায়ী এই কুন্ডের ধারে প্রজাপতি ব্রহ্মা যজ্ঞ করেছিলেন। ব্রহ্মা যে স্থানে যজ্ঞ করেছিলেন সেই যজ্ঞবেদীর পশ্চিম দিকে গায়ত্রী মাতার মন্দির দেখা যায়। পূর্ব দিকের পাহাড়ের ওপর সাবিত্রী দেবীর মন্দির দেখা যায়। মহাভারতে এই তীর্থের বর্ণনা আছে। বলা হয় এখানে স্নান করলে সমস্ত মনোবাসনা পূর্ণ হয়।

মিথিলা : সতীর বাঁ-কাঁধ ছিটকে এসে পড়ে এখানে। দেবী এখানে মহাদেবী এবং শিব পূজিত হন মহোদর রূপে। বর্তমানে জনকপুর স্টেশনের কাছে এই তীর্থস্থান।

নেপালের জনকপুর বা মিথিলায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপুর্ণ শক্তিপীঠ হল উমা শক্তিপীঠ। ভৌগলিক অবস্থানের হিসেবে এই মহা শক্তিশালী শক্তিপীঠের অবস্থান ভারতের বিহার ও নেপালের সীমান্ত ঘেষে। এই পবিত্র শক্তিপীঠের সাথে জড়িয়ে আছেন দেবী শক্তি এবং শ্রীরামচন্দ্রের সহধর্মিনী মাতা সীতা। এখানে দেবী পুজিতা হন উমা বা মহাদেবী নামে। দুর্গের আদলে তৈরি এই মন্দির। দেবী উমা ও ভৈরব মহোদরের পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে এই মন্দিরের আকর্ষণ অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয় মন্দিরের সামনে অবস্থিত রঙিন ঝর্ণা। সতীপীঠের পাশাপাশি ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে এই স্থানের। রামায়নের কাহিনী অনুসারে, জনকপুরী হল জনক রাজার রাজত্ব এবং দেবী সীতার জন্মস্থান। ভক্তদের জন্য প্রতিদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মন্দির খুলে রাখার পাশাপাশি, রামনবমী ও জন্মষ্টমীতে বিশেষভাবে সেজে ওঠে মন্দির চত্ত্বর। দুর্গাপুজো, কালীপুজো, নবরাত্রির পাশাপাশি শিবরাত্রি, হোলি, দিওয়ালি-সহ নানা উৎসবে সেজে ওঠে এই মন্দির প্রাঙ্গন। দেবী ভগবতীর নাম অনুসারে দুর্গাস্থান নামেও পরিচিত হয় মিথিলাচল।

নয়নাতিভু (মণিপল্লবম) : শ্রীলঙ্কার উত্তরাংশে জাফনা থেকে ৩৬ কিমি দূরে এই পবিত্র তীর্থস্থান। পৌরাণিক মত অনুযায়ী, প্রাচীন সিংহলের এই অঞ্চলে পড়েছিল সতীর পায়ের মল। সতী এখানে ইন্দ্রাক্ষ্মী। শিব হলেন রক্ষশেশ্বর। পৌরাণিক মত অনুযায়ী ইন্দ্রাক্ষ্মীর মূর্তি বানিয়ে পুজো করতেন স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র।


আপনার মতামত লিখুন :

Comments are closed.

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন