কলকাতা পুরসভার ৬২ নম্বর ওয়ার্ডে ‘সুলতান আহমেদ মেমরিয়াল কেএমসিপি স্কুল’ উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। চার তলা বিশিষ্ট এই ভবনটিতে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বালক-বালিকাদের ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হবে বিনামূল্যে। ২৫ মার্চ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিধায়ক নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়, মেয়র পারিষদ সন্দীপন সাহা, বরো চেয়ারপার্সন সানা আহমেদ সহ একাধিক কাউন্সিলর ও বিশিষ্টগণ।
কলকাতা পুরসভার অন্তর্গত এখন ২৪১টি বিদ্যালয় আছে। এই বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষাগ্রাহণের পদ্ধতিকে আরো বেশি করে উপভোগ করে তোলার উদ্দেশ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য অন্যান্য সহযোগী পাঠক্রম, খেলাধূলা, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ প্রভৃতি নিয়মিত ভাবে প্রসারিত করা হচ্ছে। অতিমারির সময়কালে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাবের জন্য বেশ কিছু দিন সমস্ত পৌর-প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ছিল। বর্তমানে স্কুলগুলি আবার চালু হয়েছে। শিক্ষা বিভাগের মেয়র পারিষদ সন্দীপন সাহা নিয়মিত স্কুলগুলি পরিদর্শন করে পরিকাঠামোগত উন্নতির রূপরেখা নির্দেশ করছেন। মেয়র ফিরহাদ হাকিম বারবার বলেছেন, অর্থনৈতিক ভাবে শহরের পিছিয়ে থাকা মানুষের শিক্ষার ব্যাঘাত যাতে না ঘটে সে বিষয়ে তিনি সদাজাগ্রত। আগামী প্রজন্মের উন্নতির অনেকটাই নির্ভর করছে ইংরাজি শিক্ষার ওপর। কারণ যে কোন চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে ইংরেজি জানাটা আবশ্যিক। উচ্চশ্রেণির মানুষ প্রতি বছর অনেক টাকা খরচ করে তাঁদের শিশুদের শহরের নামি-দামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তী করতে পারেন। কিন্তু দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের পক্ষে এত টাকা দিয়ে বেসরকারী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে তাঁদের সন্তান-সন্ততীদের পড়াশোনা করাবার ইচ্ছা এতদিন স্বপ্নই ছিল। মন্ত্রী তথা কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম সকল শ্রণির মানুষের কথা মাথায় রেখে জানিয়েছেন, ‘কেএমসিপি স্কুলগুলিকে আধুনিক ও ইংরাজি মিডিয়াম করতে চাই আমরা’। এর অর্থ মাতৃভাষাকে অবহেলা করা নয়। মাতৃভাষা শেখার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইংরাজি ভাষা যদি আমরা আয়ত্ত না করতে পারি তাহলে আগামী দিনে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়বে। কারণ সর্ব ভারতীয় পরীক্ষাগুলি হয় ইংরাজি ভাষায়। মেয়র পারিষদ সন্দীপন সাহাও ফিরহাদ হাকিমের দেখানো পথে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে চলেছেন।
এবার একটু অতীতে ফেরা যাক। সুভাষচন্দ্র কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন ১৯৩০ সালের ২২ আগস্ট। তখন তিনি আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দী থাকায় কারামুক্তির পর ২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৩০ মেয়র পদে শপথ গ্রহণ করেন। শপথ গ্রহণের পর সুভাষচন্দ্র তাঁর ভাষনে বলেছিলেন, “… এই বছর জানুয়ারি মাসে কর্পোরেশনের সম্মুখে যে-সব সমস্যা ছিল এখনো সেই সব সমস্যাই রহিয়া গিয়াছে। আমরা যদি ঐ সমস্যাগুলি সমাধান করিতে চাই তবে সবচেয়ে ভালো কাজ হইবে প্রাচ্যের এই প্রধান নগরীর প্রথম মেয়রের প্রথম ভাষনটি অনুধাবন করা। আপনারা ঐ প্রথম ভাষনটিকে পৌর বিষয়ে একটি মতাদর্শের দলিল বলিয়া মনে করিবেন বলিয়াই আমার বিশ্বাস। তাই ঐ ভাষনটির কয়েকটি অংশ উদ্ধৃত করিলে আপনারা ধৈর্যচ্যুত হইবেন না বলিয়া আশা করি।
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ বলিয়াছিলেন : ‘গত দশ বা পনেরো বৎসরে আমি যে মহৎ কাজের ভার লইয়াছি তাহা হইল বহু বিচিত্র স্বার্থবোধ সম্পন্ন বিচিত্র সম্প্রদায়-সমন্বিত এক ভারতীয় জাতি গড়িয়া তোলা। এই জাতি হইবে ঐক্যবদ্ধ ও ফেডারেল ভিত্তিতে গঠিত। সেই লক্ষ্য লইয়া কাজ করার অনেক অবকাশ কলিকাতা কর্পোরেশনে আছে। আপনারা দেখিতে পাইবেন, আমার যতদূর সাধ্যায়ত্ব, কোনো সম্প্রদায়ের স্বার্থই এখানে ক্ষুন্ন হইবে না। যদি না সে স্বার্থ সমগ্র সমাজের স্বার্থের পরিপন্থী হয়। সমাজের স্বার্থ বিলতে আমি বলিতে চাই ভারতীয় জাতির ও এই বিশেষ ক্ষেত্রে, কলিকাতা নাগরিকের স্বার্থ।’
তাঁহার এই কথাগুলি আমি বিশ্বাস করি। … নতুন কর্পোরেশনের সামনে বাস্তব কর্মসূচিরূপে দেশবন্ধু কয়েকটি বিষয় পেশ করিয়াছিলেন :
অবৈতনিক প্রাথমিক শিক্ষা, গরীবদের জন্য বিনা ব্যায়ে চিকিৎসা, খাঁটি সস্তা খাদ্য এবং দুধ সরবরাহ, পরিশ্রুত ও অপরিশ্রুত জল সরবরাহের উন্নততর ব্যবস্থা, বস্তি ও ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় উন্নততর আবর্জনা-দূরীকরণ ব্যবস্থা, গরীবদের জন্য বাসস্থান, শহরতলি অঞ্চলের উন্নয়ণ, পরিবহন ব্যবস্থা, স্বল্পতর ব্যয়ে প্রশাসনিক দক্ষতা।”
সুভাষচন্দ্র এই কর্মসুচির সঙ্গে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক করার কথা বলেন। আমরা দেখতে পাচ্ছি এই পন্থাতেই বর্তমান মেয়র ফিরহাদ হাকিম কাজ করে চলেছেন। তাঁর এই নিরলস প্রচেষ্টা কলকাতাকে বিশ্ব মানচিত্রে বারংবার তুলে আনছে।