শুক্রবার | ৩১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ | রাত ৪:১৪
Logo
এই মুহূর্তে ::
জিবিএস নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই, মত চিকিৎসকদের : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ বিমল কর-এর ছোটগল্প ‘খিল’ মৌনী অমাবস্যায় তৃতীয় শাহি স্নান : রিঙ্কি সামন্ত ঢেঁকি নেই, নেই ঢেঁকিশাল, গ্রামের মানুষের কাছে আজ ইতিহাস : মোহন গঙ্গোপাধ্যায় টাকা মাটি, মাটি টাকা : দিলীপ মজুমদার মির্জা নাথানের চোখে বাংলার ভুঁইয়াদের হাতি : মাহবুব আলম ভিয়েতনামের গল্প (অষ্টম পর্ব) : বিজয়া দেব ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (শেষ পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত “কপোতাক্ষ নদ”-এর কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত : আসমা অন্বেষা কৃষ্ণনগরে সর্বধর্ম ভ্রাতৃত্ব সমাবেশ : ড. দীপাঞ্জন দে চোখের ক্যানসার থেকে সাবধান! দিন দিন বাড়ছে, আগাম সতর্কতা জরুরি : ডা. তনুশ্রী চক্রবর্তী রাখাইন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন বিদ্বজ্জনসমাজ ও জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির কবিয়ালের প্রেত : অসিত দাস ষষ্ঠীলা একাদশী বা ষটতিলা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য : রিঙ্কি সামন্ত একদা বিরুদ্ধরাই আজ নেতাজির স্তুতিগানে সরব : সন্দীপন বিশ্বাস জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পদবি ঠাকুর থেকে Tagore হওয়ার নেপথ্যকাহিনী : অসিত দাস সুভাষের সুবাসে এখনও ম ম করছে ডালহৌসি শহরের বাতাস — এ এক তীর্থক্ষেত্র : মৈত্রেয়ী ব্যানার্জী তারাভরা তারানাথ (১৮১২-১৮৮৫) : নন্দিনী অধিকারী ‘জাওয়ানি জানেমান হাসিনা দিলরুবা’র একাকিত্বের কাহিনী (প্রথম পর্ব) : রিঙ্কি সামন্ত জোটে ব্রাত্য কংগ্রেস কি দিল্লি ভোটের পর আরও গুরুত্ব হারাবে : তপন মল্লিক চৌধুরী খালাসিটোলা, রবীন্দ্রনাথ ও পঞ্চানন কুশারী : অসিত দাস পীযূষ পাঠ প্রস্তাব : ড. পুরুষোত্তম সিংহ চর্যাপদে সমাজচিত্র : নুরুল আমিন রোকন বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (শেষ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ‘প্রাগৈতিহাসিক’-এর অনন্য লেখক মানিক : ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বাংলা গান থাকুক সহৃদয়-হৃদয়-সংবাদী (একাদশ পর্ব) : আবদুশ শাকুর ভেটকি থেকে ইলিশ, চুনোপুঁটি থেকে রাঘব বোয়াল, হুগলির মাছের মেলায় শুধুই মাছ : রিঙ্কি সামন্ত দিল্লি বিধানসভায় কি বিজেপির হারের পুনরাবৃত্তি ঘটবে : তপন মল্লিক চৌধুরী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে রাখাইন — বাংলাদেশের সামনে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা : হাসান মোঃ শামসুদ্দীন
Notice :

পেজফোরনিউজ অর্ন্তজাল পত্রিকার (Pagefournews web magazine) পক্ষ থেকে বিজ্ঞাপনদাতা, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী সকলকে জানাই পৌষ পার্বণ ও মকর সংক্রান্তির শুভেচ্ছা আন্তরিক শুভনন্দন।  ❅ আপনারা লেখা পাঠাতে পারেন, মনোনীত লেখা আমরা আমাদের পোর্টালে অবশ্যই রাখবো ❅ লেখা পাঠাবেন pagefour2020@gmail.com এই ই-মেল আইডি-তে ❅ বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ করুন,  ই-মেল : pagefour2020@gmail.com

বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী : পুরুষোত্তম সিংহ

ড. পুরুষোত্তম সিংহ / ১৮ জন পড়েছেন
আপডেট বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৫

অনিশ্চয় চক্রবর্তী এক বোধের গল্প বলেন। এক সুস্থ পৃথিবীর সন্ধানে যান। হিংসা, ক্লেদ, বিচ্ছিন্নতা, আমাদের বিবেক ও চেতনা শূন্যতা থেকে শুভ বোধে ফিরে যান। তাঁর নির্মিত চরিত্ররা আত্মযন্ত্রণা, নষ্ট সমাজের দংশনে ক্ষতবিক্ষত হতে হতে আত্ম উপলব্ধির চেতনায় ফিরে যায়। জীবনানন্দের নায়কের মতো নিজেই নিজের বিসর্জন রচনা করে না, বরং এই আলো পৃথিবীর স্বপ্ন দেখে। অন্ধকারের বিপরীতে দাঁড়িয়ে, সমস্ত নষ্ট পদাবলির হাত থেকে বাঁচতে, বিপন্নতা, অস্থিরতা অতিক্রম করে পৃথিবীর সহজ সরল জীবন স্বপ্নে, বিশ্বাসে ফিরে যায়। আত্মস্বার্থ মানুষের হীনচেতনা, স্বার্থমনস্কতা সমাজ, সময়, প্রজন্মকে ক্রমেই ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে কেউ কেউ সুস্থ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেন, দেখান। সমাজ, পরিবেশ, ইতিহাস ক্রমেই মানুষকে অসুখগ্রস করে তুলছে। এই রসায়নিক প্রক্রিয়া থেকে মানুষকে বাঁচতে হবে। মধ্যবিত্ত মন, আত্মক্ষয়ী বিবেক, এলিট জীবনচিন্তা, আপাত আত্মলোলুপ অহংকারী জীবন বিন্যাস যে কতখানি ভুল নর্মাল লাইফের ক্ষেত্রে তা অরণ্যের স্রষ্টা জানেন। সহজ লোকের মতো আর কে চায় বাঁচিতে, কে চায় নতুন পৃথিবীর স্বপ্ন দেখিতে। ‘আমি’র দংশন ক্ষত নায়ক ক্রমেই ডুবে যায় চোরাবালিতে। এতে কোনো বিবেক দংশন নেই। ফলে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুলভুলাইয়া জগতে বিচরণ করতে করতে সুস্থ বোধ, জীবনস্বপ্নগুলিই ভুলে যায়। শিকড় থেকে বিচ্যুত হয়ে প্রজন্ম নতুন ইতিহাসে বিভোর থাকে। যার সঙ্গে উত্তরাধিকারের কোনো যোগ থাকে না, যা আমাদের সুস্থ স্বাভাবিক ঐতিহ্যকে বহন করে না। ‘জন্মের অসুখ’ গল্পে একদিকে ভাঙাচোরা মধ্যবিত্ত মূল্যবোধের ভাঙন, তার বিপরীতে লেখকের নির্মিত অরণ্যের যাবতীয় ভাবনা-চিন্তা ও সুস্থ পৃথিবীর স্বপ্ন দেখা। অরণ্যরা জীবনসূত্রের ধারক ও বাহক। পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকারকে উত্তরপুরুষে বহন করে দিয়ে যাচ্ছেন। যে নিজেই একদিন বাবা বলে ডেকেছিল কাউকে, সে আজ বাবা ডাক শোনার অপেক্ষায়। অথচ পৃথিবী ক্রমেই স্বার্থমগ্ন, অস্থির, জীর্ণ হয়ে চলেছে। সেই জীর্ণতা থেকে নতুন শিশুকে বাঁচতে হবে, কেননা ইতিহাস মানুষের। মানুষই ইতিহাস নির্মাণ করে। লেখকের বিশ্বাস সে ইতিহাস হোক সুস্থ পৃথিবীর, শুভ চেতনার।

অনিশ্চয় চক্রবর্তী আখ্যানকে চেতনার রাজ্যে উপনীত করেন। আমাদের অস্তিত্ব-অস্তিত্বহীনতা, সম্পর্ক-সম্পর্কহীনতা মিলিয়ে এমন এক বয়ান নির্মাণ করেন যেখানে ব্যক্তির অনুভূতি, চেতনা পৃথক স্বর ক্ষেপন করেও মনস্তত্ত্বের অতল প্রদেশে হারিয়ে যায় বা নিজেই নিজের পৃথক সত্তা প্রতিষ্ঠা করতে অগ্রসর হয়। এরা কেউই জয়ী বা পরাজিত নয়। সুখ-দুঃখের আপাত আনন্দ-বেদনা হয়ত আছে, তবে তা অতিক্রম করে নিজেই নিজের অস্তিত্ব, বোধ, চেতনা, মন, চাহিদা সম্পর্কে হাজারো প্রশ্ন উত্থাপন করে। ঠিক-ভুলের অস্তিত্ব প্রমাণে কেউই অগ্রসর নয়, মনে কদচিৎ সন্দেহ জন্মে, তবে নিজের বোধকেই সত্য বলে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ‘স্পর্শকাতরতায়’ গল্পে দুই পুরুষ এক নারী ফ্রেমে রেখে আখ্যানকে লেখক মনস্তত্ত্বের গভীর প্রদেশে নিয়ে যান। প্রতিটি মানুষের অনুভূতি, জীবনচিন্তা পৃথক পৃথক। দাম্পত্য জীবনে যৌনতা আছে, কিন্তু যৌনতাকে অতিক্রম করেও মানুষ খোঁজে ভালোবাসার অতল স্পর্শ, পরস্পরের প্রতি সহমর্মীতা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা। যেখানে তা নেই সেখানে কেবল শরীর নিয়ে বাঁচা যায় না। শরীর তো কেবল রাতের উপভোক্তা, তা বাদ দিয়েও দিনের অনেকটা সময় বাকি। দিনই যেন রাতের যৌন জীবনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার অব্যর্থ পরিসর। ‘সন্তানের জন্ম দিতে দিতে কেটে গেছে যাদের জীবন’ জীবনানন্দের এই বাক্য মনে রেখেও বলা যায় সন্তান ধারণের ঊর্ধ্বে নারীর পৃথক অবস্থান আছে। জয়দীপ স্ত্রী পিউ-এর কাছে শুধুই সন্তান কামনা করেছে। পিউ-এর পূর্বের স্বামী সুজিত সন্তান অপেক্ষা দাম্পত্য জীবন উপভোগ করতে চেয়েছিল। সুজিতের কাছে যৌনতা স্পর্শের বিষয়, অনুভূতি, সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করার পদক্ষেপ। জয়দীপের কাছে যৌনতা শুধুই সন্তান ধারণের স্থায়ী পথ। সুজিতের মৃত্যুতে পিউ হাত ধরেছিল জয়দীপের। আসলে পুরুষ স্পর্শ চেয়েছিল। কিন্তু সেখানে যে এতো যন্ত্রণা লুকিয়ে আছে জানা হয়নি—

“রাগ হত নিজেরই শরীরের ওপর। যেন তার শরীরের সমস্ত জাগরণ মিথ্যা, শুধু শিহরণটাই সত্য। যেন তার শরীর শুধু নিতে জানে, দিতে জানে না। যেন তার শরীরের কোনও গ্রহণ থেকে জন্ম হয় না কোনও প্রাণের। শুধু শরীরের জন্যই বুঝি, তার শরীর। আবরণে, আবরণহীনতায় ঘৃণা আসত নিজেরই শরীরের ওপর।” (স্পর্শকাতরতায়, গল্প পঁচিশ, অনিশ্চয় চক্রবর্তী, একুশ শতক, কলকাতা-৭৩, প্রথম প্রকাশ, বৈশাখ ১৪২১, পৃ. ৪৬)

আজ নিঃসঙ্গ বিছানায় পিউ স্পর্শহীনতায় ভুগছে। রাতের অন্ধকারে অতীত স্পর্শের অনুভূতি মনে শিহরণ তোলে। চোখ থেকে ঘুম ছিনিয়ে নেয়। সমস্ত চেতনা লুপ্ত হয়ে গেলে ঘুম আসে। অনিশ্চয় চক্রবর্তী চরিত্রের গভীর স্তর থেকে রক্ত মাংস সহ যাবতীয় অনুভূতি বের করে আনেন। মানব বোধের শীর্ষ স্তরে পৌঁছে ব্যক্তি মানুষের প্রবণতা, প্রবৃত্তির কেন্দ্রবিন্দু থেকে কী কী রহস্য উদ্‌ঘাটন হতে পারে তা আখ্যানে সজ্জিত করেন। মানব মনের বিবিধ প্রবৃত্তি, অনুভূতি, স্বপ্ন-স্বপ্নভঙ্গ, স্পর্শ-স্পর্শকাতরতা, স্পর্শের স্মৃতি নিয়ে অনিশ্চয় চক্রবর্তীর আখ্যান পরিকল্পনা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লেখক নিজেই কথক। গদ্যের জাদুতে চরিত্রগুলির বিবিধ অনুভূতি, মস্তিস্কজাত ভাবনা, জাগতিক জীবনের রহস্য এমন এক বয়ানে এমন মাত্রায় নিয়ে যান যা স্বতন্ত্রতার দাবি করে। গল্পপাঠের পর বহুক্ষণ মাথায় রেশ থেকে যায়। আমাদের জাগতিক জীবনে এমন বহু মুহূর্ত আছে যা মানুষ বহুদিন ধরে বয়ে বেড়াতে পারে। তেমনি সেইসব বহু মুহূর্ত থেকেই জন্ম হয় একাধিক স্মৃতির। সেইসব স্মৃতি বারবার ঘোরাফেরা করে ব্যক্তির বোধে, চেতনায়। এক স্মৃতির ছিন্নসূত্র যেন বন্ধন গড়ে দেয় অন্য স্মৃতির। সেই স্মৃতিই বারবার স্বপ্নে ফিরে আসে। স্বপ্নের জাগরণে স্মৃতির সঙ্গে শরীর এসে যায়। ‘স্বপ্নকাতরতায়’ গল্পে বুবুনের পরিচয় ‘স্বপ্নক্লান্ত এক মানবী’। বুবুনের জীবনে বয়ে চলা কিছু ঘটনার বিচ্ছুরণ স্বপ্নে ভেসে আসে। এই বিন্যাসকে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে গেছেন গল্পকার অনিশ্চয় চক্রবর্তী। সহজাত দক্ষতায় মানব দর্শনের গভীর প্রদেশ থেকে তাঁর চরিত্ররা নির্মিত। কেউ উদ্ভট নয়। নেই কোনো বিক্ষিপ্ত বা অসমান্তরাল চেতনা। সবই আপতিক, আমাদের জীবনেরই ঘটনাপ্রবাহ। কিন্তু সেই ঘটনার যে বহু অতলন্ত, বহুমুখী বিন্যাস থাকে, তা যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বহুকোণে, মানুষ বেঁচে থাকে সেই বহু দীর্ঘশ্বাস নিয়ে, সেইসব জীবনচেতনা ও ভাবনাবিশ্বকে অন্যমাত্রায় উত্তীর্ণ করেন অনিশ্চয় চক্রবর্তী। জীবনকে তিনি এমন রসদে ব্যাখ্যা করেন, অসম্পূর্ণ, অসফল প্রবণতা থেকে সফল প্রবণতায় উত্তরণের এমন পথ আবিষ্কার করেন যা এক বোধে নিয়ে যায়। তাঁর চরিত্ররা ব্যর্থতার জন্য কাউকে দায়ী করে না, সমাজের বিরুদ্ধে বিতৃষ্ণা উগড়ে দেয় না, বরং নিজেই নিজের বেঁচে থাকার পথ খুঁজে নেয়। তাঁর আখ্যানে ব্যক্তি নিঃসঙ্গ হয়ে যায়, নিঃসঙ্গতার মধ্যেই খুঁজে পায় জীবনের নতুন সোপান। গদ্যের জাদুতে বিষাদঘন পরিত্রাণহীন ব্যর্থ অনুভূতি হয়ে ওঠে মায়ামায়—

“কোনও একটি স্বপ্নেও যদি লেগে যায় গ্রহণ, তা ছড়িয়ে যায় জীবনের বাকি সব স্বপ্নের নিভৃতির মধ্যেই, তখন, পাখির কলরবহীন বনভূমির মতো পড়ে থাকে ব্যক্তির জীবন, পাতাহীন গাছের মতো অস্তিত্বে টিকে থাকে ব্যক্তির সমস্ত যাপন। কখনও বা ভেঙে পড়ে সমস্ত প্রতিরোধ আর আয়োজন, সংগঠন।” (স্বপ্নকাতরতায়, তদেব, পৃ. ৫৭)

অনিশ্চয় চক্রবর্তী সারাজীবন ধরে আয়ত্ত করেছেন সংযম, সংবেদন, সহিষ্ণুতা শব্দগুলি। শুধু আয়ত্তই নয় জীবনচর্চায় প্রয়োগ করেছেন, জীবনের মূলধন হিসেবে বেছে নিয়েছেন। রাজনীতি, পার্টি, জীবনের সর্বত্রই এই শব্দগুলিকে জীবনবীমা করেছেন। এই শব্দগুলির ব্যবহারিক প্রয়োগে তিনি ধনি। সেজন্য বহু ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, নেমে এসেছে মিথ্যার গ্লানি। তবুও তিনি লক্ষে অবিচল। আদর্শ জীবনচেতনা, জীবনবোধ বলে এগুলিকেই তিনি মান্য করেন। ‘প্রতিপক্ষতায়’ গল্প তিনপুরুষের আখ্যান। দাদু-পিতা-সন্তান। কথকই ন্যারেটার। এক আশ্চর্য আদর্শবোধের গল্প, প্রাত্যহিক জীবনের স্থুল অসহিষ্ণুতা ত্যাগ করে জীবনচর্চার আদর্শ পরিমণ্ডল। সন্তান হয়ে উঠছে পিতার প্রতিপক্ষ। পিতা সাহিত্যিক হয়েও যে গুণগুলির অভাব ছিল তা পুত্র অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে চান। পিতা সাহিত্যিক হয়েও মাতার লক্ষ্মীর পাঁচালিতে অসহিষ্ণুতা প্রকাশ করেছে। যা পুত্রের মনে শিল্পচর্চার ফাঁকগুলি স্পষ্ট করে দেয়—“শিল্প তো তাঁকে শেখাচ্ছে না, সহিষ্ণুতা, অন্যের প্রতি, অন্য মতের প্রতি সম্মান। শিল্প-সাহিত্যের প্রতি আমার শ্রদ্ধা বা ভরসা যে নেই খুব একটা, তার বড় কারণ তো এটাই।” (প্রতিপক্ষতায়, তদেব, পৃ. ৬৩) তবে পিতার আলমারিতে থাকা বহু বই পড়েছিল সে। পরে লাইব্রেরি থেকে বহু বই এনে পড়ে পিতা-পুত্র মিলে জ্ঞানচর্চা করেছে। জ্ঞানচর্চা মানুষকে বৃহৎ করে, মুক্ত করে। অনিশ্চয় চক্রবর্তীর ‘আমার অকমিউনিস্ট’ জীবন পড়লে বোঝা যাবে কমিউনিস্ট পিতা কীভাবে পুত্রকে জীবনচর্চার পথ দেখিয়ে দিচ্ছেন। পুত্র ভালোবেসে বিবাহ করেছে শ্রাবণীকে। সন্তান মাল্যবান পিতার প্রতিপক্ষ। এ নিয়ে মাতা শ্রাবণীর রাগ, অভিমান। এই কাহিনিকে ফ্রেমে রেখে লেখক জীবনচর্চা, সন্তান মানুষ করার এক আদর্শ বৃত্তান্ত রচনা করেন। পারিবারিক জীবনচর্চায় একটি সন্তানের ব্যক্তিত্ব কীভাবে গড়ে উঠতে পারে তা আবিষ্কার করেন। প্রাত্যহিক জীবনচর্চায় ক্লেদ আছে, মাতার অভিমান আছে, পুত্র পিতার প্রতিপক্ষ বলে মাতার অভিযোগ আছে, ব্যক্তির সংকট আছে, তবুও পিতা উত্তর দেন না। উত্তর দিতেই পারেন কিন্তু আদর্শ পিতা থেকে বিচ্যুত হয়ে অন্ধকার রচনা করতে চান না। অনবদ্য গদ্যে লেখেন—

“গ্রীক ট্র্যাজিডির নায়করা যেমন নিজেরই রক্তের ভেতর বহন করে নিজেদের সর্বনাশের বীজ। ওরা বলে, প্রতিটি মানুষেরই নাকি ওটা নিয়তি। আমিও টের পাই, আমার রক্তপ্রবাহে, ওই বীজ বয়ে বেড়ানোর পাশে সভ্যতার সব অর্জন মিথ্যে। ফরাসি বিপ্লব, রুশ বিপ্লব, সমাজতন্ত্র, গ্লাসনস্ত সবই মিথ্যে। অর্থহীন। মাঝে মাঝে সেই চেতনাপ্রবাহ থেকে বিচ্ছিন্ন এক শরীরে জোটে তবু শ্রাবণীর উত্তাপ। আবার আবার।” (তদেব, পৃ. ৭১)

অশুভ, অসচেতনার অন্ধকার তিনি আখ্যানে দূর করতে চান। সভ্যতার সমস্ত অন্ধকারের মধ্যেও একটু আলোকবর্তিকা জ্বালিয়ে দিতে চান। সেই ছোট্ট পৃথিবীই অনিশ্চয়ের আখ্যান জগৎ। রাতের নক্ষত্রখোচিত আলোময় ভূমিতে বা দিনের সূর্যদেবের বিকশিত পৃথিবীতে চরিত্রের বিকাশ ঘটান। তাঁর সৃষ্ট চরিত্ররা হয়ে ওঠে আলো পৃথিবীর সন্তান। মনের অন্ধকার নানাভাবে দূর করার সচেষ্টায় সদা নিমগ্ন।

দুই

অনিশ্চয় চক্রবর্তীর গল্পে প্রবেশের আগে ‘আমার অকমিউনিস্ট জীবন’ পড়ে নিলে পাঠকের কাছে গল্পবলয় স্পষ্ট হবে। নিজে রাজনীতি করেছেন, পার্টির দায়িত্ব সামলেছেন, মিছিল, প্রচারে গিয়েছেন, পার্টির হয়ে কলম ধরেছেন। সব কিছুতেই ছিল নিষ্ঠা, আত্মত্যাগ, বিশ্বাস, আদর্শ, সংবেদন, সংযম, সহিষ্ণুতা, যুক্তিবোধ। মার্কসবাদ পড়ছেন জ্ঞানচর্চার সোপান হিসেবে, মার্ক্স, লেলিনকে জীবনের ধ্রুবতারা হিসেবে জীবনের চরমতম পথ পেরিয়ে এসেছেন। তবুও তাঁর কমিউনিস্ট হওয়া হয়নি। কমিউনিস্ট পার্টির মধ্য দিয়ে সমাজ বদলের স্বপ্ন দেখেছিলেন, ধীরে ধীরে পার্টির দুর্নীতি, অন্যায়, অবৈধ কার্যকলাপ, মুর্খামি, সংকীর্ণতা দেখে মনে হয়েছিল এরা কখনোই কমিউনিস্ট হতে পারে না। গল্পের নাম ‘আত্মজিজ্ঞাসায়’। কেন ও কিসের আত্মজিজ্ঞাসা? কাকলি ও তাঁর স্বামী সারাজীবন কমিউনিস্ট পার্টি করে চলেছে। ব্যক্তি অপেক্ষা পার্টিকেই সত্য বলে মনে করেছে। সারাজীবন পার্টি নিবেদিত প্রাণ হয়ে জীবন কাটিয়ে এসেছে। পার্টিকেই মানুষের মুক্তির সোপান ও সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার হাতিয়ার ভেবেছে, জেনে এসেছে। স্বামী মৃত হলে সন্তানের পড়াশোনার দায়িত্ব নেয় পার্টি। মস্কো থেকে পড়াশোনা করে এসে ছেলে কলকাতায় থাকে, মাতা আসানসোলে। ক্রমেই মাতার মনে প্রশ্ন সমাজতন্ত্রের সেই দেশে গিয়ে ছেলে কী শিখলো? যে দেশ গোটা পৃথিবীকে সমাজতন্ত্রের পাঠ, পথ দেখাচ্ছে সে দেশে গিয়েও সন্তান কেন পার্টি বর্জিত হল। সন্তান অনিন্দ্যর কথা প্রথমে বিশ্বাস না হলেও পরে করেছে। আসলে তখন সোভিয়েত দেশ ভেঙে যায়। সমাজতান্ত্রিক রুশ দেশের ভিতরের সমস্ত সত্য সন্তান জানিয়েছে। সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে গেছে। সারা জীবনের রাজনীতি, পার্টি, মিছিল, মিটিং করে মাতা আজ আত্মজিজ্ঞাসায়। অনবদ্য মুন্সিয়ানায় অনিশ্চয় চক্রবর্তী সোভিয়েত দেশের ভাঙন সহ এদেশের কমিউনিস্টদের জীবনচেতনা স্পষ্ট করেন। ব্যক্তির কথা পার্টি কোনদিন শোনেনি, বরং পার্টির শর্ত চাপিয়ে দিয়েছে মানুষের ওপর। যারা আদর্শ, বিশ্বাস, ভালোবাসা দিয়ে সারাজীবন পার্টি করে গেছে, তাদের আবেগ, বোধ, বিশ্বাস, যুক্তিকে পার্টি মর্যাদা দেয়নি। পরিণাম যা হবার তাই হয়েছে। আদর্শনিষ্ট মানুষ নিজের মুদ্রাদোষে নিজে হয়েছে একা। কেউ কেউ পার্টি লাইন থেকে সরে গেছে। কিন্তু নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দেবে কী করে। হৃদয় খুঁড়ে শুধু বেদনা জেগে ওঠে। নিজের চোখের সামনে পার্টির পতন দেখে চোখে জল ভেসে যায়। আত্মজিজ্ঞাসায় শুধুই প্রশ্নের জাগরণ হয়। গল্প থেকে সামান্য তুলে ধরি—

“লালপতাকায় বিশ্বাস রেখে যদি কারুর মন ভেঙে যায়, সেই ভাঙা মনের কোনও দামই যে নেই লালপতাকার কাছে, বিপ্লবের কাছে, পার্টির কাছে, তখনও বিপ্লবীর কাছে। পার্টি মানেই কি এমন নিষ্ঠুর নৈর্ব্যক্তিকতা? তাহলে আর ব্যক্তি কেন যাবে পার্টিতে, কেন যায়? জীবনের এতগুলো বছর পার্টিতলে কাটিয়ে এখন সে প্রশ্ন কি আর কাকলিকে মানায়?” (আত্মজিজ্ঞাসায়, তদেব, পৃ. ৮১)

সন্তান পার্টির প্রতি আকৃষ্ট না হওয়ায় মাতা প্রথমে বেদনা পেয়েছিলেন, কিন্তু সোভিয়েত দেশের প্রকৃত সত্য শুনে আর বিমর্ষ হননি। আজ নিজের চেতনবিশ্বে শুধু অনুরণন তুলেছেন নিজের রাজনৈতিক দর্শন, পার্টি, বিশ্বাস নিয়ে। অনিশ্চয় চক্রবর্তী গভীর ভাবনা বলয়ের শিল্পী। নিছক জীবনের কথা নয়, জীবনের অতল প্রদেশে পৌঁছে গিয়ে নানা সমস্যা, সমস্যার উৎস খুঁজে বেরান। ব্যক্তি নিজেই নিজের ভুল খুঁজতে অগ্রসর হয়। নিজেই নিজের ভাবনাবলয়ে নানা প্রশ্ন তুলে, প্রকৃত পথ থেকে ব্যক্তির চিন্তা কোথায় সরে গেছে তা আবিষ্কার করে। সময়ের ব্যবধানে, প্রজন্মের ব্যবধানে নতুন প্রজন্ম কীভাবে পার্টি থেকে দূরে চলে যাচ্ছে তা দেখান। এর জন্য দায়ী কে? ব্যক্তি না পার্টি? অবধারিত উত্তর আসে পার্টি। কাকলিদের সারাজীবনের শ্রম, নিষ্ঠা ব্যর্থ হয়ে যায় পার্টির অপদার্থতায়, অপব্যয়ে, অপব্যবহারে। যে সত্য পার্টি কোনদিন শুনতেই চায়নি। সত্যকে ঢাকা দিতে নানা মিথ্যে বয়ান দিয়েছে। আপাত সত্য চাপা পড়েছে, কিন্তু মানুষ দূরে সরে গেছে। এসব অনিশ্চয় চক্রবর্তীর গভীর ভাবনাজাত ফসল। তেমনি পার্টির প্রতি গভীর ভালোবাসায়, পার্টির ভুলগুলি দেখেছেন অব্যর্থভাবে। সেইসব সত্য উঠে আসে আখ্যানে। গল্প রাজনৈতিক সত্যকে অতিক্রম করে হয়ে ওঠে গভীর চেতনার আখ্যান।

আদর্শ সচেতন মানুষ অনিশ্চয় চক্রবর্তী আদর্শ, আদর্শের ভাঙন, মূল্যবোধ, মূল্যবোধের বিপর্যয়, পার্টি আদর্শ, আদর্শের পতন, মানুষের ক্রম মুক্তি, মুক্তির স্বপ্ন থেকে দূরে চলে যাওয়া মানুষের নির্মাণ, অধঃপতনের গল্প লিখবেন এ স্বাভাবিক। সমাজতন্ত্র গঠনের স্বপ্ন দেখানো, মানুষের মুক্তির স্বপ্নে বিভোর মানুষগুলি কীভাবে পার্টি লাইন থেকে দূরে চলে গেল, কোন প্রয়াসে, কোন চেতনায়, এই দূরে-বহুদূরে, ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন চেতনায় জন্য দায়ী কে তা আবিষ্কার করতে সচেষ্ট হন। একজন ব্যক্তি কেন রাজনৈতিক দর্শন থেকে দূরে গেল, কোন ফাঁকি, বোধ, দ্বন্দ্ব-ধন্দ ব্যক্তির বিশ্বাসে, চেতনায় সংশয়ের জন্ম দিল তা খুঁজতে অগ্রসর হন। মানুষের মুক্তির স্বপ্ন বিভোর প্রিয়নাথ পার্টি লাইন থেকে দূরে গিয়ে, আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে ব্যক্তিগত জীবনেও কীভাবে ভিন্ন সম্পর্কে জড়িয়ে গেল ও বোধে নানা প্রশ্ন, সংশয়ের জন্ম হল তা নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘পূর্ণগ্রাস’ গল্পটি। সোভিয়েতের ভাঙন ঘটে গেছে। ইতিহাসকে অস্বীকার করে বর্তমান নিয়ে বাঁচা যায় না। বর্তমান নিয়ে হতে পারে কিছু কর্মসূচি, মিছিল। তার মধ্যে বৃহৎ চেতনা থাকে না। বৃহৎ চেতনা ছাড়া অন্তত কমিউনিস্ট হওয়া যায় না। কমিউনিস্ট নাম নিয়ে ক্ষমতাতান্ত্রিক দলগুলি যে রাজনীতি করল তার সঙ্গে কমিউনিস্ট মতাদর্শ, মার্কস, লেনিনের কোন মিল নেই। সোভিয়েত দেশেই কি ছিল? পতনে অবধারিত পরিণাম ঘটেছে। এইসব গল্প অনিশ্চয় চক্রবর্তী লিখেছেন গত শতাব্দীর শেষ লগ্নে। যখন বঙ্গে বাম রাজনীতি শীর্ষে অবস্থান করছে। কিন্তু লেখকের কী অদূরদর্শী ভাবনা, মর্তাদর্শ সম্পর্কে কী আশ্চর্য সচেতন প্রয়াস, কমিউনিস্ট চেতনা সম্পর্ক গভীর জীবনবেদ। পার্টির পতন ঘটতে দশ বছরও সময় লাগল না। মানুষ দূরে চলে গেল কমিউনিস্ট মতাদর্শ থেকে। প্রদীপের নীচের অন্ধকার সোভিয়েত, এবঙ্গ কেউ প্রত্যক্ষ করেনি, জানতে চায়নি। আদর্শচ্যুত প্রিয়নাথের ব্যক্তিগত জীবন পরিসর নিয়ে এই গল্প। স্ত্রী কৃষ্ণা থাকা সত্ত্বেও সে সুতপার সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। চল্লিশ বছরের দাম্পত্য জীবন, যা শুরু হয়েছিল আদর্শ দিয়ে তা আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়েছে। আদর্শ থেকে বিচ্যুত হলে যে পার্টির পতন ঘটে যায় তেমনি দাম্পত্য জীবনও ক্ষয়িষ্ণু হয়ে পড়ে। থাকে শুধু বেঁচে থাকার অভ্যাস। অবৈধ সম্পর্ক ধরা পড়েনি স্ত্রীর কাছে, ধরা পড়ার ভয়ও নেই, আছে শুধু ক্ষত-বিক্ষত মন, সংশয়, সন্দেহ। বৃহত্তর বলয়কে পারিবারিক বৃত্তে স্থাপন করে ব্যক্তির চেতনায় জাগরিত করে চলমান সময়ের ভিন্ন ক্যানভাস অঙ্কন করেন লেখক। সেই পতন থেকেই কি নতুন আদর্শের জন্ম হবে? অবধারিত উত্তর আসে জানা নেই। কেবলই নিঃশ্বাস দীর্ঘ হয়ে যায়—

“শুধু আছে এক আশ্চর্য সম্পর্কের শুকিয়ে, মজে যাওয়া অবশেষ, যা শুরু হয়েছিল আদর্শ দিয়ে, শেষও হয়ে গেছে আদর্শেরই সঙ্গে সঙ্গে। এখন পড়ে আছে অভ্যাস এক, আছে পালন, নিয়ম, কর্মসূচি। ওই মরা ফুলের স্তূপের ভেতর নতুন কোনও গুল্মের জন্ম হবে কিনা, কবে, তা কে বলতে পারে, এখন, এই হতাশায়, এই অস্থিরতায়?” (পূর্ণগ্রাস, তদেব, পৃ. ৯৮)

সমাজতন্ত্রের পতন, পার্টির পতন থেকে ব্যক্তির দাম্পত্য জীবনের ক্ষত। এসব নিয়েই ব্যক্তির বৃত্ত সম্পূর্ণ হয়। পতন সম্পূর্ণ হয়। মেঘ চাঁদের সব আলো গ্রাস করে নেয়। অন্ধকার রচিত হয়। পূর্ণগ্রাস হয়।

লেখক : অধ্যাপক, রায়গঞ্জ সুরেন্দ্রনাথ মহাবিদ্যালয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো সংবাদ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশেষ সংখ্যা ১৪৩১ সংগ্রহ করতে ক্লিক করুন