২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি একাই ৩৭০ পাবে, তাদের জোট ৪০০ পার করে দেবে। এ কথা প্রধানমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন জোর গলায়। সভা-সমিতিতে বলছেন জোর গলায়। তাঁদের মিডিয়া সেল সে কথা প্রচার করে যাচ্ছেন আরও জোর গলায়। তাঁদের তাঁবে আছে যে সব মিডিয়া হাউস, তাঁরাও তারস্বরে সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত ঢাক পিটিয়ে যাচ্ছেন সে কথা।
জয় সম্বন্ধে যে নিশ্চিত, তার কি এ রকম ঢাক পেটানোর দরকার আছে? তাই এই চিৎকারের মধ্যে একটা গন্ধ আছে এবং গন্ধটা সন্দেহজনক।
এ কথা ঠিক যে, ঠিক এই মুহুর্তে ভারতের কোন রাজনৈতিক দল বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হতে পারবে না কিছুতেই। তাই একটা জোট হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও জট সৃষ্টি হয়েছে। জোটের কেউ কেউ একলা চলো নীতি গ্রহণ করতে চলেছেন। একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণও করে ফেলছেন। এর ফলে ভোটদাতাদের মধ্যে বিভ্রান্তি বাড়ছে। সেটাকে কাজে লাগাচ্ছে শাসকদল। স্বাভাবিক।
তাহলে তো প্রায় ফাঁকা মাঠ। তাহলে ভয় কিসের? তাহলে জয়ঢাক পেটানোর দরকার কোথায় ? শাসকের কয়েকটি কাজের মধ্যে দেখা যাচ্ছে ভয়ের ছায়া। এই যেমন এজেন্সি দিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ। শতাধিক বিরোধী সাংসদকে সংসদ থেকে বহিষ্কার না করলে কি ক্ষতি হত ? কিন্তু গোপন ভয় যখন মানুষকে গ্রাস করে, তখন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না তার। এটা ‘ফিয়ার সাইকোসিস’এর খেলা।
এই খেলার আর একটি দৃষ্টান্ত বিভিন্ন রাজ্যের বিরোধী সরকারকে ভেঙে ফেলা। যেমন বিহারে নীতিশকুমারকে হাত করে সরকার বদল। ঝাড়খণ্ডে অবশ্য সে খেলা জমল না। দিল্লিতেও জমছে না। আগেও এই খেলা খেলেছে বিজেপি। কিন্তু এখনকার মতো এত নির্লজ্জ খেলা আগে হয় নি। মানুষের স্মৃতিশক্তিকে থোড়াই কেয়ার করে শাসকরা। কিন্তু মানুষের অবচেতন মনে সঞ্চিত ক্রোধ ও ঘৃণা তুষের আগুনের মতো ধিকি ধিকি জ্বলতে জ্বলতে একদিন দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে সহসা।
গোদি মিডিয়া খুলে দেখুন, সেখানে সারাদিন তারস্বরে প্রচার করা হচ্ছে লোকসভা ভোটে বিজেপির নিশ্চিত জয়ের কথা। ক্লান্তিহীনভাবে বলে যাচ্ছেন সঞ্চালকরা। বিরোধীদের মনে ভয় ধরিয়ে দিতে চাইছেন এই জন্য যে তাঁরা নিজেরাই আছেন ভয়ে। আমাদের অভিজ্ঞতায় দেখেছি গলাবাজি করে যে নিজের শক্তি জাহির করতে চায়, সে আসলে ভিরু।
কথা উঠছে ইভিএম নিয়ে। তা, সে মেশিন যদি গঙ্গাজলে ধোয়া হয়, তাহলে চ্যালেঞ্জ নিতে দোষ কোথায়? কেন নির্বাচন কমিশন বুক ফুলিয়ে বলছেন না, এই নাও ইভিএম, এটা যে হ্যাক করা যায় তা দেখিয়ে দাও তো বাপু!
ছাতি ছাপান্ন ইঞ্চি, অর্থ আছে অঢেল, তাঁবেদার মিডিয়া আছে, আছে অন্ধভক্তের দল, তবু ভয়। তাই সব অস্ত্র ব্যবহার করে ফেলো। দমন-পীড়নের অস্ত্র ব্যবহার করেও ভয়। তখন তোষণের অস্ত্র প্রয়োগ করতে হয়। থলি থেকে বেরোয় ভারতরত্ন। এই ২০২৪-এ পাঁচ–পাঁচজনকে দেওয়া হল ভারতরত্ন। নামগুলি দেখুন। লালকৃষ্ণ আদবানি। তাঁকে ছেঁটে ফেলেছিলেন মোদি। এখন দেখছেন আদবানিকে ঘিরেও একটা বলয় আছে দলের মধ্যে। একটু প্রলেপ দিতে আদবানিকে ভারতরত্ন। নরসীমা রাও কংগ্রেসের লোক। তাঁকে ভারতরত্ন দিয়ে কংগ্রেসের সদস্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি। কর্পূরী ঠাকুর বিহারের রাজনীতিক। সদ্য বিহারে সরকার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তাই কর্পূরী ঠাকুরকে ভারতরত্ন দিয়ে ড্যামেজ কন্ট্রোল। চটিয়ে রেখেছেন যে কৃষকদের, তাদের মনে প্রলেপ দেবার জন্য চৌধুরী চরণ সিং আর কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনকে ভারতরত্ন।
ফিয়ার সাইকোসিস। ফিয়ার সাইকোসিস।